ঢাকা,শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪

মহেশখালীতে ক্ষতিপূরণ না দিয়ে জমি দখল করে নিচ্ছে সিটিএলই কোম্পানী অবৈধভাবে বালি উত্তোলন অব্যাহত

কক্সবাজার প্রতিনিধি :
মহেশখালীর কালারমারছড়ায় পেট্রোবাংলার বিভিন্ন মালামাল সংরক্ষণ স্থলের সংযোগ সড়কের জন্য রিকুইজিশান করা ২৫ একর জমির মালিকরা আতংকের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। রিকুইজিশান করা জমির মূল্য কত টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে তা কেউ জানে না। জমির মালিকদের না জানিয়ে গোপনেই সবকিছু সেরে নিচ্ছেন পেট্রোবাংলা। এ ছাড়া বিভিন্ন ছরা থেকে কোন অনুমতি ছাড়াই কোটি টাকার বালি উত্তোলন করছে একটি চক্র।
প্রতি একরে কত টাকা ক্ষতিপুরণ দেওয়া হবে তা জানেন না জমির মালিকরা। প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকার প্রকল্পের নাম দিয়ে গোপনেই কাজ চালিয়ে যাচ্ছে পেট্রোবাংলা। কেউ কিছু জিজ্ঞাসা করলেই জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে যোগাযোগ করতে বলেন। কিন্তু টাকা বিতরণ করছে ইউনিয়ন পরিষদ।
চিকনীপাড়ার শামসুল আলম জানিয়েছেন, জমির মালিকদের অজান্তে এমন কার্যক্রম কোন সময় দেখেনি। যারা টাকা বিতরণ করছে তাদের কাছে জিজ্ঞাসা করলে কোন উত্তর দেন না। টাকা যা দেওয়া হয় ওই টাকার একটি বড় অংশ রাতের বেলায় ফেরত দিতে হয়। এটা কোন ধরণের নিয়ম তা আমাদের জানা নেই। কর্তৃপক্ষের একজন সহকারী ম্যানেজার প্রকল্প এলাকায় আসলেও তিনি চেয়ারম্যানের সাথে গোপনে যোগাযোগ করে চলে যান। আমরা জমি দেব কোটি টাকা আয় করবে প্রভাবশালীরা তা মেনে নেওয়া যায় না। আমাদের জমির মূল্য নির্ধারণ করে তা প্রকাশ করতে হবে।
দক্ষিণ ঝাপুয়ার মোঃ আলম জানিয়েছেন, ক্ষতিপুরণের জন্য কত টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে তিনি জানেন না। অলিখিত স্টাম্পে দস্তখত নিয়েই টাকা দিচ্ছে ইউনিয়ন পরিষদ। বলা হয়েছে কানি প্রতি ৫০ হাজার টাকা। এটি মৌখিক কথা। দায়িত্বশীল কেউ এ ব্যাপারে কথা বলেনি। সিটিএলই থেকে যারা আসেন তারই এ সমস্যা সৃষ্টি করেছেন। তারা জমির মালিকদের টাকা আত্মসাৎ করতে এবং অবৈধভাবে বালি উত্তোলন করতে প্রভাবশালীদের সাথে হাত মিলিয়েছে। এতে যেকোন সময় ফুসে উঠতে পারে স্থানীয় লোকজন। আমাদের জানাতে হবে জমির ক্ষতিপুরণের টাকা কত ও কার কত একর জমি রিকুইজিশানে পড়েছে। এতে পেট্রোবাংলার পক্ষ থেকে জমির মালিকদের সাথে কোন আলোচনা হয়নি। এমনকি প্রশাসনের পক্ষ থেকেও আমাদের অবহিত করা হয়নি। আমরা তিন ফসলা জমি দেব আমাদের সাথে কোন আলোচনা হবে না এটি কেমনে হয়। রিকুইজিশান করা আমার জমির পরিমান কত এবং ক্ষতিপুরণের জন্য কত টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে তা পরিস্কার করতে হবে প্রশাসনকে। আমরা এখনো জমির টাকা পাইনি, কিন্তু জোরপূর্বক জমি দখল করে নিচ্ছে সিটিএলই কোম্পানীর লোকজন। এতে আমরা চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি।
এ দিকে পানি চলাচলের দুইটি ছরা থেকে প্রশাসনের অনুমতি ছাড়াই কোটি টাকার বালি উত্তোলন অব্যাহত রেখেছে সেই আলোচিত যুবদল নেতা এহছানুল করিম। ইতোমধ্যে অন্তত ৫০ লাখ টাকার বালি অবৈধভাবে বিক্রি করেছে এই যুবদল নেতা। তবে এতে স্থানীয় চেয়ারম্যান সার্বিক সহযোগীতায় রয়েছেন।
উত্তর নলবিলার একজন যুবলীগ নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন ইতোমধ্যে অন্তত ৫০০ গাড়ি বালি বিক্রি করা হয়েছে। বর্তমান সরকারের সময়ে যুবদল নেতারা অবৈধভাবে বালি উত্তোলন করবে তা মেনে কোনভাবেই কাম্য নয়। আমরা চাই অবিলম্বে অবৈধভাবে বালি উত্তোলন বন্ধ করা হউক।
চিকনীপাড়ার জয়নাল আবেদীন জানিয়েছেন, যেখানে চীনের নাগরিকদের নিরাপত্তার জন্য পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন সেখানে একজন যুবদলের নেতাকে নিয়ে কাজ করা বেশী ঝুকিপুর্ণ। কোন সমস্যা হলে প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধীকার প্রকল্পের কাজ বাধাগ্রস্ত হতে পারে। সুনাম বিনষ্ঠ হতে পারে দেশের।
সিটিএলই এর এজিএম মোহাম্মদ জোবায়ের চৌধুরী জানান, এই প্রকল্পের মুল কাজের দায়িত্বে আছে সিপিবি। আমাদের কোম্পানী ওই কোম্পানীর অধীনেই কাজ করছে। জমির রিকুইজিশানের মূল্য কত টাকা দেওয়া হচ্ছে তা ওই কোম্পানীই জানবে। যদি গোপন করে আত্মসাৎ করলে তার দায়-দায়িত্ব স্থানীয় চেয়ারম্যান ও ওই কোম্পানীর। বালি উত্তোলন করছেন স্থানীয় চেয়ারম্যান আমাদের কোম্পানী তাদের কাছ থেকে বালিগুলো কিনে নিচ্ছে। এর বাইরে জানার থাকলে চেয়ারম্যান ও (সিপিবি) মাদার কোম্পানীর সাথে যোগাযোগ করতে বলেন তিনি।
এব্যাপারে স্থানীয় চেয়ারম্যান তারেক বিন ওসমান শরীফকে একাধীকবার ফোন করলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। মহেশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ আবুল কালাম জানিয়েছেন, তিনি এ ব্যাপারে অবগত নন। তবে খুব শীঘ্রই খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

পাঠকের মতামত: