ঢাকা,শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪

হাঁটুপানি পেরিয়ে স্কুলে নাইক্ষ্যংছড়ি ও রামু সীমান্তে

hatuঝিরি পাড়ি দিয়ে প্রতিদিন বিদ্যালয়ে যেতে হয় শত শত শিশুশিক্ষার্থীকে। ছবিটি বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার রাঙ্গাঝিরি গ্রাম থেকে সম্প্রতি তোলা।

বান্দরবান প্রতিনিধি ::

নিজ জেলায় বিদ্যালয় নেই। তাই জ্ঞান অর্জনের আশায় খালের কোমরপানি ভেঙে শত শত শিশুকে আসতে হয় অন্য জেলায়।
নীল-সাদা ইউনিফর্ম পরে মাথা বা বগলে বইখাতা চাপিয়ে ছোট্ট ছোট্ট ছেলে-মেয়েদের বিদ্যালয়ে আসার এ দৃশ্য প্রতিদিনের।

বান্দরবান ও কক্সবাজার জেলার সীমানার আশপাশের ছয়টি গ্রামের মানুষের জন্য একটি মাত্র প্রাথমিক বিদ্যালয়। এটি বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার বাইশারি ইউনিয়নে। এপারে রাঙ্গাঝিরি, বড় ছড়া ও বরই চর গ্রাম। ওপারে কক্সবাজারের রামু উপজেলার ঈদগড় ইউনিয়নের বউ ঘাট, বড় বিল ও আলেক্ষ্যং গ্রাম। মাঝখানে রাঙ্গাঝিরি নামের পাহাড়ি খাল দুই জেলার সীমানাকে আলাদা করে রেখেছে। খালের নামে গ্রামের নাম রাঙ্গাঝিরি। প্রতিষ্ঠানের নামও রাঙ্গাঝিরি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।

নাম রাঙ্গাঝিরি হলেও পাহাড়ি এ খাল দুইপারের মানুষের জীবনের ভোগান্তির কারণ হয়েছে।
খালের ওপর কোনো সেতু বা সাঁকো নেই। শুষ্ক মৌসুমে হাঁটু অবধি কাপড় উঁচিয়ে পার হওয়া গেলেও বর্ষায় জল ভরা থাকে। খাল পেরিয়ে আসা যায় না। তাই তিন থেকে চার মাস বন্ধ থাকে শ খানেক শিশুর পড়াশোনা।

সারা দেশে বিদ্যালয়বিহীন এলাকায় সরকারের ১৫ হাজার প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপন কর্মসূচির আওতায় ২০১৩-১৪ অর্থবছরে রাঙ্গাঝিরি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় নির্মাণ করা হয়। সমতলের জেলা হওয়ায় ওপারবাসীর ভাগ্যে জোটেনি এমন সুযোগ। ফলে দুর্গম এলাকায় শিক্ষার্থী পাওয়া দুষ্কর হলেও দুই পার মিলিয়ে এই বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা দেড় শ ছাড়িয়েছে। একজন প্রধান এবং পাঁচজন সহকারী পদের বিপরীতে আছেন মাত্র একজন সহকারী শিক্ষক। লুত্ফুর রহমান নামের এই ব্যক্তিকে একই সঙ্গে প্রধান ও সহকারী শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করতে হয়। বাড়তি এত কাজেও তাঁর কোনো দুঃখ নেই। তবে প্রতিদিন ছেলে-মেয়েদের খাল পেরিয়ে আসার কষ্টে তিনি অস্থির।

লুত্ফুর রহমান বলেন, ‘কোনো কোনো দিন কেউ আসে ভেজা কাপড় নিয়ে, কেউ আসে বগল থেকে ছিটকে পড়ে ভিজে যাওয়া বই-খাতা নিয়ে। ভেজা কাপড় ও বই-খাতা নিয়েই তাদের পাঠ গ্রহণ করতে হয়। এটা আমাকে পীড়িত করে। বর্ষাকালে ওপারের কেউ আসতে পারে না। তখন স্কুলটাকে শূন্য শূন্য মনে হয়। ’

বিদ্যালয়টির পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী তসলিমা আকতার বলেন, ‘বর্ষা মৌসুমে খাল পার হইয়া স্কুলে যাইতে ডর লাগে। এবারে পিএসসির শেষ বছর হওয়ায় না যাইয়াও পারি না। না গেলে শিক্ষক রাগ করেন। তাই ঝুঁকি নিয়া কোমরপানি ডিঙ্গাইয়্যা স্কুলে যাই। বৃষ্টি বেশি অইলে খাল ভরি যায়, কয়েক দিন স্কুলে যাওয়া বন্ধ থাকে। ’

তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র সাদেক হোসেনের দুঃখ কম নয়। বড়রা কষ্ট করে হলেও খাল সাঁতরিয়ে বিদ্যালয়ে যেতে পারে। ছোট বলে বৃষ্টির সময় মা-বাবা তাকে বিদ্যালয়ে যেতে দেন না। মাথা নিচু করে আকুতি জানায় সে, ‘ভালো করে লিখে দেন। সরকার যেন এই খালে একটি সেতু বানায়া দেয়। ’

বাইশারি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলম বলেন, ‘ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষে এত বড় সেতু বানানো সম্ভব নয়। সরকারিভাবে শিগগিরই সেতু নির্মাণ হবে এমনটাও আশা করা যাচ্ছে না। ’ তিনি আশ্বাস দেন, ‘শিক্ষার্থীদের পারাপারের সুবিধার জন্য একটি নৌকার ব্যবস্থা করে দেব। ’

পাঠকের মতামত: