ঢাকা,শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪

রোহিঙ্গাদের ত্রাণ যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন স্থানে, গড়ে উঠেছে ক্যাম্প ভিত্তিক শক্তিশালী সিন্ডিকেট

নিউজ ডেস্ক ::
উখিয়া ও টেকনাফের বিভিন্ন ক্যাম্পে থাকা রোহিঙ্গা দেওয়া হচ্ছে সপ্তাহিক,মাসিক ভিত্তিতে ত্রাণ। এসব ত্রাণ বিতরণের দায়িত্বে রয়েছে ক্যাম্পে কর্মরত বিভিন্ন এনজিও সংস্থা। বিতরণকৃত ত্রাণ মালামাল গুলো রোহিঙ্গাদের চাহিদার অতিরিক্ত হওয়ায় মুহুর্তের মধ্যে নগদ টাকায় বিক্রয় হয়ে যাচ্ছে সিন্ডিকেটের হাতে। পাশাপাশি উখিয়ার একটি প্রভাবশালী সিন্ডিকেট এসব ত্রাণ গাড়ী ভর্তি করে দেশের বিভিন্ন স্থানে পাচার করে আসছে গত ২০১৭সালের আগষ্টের পর থেকে।
উখিয়ার কুতুপালং ও বালুখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ১২টি ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রে প্রতিদিনই লাখ টাকার ত্রাণ ও অর্থ সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। প্রতিটি ক্যাম্পেই রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণে ত্রাণ। রোহিঙ্গাদের মধ্যে প্রয়োজন বাইরে অতিরিক্ত ত্রাণসামগ্রী দেওয়া হচ্ছে। খাদ্যপণ্যের পাশাপাশি গৃহনির্মাণ সামগ্রী, কম্বল ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র দেওয়া হচ্ছে ঢালাও ভাবে।
বালুখালী ২নং ক্যাম্পের আইয়ুব জানান, বাংলাদেশে আসার পর থেকে বিপুল পরিমাণ ত্রাণ পেয়েছেন তারা। মিয়ানমারে যে অভাব ছিল তা এখন রোহিঙ্গা ক্যাম্পে নেই। প্রতি সপ্তাহেই ত্রাণ পাচ্ছেন। তার ছোট ঘরে এত ত্রাণ রাখার জায়গা নেই। তাই ত্রাণ বিক্রি করে কিছু নগদ কিছু টাকা পেলেই স্বস্বি। তার মতো অনেকেই ত্রাণ বিক্রি করে টাকা জমা করছে।
থাইংখালী জামতলি ক্যাম্পের বাসিন্দা মোহাম্মদ হোসেন জানান, তার পরিবারের সদস্য সংখ্যা অনুযায়ী যেসব ত্রাণ পেয়ে তাকে তার বিক্রি করে মাসে ৩/৪হাজার টাকা পাওয়া যায়। একই কথা তাজনিমারখোলা রোহিঙ্গা ক্যাম্পের হাফেজ জালাল আহমদ নামের আরেক রোহিঙ্গার।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নগদ টাকার জন্য দেশি-বিদেশি সাহায্য সংস্থা, বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের দেওয়া বিভিন্ন ধরনের ত্রাণ সামগ্রী বিক্রি করে দিচ্ছে রোহিঙ্গারা। বাজার থাকা দামের চেয়ে অর্ধেক দামে এসব সামগ্রী বিক্রি করছে তারা। আর অল্পমূল্যে কেনা এসব ত্রাণ সামগ্রী কিনে বেশি দামে বিক্রি করছেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। ত্রাণ কিনতে রোহিঙ্গা ক্যাম্পভিত্তিক কয়েকটি সিন্ডিকেটও গড়ে উঠেছে এরই মধ্যে।
বিভিন্ন ক্যাম্প বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বাজারে এক কেজি চালের দাম ৫০-৬০ টাকা। সেখানে রোহিঙ্গারা ত্রাণের চাল বিক্রি করছে মাত্র ৩০ টাকা কেজি দরে। ৬০ টাকা কেজি দরে চিনি কিনে রোহিঙ্গাদের দেওয়া হচ্ছে। আরা রোহিঙ্গারা সেই চিনি বিক্রি করছে মাত্র ৩০ টাকায়। বাজারে প্রতি কেজি ডালের দাম ১২০ টাকা। সেখানে রোহিঙ্গারা বিক্রি করছে ৬০/৭০ টাকায়। ১২০ টাকা লিটারের সয়াবিন তেল বিক্রি করছে মাত্র ৬০ টাকায়। এছাড়া ৫০০ গ্রাম ডানো দুধ বিক্রি করছে ১০০ টাকায়। স্থানীয় লোকেরা অভিযোগ করে জানান, দাম কম হলেও এসব মালামালের মান সম্পর্কে প্রশ্ন রয়েছে। রোহিঙ্গাদের যেসব মালামাল দেওয়া হচ্ছে তার অধিকাংশ মেয়াদোত্তীর্ণ ও নি¤œমানের। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ৫-৭ জন সদস্যের একটি রোহিঙ্গা পরিবারকে সপ্তাহে দুই বার ত্রাণ দেওয়া হয়। এর মধ্যে ১০-১৫ কেজি চাল, ২-৩ কেজি ডাল ও ২-৩ লিটার তেল দেওয়া হয়। এ হিসাব অনুযায়ী, তারা সপ্তাহে ২০-৩০ কেজি চাল, ৪-৬ কেজি ডাল ও ৪-৬ লিটার তেল পান।নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় লোকজন জানান, উখিয়ার পূর্ব ষ্টেশনের প্রতিদিন সন্ধ্যার পর থেকে রোহিঙ্গাদের ত্রাণের মালামাল গাড়ী ভর্তি করা হয়ে থাকে। যেসব মালামাল রাতেই দেশের বিভিন্ন স্থানে চালান হয়ে যায়। স্থানীয় একটি প্রভাবশালী সিন্ডিকেট এই কাজ গুলো চালিয়ে যাচ্ছে বলে তাদের অভিযোগ। উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ নিকারুজ্জামান চৌধুরী জানান, রোহিঙ্গা বাজারে ইতিপূর্বে বেশ কয়েকবার অভিযান চালানো হয়েছে। জব্ধ করা হয়েছে বিভিন্ন ত্রাণের মালামাল। কুতুপালং ও বালুখালী ক্যাম্প এলাকায় গড়ে উঠা ফার্মেসী ও স্বর্ণের দোকানে অভিযান চালিয়ে গত কয়েকদিনে অন্তত ২৫জনকে আটক করা অর্থদ- ও কারাদ- দেওয়া হয়েছে। তবে এ অভিযান অব্যাহত থাকবে তিনি জানান।

পাঠকের মতামত: