ঢাকা,শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪

চকরিয়ার রামপুর সমিতির সেই ২৫০একর চিংড়ি জমি ফেরত পাচ্ছেন: দশ হাজার ভূমিহীনের মুখে হাসি

 

মিজবাউল হক, চকরিয়া :

দীর্ঘ আইনী প্রক্রিয়া শেষে অবশেষে চকরিয়া উপজেলার চিংড়িজোনের রামপুর সমবায় ও কৃষি উপনিবেশ সমিতির মালিকানাধীন ২৫০ একর জায়গা ফেরত পাচ্ছেন। ইতোমধ্যে উচ্চ আদালত স্থানীয় প্রশাসনকে ফেরত দিতে নির্দেশ দিয়েছেন। গত ৩১ অক্টোবর হাইর্কোটের বিচারপতি আশফাকুল ইসলাম ও বিচারপতি আশীষ রঞ্জন দাশ এর সমন্বয়ে গঠিত দ্বৈত বেঞ্চ সমিতির আপীল মামলার শুনানী শেষে এ আদেশ দেন। আদেশে আদালত বলেন, আদেশের অনুলিপির কপি জেলা প্রশাসন রিসিভ করার দিন থেকে দুই সপ্তাহের মধ্যে সমিতির ওই জায়গা বাদিপক্ষকে ফেরত দিতে ব্যবস্থা নেবেন।

আদালত এব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য কক্সবাজার জেলা মৎস্য কর্মকর্তা, চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও), চকরিয়া উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভুমি) ও চকরিয়া থানার ওসিকে নির্দেশ দিয়েছেন।

আদালতের আদেশের বিষয়টি লিখিতভাবে গত ২৩ নভেম্বর কক্সবাজার জেলা প্রশাসকের দপ্তরে দাখিল করেছেন সমিতির সভাপতি আবু জাফর। এদিকে দীর্ঘদিন পর সমিতির মালিকানাধীন ওই জায়গা আদালতের নির্দেশে ফেরত পেতে যাচ্ছে শুনে সমিতির অন্তত ১০ হাজার ভুমিহীন পরিবার সদস্যদের মুখে ফুটেছে হাসি।

সমিতির সভাপতি আবু জাফর বলেন, চকরিয়া উপজেলার চিংড়িজোনের রামপুর মৌজার আরএস ১০৮৪ ও ১১১১ অধীন ২০২৮ ও ২০২৯ বিএস দাগের প্রায় আড়াইশত একর জায়গা সমিতির সদস্যদের পৈত্রিক সম্পত্তি। স্বাধীনতার পর থেকে সমিতির সদস্যরা উল্লেখিত জায়গা শান্তিপুর্ণভাবে ভোগ দখল করে আসছিলেন। কিন্তু স্থানীয় কতিপয় মহলের ইন্ধনে মৎস্য বিভাগ জায়গা সমুহ নানাভাবে দখলে নিতে অপচেষ্ঠা করে। এ ঘটনায় সমিতির প্রয়াত সভাপতি এসআই চৌধুরী বাদি হয়ে উচ্চ আদালতে মামলা করেন। পাল্টা মামলা করেন মৎস্য বিভাগও।

তিনি বলেন, সর্বশেষ ২০১২ সালে উল্লেখিত জায়গা সমিতির সদস্যদের পুর্ব পুরুষের (পৈত্রিক) সম্পত্তি এবং সিএস খতিয়ানমুলে সমিতির জায়গা এ ধরণের দলিল-দস্তাবেজ উপস্থাপন করে হাইকোর্টে সমিতির পক্ষ থেকে ফের একটি রিট মামলা (নং ১০৯৬২/১২) দায়ের করা হয়। আদালত মামলার শুনানী শেষে উল্লেখিত জায়গায় কোন ধরণের হস্তক্ষেপ না করতে কক্সবাজার জেলা ও চকরিয়া উপজেলা প্রশাসনকে নির্দেশ দেন।

সমিতির সভাপতি আবু জাফর অভিযোগ করে বলেন, আদালতের নিষেধাজ্ঞা থাকা স্বর্থেও ২০১৭ সালের ৭ জুলাই জেলা মৎস্য বিভাগ ও চকরিয়া উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে সমিতির ওই জায়গা থেকে সদস্যদের উচ্ছেদ করে দেন। এ ঘটনার পর বিষয়টি অবগত করে সমিতির পক্ষে সম্পাদক শহীদুল ইসলাম লিটন বাদি হয়ে প্রশাসনের সংশ্লিষ্ঠ ১৪ জন কর্মকর্তাকে বিবাদি করে ফের হাইর্কোটে একটি আদালত অবমাননা মামলা (নং ২৬১/১৭) দায়ের করেন।

মামলার প্রেক্ষিতে আদালতের দ্বৈত বেঞ্চ কক্সবাজার জেলা প্রশাসককে আদালত অবমাননার কারন জানতে চেয়ে আদালতে স্ব-শরীরে হাজির হতে নির্দেশ দেন। গতবছরের ২৫ জুলাই কক্সবাজার জেলা প্রশাসক আদালতে হাজির হয়ে তার বক্তব্য উপস্থাপন করেন এবং স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তারা সমিতির ওই জায়গা থেকে বাদিপক্ষকে উচ্ছেদ করেন বলে সত্যতা নিশ্চিত করেন। ঘটনাটি তিনি (ডিসি) একদিন পর জানতে পারেন বলে আদালতকে জানান।

সর্বশেষ গত ৩১ অক্টোবর ওই মামলার দীর্ঘ শুনানী শেষে হাইর্কোটের বিচারপতি আশফাকুল ইসলাম ও বিচারপতি আশীষ রঞ্জন দাশ এর সমন্বয়ে গঠিত দ্বৈত বেঞ্চ সমিতির ওই জায়গা বাদিপক্ষকে ফেরত দিতে স্থানীয় প্রশাসনকে নির্দেশ দেন।

আদেশে হাইর্কোটের দ্বৈত বেঞ্চ এব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য কক্সবাজার জেলা মৎস্য কর্মকর্তা, চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও), চকরিয়া উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভুমি) ও চকরিয়া থানার ওসিকে নির্দেশ দিয়েছেন। #

 

পাঠকের মতামত: