ঢাকা,শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪

দীর্ঘ ৪৩ বছরেও চকরিয়া-পেকুয়া আসনটিতে আওয়ামীলীগ বিজয়ের মূখ দেখেনি

নিজস্ব প্রতিবেদক ::
দীর্ঘ ৪৩বছর ধরে কক্সবাজারের-১ চকরিয়া-পেকুয়া সংসদীয় আসনটি আওয়ামীলীগের হাতছাড়া। নেপথ্যে কি দলীয় কোন্দল? না কি প্রার্থী ও প্রতিকের বিপক্ষে ভোটারদের অবস্থান। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্টের রাজনৈতিক পটপরির্তনের পর বৃহত্তর চকরিয়াকে নিয়ে কক্সবাজার-১ চকরিয়া সংসদীয় আসনটি গঠিত হয়। ১৯৭৯সালে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রয়াত বিএনপি নেতা মাহমুদুল করিম চৌধুরীর কাছে তৎকালিন জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট জহিরুল ইসলাম আওয়ামীলীগের মনোনয়ন নিয়ে নির্বাচনে অংশ গ্রহন করে হেরে যায়। এরপর সাবেক প্রেসিডেন্ট জাতীয় পার্টির সভাপতি এরশাদের নেতৃত্বে গঠিত জাতীয় পার্টির আমলে সাবেক জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এ এইচ সালাহ উদ্দিন মাহমুদের সাথে এডভোকেট জহিরুল ইসলাম নৌকা প্রতীক নিয়ে ২বার নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করেও বিজয়ের মুখ দেখেননি। ১৯৯১ সালে জামায়াত ইসলামীর প্রার্থী অধ্যাপক এনামুল হক মনজুর কাছে এডভোকেট জহিরুল ইসলাম নৌকা প্রতীক নিয়ে আওয়ামীলীগের প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ গ্রহন করে হেরে যায়। প্রবীণ আওয়ামীলীগ নেতা সাবেক গভর্ণর ও এমপি এডভোকেট জহিরুল ইসলাম পরপর ৪বার নির্বাচনে অংশ গ্রহন করে বিজয়ের মুখ না দেখায় মনের দুঃখ ও ক্ষোভ নিয়ে আওয়ামীলীগ ত্যাগ করে ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন গঠিত রাজনৈতিক দল গণ ফোরামে চলে যায়। বর্তমানে তিনি অসুস্ত অবস্থায় নিজ বাসায় অবস্থান করছেন।
এর পর আওয়ামীলীগের মনোনয়ন নিয়ে মাঠে-ময়দানে কাজ শুরু করেন বিশিষ্ট চিংড়ী ব্যবসায়ী ও জেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সালাহ উদ্দিন আহমদ সিআইপি। তিনি প্রথম ২টি নির্বাচনে সাবেক এপিএস সালাহ উদ্দিন আহমদের সাথে নৌকা প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্ধিতা করে হেরে যান।
৩য় বারে সালাহ উদ্দিন আহমদের স্ত্রী এডভোকেট হাসিনা আহমদের সাথে প্রতিদ্বন্ধিতা করে হেরে যাওয়ায় গত সংসদ নির্বাচনে আওয়ামীলীগ থেকে দলীয় মনোনয়ন পান উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান জাফর আলম বিএঅনার্স, এমএ। তৎসময়ে এ মনোনয়ন পাওয়াকে সহজে মেনে নিতে পারেনি আওয়ামীলীগের কিছু সংখ্যক প্রভাবশালী নেতৃবৃন্দ। পরে আওয়ামীলীগ সভা নেত্রী ও প্রধান মন্ত্রীর অনুরোধক্রমে ১৪ দলীয় জোটের অন্যতম শরীক দল জাতীয় পার্টিকে এ আসনটি উপহার দেয়া হয়। এ সুবাদে জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি পরীক্ষিত জাপা নেতা মৌলভী মোহাম্মদ ইলিয়াছ কে এ আসনের এমপি হিসেবে ঘোষাণা দেওয়া হয়। দীর্ঘ ৪২ বছরের ইতিহাসে জেলা আওয়ামীলীগের ২ সাবেক সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট জহিরুল ইসলাম ও সালাহ উদ্দিন আহমদ সিআইপি ওই সময়ে অনুষ্টিত সবকটি নির্বাচনে একবারও বিজয় লাভ করতে না পারায় সাধারণ ভোটারদের মধ্যে প্রশ্ন উঠেছে চকরিয়া-পেকুয়া আসনের ভোটাররা কি যোগ্য প্রার্থী না দেওয়ায় আওয়ামীলীগকে বিজয় ছিনিয়ে আনার মতো ভোট দেয়নি। না কি প্রতীকের প্রতি ভোটারদের অনিহা রয়েছে?
আগামী ২০১৮ সালের ডিসেম্বার মাসে সংসদ নির্বাচন অনুষ্টিত হওয়ার কথা রয়েছে। এরি মধ্যে দলীয় মনোনয়ন পাওয়া নিয়ে শুরু হয়েছে নানা ধরণের আভ্যন্তরিণ কোন্দল, দলীয় নেতাদের বিরুদ্ধে কুৎসা রটনা করে স্থানীয় একটি দৈনিক ও ফেইজবুকে নানা ধরণের কল্প কাহিনী প্রচার করা হচ্ছে। এ নিয়ে প্রতিপক্ষ প্রভাবশালী রাজনৈতিক দলের নেতা কর্মীদের মাঝে খুশির ঈদ আনন্দ বইছে। তাদের মন্তব্য হচ্ছে আমরা কোটি টাকা ব্যয়ে প্রতিপক্ষ দলের নেতাদের বিরুদ্ধে কুৎসা রটাতে পারতাম না তা নিজ দলের নেতা কর্মীদের বদৌলতে বিনা পয়সায় এ সুযোগটা পাচ্ছি। এটাইতো আগামীতে আমাদের বিজয়ের একটি প্রশান্ত মহাসাগরের সুচনা হয়েছে।
বর্তমানে দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার জন্যে মাঠে ময়দানে চষে বেড়াচ্ছেন চকরিয়া উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান জাফর আলম বিএঅনার্স. এমএ, সাবেক জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক সালাহ উদ্দিন আহমদ সিআইপি, তার ছোট ভাই ও জেলা পরিষদ সদস্য কমর উদ্দিন, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান কৃষক লীগের কেন্দ্রীয় নেতা রেজাউল করিম, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও আওয়ামীরীগ নেতা খালেদ মোহাম্মদ মিতুন, জেলা আওয়ামীলীগের শিক্ষা ও মানবসম্পদ বিষয়ক সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম সজিবসহ আরো অনেকে।
চকরিয়া-পেকুয়া সংসদীয় আসনটি একটি পৌরসভা ও ২৫টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত। গত ইউপি নির্বাচনে ৮০ভাগ ইউপি চেয়ারম্যান, সদস্য ও সদস্যা নির্বাচিত হয়েছে আওয়ামীলীগ সমর্থিত। এ সুযোগটাকে কাজে লাগিয়ে আওয়ামীলীগের নবীন ও প্রবীণ নেতাদের অভিমত হচ্ছে একজন সর্বজন গ্রহন যোগ্য ব্যক্তিকে দরীয় মনোনয়ন দেওয়া হলে ৪২ বছরে দলীয় পরাজয়ের গ্লানিটা আগামী নির্বাচনে আমরা মুছে ফেলতে পারবো।
গত রমজানের শেষ ভাগে উপজেলা পরিষদ মাঠে দলীয় নেতা-কর্মীদের এক ইফতার পার্টিতে উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি জাফর আলম বিএঅনার্স. এমএ তার বক্তব্যে বলেছিলেন, গত নির্বাচনে আওয়ামীলীগ সভাপতি ও প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাকে দলীয় মনোনয়ন দিয়েছিলেন আবার তার অনুরোধ ক্রমে নির্বাচন থেকে সরে দাড়িঁয়ে ছিলাম। আগামী নির্বাচনেও আমাকে আওয়ামীলীগ সভানেত্রী মনোনয়ন দেবেন এটাই আমার আশা।
আসলে কি জাফর মনোনয়ন পাবেন না কি অন্য কেউ এনিয়ে দলীয় নেতা-কর্মীদের মাঝে চলছে নানা ধরণের জল্পনা কল্পনা। যে কাহিনীর অন্ত নেই।

পাঠকের মতামত: