ঢাকা,শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪

গর্জনিয়ায় পাহাড় কাটার প্রতিযোগিতা

নাইক্ষ্যংছড়ি প্রতিনিধি :::
পরিবেশ সংরক্ষণ আইনে পাহাড় কাটার বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও রামু উপজেলায় অনেকেই তা মানছেন না। উপজেলা প্রশাসনের কঠোর নজরদারিতেও থামানো যাচ্ছে না গর্জনিয়া-কচ্ছপিয়া এলাকায় পাহাড় কাটা। উল্টো সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অগোচরে বেড়েই চলেছে একের পর এক পাহাড় কাটার ঘটনা। সম্প্রতি কচ্ছপিয়ায় পাহাড় কাটার খবরে ভিত্তিতে বন বিভাগ অভিযান চালিয়ে ডাম্পার জব্দ করে বন আইনে মামলা দেওয়া হয়।
বৃহস্পতিবার (১১ জানুয়ারী) সকাল ১০টার দিকে রামু উপজেলার গর্জনিয়া ইউনিয়নের মাঝির কাটা এলাকায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় মাটি ভর্তি দুইটি পিকাআপ( ডেম্পার গাড়ী) একটি মাঠি নিয়ে যাচ্ছে। অপরটি মাঠি কাটার স্থানে।
স্থানীয় ৬ নং ওয়ার্ডে মেম্বার কামাল উদ্দিন ১০-১২ জন শ্রমিক নিয়ে বন বিভাগের পাহড় কেটে সাবাড় করছে। তবে খবর পেয়ে তিনি পাহাড় কাটার স্থানে ছুটে যান।
স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রভাবশালী মেম্বার কামালের নেতৃত্বে নিয়মিত মাঝির কাটা বেলতলীস্থ বন বিভাগের বিশাল একটি পাহাড় কর্তন করে ফসলী জমি করছে। ভরাট করছে তার নিজস্ব দোকান ঘর। এছাড়াও বিভিন্ন স্থানে মাটি পাচার করেই যাচ্ছে প্রতিনিয়ত। স্থানীয় প্রশাসনের ছত্র-ছায়ায় চলছে এ পাহাড় কাটার মহোৎউৎসব। উপজেলা প্রশাসনের নিষেধ থাকা সত্ত্বেও নিয়মিত পাহাড় কর্তনের ফলে পরিবেশ বিপর্যয়ের আশংকা করছে স্থানীয় পরিবেশ বাদী সচেতন মহল। পরিবেশ অধিদপ্তর সূত্রে জনা যায় ইমারত নির্মাণ বিধিমালা-১৯৯৬ ইং সনে বলা হয়েছে, পাহাড় কাটা অথবা মোচনের জন্য পরিবেশ ছাড়পত্র অবশ্যই নিতে হবে। ২০০২ সালের ৯ মার্চ পরিবেশ অধিদপ্তর এই সম্পর্কিত একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে। যেখানে বলা হয়েছে পাহাড় কর্তন ও মোচনের ক্ষেত্রে ইমারত নির্মাণ বিধিমালা -১৯৫২ এবং ১৯৯৬ অবশ্যই অনুসরণ করতে হবে। পরিবেশ সংরক্ষণ আইন-২০১০ অনুযায়ী, পাহাড় কাটা আমলযোগ্য অপরাধ। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের পূর্ব অনুমতি ছাড়া কোনও সরকারি, আধা-সরকারি, সায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠান অথবা ব্যক্তি পাহাড় কাটতে বা নিশ্চিহ্ন করতে পারবে না। যদি কেউ এটি অমান্য করে, তবে তাকে অথবা ওই প্রতিষ্ঠানকে দুই বছর কারাদণ্ড অথবা ২ লাখ টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করা হবে। ফের একই অপরাধ করলে, ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে ১০ বছর কারাদণ্ড অথবা ১০ লাখ জরিমানা গুণতে হবে। স্থানীয়দের দাবী প্রশাসনের ছত্র-ছায়ায় অভিযুক্ত মেম্বার কামাল পরিবেশ আইন তোয়াক্কা না করে নিজের খতিয়ানী জায়গা বলে চালিয়ে দিয়ে বন বিভাগের রিজার্ভ পাহাড় কেটে সাবাড় করছে। এলাকাবাসী তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের প্রতি দাবী জানান।
রামু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ শাহজান আলী এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘আমাদের কঠোর নজরদারির সত্ত্বেও কিছু অসাধু ব্যক্তিরা উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে পাহাড় কেটেই চলছেন। জরিমানা কিংবা মামলা দায়ের করেও তাদের থামানো যাচ্ছে না। তবে তিনি গর্জনিয়া ইউনিয়নের বিষয়ে এ প্রথম শুনেছেন। তাছাড়া পাহাড় কাটার বিষয়ে জেলা প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। পাহাড় কাটায় অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে অবশ্যই আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
অপরদিকে রামু বাঁকখালী রেঞ্জ কর্মকর্তা আতা এলাহী জনান তিনি খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ঘিলাতলী বিট অফিসারকে পাঠাইলে বন বিট কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম ও বন বিভাগ হাতে নাতে পেয়ে পাহাড় কাটায় জড়িত কোন ব্যক্তি ও গাড়ী জব্দ না করে ছেড় দিল। বিষয়টি জনতে চাইলে এ পাহাড়টি তাদের জমির মাথা খিলা বলায় গাড়ী ও লোক ছেড়ে দেওয়া হয়েছে বলে সংবাদিকদের জানান।

পাঠকের মতামত: