ঢাকা,শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪

ফাঁসিয়াখালী রেঞ্জ থেকে বনকর্মীদের যোগসাজসে কাঠ পাচার, ন্যাড়া পাহাড়ে হুমকির মূখে পরিবেশ

চকরিয়া প্রতিনিধি ঃ-
কক্সবাজার উত্তর বনবিভাগের চকরিয়া উপজেলার ফাঁসিয়াখালী রেঞ্জ থেকে প্রতিদিন লাখ লাখ টাকা মূল্যের অবৈধ কাঠ পাচার হচ্ছে। বনকর্মীদের যোগসাজসে মূল্যবান সেগুনসহ বিভিন্ন প্রজাতির কাঠ কেঠে ফেলার সবুজ বৃক্ষরাজিতে পরিপূর্ণ বনাঞ্চল সমুহ ন্যাড়া পাহাড়ে পরিনত হওয়ায় পরিবেশ হুমকির সম্মূখীন হয়ে পড়েছে। এ রেঞ্জ নিয়োজিত এক শ্রেনীর অসাধু ও দূর্নীতিবাজ বনকর্মকর্তাদের সহযোগিতায় সংরক্ষিত বনাঞ্চল থেকে প্রতিদিন শতশত ঘনফুট মূল্যবান কাঠ বিনাবাধায় পাচার হয়ে যাচ্ছে সড়ক ও নদী পথে। ঈদুল ফিতরের আগে থেকে শুরু করে গত এক মাসের মধ্যে প্রায় কোটি টাকা মূল্যের অবৈধ কাঠ ইতিমধ্যে পাচার হয়ে গেছে। অতিরিক্ত লাভের আশায় ঈদের সময় দীর্ঘ ছুটির সুযোগ নিয়ে সরকারী বনাঞ্চল থেকে গাছ কেটে সিন্ডিকেট কাঠ চোরাকারবারিরা প্রায় কোটি টাকা মূল্যের সেগুন, গর্জন, গামার, একাশি ও বেলজিয়ামসহ বিভিন্ন প্রজাতির কাঠ অবৈধ ভাবে পাচার করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এসব অবৈধ কাঠ পাচারে সহযোগিতা করার বিনিময়ে সংশ্রিষ্ট বনকর্মীরা হাতিয়ে নিয়েছে লাখ লাখ টাকা ।
বিশেষ ফাঁসিয়াখালী রেঞ্জ ও ডুলাহাজারা বনবিটে কর্মরত বনকর্মীরা সিন্ডিকেট কাঠ চোরাকারবারিদের কাছ থেকে মোটা অংকের উৎকোচ নেওযায় কারনে কাঠ চোরেরা দিনদিন বেপরোয়া হয়ে গত এক মাস যাবৎ প্রতিযোগিতার মাধ্যমে সংরক্ষিত বনাঞ্চল উজাড়ে নেমে পড়েছে। ওই এলাকার এক বাগান মালিক জানান, রক্ষক যখন ভক্ষকের ভূমিকা পালন করে তখন আর করার কিছুই থাকেনা। সুযোগ বুঝে সিন্ডিকেট কাঠ চোরাকারবারিরা বনাঞ্চল উজাড়ে মেতে উঠে। বর্তমানে এ রেঞ্জের সংরক্ষিত বনাঞ্চল থেকে অবৈধভাবে কাঠ পাচারের মহোৎসব চলছে। এক বনকর্মী জানান, ফাঁসিয়াখালী রেঞ্জের সংরক্ষিত বনাঞ্চল থেকে প্রতিদিন সড়ক ও নদী পথে লাখ লাখ টাকা মূল্যের বনজ সম্পদ পাচার হয়ে যাচ্ছে। কক্সবাজার-চট্রগ্রাম মহাসড়কের ফাঁসিয়াখালী রেঞ্জের নলবিলা বিট কাম চেক ষ্টেশন ও মাতামুহুরী নদী পথে কাকারা বিট অফিস এ রেঞ্জের সর্বশেষ পরীক্ষণ ফাড়িঁ হিসেবে থাকলেও তারা নগদ নারায়নের বিনিময়ে রহস্যজনক নীরব ভুমিকা পালন করে থাকে।
স্থানীয় পরিবেশবাদী জনগন জানান, সড়ক পথে কক্সবাজার ও লামা বনবিভাগের সর্বশেষ পরীক্ষণ ফাড়ি হিসেবে খ্যাত নলবিলা বিট কাম চেক ষ্টেশন এবং মাতামুহুরী নদী পথে কাকারা বিট অফিসে কর্মরত বনকর্মীরা সজাগ হলে পুরু কক্সবাজার ও লামা বনবিভাগের হাজার হাজার কোটি টাকা মূল্যের সরকারি বনজ সম্পদ রক্ষা করা সম্ভব হবে। অথচ সংশ্রিষ্ট বনকর্মীদের অনৈতিক সুযোগ-সুবিধা পাওয়ায় অসাধু কাঠ ব্যবসায়ীরা কাঠ পাচারের নিত্য নতুন কৌশলে কাঠ পাচার করে যাচ্ছে। এ দিকে অবৈধ কাঠ পাচারের বিনিময়ে দূর্নীতিবাজ বন কর্মকর্তারা অজস্র কালো টাকা হাতিয়ে নিয়ে রাতারাতি আঙ্গুল ফূলে বটগাছ হয়ে গেলেও দেখার কেউ নেই বললেও চলে।
ফাঁসিয়াখালী রেঞ্জ ও ডুলাহাজারা বিট অফিসে নিয়োজিত দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা কর্মচারীদের সঙ্গে বিভিন্ন এলাকার সিন্ডিকেট কাঠ চোরাকারবারিদের সাথে শ্যালক-দুলাভাই সম্পক গড়ে উঠেছে। সিন্ডিকেট কাঠ চোরাকারবারিরা অসাধু বনকর্মীদের সাথে সখ্যতা গড়ে তুলে মোটা অংকের নগদ নারায়নের বিনিময়ে বনকর্মীদের সহযোগিতায় কাঠ পাচার দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। কাঠ চোরেরদল সুযোগ বুঝে রাতের আধারে সংরক্ষিত বনাঞ্চলে প্রবেশ করে মূল্যবান সেগুন, গর্জন, গামার, একাশি, বেলজিয়ামসহ বিভিন্ন প্রজাতির মূল্যবান গাছ কেঠে পাচার করে থাকে।
এ রেঞ্জের চার পাশ্বের ডুলাহাজারা বাজার, মালুমঘাটা, রিংভং, চা-বাগান, উলুবুনিয়ারঘাট, মালুম্মা, হায়দারনাসী, কাকারা, মানিকপুর, ঘুনিয়া, মৌলভীরকুম, লামারচিরিংগার বাশঁঘাটা, ছিকলঘাটা, বদরখালীবাজার, মগবাজার, সাহারবিল,চিরিংগা জনতা মার্কেট, কৈয়ারবিলের দ্ধীপকূলসহ বিভিন্ন এলাকায় প্রকাশ্যে এসব কাঠ বিক্রির জন্য মজুদ করে এবং পরবর্তীতে সুযোগ বুঝে বিভিন্ন জায়গায় পাচার করা হয়। এসব কাঠ চোরাকারবারিদের সঙ্গে পাচার কাজে সহযোগিতার বিনিময়ে আর্থিক লেনদেন করে থাকে রেঞ্জ অফিসে কর্মরত অফিস সহকারী খ্যাত ফরেষ্ট গার্ড নামধারী জনৈক শওকত।
সন্ধ্যা হলেই ফাঁসিয়াখালী রেঞ্জ এলাকায় সংরক্ষিত বাগানের মূল্যবান কাঠ বিক্রির হাট বসে। এছাড়াও ছিকলঘাট, মালুমঘাটা, ডুলাহাজারা, কাকারা, মানিকপুর, মৌলভীরকুম, লামার চিরিংগা, বাশঁঘাটা, নিজপানখালী, সাহারবিল, বদরখালী, বেতুয়াবাজার, বহদ্দারকাটা, ইলিশিয়া ও ফাঁসিয়াখালী রেঞ্জ এলাকায় অবস্থিত প্রায় অর্ধশতাধিক অবৈধভাবে স্থাপিত স’মিলে প্রতিদিন হাজার হাজার ঘনফুট চোরাইকাঠ মজুদ করে রাখা হয়। পরবর্তীতে সাইজ করে নদী ও সড়ক পথে যাত্রীবাহী বাস, ট্রাক, হাইয়েচ, জীপ, পিকাপ ও মিনিট্রাকে দেশের বিভিন্ন জায়গায় পাচার করা হচেছ। এসব স,মিল থেকে প্রতিনিয়ত বনবিভাগ কাঠের পরিমান অনূপাতে প্রতি টুকরা সেগুন রদ্দা থেকে ৫০ টাকা থেকে ৫শত টাকা পর্যন্ত আদায় করে থাকে। এছাড়াও প্রতি ট্রাক জ্বালানী কাঠ থেকে নেয়া হয় ৫শত টাকা থেকে ৩হাজার টাকা পর্যন্ত। এভাবে প্রতিদিনের আয় দাড়ায প্রায় অর্ধ লাখ টাকার মতো।
এ ব্যাপারে ফাশিয়াখালী রেঞ্জ কর্মকর্তা আবদুল মতিনের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি আক্ষেপ করে বলেন, চকরিয়া উপজেলা আ.লীগ নেতা ও ডুলাহাজারা ইউনিয়ন ও ফাঁসিয়াখালীর নব্য কাঠ চোরাকারবারির লোকজন এসব বনাঞ্চল উজাড় এবং কাঠ পাচারের সাথে জড়িত। ওই নেতারা চাইলেই এ রেঞ্জের বন উজাড় ও কাঠ পাচার রোধ করা সম্ভব হবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন বনকর্মী জানান, এভাবে অবৈধ পন্থায় কাঠ চোরাকারবারীদের কাছ থেকে আয়কৃত টাকা কেউ একা ভোগ করেনা বনবিভাগের রেঞ্জার থেকে শুরু করে এসিএফ, ডিএফও, সিএফ, সিসিএফ ও সংশি¬ষ্ট বন মন্ত্রনালয় পর্যন্ত মাসের শেষে গ্রেড অনূযায়ী পৌছে দিতে হয়। সে জন্য পত্রিকায় লেখালেখী করলেও কোন কাজ হবেনা এবং কারো চাকুরীও যাবে না। এদিকে কক্সবাজারের সচেতন পরিবেশবাদী জনগন বনজ সম্পদ উজাড় রোধকল্পে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য মাননীয় প্রধান মন্ত্রী ও সংশি¬ষ্ট বন ও পরিবেশ মন্ত্রীর আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

পাঠকের মতামত: