ঢাকা,শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪

রামুতে কর্মরত সাংবাদিকদের সাথে রামু সমিতি ঢাকার মত বিনিময়, পর্যটনের অপার সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে হবে

ramu pic dhaka samiti (2) 06.09.17সোয়েব সাঈদ, রামু ::

রামুর কর্মরত সাংবাদিকদের সাথে মত বিনিময় করেছেন, ঢাকাস্থ রামু সমিতির নেতৃবৃন্দ। সভায় রামু উপজেলার সমস্যা, সম্ভাবনা, পর্যটন, ঐতিহ্য তুলে ধরেন আয়োজক রামু সমিতির নেতৃবৃন্দ ও রামুর কর্মরত সাংবাদিকরা।

রবিবার (৩ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যা সাতটায় রামু উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে আয়োজিত এ মতবিনিময় অনুষ্ঠানে রামু সমিতি ঢাকা’র সাধারণ সম্পাদক সুজন শর্মা, সহ সভাপতি সাইমুল আলম চৌধুরী, যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক আজিজুল ইসলাম, প্রচার, প্রকাশনা ও সাহিত্য সম্পাদক মোহিব্বুল মোক্তাদীর তানিম, আজীবন সদস্য মো. আবদুল আহাদ, জয়নাল আবেদিন, নুরুল কবির, মোয়াজ্জেম হোসেন, শাহাদাৎ হোসেন, আখতার হোসেন সংগঠনের কর্মকান্ড তুলে ধরে বক্তব্য রাখেন।

এতে সাংবাদিকদের মধ্যে দৈনিক সমকালের খালেদ শহীদ, দৈনিক পূর্বকোণ এর নীতিশ বড়–য়া, দৈনিক আমাদের সময় এর সোয়েব সাঈদ, দৈনিক সুপ্রভাত বাংলাদেশ এর এইচ বি পান্থ, দৈনিক সৈকত এর নুরুল ইসলাম সেলিম, দৈনিক ইনকিলাব এর এম আবদুল্লাহ আল মামুন, দৈনিক ভোরের ডাক এর আবুল কাসেম সাগর, লেখক মুহাম্মদ আবুল মঞ্জুর বক্তব্য রাখেন।

রামু সমিতির সাধারণ সম্পাদক সুজন শর্মা বলেন, ঐতিহাসিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ রামু উপজেলাকে আরো সম্মৃদ্ধির পথে এগিয়ে নিতে হবে। এজন্য এখানকার পর্যটনের অপার সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে হবে। রামুর সমৃদ্ধ ইতিহাসও বিশ^জুড়ে ছড়িতে দিতে হবে। সাংবাদিকরা রামুর সমস্যা, সম্ভাবনা, ঐতিহ্য তুলে ধরে দেশ ও জনগণের কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছে। ঢাকাস্থ রামু সমিতিও এ অভিন্ন লক্ষ্যে কাজ করছে। তিনি আরো বলেন, রামু সমিতি ঢাকাস্থ রামুবাসীকে একটি অভিন্ন পরিবার হিসেবে গড়ে তুলেছে। প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ সমিতি স্থানীয় ও ঢাকায় বসবাসরত রামুর বাসিন্দাদের মধ্যে সুসম্পর্ক, সম্প্রীতি ও সম্ভাব গড়ে তুলতে কাজ করছে।

প্রচার, প্রকাশনা ও সাহিত্য সম্পাদক মোহিব্বুল মোক্তাদীর তানিম বলেন, ২০০০ সালে প্রতিষ্ঠিত এ সমিতির লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য, ঢাকা ও রামুর বিপদগ্রস্থ ও অসুবিধাগৃস্থ স্থানীয় বাসিন্দাদের যথাসম্ভব সাহায্য করা, রামু আর্থসামাজিক উন্নয়নের জন্য দাবি-দাওয়া তুলে ধরা, রামুর সাহিত্য, সংস্কৃতি, ইতিহাস, ঐতিহ্য, ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক নিদর্শন ইত্যাদি সংরক্ষণ ও সম্প্রসারনের ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহন, কৃতি ও গুণী সম্মাননা, প্রতিবছর রামু উৎসব, মেজবান আয়োজন ও প্রকাশনা অব্যাহত রাখা।

সভায় আরো জানানো হয়, রামু সমিতি, ঢাকা চলতি বছরের ২০ জানুয়ারি মেজবান ও পূর্ণমিলনীর আয়োজন করে। এতে ৭ শতাধিক ঢাকাস্থ রামুবাসী অংশ নেন। ওই অনুষ্ঠানে শিক্ষানুরাগী মরহুম অধ্যক্ষ ওসমান সরওয়ার আলম চৌধুরী, সমাজসেবক উপসংঘরাজ সত্যপ্রিয় মহাথের ও ইতিহাসবিদ আবুল কাশেমকে গুণীজন সংবর্ধনা প্রদান করা হয়। ৬মার্চ নতুন কমিটির শপথ গ্রহন এবং ‘কেমন রামু সমিতি দেখতে চাই’ শীর্ষক গোল টেবিল বৈঠক আয়োজন করা হয়। ২ জুন সমিতির উদ্যোগে রামুর কৃতি সন্তান ও বৃহত্তর চট্টগ্রামের প্রথম নারী সচিব মাফরুহা সুলতানাকে সংবর্ধনা প্রদান করা হয়। আগামী ১৫ সেপ্টেম্বর ঈদ পূনর্মিলনী অনুষ্ঠানে সমিতির উপদেষ্টা ও সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন সচিব হেলালুদ্দিন আহমেদকে সংবর্ধিত করা হবে। এছাড়া রামু সমিতি ঢাকা চলতি বছরে সড়ক দূর্ঘটনায় আহতদের পাশে দাঁড়ানো, যাকাত ফান্ডের অর্থ রামু সব ইউনিয়নে বিতরণ ও ব্লাড ডোনেশনসহ বিভিন্ন সামাজিক কর্মকান্ডে অব্যাহত রেখেছে।

সভায় রামুর কর্মরত সাংবাদিকবৃন্দ তাদের বক্তব্যে রামু সমিতি, ঢাকার বিভিন্ন কর্মকান্ডের প্রশংসা করে বলেন, সবার উদ্দেশ্য রামুকে এগিয়ে নেয়া। এক্ষেত্রে রামু সমিতি, ঢাকার কার্যক্রম সবচেয়ে সক্রিয় ভূমিকা রাখছে। তাই রামু সমিতির সব কাজে সাংবাদিকদের সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে। অনুষ্ঠানে রামু সমিতি, ঢাকার নেতৃবৃন্দ ছাড়াও রামুতে কর্মরত সাংবাদিকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

#################

প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের ঈদ পূর্ণমিলনী ও মিলনমেলা

উৎসব আনন্দে মুখরিত গর্জনিয়া উচ্চ বিদ্যালয় ক্যাম্পাস

সোয়েব সাঈদ, রামু ::

রম্যভূমি রামুর সীমান্ত জনপদের ঐতিহ্যবাহি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গর্জনিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের ঈদ পূর্ণমিলনী ও মিলনমেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে। স্মৃতিচারণ, আড্ডা, সম্মাননা প্রদান, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, প্রীতিভোজসহ নানা আয়োজিত ভরপুর এ মিলনমেলা উৎসবমুখর করে তোলে পুরো বিদ্যালয় ক্যাম্পাস। সোমবার (৪ সেপ্টেম্বর) সকালে সমবেত কন্ঠে জাতীয় সঙ্গীত ও জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে আরম্ভ হয় এই মিলনমেলা।

অনুষ্ঠানে সংবর্ধিত ও প্রধান অতিথি ছিলেন বিদ্যালয়ের কৃতি ছাত্র, লক্ষীপুরের সহকারি জজ মাইনুল ইসলাম লিপু। তাঁকে মিলনমেলা উদযাপন পরিষদের পক্ষ থেকে সংবর্ধণা দেওয়া হয়। তিনি বক্তব্যে বলেন, প্রিয় শিক্ষকদের অবদানের কারণে এতোদূর পৌঁছা। শিক্ষার্থীদেরকে শুধু সার্টিফিকেট অর্জন করলে চলবে না। জ্ঞান অর্জন করতে হবে। আগে বিশ্ববিদ্যালয়ে গর্জনিয়ার ছাত্র ছিল দু’একজন। বর্তমানে অসংখ্য শিক্ষার্থী দেশের নানা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছে। গ্রামের কৃষক-শ্রমিকের সন্তানদের সঠিক নির্দেশনা দিলে তাঁরাও সফলতার শীর্ষে পৌঁছাতে পারবে।

অনুষ্ঠানের উদ্বোধক ও বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এএইচএম মনিরুল ইসলাম বলেন, তরুণ প্রাক্তন ছাত্রদের এই আয়োজনে তিনি অভিভূত। এইজন্যে গুরুত্বপূর্ণ কাজে না গিয়ে অনুষ্ঠানে যোগ দেয়া। ইসলামি ব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্ট এজিএম কামরুল ইসলাম প্রধান আলোচকের বক্তব্য দেন।

বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদ ও অনুষ্ঠানের সভাপতি তৈয়ব উল্লাহ চৌধুরী বলেন, ১৯৪৪ সালে বৃটিশ-ভারত আমলে প্রখ্যাত জমিদার হাকিম মিয়া চৌধুরী অঁজপাড়া গাঁয়ে উচ্চবিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেন। ১৯৬৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় বিদ্যালয়। ১৯৭৫ সালে রূপ নেয় পরিপূর্ণ উচ্চবিদ্যালয়ে। বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে হাকিম মিয়া চৌধুরীর ছেলে বৃহত্তর গর্জনিয়ার প্রয়াত চেয়ারম্যান ইসলাম মিয়া চৌধুরী ও ইলিয়াছ মিয়া চৌধুরীও অবদান রেখেছেন। সেই থেকে আজ অবদি এটি শিক্ষার আলো ছড়িয়ে যাচ্ছে। তিনি আশা রাখেন যে, শুধু হান্নান বা লিপু নয় গর্জনিয়া উচ্চবিদ্যালয় থেকে লেখাপাড়া করা শত শত শিক্ষার্থী- আগামীতে সমাজের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখার পাশাপাশি দেশের কল্যানেও কাজ করবেন। এগিয়ে আসবে রাজনীতিতেও।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে চট্টগ্রাম মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের কলেজ পরিদর্শক আবুল কাশেম মো.ফজলুল হক বলেন, গর্জনিয়া উচ্চবিদ্যালয়ের ইতিহাস অনেক পুরোনো। রামুতে খিজারি আদর্শ উচ্চবিদ্যালয়ের পরেই দুর্গম এলাকায় এই বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। ছাত্র-ছাত্রীদেরকে সঠিক পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। নিজেকে তৈরী করতে হবে। মেধার ভিন্নতা রয়েছে। কিন্তু প্রতিভাকে কাজে লাগিয়ে সবার মনকে শানিত করতে হবে। আর মিথ্যা কথা বলা পরিহার করতে হবে। আমরা চায় ভাল মানুষ।

অনুষ্ঠানে দিকনির্দেশনা মূলক বক্তব্য দিয়ে সকলের হৃদয়ে স্থান করে নেন-বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র ও হাটহাজারী বালিকা উচ্চবিদ্যালয় ও কলেজের প্রভাষক সাহাব উদ্দিন। তিনি বলেন, স্বপ্ন দেখতে হবে জেগে জেগে। ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে নয়। সমালোচনাকে আলোচনায় পরিণত করতে হবে। চ্যালেঞ্জ নিয়ে কাজ করলে অবশ্যই সফলতা আসবে। উদ্যোগি তরুণরা চাইলে অনেক কিছুই করতে পারেন। যার প্রমান এই মিলনমেলা।

মিলনমেলা উদযাপন পরিষদের সদস্য সচিব হাফিজুল ইসলাম চৌধুরীর প্রানবন্ত ও কাব্যময় সঞ্চালনায় আরও বক্তব্য দেন-বিদ্যালয়ের সহকারি প্রধান শিক্ষক কায়সার জাহান চৌধুরী, বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের সাবেক সদস্য হাবিব উল্লাহ চৌধুরী ও প্রাক্তন ছাত্র নাইক্ষ্যংছড়ি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষক-দিদারুল আলম। অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে অংশ নেন-মহিউদ্দিন সিকদার, আবছার কামাল, নাইক্ষ্যংছড়ির উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম, প্রকৌশলি বেলাল উদ্দিন সাহেদ, কলিম উল্লাহ, জনি সিকদার, সরওয়ার কামাল প্রমূখ। শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন-মিলনমেলা উদযাপন পরিষদের আহবায়ক ইমরান হোসেন।

অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন-প্রাক্তন শিক্ষার্থী রিয়াজ উদ্দিন সিকদার, নুরুল আজিজ, ফারজানা ইসলাম সুইটি, মো.ইয়াছিন, শহীদুল্লাহ শহীদ, ইসমাঈল হোসেন, ইকবাল হোসাইন স্বাধীন ও ওয়াসিমুল আলম চৌধুরী। কবিতা আবৃতি করেন ফাহমিদা হাবিব চৌধুরী। অনুষ্ঠানের শুরুতে কোরআন তেলোয়াত করেন সাঈদুর রহমান। এর পর সংবর্ধিত অতিথিকে ফুল দিয়ে বরণ করে নেন আজিজুল হক আজিজ ও ফারজানা ইসলাম সুইটি।

মিলনমেলায় অংশ নেওয়া আল ইফাত সিকদার, আবু হান্নান, তামিমা সুলতানা, নাসরিন জাহান, আবদুল্লাহ আল মারুফ, আবু তারেক ও ইনজামাম উল হক চৌধুরী বলেন, ‘পুরোনো বন্ধুদের দেখে খুব ভালো লাগছে। মনে হচ্ছে আবার পুরোনো দিনে ফিরে গেছি।’

মিলনমেলা উদযাপন পরিষদের সদস্য সচিব হাফিজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘অর্ধশত বছরের পুরোনো গর্জনিয়া উচ্চবিদ্যালয় থেকে বহু শিক্ষার্থী কৃতকার্য হয়ে বেরিয়েছেন। তাঁদের সবাইকে একটি আসরে এক করার ইচ্ছা আছে ভবিষ্যতে। এ জন্য সামনে আরও বড় আকারের অনুষ্ঠান করার পরিকল্পনা নিয়ে, সংশ্লিষ্ট সবাইকে উদ্যোগী হতে হবে।

এদিকে মিলনমেলায় বিকেল থেকে রাত আটটা পর্যন্ত ইচকান্দার মির্জার সার্বিক পরিচালনায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে গান পরিবেশন করেন কণ্ঠশিল্পি এ্যানি বড়–য়া ও রাহুলসহ অনেকেই। শেষ পর্যায়ে গর্জনিয়ার কৃতি সন্তান ইচকান্দার মির্জা নিজেই সমধুর গান গেয়ে মঞ্চ মাতিয়ে তোলেন।

পাঠকের মতামত: