ঢাকা,শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪

শহীদ লে. কর্ণেল কাইসার স্মরণে বিশেষ নিবন্ধ : ২৫ ফেব্রুয়ারি আমাদের অমর স্মৃতি

॥ আলহাজ্ব জহুরুল মওলা ॥
২১ ফেব্রয়ারীতে আমরা বিনম্র শ্রদ্ধার সাথে ভাষা শহীদগণকে স্মরণ করি এবং ২৬ মার্চ আমাদের স্বাধীনতা আন্দোলনের অসংখ্য শহীদগণকে স্মরণ করি। এ উপলক্ষে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে আমাদের জাতিগত মর্যাদা ও ভাবমুর্তি অনেক উন্নত স্তরে পৌঁছে গেছে, কিন্তু ঢাকার পিলখানায় ২৫ ফেব্রুয়ারী-২০০৯ রাতে অস্বাভাবিকভাবে নিহত চৌকষ সামরিক কর্মকর্তাগণের শাহাদাৎ বরণের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ইতিহাস কোনভাবেই স্মরণীয় হচ্ছেনা। তাদের কবরে ফুল দেওয়া এবং পারিবারিকভাবে দোয়া মাহ্ফিল ছাড়া জাতীয়ভাবে এ নির্মম হত্যাকান্ডের কোন স্মৃতিচারণ হয়না। পৃথিবীর জন্মকাল থেকে এ ধরণের বর্বরোচিত হত্যাকান্ডের ইতিহাস কারো জানা নেই। নিরস্ত্র এতোগুলো দেশপ্রেমিক মুসলীম অফিসারকে কার স্বার্থে হত্যা করা হলো? কি কারণে এসব সামরিক কর্মকর্তাদের মায়ের বুক খালি হলো? ৫৪ জন নিরপরাধ মহিলা বিধবা হলো এবং শতাধিক সন্তান এতিম হয়ে পড়লো? সামরিক কর্মকর্তাগণ দেশ রক্ষায় জীবন বিসর্জণের শপথ নিয়ে দেশের অতন্ত্র প্রহরী হয়ে থাকে, কিন্তু ২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারী হত্যাযজ্ঞে শহীদ হওয়া অফিসারগণ কি যুদ্ধক্ষেত্রে মারা গেলেন? কেউ কি অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে মারা গেলেন? বা কেউ কি কোর্ট মার্শাল হয়ে? আমরা পরিবারের ভাই-বোন, মা-বাবা কিংবা ছেলে-মেয়েরা কিভাবে শান্তনা পাবো? আমাদের হৃদয়ের রক্তক্ষরণ কিভাবে বন্ধ হবে? চকরিয়া তথা কক্সবাজার জেলার কৃতি সন্তান শহীদ লেঃ কর্ণেল আবু মুছা মোহাম্মদ আইয়ুব কাইসার সাহেবের পরিবারের পক্ষ হতে আমি বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধান মন্ত্রী ও জাতীয় সংসদ সদস্যদের নিকট আবেদন জানাই- ২৫ ফেব্রুয়ারী রাতে ও ২৬ ফেব্রুয়ারী দিন ও রাতে ঢাকার পিলখানায় পৈশাচিক হত্যাকান্ডে শহীদ সামরিক কর্মকর্তাদের জীবন স্মৃতি অমর করে রাখার জন্য নিম্নোক্ত পদক্ষেপ নেয়া যেতে পারে-
০১। পিলখানার সেদিনের দরবার হলকে সেই অফিসারদের ব্যবহৃত পোষাক-পরিচ্ছদ, জিনিষ পত্র (ব্যক্তিগত ও পেশাগত) সচিত্রভাবে সজ্জিত করে যাদুঘর হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা হোক।
০২। প্রতিটি অফিসারের জীবন গাঁথা রচিত করে বই আকারে প্রকাশ করার জন্য সরকারীভাবে উদ্যোগ নেয়া হোক।
০৩। প্রত্যেক অফিসারের জন্য জেলা-উপজেলায় তাঁদের নামে একটি করে সড়ক-সেতুর নাম করণ করা হোক।
০৪। শহীদ পরিবারের জীবিত মা-বাবা, ভাই-বোন ও সন্তান গণকে পার্থিব জীবনে পুরুস্কৃত ও সম্মানিত করার উদ্যোগ নেয়া হোক।
০৫। ২৫ ফেব্রুয়ারীকে জাতীয়ভাবে শোক দিবস হিসেবে পালনের জন্য সরকারী প্রজ্ঞাপন প্রকাশের ব্যবস্থা করা হোক।
০৬। কক্সবাজারে নির্মিয়মান আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরকে লেঃ কর্ণেল কাইসারের নামে নামকরণ করা হোক।
বাংলাদেশের ১৭ কোটি আবাল-বৃদ্ধ বনিতার নিকট আমি আজকের এদিনে শোকাভিভুত হয়ে জানাতে চাই যে- আমাদের এ এতিম ভাইদের সু-দীর্ঘ চাকুরী জীবনে একটি টাকাও সঞ্চয় করে রেখে যেতে পারেনি। তাঁর মৃত্যুর পর স্ত্রী ও কন্যাদ্বয় সরকারী বাসভবনে বসবাস করছেন। স্থানীয় কিছু ভুমিদস্যু নিজেদের কু-স্বার্থ চরিতার্থ করার উদ্দেশ্যে পরিবারকে ধ্বংস করতে তৎপর আছে। আমরা শহীদ পরিবারের সকল সদস্যগণের সামাজিক ও ব্যক্তিগত নিরাপত্তার আবেদন জানাই। করুণাময় আল্লাহ্্ সকল শহীদের আত্মাকে জান্নাতবাসী করে চির শান্তিতে রাখুন।

লেখকঃ শহীদ লেঃ কর্ণেল কাইসারের বড় ভাই।

পাঠকের মতামত: