ঢাকা,শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪

সোনাদিয়ায় “এক্সিলারেট”; এলএনজি টার্মিনালের পাঁচ সার্ভিস ভ্যাসেল ড্রাইডকে, কক্সবাজারে গ্যাস সরবরাহের দাবী

আতিকুর রহমান মানিক, কক্সবাজার ::

মহেশখালির অদূরে বঙ্গোপসাগরের সোনাদিয়া জিরো পয়েন্টে পৌঁছেছে এলএনজি বোঝাই ভাসমান টার্মিনাল কাম জাহাজ “এক্সিলারেট”। এখান থেকে এলএনজি সরবরাহ আগামী মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে শুরু হবে বলে আশা করা যাচ্ছে। এ লক্ষ্যে ইতিমধ্যেই পৌঁছে গেছে টার্মিনালের জন্য ৫টি পোর্ট সার্ভিস ভেসেল।

সার্ভিস ভেসেলগুলো চিটাগাং ড্রাইডক জেটিতে নোঙরে আছে। এগুলোর মধ্যে একটি ব্যবহৃত হবে টার্মিনালের জ্বালানি পরিবহনে এবং অপর একটি টার্মিনালে নিয়োজিতদের আনা-নেয়া এবং তাদের রসদ সরবরাহে নিয়োজিত থাকবে। অপর ৩টি টাগবোট থাকবে ভাসমান টার্মিনালের সাথে। এগুলোই ভাসিয়ে রাখবে টার্মিনালকে। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা যায়, এই ৫টি ভেসেলের মধ্যে সুইজার চিটাগাং, সুইজার ঢাকা, সুইজার খুলনা এবং সুইজার রংপুর ১৬ মে  ভিড়েছে ড্রাইডক জেটিতে। ক্রু বোট সুইজার ফক্সট্রট নোঙর ফেলেছে গত ১৮ এপ্রিল। আলোচ্য প্রকল্পের লোকাল এসোসিয়েট হিসেবে যাবতীয় কাজের সমন্বয় করছে কেএনএইচ কনসোর্টিয়াম লিমিটেড। কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও হাসান মাহমুদ চৌধুরী জানান, ভাসমান টার্মিনালটি করছে পেট্রোবাংলা। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রতিষ্ঠান এক্সিলারেট এনার্জি’র সাথে এ ব্যাপারে ১৫ বছরের চুক্তি রয়েছে তাদের। দৈনিক ৫ কোটি ঘনফুট এলএনজি সরবরাহের ক্ষমতাসম্পন্ন এই টার্মিনাল তৈরিতে ব্যয় হয়েছে ১৫৬ কোটি মার্কিন ডলার। টার্মিনাল পরিচালনা করবে এক্সিলারেট এনার্জি (বাংলাদেশ) লিমিটেড।

ভাসমান টার্মিনালটি ইতিমধ্যেই পৌঁছে গেছে । এটা আসার সময় কাতার থেকে এলএনজি’র প্রথম চালানটি নিয়ে এসেছে। বাংলাদেশ সরকার ও কাতার সরকারের মধ্যে বছরে ২.৫ মিলিয়ন মেট্রিক টন এলএনজি সরবরাহের চুক্তি রয়েছে। এর উদ্বোধনী চালানটি নিয়ে মহেশখালির কাছে বঙ্গোপসাগরে নোঙ্গর করেছে এক্সিলারেট। এখান থেকে পাইপলাইনে জাতীয় গ্রিডে তা সরবরাহ শুরু হবে আর দিন দশেকের মধ্যেই। এরপর এটাই ভাসমান টার্মিনাল হিসেবে স্থায়ী থাকবে। পরবর্তীতে প্রতিমাসে এলএনজি নিয়ে জাহাজ এসে টার্মিনালে খালাস করে ফিরে যাবে।

নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা যায়, চলতি মাস থেকে জাতীয় গ্রিডে এলএনজি সরবরাহের কর্মসূচি থাকলেও তা কিছুটা পিছিয়ে যাচ্ছে। আগামী মাসের প্রথম সপ্তাহেই তা সরবরাহ শুরু হবে।

পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান আবুল মনসুর মো. ফয়জুল্লাহ জানান, ঐ শিডিউল কিছুটা পিছিয়ে যেতে পারে, তবে তা খুব বেশি না।

এক্সিলারেট এনার্জির সাথে যোগাযোগ করা হলে সংশ্লিষ্টরা জানান তাদের প্রস্তুতি রয়েছে ইতিপূর্বের শিডিউল অনুসারে ভাসমান টার্মিনাল চালুর ব্যাপারে। তবে, তা পেট্রোবাংলার ওপর নির্ভরশীল। কারণ, টার্মিনাল থেকে সরবরাহের পরবর্তী কাজগুলো পেট্রোবাংলার।

চট্টগ্রামে নতুন শিল্প কারখানা স্থাপন ও বিদ্যমান কারখানা সম্প্রসারণ বন্ধ রয়েছে প্রায় একযুগ ধরে শুধুমাত্র গ্যাস সংকটে। অনেক কারখানা চালু হওয়ার আগে রুগ্ন হয়ে পড়েছে কেবলামাত্র গ্যাস না পেয়ে। এ অবস্থায় এলএনজি আমদানি করে সরবরাহের সরকারি সিদ্ধান্তে শিল্প কারখানা মালিক ও উদ্যোক্তারা আশান্বিত হয়েছেন, তারা এখন সেই অপেক্ষায়।

বিশেষজ্ঞরা জানান, সাধারণ চাপ ও তাপমাত্রায় গ্যাসীয় অবস্থায় থাকে প্রাকৃতিক গ্যাস। রেফ্রিজারেশনের মাধ্যমে তাপমাত্রা হ্রাস করে পরিণত হয় তরলে। আর তা হলো তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (লিকুফাইড ন্যাচারাল গ্যাস-এলএনজি)।

প্রাকৃতিক গ্যাস সাধারণ চাপ ও তাপমাত্রায় গ্যাসীয় অবস্থায় থাকে। শীতলকরণ (রেফ্রিজারেশন) প্রযুক্তির মাধ্যমে তাপমাত্রা কমিয়ে আনলে তা তরলে পরিণত হয়। এই তরল প্রাকৃতিক গ্যাসই হলো এলএনজি। যখন তরল করা হয় তখন আয়তন কমে যায় প্রায় ৬০০ গুণ। অর্থাৎ ৬০০ লিটার গ্যাস এলএনজিতে রূপান্তরিত করার পর তা এক লিটারের বোতলে ভরা যায়। এ কারণে জাহাজে এলএনজি পরিবহন বেশ সুবিধার।

এদিকে কক্সবাজার শহর, বিসিক শিল্পনগরী ও সদরের ইসলামপুর শিল্প এলাকার লবন কারখানাসমূহেও গ্যাস সরবরাহের দাবী জানিয়েছেন সচেতন মহল। দেশের বৃহত্তম লবন শিল্প জোন ইসলামপুর শিল্প এলাকা থেকে দেশীয় চাহিদার ভোজ্য ও শিল্প লবন সরবরাহ করা হচ্ছে। বার্ষিক প্রায় দুই হাজার কোটি টাকার দেশজ লবন ব্যবসা ও বাজার নিয়ন্ত্রন করা হচ্ছে এখান থেকে । ইসলামপুরে গ্যাস লাইন সম্প্রসারন করা হলে এখানকার পূর্ন উৎপাদনশীল অর্ধশতাধিক কারখানা গ্যাস সংযোগের আওতায় আসবে। ইসলামপুর লবন মিল মালিক সমিতির অর্থ সম্পাদক সেলিম উল্লাহ কাদেরী জানান, বিদ্যুতের উচ্চমূল্য ও লোডশেডিংয়ের ফলে কারখানাসমূহে  উৎপাদন খরচ বেশী পড়ছে। গ্যাস সংযোগ পেলে এ খরচ এক চতুর্থাংশে নেমে আসবে। বাংলাদেশ লবন চাষী সমিতি সদর উপজেলা শাখার সভাপতি হান্নান মিয়া বলেন, কারখানায় উৎপাদন খরচ কম হলে এর সুফল পাবেন প্রান্তিক চাষীরা, ফলে মাঠ পর্যায়ে লবনের দাম বাড়বে।

পাঠকের মতামত: