ঢাকা,শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪

উখিয়ায় চিহ্নিত মানবপাচারকারীরা প্রকাশ্যে

নিউজ ডেস্ক ::
মানবপাচারের অভিযুক্ত বেশ কিছু চিহ্নিত পাচারকারী সম্প্রতি প্রকাশ্যে এসেছে। বিশেষ করে উখিয়ার উপকূলীয় এলাকা দিয়ে এক সময়ে মানবপাচারে জড়িত এমন গডফাদারেরা আবারো রোহিঙ্গা ক্যাম্প ঘিরে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। তারা রোহিঙ্গাদের দারিদ্র্য, অজ্ঞতা ও সরলতার সুযোগ নিচ্ছে। শিশুদের লালন-পালন এবং যুবতীদের বিয়ে ও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে পাঠানোর প্রলোভন দেখিয়ে পাচার কাজ অব্যাহত রেখেছে। সম্প্রতি কোস্টগার্ড,বিজিবি,পুলিশসহ বিভিন্ন আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা বিভিন্ন স্থান থেকে দেড় শতাধিক মালয়েশিয়াগামী রোহিঙ্গা নারী,পুরুষকে আটক করলেও পাচার কাজ থেমে নেই বলে জানালেন ক্যাম্পের লোকজন।
কুতুপালং রোহিঙ্গা বস্তি ম্যানেজমেন্ট কমিটির সেক্রেটারী মুহাম্মদ নুর জানান, উখিয়া-টেকনাফের শরণার্থী ক্যাম্প কেন্দ্রিক গড়ে উঠা পাচারকারী চক্রের একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে বিভিন্ন কৌশলে মানবপাচার করছে। এসব পাচারকারীর টার্গেট অবিবাহিত রোহিঙ্গা তরুণী ও শিশু।
স্থানীয় এক সুশীল ব্যক্তি অভিযোগ করে বলেন, মানবপাচারে অভিযুক্ত অর্ধশতাধিক পাচারকারী বর্তমানে প্রকাশ্যে চলে এসেছে। তারা প্রশাসনের সামনে চলাফেরা করলেও অদৃশ্য কারনে তাদেরকে গ্রেফতার করছেনা। যার ফলে হঠাৎ করে মানবপাচার বেড়ে গেছে।
থাইংখালী হাকিমপাড়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পের এ ব্লকের মাঝি হামিদ হোসেন জানান, বিভিন্ন এনজিওতে কর্মরত লোকজন দাবী করে ক্যাম্পে ঘোরাঘুরি করে রোহিঙ্গাদের বিভিন্ন ভাবে প্রলোভন দেখিয়ে পাচার কাজে লিপ্ত করছে। প্রশাসন এসব লোকজনকে চিহ্নিত করে ব্যবস্থা গ্রহন না করলে এ পাচার আরো বাড়তে পারে বলে সে মন্তব্য করেন।
উদাহরণ দিয়ে সে বলেন, গত বছর একই ভাবে রাজাপালং ইউনিয়নের উত্তর পুরুরিয়া গ্রামের ‘মুক্তি’ এনজিওর কর্মী দাবি করে ২০ দিন ধরে ক্যাম্পে ঘোরাঘুরি করছিল আসমা ইয়াছমিন নামের এক তরুণী। পরে হাকিমপাড়া এ ব্লকের বাসিন্দা করিম উল্লাহর ৮ বছরের কিশোরী মেয়েকে নিয়ে যায় সে। পরে টিএন্ডটি আর্মি চেকপোস্টে ধরা পড়ে ইয়াছমিন। হামিদ হোসেন বলেন, ভুয়া এনজিও কর্মী আসমা ইয়াছমিন ওই কিশোরীকে প্রথমে তার ভাতিজী বলে পরিচয় দিলেও পরে আসল তথ্য বেরিয়ে আসে। উদ্ধার হওয়া শিশুর মা সানজিদা জানান, তার সন্তানকে বেড়ানোর নাম করে নিয়ে গিয়েছিল আসমা ইয়াছমিন। আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কাছে দেয়া স্বীকারোক্তিতে আসমা ইয়াছমিন জানিয়েছিলেন, সে মুক্তি নামের এনজিওতে সেবিকার পদে চাকরি করে আসছিল। তবে মুক্তি কর্তৃপক্ষ আসমা ইয়াছমিন নামের তাদের কোনো কর্মী নেই দাবী করেছিল। এর ধরনের অনেকে এনজিও কর্মী পরিচয়ে ক্যাম্পে অপকর্ম এবং নারী,শিশু পাচার করে আসছে।
আইন প্রয়োগকারী সংস্থা জানায়- রোহিঙ্গারা খুবই অসহায়, যে কারণে তারা যে কোনো লোভনীয় প্রস্তাবে রাজি হয়ে যান। তাদের অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে পাচারকারী সিন্ডিকেট রোহিঙ্গা কন্যাশিশু ও যুবতী মেয়েদের চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে পাচার করছে।
উখিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ মো. আবুল খায়ের জানান, রোহিঙ্গারা যাতে ক্যাম্প ছেড়ে অন্যত্রে যেতে না পারে সে জন্য বিভিন্ন স্থানে চেকপোস্ট বসিয়ে নিয়মিত যানবাহন তল্লাশি চালানো হচ্ছে। এরপরেও প্রশাসনের চোঁখ ফাঁকি দিয়ে কিছু কিছু চক্র রোহিঙ্গাদের বিভিন্ন স্থানে নিয়ে যাচ্ছে। তিনি আরো বলেন, পুলিশ সম্প্রতি উখিয়ার উপকূলীয় এলাকায় মালয়েশিয়া পাচার করে দেওয়ার জন্য অভিযান চালিয়ে ২০জন রোহিঙ্গাকে উদ্ধার করা হয়েছে। এ ঘটনায় উখিয়া থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে, যার নং-০৮/০২/২০১৯ইং। তবে পুলিশ মানবপাচার প্রতিরোধে সবসময় প্রস্তুত রয়েছে বলে তিনি জানান।

পাঠকের মতামত: