ঢাকা,শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪

আজ বুদ্ধিজীবী দিবস

চকরিয়া নিউজ ডেস্ক :

ৎআজ ১৪ ডিসেম্বর। আজ বেদনার দিন। বাঙালি জাতির ইতিহাসে এক গভীর কালো অধ্যায়। ১৯৭১ সালের এই দিনে বুদ্ধিজীবীদের নির্মমভাবে হত্যা করে পাকিস্তানি হানাদার ও তাদের দোসর রাজাকার, আলবদর, আল-শামস বাহিনী। দেশের সেই খ্যাতিমান বুদ্ধিজীবীদের হাত-পা-চোখ বাঁধা ক্ষতবিক্ষত মৃতদেহ আজও অশ্রু ঝরায় স্বজন আর পুরো বাংলাদেশের চোখে।

১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ শুরু হওয়া মুক্তিযুদ্ধে চূড়ান্ত বিজয় চলে আসছিল দীর্ঘ ৯ মাসের সংগ্রামে। নিশ্চিত পরাজয় বুঝতে পেরে জাতিকে মেধাশূন্য করতে নিষ্ঠুর পরিকল্পনা সাজায় হানাদার বাহিনী। স্বাধীনতাবিরোধীদের সহযোগিতায় একাত্তরের ১৪ ডিসেম্বর বহু গুণীজনকে ঘর থেকে ধরে নিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করে তারা। জাতি হারায় দেশের মুক্তমনা শিক্ষাবিদ, সাংবাদিক, সাহিত্যিক, চিকিৎসক, বিজ্ঞানী, আইনজীবী, শিল্পী, প্রকৌশলী, দার্শনিক ও রাজনৈতিক চিন্তাবিদ, সংস্কৃতি অঙ্গনের শিল্পীসহ তার শ্রেষ্ঠ সন্তানদের।

১৯৭১ সালে আত্মসমর্পণের ঠিক দুই দিন আগে ১৪ ডিসেম্বর পাকিস্তানিরা বীভৎস ও নারকীয় হত্যাকাণ্ড চালায়। হত্যার পর বুদ্ধিজীবীদের লাশ ফেলে দেওয়া হয় ঢাকার রায়েরবাজারের পরিত্যক্ত ইটখোলা ও মিরপুরসহ বিভিন্ন বধ্যভূমিতে। পৃথিবীর ইতিহাসে এ এক জঘন্য বর্বর ঘটনা।

হানাদার বাহিনীর দোসররা মনে করেছিল জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের হত্যা করলেই স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব দুর্বল হয়ে পড়বে, উন্নয়নের অগ্রগতি রুদ্ধ করে দেওয়া যাবে। স্বাধীনতা অর্জন করলেও বাংলাদেশ এগিয়ে যাওয়ার পথে মুখ থুবড়ে পড়বে। কিন্তু তাদের সেই লক্ষ্য ব্যর্থ হয়েছে। বাংলাদেশ ঠিকই মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে। লাল-সবুজের বিজয় নিশান উড়েছে।

তবে সেই বর্বরতার বিচার না পাওয়ার গ্লানি থেকে মুক্তির জন্য অপেক্ষা করতে হয়েছে ৪৪ বছর। বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে এ পর্যন্ত চার যুদ্ধাপরাধীর সর্বোচ্চ সাজা হয়েছে।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বুদ্ধিজীবী হত্যার প্রথম রায় আসে ২০১৩ সালের ৩ নভেম্বর। ১৮ জন বুদ্ধিজীবীকে হত্যার দায়ে ওইদিন দুই বদর নেতা আশরাফুজ্জামান খান ও চৌধুরী মুঈনুদ্দীনকে মৃত্যুদণ্ড দেয় আদালত। পরবর্তী সময়ে বুদ্ধিজীবী হত্যার সঙ্গে জামায়াতে ইসলামীর তৎকালীন ছাত্র সংগঠন পূর্ব পাকিস্তান ইসলামী ছাত্রসংঘের সভাপতি মতিউর রহমান নিজামী ও সাধারণ সম্পাদক মুজাহিদের সম্পৃক্ততা প্রমাণিত হয়।

একাত্তরে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ঢাকার মোহাম্মদপুর ফিজিক্যাল ট্রেনিং ইনস্টিটিউটে ক্যাম্প বসিয়ে স্বাধীনতাবিরোধী রাজাকার ও আলবদর বাহিনীর সদস্যদের প্রশিক্ষণ দিতো। সেখানে তারা নিয়মিত যাতায়াত করতেন। দুই রায়েই বলা হয়— সেনা কর্মকর্তাদের সঙ্গে ষড়যন্ত্রের পথ ধরেই ১০ ডিসেম্বর থেকে বাংলাদেশে বুদ্ধিজীবী নিধনসহ গণহত্যার মতো ঘটনা ঘটে।

শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসের বাণী
শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসের পৃথক বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। এসব বাণীতে গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে শহীদদের স্মরণ করেছেন তারা। একইসঙ্গে তাঁদের বিদেহী আত্মার চিরশান্তি কামনা করেন।

বুদ্ধিজীবীদের আত্মত্যাগের পথ ধরে দেশকে জ্ঞানভিত্তিক, প্রজ্ঞাময়, সুখী, সমৃদ্ধ সোনার বাংলায় পরিণত করার আহ্বান জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। তিনি বলেন, ‘১৯৭১ সালে বিজয়ের কাছাকাছি সময়ে হানাদার বাহিনী পরিকল্পিতভাবে এ দেশের খ্যাতনামা বুদ্ধিজীবীদের নির্মমভাবে হত্যা করে। জাতির জন্য এ এক অপূরণীয় ক্ষতি। শহীদ বুদ্ধিজীবীদের রেখে যাওয়া আদর্শ ও পথকে অনুসরণ করে অসাম্প্রদায়িক ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনাভিত্তিক সমাজ গড়তে পারলেই তাদের আত্মত্যাগ স্বার্থক হবে।’

রাষ্ট্রপতি আরও বলেন, ‘বুদ্ধিজীবীরা দেশ ও জাতির উন্নয়ন ও অগ্রগতির রূপকার। তারা জাতির বিবেক। তাঁদের উদ্ভাবনী ক্ষমতা, সৃজনশীল কর্মকাণ্ড, উদার ও গণতান্ত্রিক চিন্তাচেতনা জাতীয় অগ্রগতির সহায়ক। ক্ষুরধার লেখনির মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে জনমত সৃষ্টি, যুদ্ধকালীন মুজিবনগর সরকারকে পরামর্শ প্রদানসহ বুদ্ধিবৃত্তিক চেতনা দিয়ে মহান মুক্তিযুদ্ধকে সাফল্যের পথে এগিয়ে নিতে বিপুল অবদান রাখেন তাঁরা।’

শহিদ বুদ্ধিজীবীদের মহান ত্যাগকে স্মরণ করে ক্ষুধা, দারিদ্র্য ও নিরক্ষরতামুক্ত জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ বিনির্মাণে এগিয়ে আসার উদাত্ত আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, “স্বাধীনতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধীরা পরিকল্পিত নৃশংস হত্যাযজ্ঞের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশকে চিরতরে পঙ্গু করে দেওয়ার জন্যই এই নির্মম হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছিল। বুদ্ধিজীবীদের আত্মত্যাগ জাতি চিরদিন শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করবে।’

বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বলেছেন, ‘বাংলাদেশকে মেধা মননে পঙ্গু করার হীন উদ্দেশে চূড়ান্ত বিজয়ের ঊষালগ্নে হানাদার বাহিনীর দোসররা ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর দেশের প্রথিতযশা শিক্ষক, সাংবাদিক, চিকিৎসক বিজ্ঞানীসহ বুদ্ধিজীবীদের নৃশংসভাবে হত্যা করেছিল।’

খালেদা জিয়া আরও বলেন— ‘অমর বুদ্ধিজীবীরা দেশের বরেণ্য শ্রেষ্ঠ সন্তান, যাঁরা একটি সমৃদ্ধ ও মাথা উঁচু করা জাতি দেখতে চেয়েছিলেন। তাদের প্রত্যাশিত একটি সমৃদ্ধ, স্বনির্ভর ও শক্তিশালী রাষ্ট্র গড়ে তুলতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে স্ব-স্ব অবস্থানে থেকে দায়িত্ব পালনে আন্তরিক হতে হবে। এক্ষেত্রে আমাদের প্রেরণার উৎস শহীদ বুদ্ধিজীবীরা।’

বুদ্ধিজীবী দিবসের কর্মসূচি
বছর পেরিয়ে আবার এসেছে সেই ১৪ ডিসেম্বর। এই দিনে শ্রদ্ধা ও বেদনার সঙ্গে স্মরণ করে থাকে জাতির শ্রেষ্ঠসন্তান শহীদ বুদ্ধিজীবীদের। শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও পেশাজীবী সংগঠন দিবসটি উপলক্ষে নানা কর্মসূচি নিয়েছে।
এবারও এই দিনে মানুষের ঢল নামবে মিরপুর ও রায়েরবাজারের বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে। শহীদ বুদ্ধিজীবীদের পরিবারের সদস্য ছাড়াও মুক্তিযোদ্ধা, সামাজিক-সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক সংগঠন ও নতুন প্রজন্মের তরুণসহ সর্বস্তরের মানুষ দেশের স্বাধীনতার জন্য আত্মোৎসর্গকারী শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন।

পাঠকের মতামত: