ঢাকা,শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪

ঈদগাঁওতে বৃদ্বি পাচ্ছে “শিশু শ্রম” : ঝুঁকিপূর্ণ পেশায় নিয়োজিত অনেকে

এম আবু হেনা সাগর, ঈদগাঁও ::

কক্সবাজার সদর উপজেলার বৃহত্তর ঈদগাঁওর ছয় ইউনিয়ন জুড়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে শিশু শ্রম। নানা ব্যবসায়ীক প্রতিষ্ঠান মূলত শিশুদের অর্থের প্রলোভন দেখিয়ে হরেক রকমের মরণাক্তক ঝুঁকিপূর্ণ পেশায় নিয়োজিত করে চলছে । এক পর্যায়ে কারণে-অকারণে শিশুদের ভাগ্যে জোটছে শারীরিক, মানষিক ও শোষন সহ নানা নির্যাতন। কখনো আবার বৈষম্যের শিকার ও হচ্ছে। শিক্ষার আলোর সুযোগ-সুবিধা থেকে অগনিত বঞ্চিত হচ্ছে অসহায় শিশু। অভাবের তাড়না ও সংসারের অশান্তির কারণে পথকলি শিশুরা বাঁচার তাগিদে জীবিকার সন্ধানে নেমে পড়ে রাস্তায়। একসময় পথভ্রষ্ট হয়ে চলে যায় টাকার রাজ্যে। ছোট্ট বয়সে সংসারের হাল ধরতে নেমে পড়ে জীবন যুদ্ধে। বলতে গেলে শোষকের কাজে শিশুশ্রম বিশেষ করে নিম্ন বিত্তদের দারিদ্রের অন্তরালে সংসারের অভাব, দারিদ্রতা এবং পরিবারের সদস্য সংখ্যা বেশী হয়ে যাওয়ায় উক্ত পরিবারের সদস্যরা শিক্ষা বঞ্চিত অজ্ঞ অভিভাবকদের আর্থিক সুবিধা ক্ষুধার রাজ্যে যুদ্ধ করে এক প্রকার বাধ্য হয়ে পড়ে প্রলোভনে লোভনীয় প্রস্তাবের বিনিময়ে ঐসব শিশুরা শিক্ষার বই-খাতা-কলমের পরিবর্তে নিরুপায় হয়ে ঢুকে পড়ে শ্রম জগতে।  সু-শিক্ষার ধ্যান, ধারণা ও বিদ্যালয়ে যাওয়ার মনমানষিকতা থাকলেও অভাব হয়ে উঠে সবচেয়ে বড় বাঁধা। ফলে এসব শিশুরা এখন শিক্ষার কাছ থেকে পরাজিত হয়ে দারিদ্রের কাছে ঝুঁকছে। ঈদগাঁওর ছয় ইউনিয়ন জুড়ে অসংখ্য শিশু ঝুঁকিপূর্ণ মরণ পেশায় নিয়োজিত রয়েছে। অবুঝ শিশু-কিশোররা লবণের মাঠ, শুটকি মহল, ইটভাটায় ইটভাঙতে, ওয়ার্কসপে ওয়েল্ডিং করার কাজে,কিটনাশক বিক্রির দোকানে, হোটেল রেস্তোরাসহ নানা ঝুঁকিপূর্ণ পেশায় নিয়োজিত থাকতে দেখা যায় প্রতিক্ষণে প্রতিমুহুর্তে। ঈদগাঁও বাসষ্টেশনের এক হোটেলের গ্লাসবয় কর্মচারী নাম প্রকাশ না করা শর্তে জানান, সে ভোর সকাল পাঁছটা থেকে সন্ধ্যা পাঁছটা পর্যন্ত একটানা পরিশ্রম করে মজুরী পায় মাত্র একশত থেকে একশত বিশটাকা। এ নিয়ে পরিবার চলাতো দুরের কথা, নিজেও চলা কঠিন হয়ে পড়ে। এভাবে আর কতকাল? একটি অসাধু মহল প্রত্যান্ত গ্রামাঞ্চলের কচি-কাঁচা পথকলি শিশুদের ঝুঁকিপূর্ন কাজের মত হীনকাজে ব্যবহার করছে বলে অভিযোগ উঠছে। আবার
কাগজ কুড়ানো, ফেরী ওয়ালা, যানবাহনের হেলপারের কাজে নিয়োজিত করেছে এক শ্রেণীর কতিপয় স্বার্থান্বেষী মহল। এছাড়া মরনাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ পেশায় কাজ করতে গিয়ে দূর্ঘটনায় শিকার হয়ে অনেকেই অকালেই ঝরে পড়ে মৃত্যুর কূলে। কেউ কেউ পঙ্গুত্মের অভিশাপ নিয়ে জীবন-যাপন করছে। ২২ জানুয়ারী বিকেলে ঈদগাঁও বাসষ্টেশন এলাকায় জিটু পরিবহনের হেলপার ইসলামাবাদ ইউনিয়নের কান্ঞনমালা নামক এলাকার নয় বছর বয়সী সাগর হোসেনের সাথে আমাদের ককসবাজারের এ প্রতিনিধির কথা হলে জানান, পিতা মাতা থাকার পরেও গাড়ীর হেলপারের কাজে শ্রম দিচ্ছে। লেখাপড়া করছে কিনা জানতে চাইলে সে আগে করত, এখন পড়াশোনা আর করেনা বলে জানান। একইভাবে অপর টমটম চালকের সাথে কথা হলে সেও একই উক্তর দিয়ে টমটমে যাত্রী নিয়ে তড়িগড়ি করে চলে যায়। এদিকে সচেতন মহল জানান, শিশু অধিকার আদায়ের লক্ষে বিভিন্ন সংগঠন কাজ করলেও তা শুধুই কাগজে-কলমে সীমাবদ্ধ। তদন্ত পূবর্ক অল্প বয়সে লেখাপড়া থেকে বাদপড়া ঝুঁকিপূর্ণ কাজে অংশ নেওয়া শিশুদের সেসব কাজ থেকে ফিরিয়ে এনে স্কুলে ভর্তি করিয়ে দিলে অনেকটা ভাল হবে বলে পাশাপাশি গ্রামে গ্রামে মায়েদের সাথে ছেলেমেয়েদের পাঠদানের বিষয়ে গুরুত্বারোপ শীর্ষক সেমিনারের ব্যবস্থা করলে হয়তো শিশুশ্রমের প্রতি বিমুখ হয়ে লেখাপড়ায় আগ্রহতা বৃদ্বি পেত বলেও মত প্রকাশ করেন।

পাঠকের মতামত: