ঢাকা,শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪

৪০জন ডাকাতের সর্দার আনাইয়া হত্যার হুমকি দিল চেয়ারম্যান ও পুলিশ কর্মকর্তাকে

আবদুর রশিদ, নাইক্ষ্যংছড়ি ( বান্দরবান) :

পার্বত্য নাইক্ষ্যংছড়ি পাহাড়ের ৪০ ডাকাতের ভারপ্রাপ্ত কমান্ডার কুখ্যাত আনোয়ার ওরফে আনাইয়া ডাকাত এবার হত্যার হুমকি দিলো বাইশারী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলম ও বাইশারী পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের উপ-পরির্দশক আবু মূসাকে। পাশাপাশি এ ডাকাতদলটি বাইশারী তদন্ত কেন্দ্রের এক র্সোসকে হত্যার জন্যে মঙ্গলবার গহীনরাতে তার বাড়ি ঘেরাওকালে দ্রুত পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে ডাকাত দলটি গুলি বর্ষণ করতে করতে পালিয়ে যায় পাহাড়ের দিকে। পুলিশ ও এলাকাবাসী এভাবে এগিয়ে গেলে ডাকাত দলটি পাহাড়ে তাদের আস্তানায় ফিরে যায়। তবে তারা নানা মাধ্যমে আজ-কালের মধ্যে বাইশারীর যে কোন সচেতন লোককে হত্যা করে তাদের দলের সদস্যদের গ্রেপ্তারের বদলা নিতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। ফলে আনোয়ার বাহিনীর সম্ভাব্য এ হামলার হুমকিতে বর্তমানে চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভূগছেন বাইশারী,দৌছড়ি, গর্জনিয়া ও ঈদগড়ের লক্ষাধিক লোক ।

পুলিশ,জনপ্রতিনিধি ও একাধিক বিশ্বস্থ সূত্র জানায়,নাইক্ষ্যংছড়ি ও রামু উপজেলার পাহাড়ি এলাকা গুলোতে শাহিন ডাকাত ও আনোয়ার ডাকাত মিলে গড়ে তুলে আলীবাবার ৪০ চোরের আদলে ৪০ ডাকাতের আস্তানা। তারা পাহাড়ে ৪ টি আস্তানা গড়ে তুলে। এ সবের একটি বাইশারীর পূর্বদিকে তুলাতলীর উত্তরে চাইল্ল্যাতলীর গহীন বনে,দ্বিতীয়টি রামুর কচ্ছপিয়া ইউনিয়নের ছাগলখাইয়া- শিবাতলী,ঈদগড়-গর্জনিয়ার জঙ্গল গর্জনিয়া পাহাড় ও হিমছড়ি ঢালার আস্তানা। দুভাগে ভাগ করে দক্ষিনের অংশ দেখবাল করতো শাহীন ডাকাত আর উত্তরের অংশ তদারকি করে আসছে আনোয়ার ডাকাত। ইতি মধ্যেই শাহীন ডাকাত সহ তার ৪ জন প্রধান সহযোগি আইন শৃংখলা বাহিনীর হাতে আটক হলে বেড়ে উঠে আনোয়ার বাহিনী। এবার কূখ্যাত আনোয়ার সা¤্রাজ্য গড়ে তোলে সমগ্র পাহাড়ে।

সে ইদগড় থেকে গর্জনিয়া পর্যন্ত দীর্ঘ ১০ কিলোমিটার এলাকার পাহাড়ি জনপদ গুলো যখন যাকে ইচ্ছা

অপহরণ,খুন,ডাকাতি বা হামলা চালিয়ে রাম রাজত্ব কায়েম করে আইন-শৃংখলার চরম অবনতি ঘঠিয়ে আসছিল।

সূত্র আরো দাবী করে, এমতাবস্থায় আইন-শৃংখলা বাহিনী নামে এসব কুখ্যাত অপহরনকারী ডাকাতদের আটকে। অভিযানে গত সপ্তাহে বাইশারী তদন্ত কেন্দ্রে ইনচার্জ আবু মূসা আটক করে আনোয়ার ডাকাতের সেকেন্ড ইন কমান্ড শফিউল আলম ও নুরুল হাকিমকে। এতে আনোয়ার ডাকাত বিচলিত হয়ে এবার নামে চেয়ারম্যান এবং পুলিশ কর্মকর্তা আবু মূসা সহ সচেতন মহলকে হত্যার

পরিকল্পনা নিয়ে। কেননা এ মূসাই সব ডাকাতের আতংক এক পুলিশ কর্মকর্তা বনে যান উপর্যপুরি অভিযানের কারণে। এদিকে বাইশারী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলম জানান,গত ২০ গহীন রাতে কে বা কারা তার বাড়ির দরজার বাহির থেকে ধাক্কা-ধাক্কি করে। ভয়ে তার পুরো পরিবার চরম আতংকে রাত যাপন করে কাটায় জেগে থেকেই। এ ঘটনায় তিনি জিডি করেন নাইক্ষ্যংছড়ি থানায়।

পুলিশ কর্মকর্তা আবু মূসা এ প্রতিবেদককে জানান,আনোয়ার ডাকাত নানা মাধ্যমে তার কাছে খবর দেয়, তাকে আজ-কালের মধ্যে হত্যা করা হবে। বিষয়টি আটক শফিউল আলম স্বীকার করে হুংকার ছেড়ে আবু মূসাকে ২২ এপ্রিল রাতে জানান যে-এ মূসা সাহেব ! আমার লিডার আনোয়ার বাবা আজ-কালের মধ্যেই তোমাকে হত্যা করবে। বুঝবে তখন মজা। বিষয়টি উপ-পরির্দশক আবু মূসা স্বীকার করেন এ প্রতিবেদকের কাছে।

এদিকে-এ আনোয়ার ডাকাত গত ৬ মার্চ ঈদগাও এলাকার গজালিয়ার বৃদ্ধ ছৈয়দুল আলমকে অপহরণ করে। ৪ দিন ইদগড় ও বাইশারীর গহীন পাহাড়ে আটক রেখে ৭০ হাজার টাকা মুক্তিপণে ছেড়ে দেয়।

বৃদ্ধ ছৈয়দুল আলমের তথ্যের ভিত্তিতে ঈদগাও,ইদগড় ও বাইশারী পুলিশের যৌথ অভিযানে অপহরণ চক্রের সক্রিয় অপর সদস্য ডাকাত সেলিম উদ্দিন ও আবদু সালাম গ্রেপ্তার হয়। এ দুজনই ডাকাতি ও অপহরণ সহ নানা জঘণ্যতম অপরাধে জড়িত বলে জবানবন্দি দেয় বান্দরবানের বিজ্ঞ আদালতে।

ইতিপূর্বে আনোয়ার বাহিনীর থার্ড ইন কমান্ড আবদুর রশিদ ডাকাত অপহরণকৃত টাকার ভাগবাটোয়ারা

খুন হয়। এরই মধ্যে গত ১৭ এপ্রিল কৃষক সাইফুলকে অপহরণ ও ৭০ হাজার টাকায় মুক্তিপণের পরে টানা ৩ দিনের অভিযানে ৩ অপহরণ চক্রের সদস্য যথাক্রমে আবদুর রশিদ,শফিউল আলম ও নুরুল হাকিম পুলিশের জালে আটকা পড়ে। এসব ঘটনার পর আনাইয়া ও হামিদ ডাকাত চরম প্রতিশোধ নিতে

ছক আঁেক কয়েকজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তাকে হত্যার। এতে আতংকগ্রস্থ হয়ে পড়ে পুরো জনপদ।

পুলিশ আরো জানায় গত বছরের আগষ্ট মাসের মাঝামাঝি সময়ে ঈদগড় করলিয়া মূরা এলাকায় জমির বিরোধের একটি ঘটনায় ভাড়া গিয়ে আনোয়ার ডাকাত নিজেই নজির আহমদ নামের এক বৃদ্ধকে খুন করে।

তথ্য অনুসন্ধানে আরো জানা যায়,২০১৬ সালের ১১ অক্টোবর বাইশারী-ইদগড় সড়কের বেংডেবা নামক স্থান থেকে গাড়ি চালক মো: ইউনূছ,আবদুল করিম ও ব্যবসায়ী আবু বক্করকে অপহৃত হলে মুক্তিপণে ছাড়া পায়। এছাড়া ২০১৪ সালে ১৯ আগষ্ট লম্বাবিলের রশিদ উল্লাহ, আবদুল খালেক, ২০১৬ সালের ১ মে দৌছড়ি ইউনিয়নের বুলবুল আক্তার, ১২ আগষ্ট বাইশারী ইউনিয়নের রাঙাঝিরি এলাকা থেকে মিজানুর রহমান,একই মাসে দৌছড়ি ইউনিয়নের লংগদু মূখ থেকে ফরিদুল আলম,হুমায়ুন কবির,বরইচর এলাকা থেকে জালাল উদ্দিন,আবদুল কাদের, ২০ সেপ্টম্বর গর্জনিয়া ইউনিয়নের আবদুল আলী ও শামশুল আলম,

২৩ অক্টোবর বাইশারী পিএসপি রাবার বাগানের পাহারাদার আজিজুল হক, নুরুল আলম,আবদু শুক্কুর, ২৪ আগষ্ট বাইশারী-ইদগাওঁ সড়ক থেকে গাড়ি থামিয়ে ছাত্রলীগ নেতা এমকে রাশেদ,ব্যবসায়ী নিজাম উদ্দিন ও বাগান মালিক মৌ: হাবিবুর রহমান,২০১৭ সালের ৪ র্ফেরুয়ারী দৌছড়ি ইউনিয়নের লেদুর মূখ থেকে তামাক চাষি ছালেহ আহমদ ও রাজিব,একই বছরের ৩০ এপ্রিল ঈদগড় এলাকার চাইল্যাতলী হতে শাহ আলম ৫ মে রাঙ্গাঝিরি এলাকার মিজানুর রহমান,মটরবাইক চালক আবু বক্ক্র ছিদ্দিক ২১ নভেম্বর

দৌছড়ি ইউনিয়নের বাকঁখালী থেকে নুরুল আজিম, মো: হোছাইন ১৭ ডিসেম্বর বাইশারী ইউনিয়নের আলিক্ষ্যং এলাকার আবুল বশর অপহৃত হয়। একই মাসে কাগজি খোলা থেকে ছৈয়দ বাবর অপহরণ হয়ে মুক্তিপণে ছাড়া পায়। ২০১৮ সালের ২০ জানুয়ারীতেও দৌছড়ি ইউনিয়নের লেদুর খাল নামক স্থান থেকে

তামাক চাষি আবদুর রহিম, আবু ছৈয়দ, আবুল আজিজ ও শাহ আলম এবং সর্ব শেষ গত ১৭ এপ্রিল গভীর রাতে দৌছড়ি ইউনিয়নের লংগদুর মূখ থেকে তামাক চাষি সাইফুল ইসলাম (১৮) সহ গত ৪ বছরে

শতাধিক রাবার শ্রমিক,কৃষক,ব্যবসায়ী, ব্যাংকার, বিশ্ববিদ্যালয়-স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসার ছাত্র,ইমাম,কারবারী,জনপ্রতিনিধি ও নারীকে অপহরণ করে আনুমানিক কোটি টাকার মূক্তিপণ আদায় করে আনোয়ার ও শাহিনবাহিনীর ৪০ ডাকাত।

এ বিষয়ে বান্দরবান জেলা পুলিশের গোয়েন্দা শাখার অতিরিক্তি পুলিশ সুপার আলী হোসেন জানান,হত্যার হুমকির বিষয়টি তিনি শুনেছেন। এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। পাশাপাশি তিনি এ প্রতিবেদককে আরো জানান,নাইক্ষ্যংছড়ি ও বাইশারীর আটক হওয়া ডাকাত ও অপহরণকারীদের তিনি তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করেই আটক করেছেন। আরো করা হবে। আবু মূসাকে মাঠে রাখা হয়েছে।

পাঠকের মতামত: