ঢাকা,শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪

পেকুয়ায় লোনা পানি দিয়ে চলছে সড়কের গাইডওয়াল নির্মাণ কাজ!

মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন, পেকুয়া :

কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলায় মগনামায় সড়ক ও জনপথ বিভাগের সড়কের দুই পাশে গাইড ওয়াল নির্মাণ কাজে সাগরের লোনা পানি ব্যবহারের গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। গতকাল ৯ জানুয়ারী সকালে সড়কের মগনামা অংশের গাইড ওয়াল তৈরীর কাজে লবণ পানি দিয়ে ইটের প্রাচীর নির্মাণের কাজ করার সময় ঠিকাদারের নিযুক্ত শ্রমিক ও লোকজনদের হাতেনাতে ধরে ফেলেন উপজেলা চেয়ারম্যান, স্থানীয় ইউপি সদস্য নুর মোহাম্মদ মাদু ও এলাকাবাসীরা। এসময় উপজেলা চেয়ারম্যান শাফায়াত আজিজ রাজু লোনা পানি মিশিয়ে কাজ না করতে ঠিকাদারের লোকজনের প্রতি কঠোরভাবে নিষেধ করেছেন।

সড়ক ও জনপথ বিভাগের কক্সবাজার নির্বাহী প্রকৌশলীর কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ঘূর্নিঝড় ‘রোয়ানু’ ক্ষতিগ্রস্থ কুতুবদিয়া-আজম সড়ক ও পেকুয়া উপজেলার অংশে পেকুয়া একতাবাজার-পহরচাঁদা-মগনামাঘাট সড়কের পেকুয়া বাজার থেকে মগনামাঘাট পর্যন্ত সড়ক সংস্কারের জন্য গত ২৮/০৫/২০১৭ইংরেজী তারিখে আরএনবি-আরসি (প্রা:) লি: নামের একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্টানকে এক বছরের মধ্যে কাজ সমাপ্তের সময়সীমা বেঁধে দিয়ে কার্যাদেশ দেওয়া হয়। বিশাল অংকের বাজেটের এ কাজটির বাস্তবায়নের শুরু থেকেই নিন্মমানের ইটের খোয়া, বালিসহ সড়ক সংস্কারের উপকরণ, মেয়াদ উত্তীর্ন ব্ল্যাক টপ ব্যবহার করে আসলেও সড়ক বিভাগের উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষ রহস্যজনক কারণে অভিযুক্ত ঠিকাদারের বিরুদ্ধে কোন ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। সড়ক সংস্কারের কাজ তদারকীর দায়িত্বে থাকা সড়ক বিভাগের এসও এহসান সরকারী দায়িত্বে পালনে চরম অবেহেলাসহ ঠিকাদারের লোকজনের সাথে আঁতাত করায় ঠিকাদার যেনতেনভাবে কাজ বাস্তবায়ন করছেন বলে স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন।

সরকারী দায়িত্বে পালনে অবহেলার প্রসঙ্গে দায়িত্বরত এসও এহসানের সাথে যোগাযোগ করে তার বক্তব্যে নেওয়ার জন্য একাধিকবার চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।

জানা গেছে, কার্যাদেশ পাওয়ার পর গত কয়েক মাস ধরে পেকুয়া বাজার থেকে মগনামাঘাট পর্যন্ত সড়ক সংস্কারের কাজ চললেও দায়িত্বরত এসও এহসান প্রায় সময় অনুপস্থিত থাকেন। এ সুযোগে ঠিকাদারের লোকজন নিজেদের খেয়াল খুশিমতো তাদের ইচ্ছেমতো দায়সারাভাবে নানান ধরনের অনিয়মের আশ্রয় নিয়ে সড়কের কাজ বাস্তবায়ন করছেন। পেকুয়া বাজার থেকে মগনামা ঘাট পর্যন্ত তিনটি বক্স কালভার্ট নির্মাণে ঠিকাদার নানান অনিয়ম ও দূর্নীতির আশ্রয় নিয়েছেন। এসব বক্স কালভার্ট নির্মাণে ঠিকাদার নিন্মমানের সামগ্রী ও সাগরের লোনা পানি ব্যবহার হতে পারে বলে স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন। এছাড়াও সড়কের পেকুয়া বাজার থেকে কামাল চেয়ারম্যানের রাস্তার মাথা পর্যন্ত সড়ক বিভাগের বিচানো পুরাতন বিপুল পরিমাণ ইটও লুটে নিয়েছে ঠিকাদারের লোকজন! এতেও সড়ক বিভাগ কোন বাধা দেয়নি।

সরেজমিনে ৯ জানুয়ারী সকাল ১১টার দিকে সড়ক সংস্কার কাজ পরিদর্শন করে দেখা গেছে, মগনামা অংশের দুই পাশে গাইডওয়াল নির্মাণ কাজে ইটের গাথূনির সাথে সিমেন্টের সাথে মিঠা পানির পরিবর্তে ব্যবহার করা হচ্ছে সাগরের লোনা পানি। সাগরের লোনা দিয়ে মগনামা অংশের জাফর মাষ্টারের বাড়ি থেকে অউমমিয়াবর বাড়ী পর্যন্ত সড়ক রক্ষা বাঁধ ইটের প্রাচীর লবণ পানি দিয়ে ইটের সাথে সিমেন্ট লাগানো হচ্ছে। এভাবে সড়কের দুই পাশেই লোনা পানি ব্যবহার করা হচ্ছে বলে অভিযোগ তুলেছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও এলাকাবাসীরা। এক পর্যায়ে নির্মাণ কাজ চলাকালে গতকাল সকালে উপজেলা চেয়ারম্যান শাফায়াত আজিজ রাজু দেখতে পান লোনা পানি দিয়ে গাইডওয়াল নির্মাণ কাজ চালাচ্ছেন ঠিকাদারের লোকজন। এসময় ঠিকাদারের লোকজন ও উপস্থিত পাউবোর কার্যাসহকারী তোহিদুল ইসলাম লোনা পানি দিয়ে কাজ করার কথা স্বীকার করে ক্ষমা প্রার্থনা করেন।

পেকুয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শাফায়াত আজিজ রাজু এ প্রসঙ্গে বলেন ‘পেকুয়া বাজার থেকে মগনামা লঞ্চঘাট পর্যন্ত সড়কটি খুবই জনগুরুত্বপূর্ন। সড়কের মগনামা অংশে গাইডওয়াল নির্মাণ কাজে লোনা পানি ব্যবহার করায় তিনি ঠিকাদারের লোকজনের সতর্ক করে দিয়েছেন।

অভিযোগের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষন করা হলে সড়ক ও জনপথ বিভাগের কক্সবাজারের নির্বাহী প্রকৌশলী রানা প্রিয় বড়–য়া জানান, সড়কের গাইডওয়াল নির্মাণ কাজে লোনা পানি ব্যবহারের কোন সুযোগ নাই। পেকুয়ার অংশে সড়ক সংস্কার কাজে কোন অনিয়ম বরদাশত করা হবেনা। শিগরিই সড়কের অনিয়ম বন্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

পাঠকের মতামত: