ঢাকা,শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪

১৫ হাজার টাকা দিয়েও রাধূনী চাকরি পেলনা ‘মিনুয়ারা’

মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম, লামা :: 

বান্দরবানের লামা উপজেলায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় গুলোতে রাধূনি নিয়োগে ব্যাপক অনিয়ম, ঘুষ লেনদেন ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। এদিকে অনিয়ম ও দুর্নীতির প্রতিকার চেয়ে যোগ্য প্রার্থীদের নিয়োগ দিতে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারের নিকট অভিযোগ করেছে ভুক্তভোগীরা।

জানা গেছে, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগ ও বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচী (ডব্লিউএফপি) আর্থিক সহায়তায় লামা উপজেলার ৮৫টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ১ বছরের জন্য “স্কুল মিল প্রোগ্রাম” শুরু হয়েছে। পাইলট এই কর্মসূচীতে প্রতিটি বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী অনুপাতে ২ থেকে ৬ জন রাধূনী ও প্রধান রাধূনী নিয়োগ করছে স্কুল পরিচালনা কমিটি। নিয়োগ কমিটি লিখিত ও মোখিক পরীক্ষা শেষে যোগ্য প্রার্থীদের নামের তালিকা স্থানীয় পৌরসভা মেয়র/ইউপি চেয়ারম্যানের মাধ্যমে উপজেলা শিক্ষা অফিসে সুপারিশ প্রেরণ করেন। উপজেলা কমিটি নিয়োগ চুড়ান্ত করার নিয়ম রয়েছে। কর্মসূচীটি ডব্লিউএফপি এর পক্ষে তদারকি ও বাস্তবায়ন করছে স্থানীয় এনজিও এন.জেড একতা মহিলা সমিতি।

রুপসীপাড়া ইউনিয়নের চিংকুম পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের রাধূনী পদে প্রার্থী মিনুয়ারা আক্তার উপজেলা শিক্ষা অফিসারের নিকট রাধূনী নিয়োগে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ করেন। তিনি বলেন, নিয়োগ শর্তে প্রধান রাধূনী এসএসসি পাশ নেয়ার কথা থাকলেও নিয়োগ কমিটি মোটা অংকের টাকা ঘুষ নিয়ে ৮ম শ্রেণী পাশ আবেদনকারীকে নিয়োগ দিতে পায়তারা করছে। স্কুলের সভাপতি ও এক নেতা আমার কাছে ১৫ হাজার টাকা দাবী করলে আমি দেই। অন্যজন হতে তারা মোটা অংকের টাকা নিয়ে আমার টাকা ফেরত দেয়। তিনি এই নিয়োগ বাতিল করে পুনঃনিয়োগের আবেদন করেন।

একই অভিযোগ সহ আত্মীয়করণ ও পছন্দের প্রার্থীকে নিয়োগ দেয়ার বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নিকট অভিযোগ করেন লামা পৌরসভার লাইনঝিরি এলাকার কুলসুমা আক্তার, রোকেয়া বেগম, সায়মা আক্তার, রিনা বেগম। তারা সকলে স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ পরীক্ষা গ্রহণ করে যোগ্য প্রার্থীকে নিয়োগের আবেদন করেন। এদিকে নিয়োগের টাকা ভাগাভাগি নিয়ে এক বিদ্যালয়ে কমিটি ও দায়িত্বরত লোকজনের মাঝে মারামারির ঘটনাও ঘটেছে। উপজেলার অধিকাংশ বিদ্যালয়ে মোটা টাকার লেনদেন ও একই অভিযোগের কথা শুনা গেছে। কয়েকটি বিদ্যালয়ে অন্য উপজেলার প্রার্থীকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে বলেও অভিযোগ করেছে অনেকে। সংশ্লিষ্ট অনেকে রাধূনী চাকরিটি সরকারি ও স্থায়ী চাকরি বলে লোভ দেখিয়ে সহজ-সরল প্রার্থীদের কাছ থেকে মোটা টাকাও আদায় করছে।

চিংকুম পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সুভাষ কান্তি মজুমদার বলেন, আমি কারো কাছ থেকে টাকা নেইনি। যে নিয়েছে তার জবাব সে দেবে। কোরাম পূর্ণ করতে আমরা ৮ম শ্রেণীর কয়েকজনকে পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ দেই।

স্কুল মিল প্রোগ্রাম এর বাস্তবায়নকারী এনজিও এন.জেড একতা মহিলা সমিতির প্রোগ্রাম কডিনেটর গোলাম সরোয়ার স্বপন জানান, নিয়োগের সম্পূর্ণ বিষয়টি স্কুল কমিটির হাতে। তারা রান্নাঘর নির্মাণ ও রাধূনী নিয়োগ সম্পন্ন করলে আমরা রাধূনীর বেতন ও খাবারের জন্য আর্থিক সহায়তা প্রদান করি এবং কর্মসূচী তদারকি করব। রাধূনী নিয়োগে আমাদের সম্পৃক্ততা নেই।

উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার তপন চৌধুরী বলেন, কয়েকটি অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

পাঠকের মতামত: