ঢাকা,শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪

তাসফিয়ার মৃত্যু: ভিসেরা পরীক্ষায় এলকোহল বা বিষের অস্তিত্ব মিলেনি

এখন পোস্টমর্টেম রিপোর্টের অপেক্ষা

অনলাইন ডেস্ক ::

শিক্ষার্থী তাসফিয়া আমিন নিহত হবার ঘটনায় দায়ের করা মামলায় ঢাকা থেকে ‘ভিসেরা প্রতিবেদন ’ এসেছে। গতকাল সোমবার সকালে আসা ভিসেরা পরীক্ষায় ফলাফল ‘নেগেটিভ’ বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট এক পুলিশ কর্মকর্তা। এর অর্থ হচ্ছে– বিষ ও এলকোহল জাতীয় কোন কিছুর কারণে তাসফিয়ার মৃত্যু হয়নি। অন্যকোন কারণে তার মৃত্যু হয়েছে। সেই কারণটি উদঘাটনের জন্য পোস্টমর্টেম প্রতিবেদনের অপেক্ষায় রয়েছেন বলে জানান মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পতেঙ্গা থানার এসআই মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন। ভিসেরা প্রতিবেদনের বিষয়ে জানতে চাইলে এসআই আনোয়ার হোসেন বলেন, ভিসেরা প্রতিবেদন ঢাকা থেকে আসার পর চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগে জমা হয়। তবে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে পারবেন আরো পরে। এদিকে তাসফিয়া নিহত হবার পর একমাস ১২ দিন অতিবাহিত হল। পতেঙ্গা থানা পুলিশের তদন্তে এ ঘটনার কোন কূলকিনারা হয়নি এখনো। তদন্ত কর্মকর্তা ঢাকা থেকে ভিসেরা প্রতিবেদন আসার অপেক্ষায় ছিলেন। গতকাল সেটা এসেছে। এরপর পোস্টমর্টেম রিপোর্টসহ সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদনগুলো আসার অপেক্ষায় রয়েছেন।

মামলার তদন্তে সন্তুষ্ট নন বাদীপক্ষ। পুলিশি তদন্তে এক ধরনের আস্থাহীনতার কথা জানিয়েছেন বাদী। এ কারনে অন্য কোন সংস্থা দিয়ে তদন্ত চান তিনি। এক্ষেত্রে বাদীর পছন্দ পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। পিবিআই এর তত্বাবধানে তদন্ত চেয়ে আদালতে আবেদন করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন বাদীপক্ষ। দুই একদিনের মধ্যেই এ আবেদন দাখিল করার হবে বলে জানিয়েছেন সংশিষ্ট আইনজীবীরা।

এ বিষয়ে বাদীপক্ষের আইনজীবী এডভোকেট চন্দন দাশ জানান, থানা পুলিশের তদন্তে আস্থা হারিয়ে ফেলেছে ভিকটিম তাসফিয়ার পরিবার। এ কারনে পিবিআই এর তদন্ত চেয়ে আবেদন করার কথা জানিয়েছেন তারা।

প্রসঙ্গত: তাসফিয়া হত্যা মামলার একটি অংশে অপ্রাপ্ত বয়স্ক হিসেবে মামলার প্রধান আসামি আদনান মির্জা প্রথম অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতে এবং প্রাপ্ত বয়স্ক হিসেবে আসিফ মিজান মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে বিচারের মুখোমুখি হচ্ছে। এর আগে প্রথম অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতে আদনানের রিমান্ড শুনানি অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা উপস্থিত হতে পারেননি। তদন্ত কর্মকর্তা পতেঙ্গা থানার এসআই আনোয়ার হোসেনের অনুপস্থিতিতে আদালত রিমান্ড শুনানি পিছিয়ে দেয় একমাস। ঢাকা থেকে মামলার পোস্ট মর্টেমসহ সংশিষ্ট প্রতিবেদনগুলো না আসা এবং সরকারি জরুরি কাজে ব্যস্ত থাকায় আদালতে হাজির হতে পারেননি বলে জানিয়েছিলেন তদন্ত কর্মকর্তা এসআই আনোয়ার হোসেন। আগামী ২৮ জুন আদনানের রিমান্ড শুনানির দিন ঠিক রয়েছে। অন্যদিকে এর আগে তিনদিনের রিমান্ডে ‘গুরুত্বপূর্ণ’ তথ্য দেয়া প্রাপ্ত বয়স্ক আসামি মিজানুর রহমান ওরফে আসিফ মিজানকে আবারো রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে বলে জানিয়েছিলেন তদন্ত কর্মকর্তা। আইনজীবীরা বলছেন, এ হত্যাকান্ডের রহস্য উদঘাটনের জন্য অবশ্যই আসামিকে রিমান্ডে নিয়ে নিবিড় জিজ্ঞাসাবাদের দরকার রয়েছে। প্রয়োজনে আইনজীবীর উপস্থিতিতে এ জিজ্ঞাসাবাদ সম্পন্ন হতে পারে।

প্রসঙ্গত: গত ১ মে তাসফিয়া নগরীর ও আর নিজাম রোডের বাসা থেকে বেরিয়ে একটি রেস্টুরেন্টে বন্ধু আদনানের (১৬) সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে আর ফিরে আসেনি। পরে ২ মে নগরীর পতেঙ্গায় নদীর তীর থেকে পুলিশ তার মরদেহ উদ্ধার করে। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত পুলিশ তাসফিয়ার বন্ধু আদনান মির্জা ও মিজানুর রহমান ওরফে আসিফ মিজানকে গ্রেপ্তার করেছে। আসিফ বর্তমানে রিমান্ডে আছে।

এ মামলার অপর আসামিরা হলো নবম শ্রেণির ছাত্র শওকত মিরাজ, আশেকানে আউলিয়া ডিগ্রি কলেজের এইচএসসির ছাত্র ইমতিয়াজ সুলতান ইকরাম, কথিত যুবলীগ নেতা মোহাম্মদ ফিরোজ ও তার সহযোগী সোহায়েল ওরফে সোহেল। এই চার আসামি ঘটনার পর থেকে পলাতক। এ অবস্থায় তাসফিয়ার লাশের ভিসেরা প্রতিবেদন এ মামলা তদন্তের ক্ষেত্রে অগ্রগতি বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

পাঠকের মতামত: