ঢাকা,শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪

বান্দরবান বিশ্ববিদ্যালয় স্বপ্নের হাতছানি

বান্দরবান প্রতিনিধি ::

মাত্র তিনটি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় এবং একটি সরকারি কলেজ নিয়ে আশির দশকে জেলা হিসেবে যাত্রা শুরু করেছিল বান্দরবান। চার দশক না পেরোতেই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ এসে গেল বান্দরবানবাসীর জীবনে। এক সময়ের উচ্চশিক্ষার স্বপ্নযাত্রা আর মাত্র দুমাস পরেই বাস্তবে রূপ নিতে যাচ্ছে। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, জুলাই মাস থেকে একাডেমিক কার্যক্রমে যাচ্ছে বান্দরবান বিশ্ববিদ্যালয়।

দেশের শততম বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর অনুমতি পাওয়ার পর থেকেই চলছে একাডেমিক কার্যক্রমের প্রস্তুতি। এ জন্য বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনে (ইউজিসি) জমা দেওয়া হয়েছে প্রস্তাবিত সিলেবাস। শুরুর দিকে ইংরেজি সাহিত্য, এমবিএ, বিবিএ, সমাজবিজ্ঞান ও নৃ-বিজ্ঞান, গভর্নেন্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ, কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং-এই ৬টি বিষয়ে পাঠদানের প্রাথমিক অনুমতি মিলেছে।

বান্দরবান বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানায়, বছরে দুটি করে সেমিস্টার ভিত্তিতে প্রতি ব্যাচে ৫০ জন করে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হবে। প্রথম ব্যাচে ৬টি বিষয়ে মোট ৩০০ শিক্ষার্থী নিয়ে যাত্রা শুরু করতে চায় বান্দরবান বিশ্ববিদ্যালয়।

বান্দরবান বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান বীর বাহাদুর এমপির প্রত্যাশা, খুব কম সময়ের মধ্যেই ইউজিসির অনুমোদন মিলে যাবে। আর এর মধ্য দিয়েই খুলে যাবে স্বপ্নের সহস্র দুয়ার। তিনি জানান, বান্দরবান বিশ্ববিদ্যালয় হবে শতভাগ আবাসিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এ জন্য বান্দরবান শহরের প্রবেশমুখ সুয়ালকে ১০০ একর জমি নেওয়া হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের পূর্ণাঙ্গ ক্যাম্পাস হবে সেখানে।

বীর বাহাদুর বলেন, ‘ইটের খাঁচা হিসেবে গাদা গাদা ভবন নির্মাণ করা হবে না এই ক্যাম্পাসে। এর পরিবর্তে প্রকৃতির ছোঁয়ায় সাজিয়ে তোলা হবে পুরো ক্যাম্পাস।’

বীর বাহাদুর বলেন, ‘একাডেমিক ভবনের বাইরে পাহাড়, জলাশয়,

বন-বনানী, পাখির কুজন, দখিনা বাতাস, নির্মল হাওয়া আর শিমুল-পলাশের আগুন রাঙা উদ্যানে বেড়াতে বেড়াতে শিক্ষার্থীরা নেবে শিক্ষার পাঠ। এমন একটা বিদ্যাপীঠ গড়তে চাই আমরা।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়ক নুরুল আফছার জানান, আপাততঃ বান্দরবান শহরের কেন্দ্রস্থলে স্থাপন করা হয়েছে অস্থায়ী ক্যাম্পাস। স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণ কাজ শেষ হলে সেখানে স্থানান্তরিত হবে সব কার্যক্রম।

রবিবার সরেজমিন দেখা গেল, তিনটি ফ্লোরই পুরো প্রস্তুত। বহুতল ভবনের তিনটি ফ্লোরে ৩৬ হাজার বর্গফুট বিশিষ্ট অস্থায়ী এই ক্যাম্পাসের তৃতীয় তলায় রয়েছে ক্লাশরুম। চতুর্থ তলায় লাইব্রেরি এবং ক্যাফেটোরিয়া। ভিসি অফিস, টিচারস রুম এবং রেজিস্ট্রারসহ প্রশাসনিক কার্যক্রমের অফিসগুলো থাকবে দ্বিতীয় তলায়। প্রস্তুতি দেখে ধারণা করা যায়, ইউজিসির অনুমোদন পাওয়ার সাথে সাথেই ভর্তি এবং একাডেমিক কাজ চলতে আর কোনো অসুবিধা হবে না।

বান্দরবান বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের কো-চেয়ারম্যান ক্যশৈহ্লা বলেন, ‘প্রফেসর জিহাদুল করিম স্যারের সাথে কথা হয়েছে। তিনি প্রথম ভাইস চ্যান্সেলর হিসেবে বান্দরবান বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্ব নেবেন বলে আমরা আশা করছি।’

ক্যশৈহ্লা জানান, শিক্ষক নিয়োগের কাজটিও প্রায় সম্পন্নের পথে। ইতোমধ্যেই আবেদনপত্রগুলোকে যাচাই-বাছাই করে মেধাবীদের একটি তালিকা করে রাখা হয়েছে। সিলেবাস অনুমোদনের পর পরই বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চাহিদা অনুযায়ী দ্রুততম সময়ে শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হবে।

শুরুর কথা : গত বছরের প্রথম দিকে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং এমপির উদ্যোগে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পদক্ষেপ নেওয়া হয়। বেশ কয়েকটি অনানুষ্ঠানিক সভার পর কয়েকজন সমাজসেবক এগিয়ে এসে তাঁর পাশে দাঁড়ান। তাঁদের সমন্বয়ে প্রতিষ্ঠিত হয় ‘বান্দরবান শিক্ষা ও উন্নয়ন ফাউন্ডেশন।’ এই উদ্যোগে এক কাতারে এসে দাঁড়ায় বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদও।

উভয় প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সম্পাদিত যৌথ চুক্তির মধ্য দিয়েই স্বপ্ন পাখা মেলতে শুরু করে বান্দরবান বিশ্ববিদ্যালয়ের।

সমঝোতা স্মারক অনুযায়ী বান্দরবান শিক্ষা ও উন্নয়ন ফাউন্ডেশন বিনিয়োগের ৭৫ শতাংশ এবং বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদ ২৫ শতাংশ বহন করবে। সে অনুযায়ী জমি ক্রয় এবং অস্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণের কাজ শুরু করা হয়।

ইতোমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের প্রাক কাজ, অনুমোদনের জন্যে যোগাযোগ, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সাথে সমন্বয় সাধনের মধ্য দিয়ে চূড়ান্ত পর্যায়ে নিয়ে আসা হয়েছে। দীর্ঘ এই কাজটি সমন্বয় করেছেন বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের নির্বাহী অফিসার নুরুল আফছার। সরকারি কাজের চাপ সামলিয়ে তার অবর্ণনীয় শ্রমদান সবার দৃষ্টি কেড়েছে।

নুরুল আফছার জানান, চট্টগ্রামের চন্দনাইশে বিজিসি ট্রাস্ট বিশ্ববিদ্যালয় এবং কক্সবাজার বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া মাঝখানের বিশাল এই অঞ্চলে আর কোনো বিশ্ববিদ্যালয় নেই। তাই, আশপাশের এলাকাগুলোতেও বান্দরবান বিশ্ববিদ্যালয়ের ঢেউ লেগেছে।

তিনি জানান, আপাততঃ ছাত্রীদের জন্য একটি হোস্টেল ভাড়া করা হয়েছে। সেখানে তাদের থাকার সংস্থান করা যাবে। এর পাশাপাশি ছাত্রদের জন্যে আবাস তৈরির কাজও চলছে।

সব কাজ শেষে বান্দরবানবাসী এখন জুলাই মাসের প্রহর গুনছে-অনেক অগ্রগতির পর কখন তাদের জীবনে সংযোজিত হবে বিশ্ববিদ্যালয়ের উজ্জ্বল পালকটি।

পাঠকের মতামত: