ঢাকা,শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪

ইয়াবা কি আগের মতোই আছে, নাকি বদলে গেছে জানতে খুবই ইচ্ছে করে….

এম.আর. মাহামুদ ::

ভারতের বিশিষ্ট কন্ঠশিল্পী মান্না দে’র গানের কলিটি বার বার মনে পড়ে “তুমি কি আগের মতোই আছো, নাকি অনেক খানি বদলেই গেছ, খুব জানতে ইচ্ছে করে” অনুরূপ ভাবে “ইয়াবা কি আগের মতো আছে, না বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, জানতে খুবই ইচ্ছে করে” কক্সবাজারের একটি দৈনিকে ছাপানো হয়েছে এক দিনে ৯ লাখ ৩০ হাজার পিচ ইয়াবা জব্দ। সংবাদটি অতি গুরুত্বপূর্ণ। আইন প্রয়োগকারী সংস্থা কঠোর না হলে এ পরিমাণ ইয়াবা কোনদিনই জব্দ করা সম্ভব হতনা। সংবাদটি দেখে গ্রামের সহজ-সরল একজন পাঠক মন্তব্য করতে শোনা গেছে ইয়াবা যেন দ্রুপদির শাড়ি। যতই টানে ততই লম্বা হয়। তার মতে ইয়াবা পাচার কোন ভাবেই ঠেকানো যাচ্ছে বলে মনে হচ্ছেনা। মিয়ানমার থেকে প্রতিনিয়ত নানা কৌশলে ইয়াবার চালান দেশে ঢুকছে। টেকনাফ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রনজিত কুমার বড়–য়ার নেতৃত্বে গত পরশু ইয়াবার একটি বড় চালান জব্দ করেছে। এ জন্য পুলিশের ওই পরিদর্শককে সাধুবাদ না জানালে কৃপনতাই হবে। ইয়াবা পাচারে জড়িত বেশিরভাগ পালের গোদা অধরা। আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ইয়াবার পাচার রোধে ব্যস্ত। পুলিশ, বিজিবি, র‌্যাব, কোষ্টগার্ড প্রতিদিন কম হোক বেশি হোক ইয়াবার চালান জব্দ করছে। কোন কোন সময় পাচার কারীরাও ধরা পড়ছে। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ইয়াবা জব্দ হলেও পাচার কারীরা অধরাই থেকে যাচ্ছে। তারপরও ইয়াবা পাচার পুরোপুরি বন্ধ হচ্ছে বলে মনে করার কোন কারণ নাই। পুরো জেলার গ্রাম গঞ্জে কম বেশি ইয়াবা বিক্রি হচ্ছে। এক শ্রেণীর যুবক ইয়াবা ক্রয়ের অর্থ যোগাড় করতে গিয়ে নানা অপরাধে জড়াচ্ছে। সড়ক ও সমুদ্র পথে ইয়াবার চালান দেশের বিভিন্ন স্থানে পাচার হচ্ছে। ইয়াবার কারণে একটি প্রজন্ম ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। প্রতিবেশী রাষ্ট্র মিয়ানমার থেকে ইয়াবা, বন্ধু রাষ্ট্র ভারত থেকে পেনসিডিল আসার কারণে আমাদের দেশটি যেন ইয়াবা ও পেনসিডিল এর ভান্ডারে পরিণত হয়েছে। আবার এসব নেশার উপকরণ বিক্রি করে কিছু কিছু ব্যক্তির ভাগ্য রাতারাতি পরিবর্তন হচ্ছে। যা কল্পনা করার মত নয়। নেশার জগতে ইয়াবা এখন আলোচিত একটি নাম। এক সময় গ্রামে গঞ্জে গাজা, আফিং, ছোলাই মদের প্রচলন বেশি ছিল। এখন কিন্তু গাজা ও ছোলাই মদের অস্তিত্ব থাকলেও আফিং এর অস্তিত্ব নেই। সমাজের উচু মানের নেশাগ্রস্থরা বারে গিয়ে বিনা বাধায় বিদেশী মদ পান করছে। দরিদ্র শ্রেণির নেশাখোরদের জন্য গ্রামে গঞ্জে বাংলা মদ (ছোলাই মদ) হর-হামেশা পাওয়া যাচ্ছে। তবে হাত বাড়ালে ইয়াবা পাওয়ার কারণে যুব সমাজ ইয়াবার পিছনে ছুটছে। মিয়ানমারের শাসকগোষ্ঠী সে দেশের বাসিন্দা রোহিঙ্গাদের জোর পূর্বক দেশ ছাড়া করছে। মানবিক কারণে ওইসব রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠি উখিয়া ও টেকনাফে আশ্রয় নিয়েছে। আবার কিছু কিছু রোহিঙ্গা নানা কৌশলে ক্যাম্প থেকে পালিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ছে। একদিকে রোহিঙ্গাদের তাড়িয়ে আমাদের দেশের বিশাল ক্ষতি করেছে। অন্যদিকে নেশার অন্যতম উপকরণ ইয়াবা পাচার করে দেশের যুব সমাজকে ধ্বংস করে দিচ্ছে। আন্তর্জাতিক ভাবে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেয়ার জন্য চাপ সৃষ্টি করলেও মিয়ানমারের শাসকগোষ্ঠি এসব কর্ণপাত করছেনা। ইতিমধ্যে তারা সেন্ট মার্টিন দ্বীপ তাদের দেশের অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে দাবী করার দৃষ্টতাও দেখাচ্ছে। এসব দেখে মনে হয় বাংলাদেশ যেন “গরীবের বউ”এ পরিণত হয়েছে। কি জানি রোহিঙ্গাদের চাপ ও ইয়াবার আগ্রাসন কিভাবে ঠেকানো যায় তা নিয়ে সরকার মাথা ঘামাচ্ছে। আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ইযাবা ঠেকানোর জন্য “চলো যাই যুদ্ধে, মাদকের বিরুদ্ধে” এই স্লোগান নিয়ে মাদক বিরুধী অভিযান পরিচালিত হলেও এখন সেই যুদ্ধ থেমেই গেছে। ফলে ইয়াবা পাচার আবার লাগামহীন হয়ে পড়েছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয় কর্তৃক তালিকাভুক্ত অনেক ইয়াবা পাচার কারী এখনো অধরা। তারা বহাল তবিয়তে ইয়াবা পাচার করে যাচ্ছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা শান্তি শৃঙ্খলা রক্ষায় মাঠে থাকবে। এ সময় ইয়াবা পাচারকারীদের তৎপরতা আরো বৃদ্ধি পাওয়ার আশংকা করছে অভিজ্ঞ জনেরা। মূলত মূল ইয়াবা পাচারকারীদের আইনের জালে আটকানো সম্ভব না হলে ইয়াবা পাচার কোনদিনই রোধ করা সম্ভব হবেনা বলে মনে হয়না। অতএব, দাবীদার বিহীন ইয়াবা আটকের চাইতে ইয়াবা পাচারে জড়িত রাগব বোয়ালদের আইনের আওতায় আনা সম্ভব হলে দেশবাসী ইয়াবার আগ্রাসান থেকে রক্ষা পাবে বলে বিজ্ঞজনদের অভিমত। সরকার ইতিমধ্যে ইয়াবাসহ মাদক পাচারকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর আইন পাশ করার নিতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আইন প্রয়োগকারী সংস্থা এ আইন প্রয়োগে কঠোর হলে ইয়াবাসহ মাদক পাচার রোধ হবে বলে আম জনতার অভিমত। দুঃখ জনক হলেও সত্য ইয়াবা পাচার করে রাতারাতি ভাগ্য পরিবর্তনের কারণে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার অনেক সদস্য ইয়াবা পাচারের মত অপকর্মে জড়িয়ে পড়ছে। ইতিমধ্যে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা অনেক সদস্য ইয়াবাসহ আটকও হয়েছে। যা আইন প্রয়োগকারী সংস্থার জন্য অশনি সংকেত।

পাঠকের মতামত: