ঢাকা,শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪

‘দাফনের’ ১১দিন পর জীবিত উদ্ধার!

কক্সবাজার প্রতিনিধি ::

খুন হওয়ার ১১দিন পর গতকাল ৩ মে জীবিত অবস্থায় উদ্ধার করা হলো আবদুল খালেক (২৮) নামে এক যুবককে। অথচ ১৯ এপ্রিল সন্ধ্যায় কক্সবাজার সদরের ঈদগাঁও কলেজ গেট ব্রিজ এলাকার খালপাড় থেকে বস্তাবন্দি অবস্থায় উদ্ধারের দু’দিন পর পরিবারের লোকজন মরদেহ শনাক্ত করে এবং প্রয়োজনীয় আইনি আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে দাফনও করা হয়। এদিকে খালেকের খুনের ঘটনায় সন্দেহভাজন হিসেবে তার স্ত্রী জোবাইদা বেগম, স্ত্রীর বড় বোন মোবারকা ও ভগ্নিপতি ফারুককে আটক করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়। কিন্তু ঘটনার ১১দিন পর মোবাইল ফোনের সূত্র ধরে কক্সবাজার ডিবি পুলিশের একটি দল খালেককে সীতাকুণ্ড উপজেলার বার আউলিয়া এলাকা থেকে উদ্ধার করে নিয়ে আসে। গতকাল বৃহস্পতিবার এ ঘটনা জানাজানি হলে এলাকায় চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়। খবর বাংলানিউজের।

গতকাল সন্ধ্যা ৭টার দিকে কক্সবাজার পুলিশ সুপার কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে খালেককে আনা হয়। সেখানে খালেক জানিয়েছেন, স্ত্রীর সঙ্গে মনোমালিন্যের পর ১৪ এপ্রিল তিনি সীতাকুণ্ড গিয়ে রাজমিস্ত্রির কাজ করছিলেন। এরপর ৬–৭ দিন তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটিও বন্ধ করে রাখেন। তাই কক্সবাজারে তাকে নিয়ে ঘটে যাওয়া ঘটনার কিছুই তিনি জানতে পারেননি। কিন্তু ‘দাফনের’ পরদিন এক নিকটাত্মীয়ের মাধ্যমে তাকে দাফন করা হয়েছে জেনে অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। এরপর তিনি নিজ থেকে তার ভাই (মৃত খালেক হিসেবে শনাক্তকারী) আবদুল্লাহকে কল করলে তিনি চিনেন না বলে ফোন কেটে দেন। এতে হতাশ হয়ে খালেক এলাকায় ফিরে আসার সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু তার আগেই পুলিশ তাকে আটক করে কক্সবাজার নিয়ে আসে। কক্সবাজার ডিবির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মানস বড়ুয়া বলেন, ‘১৯ এপ্রিল সন্ধ্যা ৬টার দিকে মরদেহটি উদ্ধার হওয়ার দু’দিনের মাথায় খালেকের পরিবারের লোকজন কক্সবাজার সদর হাসপাতাল মর্গে এসে তাকে খালেক হিসেবে শনাক্ত করে মরদেহ নিয়ে যান। এ ঘটনায় কক্সবাজার সদর থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়। স্ত্রীর পরকীয়ার কারণে খালেক খুন হয়েছেন সন্দেহ করায় ৫৪ ধারায় খালেকের স্ত্রী জোবাইদা বেগম, স্ত্রীর বড় বোন মোবারকা ও ভগ্নিপতি ফারুককে পুলিশ সন্দেহজনকভাবে আটক করে ২৩ এপ্রিল আদালতে উপস্থাপন করা হলে আদালত তাদের কারাগারে পাঠান।’

তিনি বলেন, গত চারদিন আগে খালেকের ব্যবহৃত সিম থেকে একটি ফোনকল আসে ভাই আবদুল্লাহর কাছে। তিনি বিষয়টি স্থানীয় মেম্বারকে জানালে তিনি ডিবিতে এসে নম্বরটি দেন। এর পর ক্লু উদঘাটনে মাঠে নামে ডিবি পুলিশ। প্রযুক্তির মাধ্যমে খালেকের ব্যবহৃত মোবাইল ফোন নম্বরটি ট্র্যাক করা হয়। পরে সীতাকুণ্ড এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাকে আটক করা হয়।

তাকে মৃত খালেক হিসেবে শনাক্তকারী তার ছোট ভাই আবদুল্লাহ এবার জীবিত খালেককেও তার ভাই হিসেবে শনাক্ত করেছেন। মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, খালেকের দেহে থাকা বেশ কিছু চিহ্নের সঙ্গে উদ্ধার হওয়া মরদেহের চিহ্ন মিলে যাওয়ায় সবাই তাকে খালেক হিসেবে শনাক্ত করেছিলাম।

পেশায় রাজমিস্ত্রি খালেকরে সঙ্গে সদরের খুরুশকুল তেতৈয়ার নতুন ঘোনারপাড়ার ছৈয়দুল হকের মেয়ে জোবাইদার পারিবারিকভাবে বিয়ে হয় গত বছরের নভেম্বর মাসে। পারিবারিক মনোমালিন্যে ১৪ এপ্রিল শ্বশুরালয়ে গেলে সেখানে পরিকল্পিতভাবে তাকে হত্যার পর বস্তাবন্দি করে ১০ কিলোমিটার দূরে ঈদগাঁও নিয়ে ফেলে দেওয়া হয় বলে দাবি করে মামলা করা হয়।

ওসি মানস বড়ুয়া বলেন, খালেককে ডিবি কার্যালয়ে রাখা হয়েছে। দাফনকরা যুবকটি টেকনাফ এলাকার সাইফুলের বলে দাবি উঠেছে। বিভ্রান্তি কাটাতে কাজ করছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যরা।

কক্সবাজার সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফরিদ উদ্দিন খন্দকার বলেন, দাফন করা খালেক যেহেতু জীবিত ফিরে এসেছে তাকে আদালতে সোপর্দ করা হবে। আদালতের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

কারান্তরীণ তিনজনের কি হবে জানতে চাইলে ওসি বলেন, সেদিন তাদের বিষয়ে অভিযোগ উঠায় তা তদন্তের স্বার্থে তাদের ৫৪ ধারায় চালান দেওয়া হয়েছিল। এখন যেহেতু সেই অভিযোগের ভিকটিম জীবিত ফিরে এসেছে তখন তাদের ব্যাপারেও আদালত সিদ্ধান্ত দেবে।

পাঠকের মতামত: