ঢাকা,শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪

নিত্যপণ্যের বাজারে আগুন : হিমশিম খাচ্ছে নিম্ন আয়ের মানুষ

sobjuসাইফুল ইসলাম :

কক্সবাজার পৌরসভার কালুর দোকান এলাকার দিনমজুর রমজান আলী। সারাদিন শহরে রিক্সা চালান। দিন শেষে রোজগার হয় প্রায় ৫০০ টাকা। এরই মধ্যে রিক্সা মালিকের ভাড়া চলে যায় ১২০ টাকা। দিন শেষে বিভিন্ন খরচ মিটিয়ে হাতে থাকে ২শত ৬০ টাকা। এ টাকা দিয়েই তাকে চালাতে হয় ৬ সদস্যের সংসার। এতদিন কোনোভাবে চলছিলো বর্তমানে টানা পড়েনে সংসারে। কিন্তু সাম্প্রতিককালে চাল ও নিত্যপণ্যের বাজারে দেখা দিয়েছে আগুন। যে কারণে সংসার চালাতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে রমজান আলী।

রমজান আলী জানান, প্রতিদিন আমার সংসারে সাড়ে ৩ কেজি চাল লাগে। বতর্মানে বাজারে থেকে খুচরা চাল কিনতে হচ্ছে ৫০ টাকা ধরে। এখন পরিবারের সদস্যদের অন্ন যোগাতে গিয়ে শুধু সাড়ে ৩ কেজি চাল কিনতেই লাগছে ১৭৫ টাকা। বাকি টাকা দিয়ে কোন ভাবেই সম্ভন হচ্ছে না অন্যান্য সামগ্রী কিনা। ফলে সংসার চালানো দায় হয়ে পড়েছে। একই কথা জানান, চাকরীজীবি আব্দু সাত্তার। তিনি বলেন, বাজারে শুধু চাল নয়, নিত্যপ্রয়োজনীয় প্রতিটি জিনিসের দাম আকাশছোঁয়া। সংসারে চালের যোগান দিতে গিয়ে নাভিশ্বাস উঠছে। তারপর ডাল, পিয়াজ, রসুন, শাক-সবজি ও তরি তরকারিসহ সব জিনিসের দাম লাগামছাড়া। বাজারে ৬০ টাকা কেজি দরের নিচে কোন সবজি পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে আমাদের বেঁচে থাকা দায় হয়ে পড়েছে। তিনি বলেন, আমার পরিবারের সদস্য সংখ্য ৫ জন। পরিবারের সবার খাবারসহ আনুষাঙ্গিক খরচ বাবদ কমপক্ষে ৫০০ টাকা প্রয়োজন হয়ে পড়ে। অথচ মাসিক বেতন হচ্ছে ৯হাজার টাকা তারমধ্যে দৈনিক আয় ৩০০ টাকা পড়ে। এ অবস্থা চলতে থাকলে পথে বসা ছাড়া কোন উপায় থাকবে না।

শুধু নিম্নবিত্ত শ্রেণির লোক নয়, মধ্যবিত্তরাও নিত্যপণ্যর অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধির সাথে খাপ খাইয়ে চলতে পারছেন না। অস্বাভাবিক মূল্যেবৃদ্ধিতে দিশেহারা সাধারণ মানুষও। জীবনের ন্যূনতম চাহিদা পূরণ করতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে নিম্নবিত্ত মধ্যবিত্ত মানুষকে। পাশাপাশি বাসাভাড়া, চিকিৎসা, যাতায়াত,শিক্ষাসহ অন্যান্য খরচ মেটাতে গিয়ে দিশেহারা সাধারণ মানুষ। ব্যয় বাড়লেও আয় না বাড়ায় শেষ সম্বল সঞ্চয় ভেঙ্গে জীবন বাঁচানোর লড়াই করছেন অনেকেই। অথচ প্রতিকারের কোন উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে না। বর্তমান পরিস্থিতি জেলার বাজারগুলি নিয়ন্ত্রণে সরকারি হস্তক্ষেপ কামনা এলাকার সচেতন মানুষ। বিক্রেতাদের দাবী, হঠাৎ করে সব ধরনের জিনিসের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় সে অনুযায়ী সরবরাহ অনেক কম সেকারণে মালামালের দাম বাড়ছে। রোহিঙ্গা আসার কারণে উখিয়া টেকনাফের অবস্থা আরো খারাপ এখানে সব ধরনের পন্যের দাম দ্বিগুন বেড়েছে বলে জানান স্থানীয়রা। এদিকে স্থানীয় মানুষের দাবী, কক্সবাজারে ব্যাপক হারে রোহিঙ্গা আসায় একটি বড় চাপ তৈরি হয়েছে তাই নিত্যপন্যের দাম বাড়ছে। এ অবস্থার আরো অবনতি হতে পারে বলে ধারনা করেন সচেতন মহল। অন্যদিকে সাগরে ১মাসের জন্য মাছ ধরা বন্ধ থাকায় মাছের দামও বাড়ছে।

৫ অক্টোবর শুক্রবার শহরের কানাইয়া বাজারে গিয়ে দেখা গেছে, মোটামুটি খাওয়ার উপযুক্ত চাল বিক্রি হচ্ছে কেজিতে ৫০ টাকা। সপ্তাহের ব্যবধানে ডালের দাম বেড়ে দাড়িয়েছে ১৩০ টাকা আর পিয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৪৫ টাকায়, আদা ১৩০ রসুন ১৪০ টাকা। এদিকে শাক-সবজির দাম কাঁচামরিচ কেজিতে ২৪০ টাকা, টমেটো ১২০ টাকা, বেগুন ৬০ টাকা, কাঁককরলা ৬০ টাকা, ঢেঁডশ ৭০ টাকা, বরবটি ৬০ টাকা ও তিতকরলা ৭০ টাকা। এছাড়াও মাছের দাম আগে যে তেলাপিয়া কেজিতে ১৪০ টাকা ছিলো সেটা এখন ১৮০ টাকা, ছোট মাছ কেজিতে ২০০ টাকা ছিলো সে মাছ এখন ৩০০ টাকা, তরকারি ৩০ থেকে ৪০ টাকা ছিলো সেটা এখন ৫০ থেকে ৬০ টাকায় ক্রয় করতে হচ্ছে।

ক্রেতা গোরা মিয়া বলেন, গেলো সপ্তাহে পিয়াজ কিনেছি ৩২ টাকা এখন সে পিয়াজ ৪৫ টাকা, চালের দামতো আছেই সে সাথে বাড়ছে ডালের দামও এতে আমাদের চরম অবস্থা বিরাজ করছে। তিনি আরো বলেন এই অবস্থা চলতে থাকলে আমাদের জন্য খুবই ক্ষতি হবে। বিক্রেতা মোনাফ বলেন, রোহিঙ্গা আসার কারণে চাহিদা বাড়ার সাথে সাথে চালসহ নিত্যপণ্যের বেড়েই চলছে। আর এবছর বন্যা ও অধিক বৃষ্টির কারণে ক্ষেত-খামার ও ফসল নষ্ট হয়ে যাওয়ায় সবজির দাম বাড়ছে। এদিকে বর্তমানে উখিয়া টেকনাফের পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ বলে জানান স্থানীয়রা। মানুষের জীবন যাত্রা অনেকটা থমকে যাওয়ার মত অবস্থা। এছাড়াও অনেকে রোহিঙ্গাদের মাঝে ত্রান দিতে গিয়ে বাজারের সব জিনিস একজনে একেবারেই ক্রয় করে ফেলছে। এর কারনেই বাজারে নিত্যপন্যের সংকট হচ্ছে তাই দামও বৃদ্ধি হচ্ছে। বাজারে অবস্থা এভাবে থাকলে পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ হতে পারে জানান স্থানীয়দের।

 

Set featured image

পাঠকের মতামত: