ঢাকা,শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪

বিএনপিকে মামলায় ব্যস্ত রাখার কৌশল!

অনলাইন ডেস্ক ::   সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা অনুযায়ী আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হওয়ার কথা। নির্বাচন সামনে রেখে দেশের প্রধান দুই দলের মুখোমুখি অবস্থানও এখন ক্রমশ স্পষ্ট হচ্ছে। বিএনপি খালেদা জিয়াকে জেলে রেখে নির্বাচনে যাবে কি না, আর গেলেও সে নির্বাচনে শেষ পর্যন্ত কী হয় এ ধরনের নানা প্রশ্নে সব মহলে সংশয় বাড়ছে। তবে পরিস্থিতি দেখে মনে হচ্ছে নির্বাচন নিয়ে কৌশলে এগোচ্ছে দুই দলই। ক্ষমতাসীন দল যে কৌশলে এগুচ্ছে তাতে বিএনপি অভিযোগ করছে, তাদের চাপে রেখে নির্বাচন করতে চায় তারা। বিএনপি নেতারা বলে আসছেন, নির্বাচন ঘনিয়ে আসলেও এখন পর্যন্ত নির্বাচনের পরিবেশ নেই। সরকার বিএনপির নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে গায়েবি মামলা ও গ্রেপ্তারের মাধ্যমে হয়রানি করে যাচ্ছে। এসব গায়েবি মামলা ও ষড়যন্ত্র করে সরকার বিএনপিকে নির্বাচন থেকে দূরে রাখার কৌশল আঁটছে। তবে সরকারি দলের নেতারা বলছেন, বিএনপি নির্বাচন বানচাল করার জন্য এসব অভিযোগ করছে। তারা নাশকতা করে দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করে নির্বাচন বানচাল করার ষড়যন্ত্র করছে।
গতকাল নয়া পল্টনে দলীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বিএনপি নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে ৯০ হাজার মামলা দেওয়ার পরিসংখ্যান তুলে ধরে বলেছেন, তাদের নির্বাচনের বাইরে রাখতেই এই কৌশল নিয়েছে সরকার। তিনি বলেন, গত ১ সেপ্টেম্বর থেকে ৫ অক্টোবর পর্যন্ত গায়েবী মামলার সংখ্যা ৪ হাজার ১৪৯। এর মধ্যে জ্ঞাত আসামির সংখ্যা ৮৬ হাজার ৬৯২ এবং অজ্ঞাত আসামি ২ লাখ ৭৬ হাজার ২৭৭ জন। জেল হাজতে আসামির সংখ্যা ৭৫ হাজার ৯২৫ জন। ফখরুল বলেন, এটা থেকে একটা জিনিসই প্রমাণিত হয়, সরকার সম্ভাব্য সব রকমের প্রচেষ্টা চালাচ্ছে যেন বিএনপি নির্বাচনে যেতে না পারে।
ফখরুল বলেন, ‘দেশনেত্রীকে মিথ্যা মামলা দিয়ে কারাগারে আটক করে রাখা, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে মিথ্যা মামলায় নির্বাসিত করে রাখা এবং আমাদের সিনিয়র নেতাদের মামলাগুলো দ্রুত শেষ করার চেষ্টা করা হচ্ছে, যাতে তাদেরকে নির্বাচন থেকে দূরে রাখার একটা প্রক্রিয়া তারা (সরকার) বের করতে পারে।’ এরকম পরিস্থিতি নির্বাচনের জন্য ‘অনুকূল নয়’ মন্তব্য করে তিনি বলেন, নির্বাচনে যেন বিরোধী দল অংশগ্রহণ করতে না পারে, তার জন্য সবরকম অবস্থা তারা তৈরি করে রাখছে। ফখরুল বলেন, আমরা একটা সুষ্ঠু নির্বাচন চাই। নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করতে হবে। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিতে হবে। নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে দায়ের করা সমস্ত মামলা প্রত্যাহার করতে হবে। আমরা যে ৭ দফা দিয়েছি তা মেনে নিয়ে একটা পরিবেশ তৈরি করতে হবে। ২০০৯ সাল থেকে বিএনপির ১ হাজার ৫১২ জন হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন বলে দাবি করেন ফখরুল। তিনি বলেন, মোট গুমের সংখ্যা ১ হাজার ২০৪ জন। এর মধ্যে পরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হেফাজত থেকে গ্রেপ্তার দেখানো হয় ৭৮১ জন এবং গুম হয়ে আছে এখন ৪২৩ জন।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, বিদেশে দেশে তারা (সরকার) সবাই বক্তৃতা করার সময়ে বলছেন যে, দেশে সুষ্ঠু নির্বাচন হবে। লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড থাকবে, সবাই নির্বাচন করতে পারবে। এই পরিসংখ্যানে একটা জিনিসই প্রমাণিত হয়, সরকার সব প্রচেষ্টা চালাচ্ছে যেন বিএনপি নির্বাচনে যেতে না পারে। আমরা মনে করি, এটা শুধু বিএনপির জন্য নয়, বিরোধী দলগুলোর জন্য নয়, এটা সমগ্র জাতির জন্য বিপজ্জনক। কোন দিকে নিয়ে যাচ্ছে দেশকে।
মীরসরাইয়ে জঙ্গি আস্তানার সন্ধান প্রসঙ্গে ফখরুল বলেন, ‘আবার আগের নাটক শুরু হয়ে গেছে। এই আলামত কিসের? কোন দিকে কোন উদ্দেশ্যে জাতিকে নিয়ে যেতে চায়, এটা আমাদের কাছে বড় আশঙ্কা ও উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
অন্যদিকে বিএনপি নির্বাচন ঠেকাতে গোপনে নাশকতার প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে দাবি করেছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, বিএনপি আন্দোলন নয়, বোমা-সন্ত্রাস ও নাশকতার প্রস্তুতি নিচ্ছে। কিন্তু এবার নাশকতা করলে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে প্রতিরোধ করা হবে। সরকার বিএনপিকে ভোটের বাইরে রাখতে চায় বলে দলটির নেতাদের অভিযোগের প্রেক্ষাপটে শনিবার ঢাকার চকবাজারে আওয়ামী লীগের গণসংযোগে গিয়ে বক্তব্য দেওয়ার সময় এই দাবি করেন তিনি। নিজের নির্বাচনী এলাকার প্রতিদ্বন্দ্বী মওদুদ সম্পর্কে কাদের বলেন, ‘বিএনপি মওদুদের পরামর্শ যত শুনবে তত ডুববে।’ উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় রাখতে জনগণের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
দু’ দলের পরষ্পর বিরোধী এ অবস্থান নিয়ে সচেতন মহলে প্রশ্ন- কী হবে শেষ অবধি? নির্বাচন হবে তো? বিএনপি আসবেতো নির্বাচনে? নাকি আবার একতরফা নির্বাচন? এরকম বহু প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে জনমনে।

পাঠকের মতামত: