ঢাকা,শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪

মগের মুল্লুকের নির্যাতন থামছেনা! রোহিঙ্গা আগমন অব্যাহত

এ বোঝা কতদিন বহন করবে বাংলাদেশ

rohiooএম.আর, মাহমুদ, চকরিয়াঃ

মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর নির্মম নির্যাতনে দেশ ছাড়া রোঙ্গিাদের ফিরিয়ে নেয়ার ব্যাপারে মিয়ানমারের সরকারের প্রধান ভান্তে অংসান সুচি ও তার সামরিক প্রধানের কথার মধ্যে মিল খুজে পাওয়া যাচ্ছেনা। সুচি বলছে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেয়ার ব্যাপারে বাংলাদেশের সাথে আলাপ আলোচনা চলছে। আর সেনা প্রধান বলছে পালিয়ে যাওয়া রোহিঙ্গারা মিয়ানমারের নাগরিক নয়, তারা বাঙ্গালী। সমস্যা হচ্ছে মিয়ানমারের “এক ঘরে দুই পীরের” অবস্থান নিয়ে জটিলতা সৃষ্টি হচ্ছে প্রতিনিয়ত। অংসান সুচি বৈধ কাগজপত্র থাকা মিয়ানমারের নাগরিকদের ফিরিয়ে নেয়ার ব্যাপারে একমত। তবে মিয়ানমার থেকে যেসব রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে তাদের কাছে বৈধ কাগজপত্র কিবা আছে! পালিয়ে আসার সময় যারা পায়েরা সেন্ডেল টুকু নিয়ে আসতে পারেনি সেখানে বৈধ কাগজপত্র, দলিল দস্তাবেজ নেয়ার সময় পেল কই? পালিয়ে আসা বেশিরভাগ রোহিঙ্গাদের মধ্যে অনেকে স্বামী-স্ত্রী, ছেলে-মেয়ে হারিয়েছে। বাড়ীঘর জালিয়ে দিয়েছে। যুবতীরা ধর্ষনের শিকার হয়েছে। বাধ্য হয়ে তারা সহায় সম্পদ রেখে নিজের জন্মস্থান ছাড়তে বাধ্য হয়েছে। গত ২৫ আগষ্ট থেকে আজ পর্যন্ত রোহিঙ্গাদের আগমণ অব্যাহত রয়েছে। এ পর্যন্ত ৫ লাখ ৮০ হাজারেরও অধিক রোহিঙ্গা উখিয়া-টেকনাফ ও নাইক্ষ্যংছড়ির বিভিন্ন ক্যাম্পে গাদাগাদি করে মানবেতন জীবন যাপন করছে। বন বিভাগের মালিকানাধীন সবুজ পাহাড় উজাড় করে কালো পলিথিনের ছাউনি দিয়ে ঝীর্ণ কুঠির নির্মাণ করে বসবাস করছে। দেশের প্রধানমন্ত্রী সদয় না হয়ে কঠোর হলে রোহিঙ্গাদের অবস্থা কিযে হত তা একমাত্র আল্লাহই ভাল জানে। সরকার মানবিক কারণে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে সারাবিশ্বের প্রশংসা কুড়িয়েছে। সরকারী-বেসরকারী ও বিভিন্ন দেশের দেয়া ত্রাণে বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠি প্রাণে বেঁচে আছে। প্রথমদিকে তুরষ্কের ফাস্ট লেডী রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শন করে রোহিঙ্গাদের অবস্থা দেখে কেঁদেছে। এরিপর প্রধানমন্ত্রী রোহিঙ্গা শিবিরে গিয়ে চোখের পানি ধরে রাখতে পারেনি। এছাড়া বিশ্বের অধিকাংশ রাষ্ট্রদূতরা রোহিঙ্গাদের অবস্থা সরেজমিন পরিদর্শন করেছে। গত ক’দিন আগে মালয়েশিয়ার উপ-প্রধানমন্ত্রী রোহিঙ্গা শিবিরে গিয়ে দেশছাড়া রোহিঙ্গাদের সাথে কথা বলেছেন। এছাড়া শিশুদের সাথে হাত মিলাতেই কৃপণতা করেনাই। সারাবিশ্বের বেশিরভাগ রাষ্ট্রের রোহিঙ্গাদের প্রতি সদয় হলেও ভারত, রাশিয়া ও চীনের ভূমিকা এখনো প্রশ্নবিদ্ধ। ভারত ও চীন রোহিঙ্গাদের জন্য ত্রাণ সামগ্রীও পাঠিয়েছে। কিন্তু বিপন্ন মানুষগুলো স্বদেশে ফিরিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে ভূমিকা রাখছেনা, তলে তলে সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে মিয়ানমারের সামরিক জান্তাদের পক্ষে। আগামী ২৫ অক্টোবর আসলে রোহিঙ্গা বিতাড়নের দুটি মাস পুর্ণ হবে। কিন্তু রোহিঙ্গাদের আগমণ কোনমতেই থামছেনা। এতে মনে হচ্ছে মিয়ানমারের সরকার বিশ্বের কারো কথা কর্ণপাত করছেনা। “মগের মুল্লুকের” শাসকেরা নির্ধয়ভাবে রোহিঙ্গাদের মিয়ানমার ছাড়তে বাধ্য করছে। মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসার সময় অসংখ্য নর-নারী ও শিশু নাফ নদীতে প্রাণ হারিয়েছে। তারপরও চরম ঝুকি নিয়ে মানুষগুলো পালিয়ে আসছে, তাদের পরিষ্কার কথা- “বার্মাাইয়া মিলিটারির গুলিতে মরার চাইতে পানিতে ডুবে মরা অনেক ভাল”। আমাদের প্রধানমন্ত্রী আবেগতাড়িত হয়ে বিশ্ব সভায় দেয়া ভাষণে দৃঢ়তার সাথে বলেছে বাংলাদেশের ১৬কোটি মানুষ খেতে পারলে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা ১০ লাখ বিপন্ন রোহিঙ্গাও খেতে পারবে। প্রয়োজনে দেশের মানুষ ১ বেলা ভাগ করে খাবে। অপরদিকে সেতুমন্ত্রী ও দলের সাধারণ সম্পাদক ওবাইদুল কাদের বলেছেন রোহিঙ্গাদের বিশাল বোঝা অনন্তকাল বহন করা সম্ভব হবেনা। রোহিঙ্গা আগমনের পর থেকে কিছু কিছু ইয়াবা পাচারকারী আবার বেপরোয়া হয়ে উঠেছে, যা অশুভ লক্ষণ। রোহিঙ্গা আগমনের আগেও ইয়াবা পাচার হয়েছে, সেক্ষেত্রে ইয়াবা পাচারের সাথে নবাগত বেশিরভাগ রোহিঙ্গা হয়তো জড়িত নয়। উপারে যারা আগে থেকে ইয়াবা পাচারে লিপ্ত ছিল তারা এপারে এসেও ইয়াবা পাচার কাজে লিপ্ত রযেছে। রোহিঙ্গাদের সাথে আলাপ করে জানা গেছে, যারা ইয়াবা পাচারে জড়িত তারা কেউ রোহিঙ্গা শিবিরে অবস্থান করেনা। তারা বিভিন্ন জায়গায় বাসা ভাড়া নিয়ে আরাম আয়েশে দিন কাটাচ্ছে। প্রশাসন গোপন সংবাদের ভিত্তিতে টেকনাফের উপজেলা চেয়ারম্যানসহ বেশ ক’জন ইয়াবা পাচারে জড়িত প্রভাবশালী ব্যক্তি বাসায় অভিযান চালিয়েছে। তবে উপজেলা চেয়ারম্যানের বাড়ী থেকে ১৫ জন মিয়ানমারের নাগরিককে আটক করেছে। এসব আলামত দেখে মনে হচ্ছে নিরীহ রোহিঙ্গাদের কাধে দোষ চাপিয়ে এক শ্রেণীর ইয়াবা পাচারকারীরা “ঘর পোড়া আগুনে আলু পুড়ে খাচ্ছে”। সমস্যা হচ্ছে দেশ ছেড়ে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা বেশিদিন উখিয়া টেকনাফ ও নাইক্ষ্যংছড়ি এলাকায় থাকলে তারা মূলস্রোতের সাথে মিশে যাওয়ার চেষ্টা করবে। তখন কিন্তু সমস্যা প্রখড় আকার ধারণ করবে। সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে ত্রাণ তৎপরতা অব্যাহত থাকায় রোহিঙ্গারা যথাযথভাবে ত্রাণগুলো পাচ্ছে। মারিশবনিয়া এসইএসডিপি মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ সিরাজুল ইসলাম এ প্রতিনিধিকে জানান, রোহিঙ্গা আগমণ এখনো অব্যাহত রয়েছে। বানের পানির মত হাজার হাজার রোহিঙ্গা প্রতিদিন আসছে। সীমান্তের শূণ্য রেখায় লাখ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশের প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। কিন্তু রোহিঙ্গা আগমণ ঠেকানো যাচ্ছেনা। এভাবে রোহিঙ্গা আগমণ অব্যাহত থাকলে কক্সবাজারের উখিয়া, টেকনাফ ও বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়িতে মানব বিস্ফোরক ঘটবে। এ পরিমাণ মানুষ কয়দিন সামাল দেয়া যাবে। কক্সবাজার জেলার সবকটি উপজেলায় রোহিঙ্গাদের কারণে সবজি থেকে সব ধরণের নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম হুহু করে বেড়ে যাচ্ছে। নিয়ন্ত্রণে আনার কোন লক্ষণও দেখা যাচ্ছেনা। আন্তর্জাতিক ভাবে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের স্বদেশে ফিরিয়ে দেয়ার ব্যবস্থা করা না হলে দেশের ভবিষ্যৎ চরম ঝুকির পূর্ণ হয়ে দাড়াবে। এছাড়া উখিয়া, টেকনাফ ও নাইক্ষ্যংছড়ির প্রকৃত বাসিন্দারা সংখ্যালঘুতে পরিণত হবে। কথায় আছে “কুনাইন জ্বর সরাবে বটে, কুনাইন সরাবে কে” এমনও এক সময় আসতে পারে ওই তিন উপজেলার বাসিন্দাদের ক্ষেত্রে। রোহিঙ্গা উদ্ভাস্তরা যেন অন্য এলাকায় ছড়িয়ে যেতে না পারে সেজন্য আইন প্রযোগকারী সংস্থা মহাসড়কের বিভিন্ন অংশে ১১টি চেক পোস্ট বসিয়েছে। প্রতিদিন চেক পোস্টে কমবেশী রোহিঙ্গা ধরাও পড়ছে। কুটনৈতিক ভাবে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধান না হলে রোহিঙ্গাদের স্বদেশে ফিরে যাওয়া সুদুর পরাহত। এদিকে ভারত সরকারও সেদেশে থাকা রোহিঙ্গাসহ প্রায় ৩০ লাখ বাংলাভাষীকে তাড়ানোর অজুহাত খোজছে। এক্ষেত্রেও মিয়ানমারেরমত ঘটনা যে ঘটবেনা, তা কোন জ্যোতিষীর পক্ষেও গণণা করে বলা সম্ভবপর হবেনা।####

পাঠকের মতামত: