ঢাকা,শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪

চকরিয়া পৌরসভা নির্বাচন : সালাহউদ্দিন ইস্যু কাজে লাগাতে চায় বিএনপি জামায়াতের রিজার্ভ ভোট পাবে কে?

ছোটন কান্তি নাথ ::::
আগামী রবিবার অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া চকরিয়া পৌরসভা নির্বাচনে বিএনপি তথা ২০ দলীয় জোটের মনোনীত মেয়র পদপ্রার্থী বর্তমান মেয়র নুরুল ইসলাম হায়দারের প্রচারণায় বিএনপির সিনিয়র যুগ্ন মহাসচিব ও অবৈধ অনুপ্রবেশের দায়ে ভারতে কারাবন্দি (হাসপাতালে চিকিৎসাধীন) সালাহউদ্দিন আহমেদ’র ইস্যুকে কাজে লাগানোর চেষ্টা করছে দলীয় নেতাকর্মীরা। প্রচারণায় অংশ নিতে গিয়ে বিএনপি নেতাকর্মীরা ভোটারদের কাছে তুলে ধরছেন, নির্বাচনে ২০ দলীয় জোটের প্রার্থীকে ধানের শীষে ভোট দিলে সহসাই মুক্তি পেয়ে সালাহউদ্দিন আবারো আপনাদের কাছে ফিরে আসতে পারবে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কক্সবাজারের বিএনপির অন্যতম নীতিনির্ধারক সাবেক যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী সালাহউদ্দিন আহমেদ গতবারের পৌরসভা নির্বাচনে নুরুল ইসলাম হায়দারকে বিএনপি প্রার্থী মনোনয়ন দেওয়ার পর তাকে বিজয়ী করে আনতে ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ঘুরে-ফিরেছেন। সেই নির্বাচনে হায়দারের পক্ষে সালাহউদ্দিন মাঠে থাকায় নির্বাচনের ফলাফলও অনুকূলে এসেছিল। তবে এবারের দৃশ্যপট একেবারেই ভিন্ন। আগামী ২০ মার্চ অনুষ্ঠেয় পৌর নির্বাচনে হায়দারকেই বিএনপির প্রার্থী করা হলেও সালাহউদ্দিন মাঠে থাকতে না পারায় এবার বিজয়ের হাতছানি পাওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে হায়দারের।
এদিকে বর্তমান মেয়র নুরুল ইসলাম হায়দারকে বিএনপি তথা ২০ দলীয় জোটের প্রার্থী বলে বিএনপি প্রচার করলেও গণসংযোগে দেখা যাচ্ছেনা অন্যতম শরীক জামায়াতের পদস্থ কোন নেতাকে। তাছাড়া পৌরসভায় জামায়াতেরও উল্লেখযোগ্য সংখ্যক রিজার্ভ ভোট রয়েছে। ইতিপূর্বে অনুষ্ঠিত উপজেলা পরিষদের দুটি নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী আরিফুর রহমান চৌধুরী মানিকের নিশ্চিত বিজয় আটকে যায় বিএনপি প্রার্থী দেওয়ায়। এতে দুটি নির্বাচনেই বিজয় হাতছাড়া হয়ে যায় বিএনপি ও জামায়াত প্রার্থীর। সেই গ্লানি এখনো ভর করছে জামায়াত নেতাকর্মী ও সমর্থকদের মধ্যে। তাই এবারের পৌরসভা নির্বাচনে জামায়াতের রিজার্ভ ভোট সতিক্যার অর্থে কে পাচ্ছেন তা ভোটের দিন পর্যন্ত অপেক্ষায় আছেন অভিজ্ঞমহল।
বিএনপি দলীয় সূত্র জানায়, বিএনপির সিনিয়র যুগ্ন মহাসচিব সালাহউদ্দিন আহমেদ এবারের পৌরনির্বাচনে মাঠে নামতে না পারলেও তার এবং দলের মনোনীত প্রার্থী নুরুল ইসলাম হায়দারকে আবারো ধানের শীষ প্রতীকে ভোট দেবে পৌরবাসী। ভারতে কারান্তরীণ থাকাবস্থায় প্রেরিত সালাহউদ্দিন আহমেদ’র একটি খোলা চিঠিও ভোটারদের কাছে বিলি করা হচ্ছে।
পৌরসভার বাসিন্দা ও কক্সবাজার জেলা যুবদলের সহ-সভাপতি আক্তার ফারুক খোকন বলেন, ‘চকরিয়া-পেকুয়ার মানুষ সালাহউদ্দিন ভাইয়ের জন্য পাগল। প্রতিটি নির্বাচনে তাঁর কথার বাইরে গিয়ে এখানকার মানুষ বিকল্প চিন্তা করেনা। যার প্রমাণ বিগত কয়েকটি সংসদ নির্বাচন এবং গতবারের পৌর নির্বাচন। এবারের নির্বাচনেও এর ব্যতিক্রম হবেনা। সালাহউদ্দিন ভাইয়ের মনোনীত প্রার্থী হায়দার ভাইকে ধানের শীষ প্রতীকে ভোট দেওয়ার আহবান সম্বলিত সুদূর ভারতের শিলং থেকে পাঠানো খোলা চিঠি আমরা ভোটারদের কাছে বিলি করছি। এ সময় ভোটারেরাও সালাহউদ্দিন ভাইয়ের সহসা মুক্তির জন্য ধানের শীষ প্রতীকে ভোট দেবেন বলে অঙ্গিকার করছেন।’
সরজমিন বিভিন্ন ওয়ার্ডের ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তফসিল ঘোষণার পর থেকেই বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা সালাহউদ্দিনের প্রেরিত ‘খোলা চিঠি’ নিয়ে প্রতিটি বাড়িতে প্রচারণা চালাতে যান। অনেক ভোটার এতে ত্যক্ত-বিরক্ত হলেও অনেকে এই ‘খোলা চিঠি’কে বিএনপি প্রার্থী হায়দারের বিজয়ের ক্ষেত্রে ট্রাম্পকার্ড হিসেবে বিবেচিত হবে বলেও মনে করছেন।
হায়দারের নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নেওয়া জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি এনামুল হক  বলেন, ‘দীর্ঘ ৭-৮ বছর পর ধানের শীষ ও নৌকা প্রতীকের মধ্যে লড়াই হচ্ছে। তাও আবার স্থানীয় সরকার নির্বাচনে। আর এই সময়ের মধ্যে সরকারের অপশাসন-দুঃশাসনের কারণে অতিষ্ট হয়ে উঠা মানুষ ধানের শীষের পক্ষে রায় দেওয়ার জন্য অধীর আগ্রহে রয়েছে। ভোটারেরা সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোট দেওয়ার পর ফলাফল ঘোষণা পর্যন্ত যদি অদৃশ্য কোন হস্তক্ষেপ করা না হয় তাহলে এবারও নিশ্চিত বিজয় আসবে বিএনপি তথা হায়দারের ঘরে।’
বিএনপিতে ত্যাগী হলেও কোনঠাসা থাকা কয়েকজন নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘গতবারের নির্বাচনে সালাহউদ্দিন আহমেদ মাঠে থাকায় একেবারে সহজ হয়ে পড়ে বিএনপি প্রার্থীর বিজয়। কিন্তু সালাহউদ্দিনের কথায় যে আশা নিয়ে হায়দারকে মেয়র নির্বাচিত করেছিল সেই আশা পূরণ হয়নি পৌরবাসীর। ৫ বছরেও পৌরশহর রক্ষাবাঁধ নির্মাণ করতে না পারায় প্রতিবছর বন্যায় পৌরসভার মানুষ এর মাশুল দিয়েছে। তবে কাকতালীয়ভাবে এবারও যদি হায়দার মেয়র নির্বাচিত হয়ে যান, তাহলে এর পেছনে দলের প্রতীকই বেশী কাজ করবে, হায়দারের নিজস্ব ইমেজে নয়।’
বিএনপি প্রার্থী ও বর্তমান মেয়র নুরুল ইসলাম হায়দার বলেন, ‘আমি মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর টানা একমাসও নিয়মিত অফিস করতে পারিনি। একের পর এক রাজনৈতিক মামলায় আমাকে আসামী করে দেওয়া হয়েছে। আর এই মামলার ঘানি টানতে গিয়ে প্রতিনিয়ত আমাকে আদালতের বারান্দায় পায়চারী করতে হয়েছে। এত প্রতিকূলতা সত্ত্বেও বিগত ৫ বছরে আমি পৌরবাসীর জন্য শত কোটি টাকার উন্নয়নমূলক কাজ করেছি। তাছাড়া বরাদ্দ না পাওয়ায় ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও শহর রক্ষাবাঁধ নির্মাণ করা সম্ভব হয়নি। এর পরও আমার দৃঢ় বিশ্বাস এবারের নির্বাচনেও পৌরবাসী আমাকে বিপুল ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী করবে।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উপজেলা ও পৌরসভা জামায়াতের একাধিক নেতা বলেন, ‘বিএনপি এবং জামায়াতের ওপর যে দমন-নিপীড়ন চলছে তা থেকে শিক্ষা নিচ্ছেনা স্থানীয় বিএনপি। জোটের স্বার্থ বাদ দিয়ে ব্যক্তিস্বার্থে বিএনপি নেতাকর্মীরা লিপ্ত থাকায় বিগত উপজেলা পরিষদের দুটি নির্বাচনে জয় আসেনি কারো ঘরে। এবারের পৌরসভা নির্বাচনে হায়দারকে ২০ দলীয় জোটের প্রার্থী হিসেবে ভোটারদের কাছে বিএনপি প্রচার করলেও তা একেবারেই ভূঁয়া। এমনকি নির্বাচন ঘনিয়ে আসলেও এখনো পর্যন্ত বিএনপির পক্ষ থেকে জামায়াতের সঙ্গে কোন যোগাযোগও করা হয়নি।’
ভোটারদের মাঝে ‘সালাহউদ্দিন ইস্যু’ কাজে লাগানোর বিষয়ে জানতে চাওয়া হয় বিএনপি প্রার্থী হায়দারের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আহবায়ক ও চকরিয়া উপজেলা বিএনপির সভাপতি মিজানুর রহমান চৌধুরী খোকন মিয়ার কাছে। এ সময় তিনি বলেন, ‘ভোটের বাজারে অনেকে অনেক কথা বলে থাকেন ভোটারদের মন জয়ের জন্য। তাছাড়া চকরিয়া-পেকুয়ার মানুষ শতবছরেও ভুলবেন না তাদের প্রিয় নেতা কক্সবাজারের উন্নয়নের রূপকার সালাহউদ্দিন আহমেদকে। এখানকার মানুষ যে কোন নির্বাচনে সালাহউদ্দিন তথা বিএনপি প্রার্থীকেই বিজয়ী করে আসছে। এবারও তার ব্যতিক্রম হবে না, পৌরবাসী ধানের শীষ প্রতীকে রায় দেওয়ার জন্য প্রহর গুনছেন।’
হায়দারকে ২০ দলীয় জোটের প্রার্থী বলা হলেও অন্যতম শরীক জামায়াতের কোন নেতাকে গণসংযোগ দেখা যাচ্ছে না কেন? এমন প্রশ্ন করা হলে খোকন মিয়া বলেন, ‘হায়দার বিএনপি তথা ২০ দলীয় জোটেরই প্রার্থী। কৌশলগত কারণে হায়দারের গণসংযোগে জামায়াত নেতাদের দেখা না গেলেও ভেতরে ভেতরে তাদের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ অব্যাহত রয়েছে এবং জামায়াতের ভোটও ধানের শীষ প্রতীক পাবে।’

পাঠকের মতামত: