মাহাবুবুর রহমান, কক্সবাজার ::
কক্সবাজারের প্রত্যান্ত অঞ্চলের স্থানীয় বাসিন্দারাই নিজের পরিবারের সদস্য পরিচয় দিয়ে রোহিঙ্গাদের পাসপোর্ট করতে সহায়তা করছে। মুলত টাকার প্রলোভনে পড়ে রোহিঙ্গাদের সন্তান বা ভাই বোন পরিচয় দিচ্ছে স্থানীয়রা। তারা নিজেদের আইডি কার্ড দিয়ে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ থেকে জাতীয় সনদ পত্র সংগ্রহ করে কৌশলে পাসপোর্ট করার চেস্টা করে। কক্সবাজার আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে প্রায় সময় এ ধরনের ভুয়া কাগজ পত্র দিয়ে পাসপোর্ট করতে আসা রোহিঙ্গাদের দেখা মিলছে বলে জানা গেছে। ইতি মধ্যে ১০ জনকে সাজা দেওয়া হয়েছে এবং প্রায় ৩০০ টি আবেদন ফাইল জব্ধ করা হয়েছে জানান কক্সবাজার আঞ্চলিক পাসপোর্ট কর্মকর্তা। তবে সচেতন মহলের দাবী কিছু দালালদের পরামর্শে রোহিঙ্গারা স্থানীয়দের টাকার প্রলোভনে ফেলে এই কাজ করাচ্ছে। আবার কক্সবাজারে বেশি কড়াকড়ি হওয়াতে অনেক রোহিঙ্গাকে ভিন্ন জেলা থেকে পাসপোর্ট করে দিচ্ছে দালালরা। তাই দ্রুত পাসপোর্ট সংশ্লিষ্ট দালালদের আইনের আওতায় আনার দাবী সচেতন মহলের।
১০ জুন সোমবার কক্সবাজারের কোর্ট বিল্ডিং পয়েন্টের মসজিদ মার্কেটে পাসপোর্ট করতে আসা সাবরাং ইউনিয়নের ৪ নাম্বার ওয়ার্ডে বাসিন্দা আজিজুর রহমান(৫০) তার মেয়েকে নিয়ে এসেছেন পাসপোর্ট করতে। সেখানে মুজিব নামের এক দালালের কাছে পাসপোর্টের প্রয়োজনীয় কাগজ পত্র দেওয়ার সময় কিছুটা সন্দেহ হলে তাৎক্ষনিক বিভিন্ন ভাবে জেরা করে জানা যায়,তার সাথে থাকা আনজুমন (২০) নামের মেয়েটি রোহিঙ্গা। মুলত আজিজের দ্বিতীয় স্ত্রীও রোহিঙ্গা আর আনজুমন তার আত্বীয় সে সুবাদে ৭ হাজার টাকা নিয়ে তার পিতার পরিচয়ে সাবরাং থেকে জাতীয়তা সনদ নিয়ে,জন্ম নিবন্ধন নিয়ে পিতা মাতা পরিচয় দিয়ে পাসপোর্ট করতে এসেছে। পরে সেখানে লোকজন তাকে পুলিশে দিতে চাইলে দ্রুত পালিয়ে যায়। তবে এ সময় আইনজীবি শাহাদাৎ হোসেন বলেন,মূলত পাসপোর্ট দালালরাই এসব কাজ করে তারা ভরসা না দিলে সে কোন দিন এসব ভুয়া কাগজ পত্র নিয়ে এখানে আসতো না। নিশ্চই তারা আগে কথা বলে গেছে।
রোজার সময় একই ভাবে রামুর মিঠাছড়ি ইউনিয়ন পরিষদের জাতীয়তা সনদ নিয়ে পাসপোর্ট করতে এসেছিল আরেক রোহিঙ্গা। এক আইনজীবি সহায়কের দেওয়া তথ্য মতে মিঠাছড়ি এলাকার ফরিদুল আলম তার বোন পরিচয়ে এক নারীকে পাসপোর্ট করাতে নিয়ে এসেছিল দালাল শাহআলমের চেম্বারে। কিন্তু ফরিদ এবং মেয়েটির কাপড়ে এবং কথাবার্তায় আমার সন্দেহ হলে আমি আরো কয়েকজনকে নিয়ে গেলে দ্রুত তারা পালিয়ে যাওয়ার চেস্টা করে। পরে জানা গেছে মেয়েটি রোহিঙ্গা মূলত টাকার বিনিময়ে তার ভাই পরিচয় নিয়ে পাসপোর্ট করে বিদেশ যেতে চাইছে সে মেয়ে। পরে অবশ্য তারা আমাদের হাতে পায়ে ধরে চলে গেছে।
এদিকে কক্সবাজার আঞ্চলিক পাসপোর্ট কর্মকর্তা আবু নাঈম মাসুমের দেওয়া তথ্য মতে সম্প্রতি রোহিঙ্গারা স্থানীয়দের নাম ঠিকানা তাদের আইডি কার্ড ব্যবহার করে পাসপোর্ট করতে আসার প্রবণতা বেশি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। ইতি মধ্যে ১০ জনকে এই অপরাধে জেলে পাঠানো হয়েছে এবং অন্তত ৩০০ টি ফাইল জব্ধ করা হয়েছে যার প্রত্যেকটিই রোহিঙ্গা কিন্তু কাগজ পত্র সব স্থানীয়দের।
এদিকে জেলা আইনজীবি সমিতির সাবেক সভাপতি ছৈয়দ আলম বলেন, প্রায় সময় এ ধরনের ঘটনা চোখে পড়ে। মুলত কিছু লোক আছে যারা টাকার বিনিময়ে মিথ্যা তথ্য দিয়ে সাধারণ মানুষকে হয়রানী করে। আর যেহেতু রোহিঙ্গাদের বিদেশ পাড়ি দেওয়ার একটি বড় প্রবণতা তৈরি হয়েছে তাই তারা যে কোন উপায়ে স্থানীয়দের সহায়তায় পাসপোর্ট করে বিদেশ যেতে মরিয়া। আর স্থানীয়রাও সামান্য টাকার জন্য রোহিঙ্গাদের সহায়তা করতে প্রস্তুত হয়ে যাচ্ছে। তবে আমাদের নজরে আসলে সেটা আমরা প্রতিবাদ করি এবং কোন ভাবেই অন্যায় কাজ করতে দিনা। তবে আমি যেটুকু শুনেছি অনেকে কড়াকড়ির কারনে কক্সবাজার থেকে পাসপোর্ট করতে না পেরে বিভিন্ন জেলা থেকে পাসপোর্ট করাচ্ছে।
এপিপি এড. জিয়া উদ্দিন আহামদ বলেন, আমি অনেক মানুষের কাছ থেকে শুনেছি বর্তমান পাসপোর্ট কর্মকর্তা খুবই সৎ তিনি সেখানে কোন ধরনের অনিয়ম দূর্নীতির পশ্রয় দেননা। তবে কোর্ট বিল্ডিং এলাকায় প্রায় সময় দেখি দালালরা সাধারণ মানুষ থেকে পাসপোর্ট অফিসের নামে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। প্রথমত সেটা বন্ধ করা দরকার। দ্বিতীয়ত আমরা সবাই জানি শহর থেকে গ্রামে সব খানে কম্পিউটারের দোকান গুলোতে জাতীয়তা সনদ,আইডি কার্ড,জন্ম নিবন্ধন সব কিছু নকল থেকে শুরু করে সব কিছু করা যায় এর কারনে অনেক অপরাধ বাড়ছে। আর রোহিঙ্গারা বিদেশে থাকা তাদের আত্বীয় স্বজনের সাথে যোগাযোগ করে বিদেশে পাড়ি দেওয়ার জন্য সব সময় অস্থির থাকে। বিশেষ করে তরুনী রোহিঙ্গাদের মোবাইলে বিয়ে করে বিদেশে নিয়ে যাচ্ছে এরকম অনেক ঘটনা শুনেছি। তাই রোহিঙ্গা পাসপোর্ট পাওয়ার জন্য স্থানীয়দের ব্যবহার করছে এটা সত্য। এ বিষয়ে আরো কঠোর ও কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া দরকার।
এ ব্যপারে কক্সবাজার সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ প্রফেসর এম এ বারী বলেন,আমিও অনেকের কাছে বর্তমান পাসপোর্ট অফিসের সুনাম শুনেছি। ইদানিং যা শুনছি কক্সবাজার থেকে কোন রোহিঙ্গা পাসপোর্ট করতে পারছে বলে মনে হয়না। তবে বিভিন্ন জেলাতে গিয়ে রোহিঙ্গারা সেখানেও স্থানীয় জনগোষ্টির সহযোগিতা নিয়ে পাসপোর্ট করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। অনেক সময় সেখানে তাদের আটক হওয়ার খবর পত্রিকার মাধ্যমে পাওয়া যায়। তবে আমি বিশ^াস করি এর জন্য একটি বড় চক্র আছে,রোহিঙ্গাদের ক্যাম্প থেকে বের করা থেকে করে অন্য জেলায় নিয়ে গিয়ে পাসপোর্ট করা থেকে শুরু করে বিদেশ পৌছে দেওয়া পর্যন্ত কোন বড় চক্র না থাকলে সেটা সম্ভব হতো না। তাই সে বিষয়ে প্রশাসনকে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে।
কক্সবাজার পাসপোর্ট অফিসের সহকারী পরিচালক আবু নাঈম মাসুম বলেন,আমার পক্ষ থেকে সব সময় সতর্ক থাকি যাতে কোন রোহিঙ্গা পাসপোর্ট করতে না পারে। তবে সে জন্য জনপ্রতিনিধিদের দায়িত্ব অনেক বেশি উনারা ভাল করে যাচাই বাছাই করে জাতীয়তা সনদ দিলে ভাল হয়। আবার বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায় অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন বন্ধ থাকার পরও অনেক ইউনিয়ন পরিষদ থেকে সম্প্রতি জন্ম সনদ ইস্যূ করা হচ্ছে এটা খুবই অন্যায় ফলে রোহিঙ্গারা সে অন্যায়ের সুযোগ নিচ্ছে। এ সময় তিনি রোহিঙ্গাদের পাসপোর্ট করা সহ সব ধরনের অপতৎপরতা বন্ধ করতে কক্সবাজারবাসীর সহযোগিতা কামনা করেন।
প্রকাশ:
২০১৯-০৬-২২ ১৩:৫১:১৮
আপডেট:২০১৯-০৬-২২ ১৩:৫১:১৮
- চকরিয়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচন জনপ্রিয়তার তুঙ্গে সাঈদী
- রামুতে পাহাড়ি ছড়ায় গোসল করতে গিয়ে ২ শিশুর মৃত্যু
- চকরিয়ায় ধান ক্ষেত থেকে লম্বা অজগর সাপ উদ্ধার, পরে অবমুক্ত
- পেকুয়ায় চেয়ারম্যান পদে চমক দেখাতে পারে নারী প্রার্থী রুমানা আক্তার, গণসংযোগে গণজোয়ার
- চকরিয়ায় শাখাখালের তীর থেকে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তির মরদেহ উদ্ধার
- চকরিয়া উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে ১১৪ টি ভোট কেন্দ্রে মোট ৩ লক্ষ ৬১ হাজার ১০৩ জন ভোটা
- রামুতে গাড়িযোগে পাচারকালে ২০ হাজার ইয়াবাসহ ২ যুবক আটক
- চকরিয়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচন: লড়াই চলছে শেয়ানে শেয়ানে
- চকরিয়া-পেকুয়ায় দুই লবণ চাষী নিহত, উড়ে গেছে বসতঘর
- চকরিয়ায় চেয়ারম্যান ভাইস চেয়ারম্যান পদে ১৩ জন প্রার্থীর মাঝে প্রতীক বরাদ্দ
- চকরিয়ায় প্রভাবশালীর কাছে জিম্মি অসহায় পরিবার
- পেকুয়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে কে কোন প্রতীক বরাদ্দ পেলেন
- চকরিয়ায় প্রভাবশালীর কাছে জিম্মি অসহায় পরিবার
- চকরিয়ায় চেয়ারম্যান ভাইস চেয়ারম্যান পদে ১৩ জন প্রার্থীর মাঝে প্রতীক বরাদ্দ
- ব্যাপক উৎসাহ—উদ্দীপনায় সাংবাদিক সংসদের এক যুগপূর্তি উৎসব সম্পন্ন
- চকরিয়া-পেকুয়ায় দুই লবণ চাষী নিহত, উড়ে গেছে বসতঘর
- চকরিয়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচন: লড়াই চলছে শেয়ানে শেয়ানে
- চকরিয়ায় শাখাখালের তীর থেকে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তির মরদেহ উদ্ধার
- পেকুয়ায় চেয়ারম্যান পদে চমক দেখাতে পারে নারী প্রার্থী রুমানা আক্তার, গণসংযোগে গণজোয়ার
- রামুতে গাড়িযোগে পাচারকালে ২০ হাজার ইয়াবাসহ ২ যুবক আটক
- চকরিয়া উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে ১১৪ টি ভোট কেন্দ্রে মোট ৩ লক্ষ ৬১ হাজার ১০৩ জন ভোটা
- চকরিয়ায় ধান ক্ষেত থেকে লম্বা অজগর সাপ উদ্ধার, পরে অবমুক্ত
পাঠকের মতামত: