ঢাকা,শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪

উপকূলে লবণ উৎপাদনে রেকর্ড

ছোটন কান্তি নাথ, চকরিয়া ::   আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় চলতি বছরও উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে উদ্বৃত্ত লবণ উৎপাদন করে রেকর্ড গড়তে যাচ্ছে কক্সবাজার উপকূল এবং চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার চাষীরা। এতে দেশের ভোক্তা ও শিল্পখাতে চাহিদা মিটিয়ে বিপুল পরিমাণ লবণ মজুদ থাকবে বলেও আশা চাষীদের। চাষীরা জানিয়েছেন, ইতোমধ্যে লক্ষ্যমাত্রার কাছাকাছি লবণ উৎপাদন করতে সক্ষম হয়েছেন চাষীরা। আরো অন্তত ১৫দিনের বেশি লবণ উৎপাদন করার সম্ভাবনা রয়েছে।

বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প (বিসিক) সূত্র জানায়, চলতি মৌসুমে দেশে ভোক্তা ও শিল্পখাতে লবণের চাহিদা রয়েছে ১৬ লাখ ৬৫ হাজার মেট্টিক টন। বিপরীতে বিসিক দেশে লবণ উৎপাদন এলাকার ৬৪ হাজার ১৪৭ একর জমিতে লবণ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে ১৮ লাখ মেট্টিক টন। গতবছরের নভেম্বর মাসের ১৫ তারিখ থেকে চকরিয়া, পেকুয়া, কুতুবদিয়া, মহেশখালী, টেকনাফ, কক্সবাজার সদরসহ কক্সবাজার উপকূল এবং চট্টগ্রামের বাঁশখালীর উপজেলায় লবণ উৎপাদনে নামে লক্ষাধিক চাষী।

চাষ শুরু করার পর থেকে সদ্য বিদায়ী মাস এপ্রিল পর্যন্ত ১৩টি লবণ উৎপাদন মোকামের অধীনে লবণ উৎপাদন হয়েছে প্রায় ১৬ লাখ মেট্রিক টন।

বিসিকের গবেষণা কর্মকর্তারা জানান, মৌসুম শেষ হবে চলতি মে মাসের মাঝামাঝি সময়ে। এই সময়ের মধ্যে লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়ে যাওয়া সম্ভাবনা রয়েছে। বর্তমানে যেভাবে আবহাওয়া অনুকূলে রয়েছে তা যদি বিদ্যমান থাকে। বাংলাদেশ লবণ চাষি সমিতির নেতারা জানিয়েছেন, উৎপাদন মৌসুমের শুরুতে লবণের ভাল দাম থাকলেও বর্তমানে প্রতিটি মোকামে লবণ উৎপাদন বেড়ে লবণের দাম কমিয়ে দেওয়ার অভিযোগ তুলছেন মাঠপর্যায়ের চাষীরা। তাদের অভিযোগ, আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় লবণ উৎপাদন দিনের পর দিন বাড়ছে। কিন্তু দেশের বড় বড় মিল মালিকরা সিন্ডিকেট করে ভুল তথ্য দিয়ে এবারও বিদেশ থেকে লবণ আমদানির পাঁয়তারা শুরু করেছে। যদি ভুল তথ্য উপস্থাপন করে সিন্ডিকেটরা এবারও বিদেশ থেকে লবণ আমদানির সুযোগ পায় তাহলে বড় ধরণের ক্ষতির সম্মুখিন হবেন চাষীরা। বিসিক কক্সবাজার আঞ্চলিক কার্যালয়ের সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মো. মনজুর আলম বলেন, ‘চলতি মে মাসের ১৫ তারিখ পর্যন্ত লবণ উৎপাদন করা যাবে। বাকী এই সময় যদি প্রকৃতি বৈরি আচরণ না করে তাহলে লবণ উৎপাদন রেকর্ড গড়বে। তবে পুরোপুরিই তা নির্ভর করবে প্রকৃতির ওপর।’

বিসিক কক্সবাজার কার্যালয়ের সহকারী কর্মকর্তা মোহাম্মদ ইদ্রিস জানান, চলতি মৌসুমে ১৩টি কেন্দ্রের (মোকাম) অধীনে কক্সবাজার উপকূল এবং চট্টগ্রামের বাঁশখালী ও আনোয়ারা উপজেলার আংশিক এলাকার ৬৪ হাজার ১৪৭ একর জমিতে লবণ চাষ করা হচ্ছে। তন্মধ্যে চকরিয়া উপজেলার দরবেশকাটা মোকামে ১১ হাজার ৯৪১ একর, ডুলাহাজারা ইউনিয়নে ২০০ একর, খুটাখালী ইউনিয়নের ফুলছড়িতে ৩ হাজার ৮৫০ একর, মহেশখালী উপজেলার লেমশিখালী মোকামে ৬ হাজার ৬১৮ একর, উত্তর নলবিলা মোকামে ৬ হাজার ৫২৮ একর, গোরকঘাটা মোকামে ৩ হাজার ৮৭৭ একর, মাতারবাড়ি মোকামে ৫ হাজার ৫৮ একর, কক্সবাজার সদর উপজেলার চৌফলদন্ডি মোকামে ১ হাজার ৮৫৩.৭৪ একর, কুতুবদিয়া উপজেলার পূর্ব বড়ঘোনা মোকামে ৫ হাজার ৭৮৮ একর, টেকনাফের মোকামে ২ হাজার ৪৬৬ একর, কুতুবদিয়ার লেমশীখালী, কক্সবাজার সদরের চৌফলদন্ডি ও মহেশখালীর মাতারবাড়ীতে স্থাপিত লবণ প্রর্দশনী কেন্দ্রে ৯৪.২৬ একর, সদর উপজেলার গোমাতলীর ৩ হাজার ৩০৮ একর, বাঁশখালী উপজেলার সরল ঘোনার প্রদর্শনী কেন্দ্রে ৩৮৮ একর জমিতে লবন উৎপাদন চলছে। তিনি আরো জানান, চলতি লবণ উৎপাদন মৌসুমের শুরু থেকে এপ্রিল মাস পর্যন্ত ১৬ লাখ মেট্রিক টন লবণ উৎপাদন সম্ভব হয়েছে। বাকী যে সময় হাতে রয়েছে, সেইসময়ের মধ্যে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে উদ্বৃত্ত লবণ উৎপাদন হবে বলে আশা করছি আমরা।’

বাংলাদেশ লবণ চাষী সমিতির নেতা হারুণুর রশিদ বলেন, ‘মৌসুমের শুরু থেকেই লবণ উৎপাদন ভাল হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় চাষীরা লবণ উৎপাদনে দিনরাত পরিশ্রম করে চলেছেন। বিসিকের জরিপে লবণ উৎপাদনের চিত্র কম দেখানো হলেও মাঠপর্যায়ের হিসেব মতে ইতোমধ্যে লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়েছে। বাকী যে সময়টুকু এখনো রয়েছে সেইসময় লবণ উৎপাদন ভালভাবে করা গেলে তা উদ্বৃত্তই থাকবে।’

চকরিয়ার বৃহত্তম লবণ চাষী শহীদুল ইসলাম বলেন, ‘প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে দেশের লবণ শিল্পের সাথে জড়িয়ে আছেন অন্তত ৬ লাখ মানুষ। প্রতিবছর তারা দেশে লবণ উৎপাদনে রেকর্ড সৃষ্টি করলেও কতিপয় মহল সরকারের বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয়ে ভুল তথ্য উপস্থাপন করে বিদেশ থেকে লবণ আমদানির চেষ্টা শুরু করে দিয়েছেন বলে আমাদের কাছে তথ্য রয়েছে। যদি এ ধরণের কোন পায়তারা করা হয় তাহলে প্রান্তিক চাষীরা আর্থিকভাবে মার খাবে। লবণ চাষীরা বিদেশ থেকে লবণ আমদানির সুযোগ দেওয়া থেকে বিরত থাকতে সরকার ও সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহবান জানান ।

পাঠকের মতামত: