ঢাকা,শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪

টেকনাফের ইয়াবা ডন আবুল বশর আবুইল্ল্যার আস্তানায় পুলিশের অভিযান : পালিয়ে রক্ষা !

শাহজাহান চৌধুরী শাহীন, কক্সবাজার ::  কক্সবাজারের সীমান্ত থানা টেকনাফের ইয়াবা ডন আবুল বশর আবুইল্ল্যার বাহারছড়াস্থ উত্তর শীলখালী গ্রামের আস্তানায় পুলিশ অভিযান চালিয়েছে। বৃহস্পতিবার রাত ১০টার দিকে বাহারছড়া ফাঁড়ির একদল পুলিশ এ অভিযান চালায়। তবে পুলিশের অভিযানের আগেই ওই আস্তানা থেকে নিরাপদে পালিয়ে যাওয়া তাকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। মাফিয়া ডন ইয়াবা চোরাচালানী আবুল বশর প্রকাশ আবুইল্ল্যার বিরুদ্ধে ২ হত্যা,অস্ত্র ও ইয়াবা আটকের ঘটনায় ৪টি মামলা রয়েছে। এছাড়াও তার শক্তিশালী ইয়াবা সিন্ডিকেটসহ রয়েছে বিশাল একটি নিজস্ব সোর্স বাহিনী। অন্তত ৫০ জনের এক বাহিনীকে ব্যবহার করছে বিভিন্ন অপকর্মে।

এলাকাবাসি সহ বিভিন্ন সুত্রে জানা গেছে, বাহারছড়া ইউনিয়নের উত্তর শীলখালী গ্রামের আক্কেল আলীর ছেলে আবুল বশর দীর্ঘদিন ইয়াবা ব্যবসায় জড়িত থাকলেও কিন্ত কোনদিন সে ধরা না পড়নি, তবে তার সিন্ডিকেটের অনেকে ধরা পড়েছে এবং বন্দুক যুদ্ধে মারাও গেছেন।

আবুল বশর সিন্ডিকেটের অনেকে ইয়াবাসহ ধরা পড়লেও ইতোপূর্বে কোনদিন মাদক মামলার আসামী হয়নি আবুইল্ল্যার বিরুদ্ধে। গত বছর তার স্ত্রীর বড় দুই ভাই ইয়াবা কারবারী মো.ইসমাঈল ও উসমান বিশাল ইয়াবার চালান নিয়ে নেত্রকোনায় পুলিশের হাতে আটক হন। পরে পুলিশের সাথে বন্দুক যুদ্ধে নিহত হন তারা। এই ইয়াবা ব্যবসায়ীরা নিহতের পর আবুল বশর আবুইল্ল্যার ইয়াবা সামরাজ্যের কাহিনী উঠে আসে।

চলতি বছর ৩০ মার্চ শনিবার ভোররাত সাড়ে চারটার দিকে টেকনাফে পুলিশের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে মোহাম্মদ হোসেন (২৮) নামের এক ব্যক্তি নিহত হন। এসময় ইয়াবা কারবারীদের সাথে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন ইয়াবা কারবারীরা।

ঘটনাস্থল থেকে দেশে তৈরি তিনটি বন্দুক, ১২টি গুলি ও দুই হাজার ইয়াবা বড়ি উদ্ধার করা হয়েছে। সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) ফরহাদ, কনস্টেবল ফাহিম ও মাসুদ গুলিতে আহত হয়েছেন। এ ব্যাপারে টেকনাফ থানা পুলিশ বাদি হয়ে পৃথক ৩টি মামলা দায়ের করেন। টেকনাফ থানার মামলা নং-৮৫/১৯, জিআর-২১৪, থানার মামলা নং-৮৬/১৯, জিআর-২১৫ ও থানার মামলা নং- ৮৭/১৯,জিআর-২১৬। তাং-৩০/০৩/২০১৯।

পুলিশ অ্যাসল্ট, হত্যা, ইয়াবা ও অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনায় দায়েরকৃত এই তিনটি মামলায় এজাহার নামীয় ১২ নং আসামী হচ্ছে টেকনাফ থানাধীন বাহারছড়া ইউনিয়নের উত্তর শিলখালী এলাকা মৃত আক্কল আলীর ছেলে মাদক ব্যবসায়ী এই আবুল বশর প্রকাশ আবুইল্ল্যা।

এছাড়াও ২০১৬ সালে বাহারছড়া শামলাপুরের মোস্তাফিজ নামের এক আওয়ামী লীগ নেতাকে প্রকাশ্যে দিবালোকে নির্মমভাবে হত্যা করেন এই আবুল বশর সহ তার সাঙ্গপাঙ্গরা। শামলাপুর গ্রামের মৃত রশিদ আহমদ (কালুর) ছেলে আওয়ামী লীগ নেতা মুস্তাফিজুর রহমানকে নির্মম ভাবে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় আবুল বশরকে দুই নাম্বার আসামী করে ঘটনায় জড়িত ১১ জনের বিরুদ্ধে টেকনাফ মডেল থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন নিহতের ভাই বাহারছড়া ২নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নুরুন্নবী। টেকনাফ থানার মামলা নং-১/১৬, যার নাম্বার জি, আর, ১/২০১৬। কিন্তু বরাবরই অধরা রয়েগেছে ইয়াবা ডন আবুল বর।

পুলিশ ও স্থানীয় সুত্রে জানা গেছে, ইয়াবা ডন খ্যাত আবুল বশর আবুইল্ল্যাকে ধরতে বাহারছড়া ফাঁড়ির এএসআই হাবীব উল্লাহর নেতৃত্বে একদল পুলিশ বৃহস্পতিবার রাত ১০ টার দিকে উত্তর শীলখালীস্থ আবুইল্ল্যার আস্তানায় অভিযান চালায়। কিন্তু সুচতুর আবুল বশর তার নিজস্ব সোর্সদের মাধ্যমে আগাম খবর পেয়ে নিরাপদে পালিয়ে যান। এ যাত্রায় পালিয়ে রক্ষা পান ইয়াবা ডন আবুইল্ল্যা। পুলিশের একটি সুত্র অভিয়ানের সত্যতা নিশ্চিত করেন।

এব্যাপারে বাহারছড়া পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ ইন্সপেক্টও আনোয়ার হোসেন এর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি অভিযানের ব্যাপাওে কোন মন্তব্য না করে পুলিশ সুপারের সাথে যোগাযোগ করতে বলেন।

স্থানীয় সুত্রগুলো জানিয়েছেন, একসময় সাগর থেকে রেনু পোনা শিকারী আবুল বশরের রয়েছে গত কয়েক বছরের ব্যবধানে অন্তত ৬০ কোটি টাকার প্রায় ৩০ এককর জমি, ৩টি স্ত্রী, ৬টি বাড়ি ও অসংখ্য মার্কেট গড়েছে। স্বনামে বেনামে রয়েছে আরো কোটি কোটি টাকার সম্পদ। আর লালন করছে ৫০ জনের অধিক সন্ত্রাসী বাহিনী। এদেরকে দিয়ে জমি দখল, ইয়াবা বহন, পাচার ও ছিনতাইয়ের কাজ এবং নিজের সোর্স হিসেবেও ব্যবহার করে আসছে অনেকদিন ধরে।

পাঠকের মতামত: