ঢাকা,শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪

চট্টগ্রাম–কক্সবাজার মহাসড়ক চার লেন নয়, ছয় লেনের হবে মাতামুহুরীসহ চার সেতু

নিজস্ব প্রতিবেদক, চকরিয়া ::

চট্টগ্রাম–কক্সবাজার মহাসড়কের চকরিয়ার চিরিঙ্গাস্থ নতুন মাতামুহুরী সেতু নির্মিত হবে চার লেনের পরিবর্তে ছয় লেনের। এজন্য সরকারের সেতু বিভাগ মাতামুহুরী সেতুটির নতুন ডিজাইন চূড়ান্ত করেছে। নতুন করে চুড়ান্ত করা ডিজাইন অনুযায়ী এই সেতুটি নির্মিত হবে ছয় লেনের। একইসঙ্গে মহাসড়কের পটিয়ার ইন্দ্রপুল সেতু, চন্দনাইশের বরগুনি সেতু ও দোহাজারীর সাঙ্গু সেতুও ছয় লেনের করতে ডিজাইন চূড়ান্ত করা হয়েছে।

শুধু তাই নয়, খুব সহসাই এই সেতুর নির্মাণকাজের প্রক্রিয়া শুরু হবে। এজন্য চট্টগ্রাম–কক্সবাজার মহাসড়কের মাতামুহুরী সেতুসহ চার সেতু নির্মাণ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক ছয় লেনের মাতামুহুরী সেতু নির্মাণে ভূমি অধিগ্রহণের জন্য কক্সবাজার জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের ভূমি অধিগ্রহণ শাখায় ইতোমধ্যে ২০ কোটি টাকার চেক জমা দিয়েছেন। অপরদিকে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের একই শাখায় ভূমি অধিগ্রহণের চেক জমা দেওয়া হয়েছে প্রকল্প পরিচালকের দপ্তর থেকে।

বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন। তিনি দৈনিক চকরিয়া নিউজকে জানান, চট্টগ্রাম–কক্সবাজার মহাসড়কের চকরিয়ার মাতামুহুরী সেতু নির্মাণের জন্য ভূমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া শুরু করা হবে শীঘ্রই। এজন্য কয়েকদিন আগে প্রকল্প পরিচালকের দপ্তর থেকে জেলা প্রশাসকের ভূমি অধিগ্রহণ শাখায় ২০ কোটি টাকার চেক জমা হয়েছে। এতে দীর্ঘদিনের প্রতীক্ষার অবসান হতে যাচ্ছে কঙবাজার জেলাবাসীর।

কক্সবাজার সড়ক ও জনপথ বিভাগ সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম–কক্সবাজার মহাসড়কের বহুল প্রতিক্ষিত চকরিয়ার মাতামুহুরী সেতুটি ইতোপূর্বে চার লেনে নতুন করে নির্মাণের জন্য সকল ধরণের প্রক্রিয়া চুড়ান্ত করা হয়েছিল। তবে মাতামুহুরী সেতুটি ‘ক্রস বর্ডার কানেকটিং প্রজেক্ট’ এর আওতায় নেওয়ার জন্য চার লেনের পরিবর্তে ছয় লেনের ডিজাইন চূড়ান্ত করে ফেলা হয়েছে। ছয় লেনের চার সেতু নির্মাণ প্রকল্প পরিচালকের কার্যালয় সূত্র জানায়, মাতামুহুরী সেতুর ন্যায় বাকি তিন সেতুও ছয় লেনের করা হবে। যাতে ভবিষ্যতে যোগাযোগ ব্যবস্থায় কোন ধরণের বেগ পেতে না হয়।

সূত্র আরো জানায়, বর্তমান সরকার কক্সবাজারের বিভিন্ন উপজেলার বড় বড় মেগাপ্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। তন্মধ্যে মাতারবাড়ি কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্প, পেকুয়া উজানটিয়ায় বিদ্যুৎ প্রকল্প, গভীর সমুদ্র বন্দর, মাতারবাড়ি থেকে চকরিয়ার ফাঁসিয়াখালী পর্যন্ত ছয় লেনের সড়ক নির্মাণসহ হাজার হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। আর এসব প্রকল্পের বাস্তবায়ন তথা ভবিষ্যতের কথা মাথায় রেখে ‘ক্রস বর্ডার কানেকটিং প্রজেক্ট’র আওতায় নেওয়া হয়েছে মাতামুহুরীসহ মহাসড়কের চার সেতুকে।

জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো অপারেশন এজেন্সির (জাইকা) অর্থায়নে সরকারের সেতু বিভাগ এবং সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর ৩০৮ কোটি টাকা ব্যয়ে সেতুগুলো নির্মাণ করছে।

বিষয়টি নিশ্চিত করে ছয় লেনের চার সেতু নির্মাণ প্রকল্পের ডেপুটি প্রজেক্ট ম্যানেজার সৈয়দা তানজিমা সুলতানা গতরাতে দৈনিক চকরিয়া নিউজকে বলেন, ‘এই চার সেতু নির্মাণের জন্য মার্চে দরপত্র খোলা হয়। এর পর থেকে দরপত্র মূল্যায়ন প্রক্রিয়ার কাজ চলে।’ তিনি জানান, চট্টগ্রাম–কঙবাজার মহাসড়কের এই চার সেতু নির্মাণের প্রক্রিয়া শুরু করতে অতিসম্প্রতি ভূমি অধিগ্রহণ বাবদ প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ ছাড় করা হয়েছে। ভূমি অধিগ্রহণের এই অর্থ চট্টগ্রাম এবং কঙবাজার জেলা প্রশাসকের ভূমি অধিগ্রহণ শাখায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।

চার সেতু নির্মাণ প্রকল্পের এই কর্মকর্তা দৈনিক চকরিয়া নিউজকে আরো জানান, এসব সেতুর নির্মাণকাজ দ্রুত শুরু করার জন্য একদিকে ভূমি অধিগ্রহণের বিষয়টি চুড়ান্ত করার পাশাপাশি চূড়ান্তভাবে ঠিকাদার নিয়োগেরও প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। বর্তমানে ঠিকাদার নিয়োগের মূল্যায়ন প্রক্রিয়া শেষপর্যায়ে। তিনি আশা প্রকাশ করেন, চলতি বর্ষা মৌসুম শেষ হলেই ঠিকাদার কাজ শুরু করতে পারবে। তার আগেই নিয়োগ দেওয়া হবে ঠিকাদার।

সেতু বিভাগ ও সওজ সূত্র জানায়, বিগত দুইবছর ধরে চারটি সেতুর মাটি পরীক্ষা, স্থান নির্বাচন ও ডিজাইন চূড়ান্ত করা হয়। সেতু নির্মাণে জাইকার অর্থায়নের বিষয়টিও পুরোপুরি নিশ্চিত। তাছাড়া চট্টগ্রাম–কঙবাজার মহাসড়কের চার সেতুর মধ্যে মাতামুহুরী সেতুর অবস্থা খুবই নাজুক। এজন্য সব সেতুর কাজ একসঙ্গে শুরুর পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। তবে মাতামুহুরী সেতুর কাজ আগেই শুরু হবে। এসব সেতুর নির্মাণকাজ শেষ হতে তিন বছর সময় লাগবে।

জানা গেছে, মাতামুহুরী নদীর উপর পাকিস্তান আমলে নির্মিত সেতুটি ধসে পড়ার উপক্রম হয়েছে অন্তত তিন বছর আগে। সেতুর উপরে–নিচে জোড়াতালি দিয়ে ধস ঠেকানোর কাজ করে সড়ক ও জনপথ বিভাগ। ঝুঁকিপূর্ণ সেতু দিয়ে চলতে গিয়ে একাধিক দুর্ঘটনায় অনেক প্রাণহানিও হয়েছে। এনিয়ে শীর্ষ গণমাধ্যমে অনেক সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশ পেয়েছে। এলাকাবাসী বিক্ষোভ–মানববন্ধন কর্মসূচিও পালন করেন। জনপ্রতিনিধিরা মন্ত্রণালয়ে নানা তদবির করেছেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে সড়ক ও জনপথ বিভাগ ২ কোটি ৩০ লাখ টাকা ব্যয়ে মাতামুহুরী সেতুর ভেঙে পড়া অংশের মেরামত করেন। ‘রেট্রোফিটিং’ ডিজাইন অনুযায়ী সেতুর নিচে দুর্বল পিলারগুলো মেরামত, স্টিল পাইপ বসানো এবং সেতুর উপরের ভাঙা অংশের মেরামত করে সেখানে স্ল্যাব বসিয়ে বিদ্যমান সেতুর মতো সমান করে দেওয়া হলেও এর দীর্ঘস্থায়ী সুফল পাওয়া নিয়ে যথেষ্ট শঙ্কায় এলাকাবাসী।

চকরিয়া উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি জাফর আলম দৈনিক চকরিয়া নিউজকে বলেন, ‘মাতারবাড়ি কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্পসহ বড় বড় মেগা প্রকল্পের সুবিধার্থে চট্টগ্রাম–কঙবাজার মহাসড়কের মাতামুুহরী সেতুটি ছয় লেনে নির্মিত হবে। এই সেতুটির সঙ্গে সরাসরি সংযোগ স্থাপন হবে মাতারবাড়ি থেকে চকরিয়া ফাঁসিয়াখালী পর্যন্ত ২৫ কিলোমিটারের ছয় লেনের সড়কটিও। যা কঙবাজারবাসীর জন্য বড় ধরণের আশীর্বাদ।’

জাফর আলম বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কঙবাজারবাসীর জন্য অনেক কিছুই করে দিয়েছেন। মহাসড়কটিও চারলেনে রূপান্তর করবেন। তার আগে মাতামুহুরী সেতুটি ছয় লেনের নির্মাণকাজ শুরু করবেন। এখন আমাদের দেওয়ার পালা প্রধানমন্ত্রীকে।

মাতামুহুরী সেতু ছয় লেনে নির্মাণ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সড়ক ও জনপথ বিভাগ চকরিয়া কার্যালয়ের সহকারী প্রকৌশলী আবু এহেছান মো. আজিজুল মোস্তফা গতরাতে দৈনিক চকরিয়া নিউজকে বলেন, ‘চট্টগ্রাম–কঙবাজার মহাসড়কটিও খুবই ব্যস্ততম। এই সড়ক দিয়ে প্রতিদিন দ্রুতগতির হাজারো ভারী যানবাহন চলাচল করছে। পাশাপাশি ধীরগতির হালকা যানবাহনও চলে এই সেতুর ওপর দিয়ে। তাই সবকিছু বিবেচনায় নিয়ে নীতিনির্ধারণী মহল এই সেতুটিকে চার লেনের পরিবর্তে ছয় লেনের করতে সবকিছু চূড়ান্ত করেছে। তন্মধ্যে দুইদিকের দুই লেনে চলবে ধীরগতির হালকা যানবাহন এবং চার লেনে চলবে দ্রুতগতির ভারী যানবাহন।

চকরিয়া পৌরসভার মেয়র ও উপজেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম সম্পাদক আলমগীর চৌধুরী দৈনিক চকরিয়া নিউজকে বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকার কঙবাজারকে ঘিরে অনেক মেগা প্রকল্প অত্যন্ত দ্রুততার সাথে বাস্তবায়ন করছে। এসব প্রকল্প ঘিরে দেশি–বিদেশিদের আসা–যাওয়া বেড়েছে। তাদের যোগাযোগের প্রধান মাধ্যম চট্টগ্রাম–কঙবাজার মহাসড়ক।’

মেয়র আরো বলন, শুধু তাই নয়, পর্যটন খাতের ব্যবসার প্রায় পুরোটাই নির্ভরশীল এই মহাসড়ক হয়ে। তাই মাতামুহুরী সেতুটির অর্থনৈতিক গুরুত্ব অনেক বেশি। তাই মাতামুহুরী সেতুটি ছয় লেনে নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। তাছাড়া সীমান্ত বাণিজ্য সমপ্রসারণের অংশ হিসেবে জাইকার অর্থায়নে সেতুগুলো নির্মাণ করা হচ্ছে।

পাঠকের মতামত: