ঢাকা,শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪

‘একই বিষয়ে একাধিক সংস্থার বিচ্ছিন্ন গবেষণায় রাষ্ট্রের অর্থের অপচয়’

আহমদ গিয়াস, কক্সবাজার :

আমাদের বঙ্গোপসাগরে ৪৭৫ প্রজাতির মাছ রয়েছে। আর বাংলাদেশের আভ্যন্তরীণ জলাশয়ে রয়েছে ২৬০ প্রজাতির মিঠা পানির মাছ। অথচ দেশের মৎস্য চাহিদা পূরণে বঙ্গোপসাগরের অবদান শতকরা মাত্র ১৬ ভাগ। আভ্যন্তরীণ জলাশয়গুলোই মূলত দেশের মৎস্য চাহিদা পূরণ করছে। উপকূলীয় জলাশয়ে বঙ্গোপসাগরের অন্তত ১০ প্রজাতির মাছের বাণিজ্যিক উৎপাদনের সম্ভাবনা থাকলেও এখনও মাত্র তিনটি মাছের বাণিজ্যিক উৎপাদন নিয়ে কাজ করছেন বিজ্ঞানীরা। পাশাপাশি ‘ব্লু-ইকোনমি’ জোরদারে সমুদ্রভিত্তিক অন্যান্য সম্ভাবনা নিয়েও কাজ করছে সরকারের বিভিন্ন দপ্তর। মঙ্গলবার কক্সবাজারে সামুদ্রিক মৎস্য ও প্রযুক্তি কেন্দ্র আয়োজিত ‘বার্ষিক গবেষণা পর্যালোচনা ও প্রস্তাবনা ’ বিষয়ে দিনব্যাপী এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইন্সটিটিউটের মহাপরিচালক ড. ইয়াহিয়া মাহমুদ একথা বলেন। অনুষ্ঠানে আগামী বছরের জন্য ৬টি গবেষণা প্রকল্পের প্রস্তাব করা হয়।

অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ড. ইয়াহিয়া মাহমুদ আরো বলেন, কিন্তু একই বিষয়ে সরকারের একাধিক সংস্থা বিচ্ছিন্নভাবে গবেষণা চালাচ্ছে বলে রাষ্ট্রের অর্থের অপচয় ঘটছে। তিনি রাষ্ট্রের স্বার্থে সকল গবেষণা কার্যক্রম সমন্বয়ের মাধ্যমে করার উপর জোর দেন।

অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইন্সটিটিউটের বিজ্ঞানী, মৎস্য অধিদপ্তরের বিজ্ঞানী, জরীপ জাহাজের বিজ্ঞানী এবং কৃষি অধিদপ্তর ও কৃষি গবেষণা ইন্সটিটিউটের বিজ্ঞানীরা উপস্থিত থেকে আলোচনায় অংশ নেন এবং তাদের গবেষণা সংক্রান্ত বিভিন্ন তথ্য উপস্থাপন করেন।

অনুষ্ঠানে জানানো হয়, সী-উইড বা সামুদ্রিক শৈবালের উৎপাদন ও বাণিজ্যিকভাবে বাজারজাতকরণ নিয়ে পৃথকভাবে গবেষণা চালাচ্ছে বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইন্সটিটিউট ছাড়াও কৃষি গবেষণা ইন্সটিটিউটের বিজ্ঞানীরা। এরমধ্যে মৎস্য গবেষণা ইন্সটিটিউটের বিজ্ঞানীরা প্রায় ৯০দিনে প্রতি মিটার নেটে সর্বোচ্চ ২৯ কেজি সামুদ্রিক শৈবাল উৎপাদনে সক্ষম হলেও কৃষি গবেষণা ইন্সটিটিউটের বিজ্ঞানীরা উৎপাদন করতে সক্ষম হয়েছেন সর্বোচ্চ ৬ কেজি।

মঙ্গলবার সকালে বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইন্সটিটিউটের কক্সবাজার প্রযুক্তি কেন্দ্রের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. জুলফিকার আলীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে ড. ইয়াহিয়া মাহমুদ আরো বলেন, বাংলাদেশ সমুদ্রসীমা বিজয়ের পর এর বিশাল অংশকে রাষ্ট্রের জনগণের সমৃদ্ধির জন্য কাজে লাগানোর পরিকল্পনা করছে সরকার। এজন্য সরকার গবেষণার উপর জোর দিচ্ছে এবং এজন্য মৎস্য বিজ্ঞানীদেরকে সমুদ্রে জরীপ চালানোর জন্য ‘মিন সন্ধানী’ নামের একটি জরীপ জাহাজ উপহার দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। এ বছর অক্টোবরে জাতিসংঘের একটি জরীপ জাহাজও আসবে। এজাহাজেও বাংলাদেশের বিজ্ঞানীরা প্রায় ৩ মাস ধরে গবেষণার সুযোগ পাবেন।

মহাপরিচালক বলেন, বঙ্গোপসাগরের মাৎস্য সম্পদ নিয়ে দেশে ১৯৭২-৭৩ সালে বঙ্গবন্ধু সরকারের আমলে সর্বশেষ জরীপ হয়েছিল। সে জরীপ অনুসারে আমাদের এই বিশাল বঙ্গোপসাগরে রয়েছে ৪৭৫ প্রজাতির মাছ। যার মধ্যে কেবল ৬৫ প্রজাতির মাছ আহরণযোগ্য। তাছাড়া আছে ৩৬ প্রজাতির সামুদ্রিক চিংড়ি, ৩ প্রজাতির লবস্টার, ২৫ প্রজাতির কাছিম ও ১১ প্রজাতির কাঁকড়া। কিন্তু বর্তমানে কত প্রজাতির মাছ রয়েছে তা নিয়ে গত প্রায় দেড় বছর ধরে গবেষণা চলছে জরীপ জাহাজ ‘মিন সন্ধানী’র সাহায্যে। জরীপে ইতোমধ্যে ২৩৬ প্রজাতির মাছ সনাক্ত হয়েছে। বিজ্ঞানীরা আশা করছেন, বিশ্বে রেকর্ড হয়নি এমন মাছেরও সন্ধান পাওয়া যেতে বঙ্গোপসাগরে। ইতোমধ্যে বঙ্গোপসাগরে এমন কিছু মাছ দেখা গেছে, যা অতীতে দেখা যায়নি।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্সটিটিউট অব মেরিন সায়েন্স এন্ড ফিশারিজ এর পরিচালক ড. জাহেদুর রহমান চৌধুরী ও বাংলাদেশ মৎস্য অধিদপ্তরের পরিচালক ড. একেএম আমিনুল হক। বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা জাকিয়া হাসানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত উক্ত আলোচনায় আরো অংশ নেন বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইন্সটিটিউটের পরিচালক ড. মোহাম্মদ নুরুল্লাহ, উপপরিচালক ড. আবদুর রাজ্জাক, জেলা মৎস্য কর্মকর্তা ড. মোহাম্মদ আবদুল আলিম, মৎস্য গবেষণা ইন্সটিটিউটের কক্সবাজার প্রযুক্তি কেন্দ্রের উর্ধতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. শফিকুর রহমান, বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা আশরাফুল হক, মহিদুল ইসলাম, শাহজাদ কুলী খান ও শাহনুর জাহেদুল হাসান ছাড়াও কক্সবাজার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক, কক্সবাজার সদর উপর কৃষি কর্মকর্তা, কৃষি গবেষণা ইন্সটিটিউট কর্মকর্তা, উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা, মৎস্য উৎপাদনকারী খামারী ও সাংবাদিকরা। পরে এ বিষয়ে একটি চূড়ান্ত প্রস্তাবনা তৈরি করে অনুমোদনের জন্য বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইন্সটিটিউটে প্রেরণ করা হবে বলে অনুষ্ঠানে জানানো হয়। ডিজি ড. ইয়াহিয়া মাহমুদ জানান, জাতীয়ভাবে এ বিষয়ে বৈঠকের পর গবেষণার জন্য প্রস্তাবিত প্রকল্পগুলো চূড়ান্ত করে সেখানে অর্থ বরাদ্দ দেয়া হবে।

পাঠকের মতামত: