ঢাকা,শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪

সৌদি আরবেও ভোগান্তিতে বাংলাদেশি হজযাত্রীরা

hajj-অনলাইন ডেস্ক :::

সৌদি আরবে বাংলাদেশি হজযাত্রীদের ভোগান্তি পিছু ছাড়ছে না। বেসরকারি হজ প্যাকেজে থাকা, খাওয়া ও যাতায়াত সম্পর্কে সুস্পষ্ট উল্লেখ থাকার পরও কয়েকটি এজেন্সি প্রতারণা ও ছলচাতুরির আশ্রয় নিয়েছে। অনেক এজেন্সি হজযাত্রীদের জিম্মি করে অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে। বিপরীতে কাঙ্ক্ষিত সেবা দিচ্ছে না। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছর কোরবানিসহ সর্বোচ্চ তিন লাখ ৬০ হাজার ও সর্বনিম্ন তিন লাখ ১৯ হাজার টাকার দুই ধরনের হজ প্যাকেজ ঘোষণা করে সরকার। মক্কা, মিনা ও মদিনায় হজ পালনের জন্য ৪০ থেকে ৪৫ দিনের এ প্যাকেজ নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু অধিকাংশ হজ এজেন্সি সরকার ঘোষিত প্যাকেজের বাইরে গিয়ে এ, বি ও সি ক্যাটাগরির প্যাকেজ গোপনে ঘোষণা করে এবং হজযাত্রী যোগাড় করেন। এর মধ্যে অনেক হজ এজেন্সি থাকা-খাওয়ার সুযোগ-সুবিধা বিবেচনায় তিন লাখ ৮০ হাজার থেকে দুই লাখ ৮০ হাজার টাকা পর্যন্ত নিয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে এ হিসাবের বাইরে কোরবানির খরচ নিয়েছে তারা। বিষয়গুলো সম্পর্কে হজ এজেন্সি অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (হাব) জেনেও কিছুই বলে না। নিশ্চুপ থাকে। বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে হাব সভাপতি আব্দুস সোবহান ভূঁইয়া মানবজমিনকে বলেন, গুটিকয়েক এজেন্সি মালিকের উদাসীনতা ও সরকারি কিছু কাজকর্মের কারণে প্রতি বছর হজে ঝামেলা হয়। এছাড়া সৌদি আরবে গিয়েও নানা কাহিনীর জন্ম দেন তারা। তাদের বিরুদ্ধে সরকারের কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। সৌদি আরবে হজ করতে যাওয়া বাংলাদেশি ও প্রশাসনিক টিমের সদস্যদের সূত্রে জানা গেছে, তরুলতা ট্টাভেল অ্যান্ড ট্যুরস নামে একটি হজ এজেন্সি শতাধিক হজযাত্রীকে নির্ধারিত বাড়িতে রেখে পালিয়ে গেছে। চুক্তি অনুযায়ী ওই সব হজযাত্রীদের তিন বেলা খাবার দেয়া হচ্ছে। হজ এজেন্সির মালিক বা কোনো প্রতিনিধিকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। এ নিয়ে বিভিন্ন বয়সী হজযাত্রীরা বেশ কষ্টের মধ্যে আছেন। ওই এজেন্সির মাধ্যমে সৌদি আরবে যাওয়া হজযাত্রীরা মানবজমিনকে জানান, সাড়ে তিন লাখ টাকা খরচ করে হজ করতে এসেছি। এখন আমাদের খাওয়া-দাওয়া দেয়া হচ্ছে না। হজের নিয়ম-কানুন সম্পর্কে ঠিকভাবে নির্দেশনাও দেয়া হচ্ছে না। কী করবো, সেটাও বুঝতে পারছি না। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, তরুলতা ট্টাভেল অ্যান্ড ট্যুরস-এর মাধ্যমে হজে যাওয়া যাত্রীরা বিষয়টি সম্পর্কে সরকারের প্রশাসনিক টিম ও এজেন্সি মালিকদের সংগঠন হাবকে জানিয়েছে। এখনও পর্যন্ত বিষয়টি নিয়ে অন্ধকারে আছে ওই এজেন্সির হজযাত্রীরা। এদিকে মক্কা হজ মিশনে অভিযোগকারী বাংলাদেশিরা জানান, এজেন্সিগুলো প্যাকেজ না মেনে তাদের সঙ্গে পদে পদে প্রতারণা করছে। এ বিষয়ে অভিযোগ করেও সুফল মিলছে না। হজ এজেন্সিগুলোর অব্যবস্থাপনার কারণে অনেক হজযাত্রী অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। কোরবানি ও তার টাকা জমা দেয়ার পদ্ধতি নিয়ে তারা বেশ জটিলতার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। বর্তমানে মিনায় অবস্থানকারী বাংলাদেশি সোহরাব হোসেন মুঠোফোনে মানবজমিনকে বলেন, মিনায় কষ্ট করে আসতে পেরেছি। এখন মুজদালিফা ও আরাফার ময়দানে কীভাবে যাওয়া-আসা করবো এ বিষয়ে জানি না। আমাদের টিমে কয়েক জন বয়োবৃদ্ধ ও স্বল্প শিক্ষিত হজযাত্রী রয়েছেন। তাদের নিয়ে সমস্যার মধ্যে আছি। কারণ অতিরিক্ত খুব বেশি টাকা নিয়ে তারা সৌদি আরবে আসেননি। এদিকে ১৮ হজ এজেন্সির গাফিলতির কারণে ভিসা পেয়েও ৩৯৭ জন হজযাত্রী এবার হজে যেতে পারেননি। এসব এজেন্সির বিরুদ্ধে হজ শেষে ব্যবস্থা নেবে ধর্ম মন্ত্রণালয়। তাদের লাইসেন্স বাতিল ও জামানত বাজেয়াপ্তসহ কঠিন শাস্তি দেয়া হবে। জেদ্দাস্থ বাংলাদেশের কনস্যুলেট কার্যালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, যেসব এজেন্সির বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ পাওয়া গেছে, তা তদন্ত করে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে। অনিয়ম করে কেউ ছাড় পাবে না। এ ছাড়া যেসব হজযাত্রী শেষ পর্যন্ত আসতে পারেননি, এর জন্য দায়ীদের অবশ্যই শাস্তির আওতায় আনা হবে।

পাঠকের মতামত: