ঢাকা,শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪

সাংগ্রে’র মঙ্গল জলে অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার আহবান

কক্সবাজার প্রতিনিধি ::
নাচ,গান নানা আনন্দ আয়োজনের মধ্যদিয়ে কক্সবাজারে শেষ হয়েছে তিনদিনব্যাপী রাখাইন সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যবাহী সাংগ্রে পোয়ে বা জলকেলি উৎসব। রাখাইন পঞ্জিকা মতে ১৬ এপ্রিল ছিল রাখাইন বর্ষ ১৩৭৯ সনের শেষ দিন। আর ১৭ এপ্রিল থেকে শুরু হয়েছে নতুন রাখাইন বর্ষ ১৩৮০ । রাখাইন নববর্ষকে বরণে জেলঅজুড়ে রাখাইন সম্প্রদায় এ উৎসবে মেতে ওঠে। শুধু রাখাইন সম্প্রদায় নয়, দেশী বিদেশী পর্যটকসহ সকল সম্প্রদায়ের লোকজনের অংশগ্রহনে এবারও উৎসব থেকে ওঠে এসেছে অসম্প্রদায়িক ডাক। গতকাল বৃহস্পতিবার ছিল উৎসবের শেষ দিন।
রাখাইনদের সম্প্রদায়ের মতে, ঐতিহ্যবাহি ‘সাংগ্রে পোয়ে’ স্থানীয়দের কাছে জলকেলি বা পানি খেলা হিসেবে পরিচিত। উৎসবকে ঘিরে চলে নানা আয়োজন। উৎসবের দিনে রাখাইন নারী-পরুষ,তরুন-তরুনী,শিশু-কিশোরেরা তাদের নিজস্ব ঐতিহ্যবাহী পোষাক পরে সারিবদ্ধভাবে নানারকম বাদ্যযন্ত্র সহকারে বৌদ্ধ বিহারে যান। সেখানে ধর্মীয় আচার আনুষ্ঠানিকতা সেরে সেখান থেকে শোভাযাত্রা সহকারে, নেচে গেয়ে আসেন প্যান্ডেলে। এভাবেই নাচতে নাচতে তারা বিভিন্ন পেন্ডেল পরিদর্শন করেন। এ উৎসবকে ঘিরে রাখাইন পল্লীগুলোকে নতুন করে সাজানো হয়। এ বছর ওপ্রায় বিশটি প্যান্ডেলে এ উৎসবের আয়োজন করা হয়।
উৎসবে আসা রাখাইন দম্পতি ড. আছিং ও এসেনখিং বলেন- ‘সাংগ্রে পোয়ে,জলকেলি বা পানি খেলা উৎসব নিয়ে অনেকের ভ্রান্ত ধারনা রয়েছে। অনেকেই ভাবেন গায়ে জল ছিটানোর মাধ্যমে রাখাইন তরুন-তরুনীরা অপরকে পছন্দ করেন এবং বিয়ে করেন। এ ধারনা ঠিক নয়, পানি ছিটানোর মাধ্যমে পুরোনো জীর্ণতাকে ধুয়ে মুছে নিজেদের শুদ্ধ করার আহবানে এ উৎসবের আয়োজন করা হয়ে থাকে।’ তারা বলেন,উৎসবে এলেই অনেক বন্ধুবান্ধব,আত্মীয় স্বজন,পরিচিতিজনের সঙ্গে দেখা হয়,এ যেন যে কারো জন্য পরম পাওয়া। আর উৎসবে এলেই আমরা অন্য রকম প্রাণ পাই।
রাখাইন তরুন উশিবু রাখাইন বলেন, রাখাইন সম্প্রদায়ের কাছে পানি হচ্ছে পবিত্রতার (মঙ্গল) প্রতীক। তাই নতুন বছরের সূচনায় একে অপরকে মঙ্গল জল ছিটিয়ে নিজেদের পূত পবিত্র করে। পানি খেলার অনাবিল আনন্দের মধ্যদিয়ে নতুন বছরকে স্বাগত জানায় ।
কক্সবাজার সিটি কলেজের অধ্যক্ষ ক্যাথিং অং জানান, পুরনো বছরকে বিদায়,স্বাগত রাখাইন নববর্ষ। দূর হোক সকল অশুভ তৎপরতা। উৎসবের মঙ্গল জলে সিক্ত হয়ে ধুয়ে মুছে যাবে সকল ক্লান্তি,সকল অবসাদ। নতুন আলো,নতুন দিন,নতুন স্বপ্ন কড়া নাড়বে বাঙাগালী জাতীর দুয়ারে। সকল অসুন্দরকে দূরে ঠেলে সুন্দরে সুন্দরে ভরে যাবে এই দেশ। এই চেতনায় হৃদ্ধ হয়ে সহ¯্রাদিককাল ধরে রাখাইন সম্প্রদায় এ উৎসবের আয়োজন করে আসছে।
তিনি বলেন, উৎসবে সবার জন্য কামনা থাকে একটাই,১৩৮০ মঘাব্দ সবার জীবনে বয়ে আনবে সুখ-শান্তি সফলতা। অসাম্প্রদায়িক যে চেতনা আমরা ধারণ করে চলেছি,এ উৎসবের মাধ্যমে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি আরো জোরালো হবে এমনটাই আমাদের বিশ্বাস। যতদিন বাংলাদেশ আছে ততদিন আমরা শান্তিপূর্ণ পরিবেশে,সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রেখে এ উৎসব উদযাপন করা হবে।
জানা গেছে, স্মরণাতীত কাল থেকে রাখাইন নববর্ষকে বরণে রাখাইন তরুন-তরুনীরা সাংগ্রেপোয়ে বা জলকেলী উৎসব উদযাপন করে আসছে। এখন এ উৎসব শুধু কক্সবাজার শহরে সীমাবদ্ধ নেই, জেলার মহেশখালী, টেকনাফ, চকরিয়াসহ বিভিন্নস্থানে সাংগ্রেপোয়ে উৎসবে আয়োজন চলছে।

পাঠকের মতামত: