ঢাকা,শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪

কক্সবাজারে মানি লন্ডারিং ও ইয়াবা ব্যবসায় জড়িত ওরা ১৫ জন

tekশাহজাহান চৌধুরী শাহীন, কক্সবাজার ::

কক্সবাজারের টেকনাফে মানি লন্ডারিং ও ইয়াবা ব্যবসা সহ বিভিন্ন অপরাধে জড়িত রয়েছে ১৫ জন বড় মাপের ব্যক্তি। এসব অপরাধে জনপ্রতিনিধিও জড়িত রয়েছে। ইয়াবা পাচার করে আয় করা বিপুল টাকা বিদেশে পাচার করছে ইয়াবা ব্যবসায়ীরা। এই তালিকার অধিকাংশই টেকনাফের র্শীষ ইয়াবা ব্যবসায়ী, মানবপাচারকারী। অনুসন্ধান করে এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য পেয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। টেকনাফের শীর্ষ ইয়াবা ব্যবসায়ী নুরুল হক ভুট্টোকে তার ৮ সহযোগীসহ গ্রেফতারের পর এই সব চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে এসেছে। সিআইডির অর্গনাইজ ক্রাইমের বিশেষ পুলিশ (এসএসপি) মোল্লা নজরুল ইসলাম এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

সূত্র মতে, স্বাভাবিক ভাবে ইয়াবা ও মানবপাচারকারী ছাড়াও টেকনাফে অন্তত ১৫ জন বড় মাপের ইয়াবা ব্যবসায়ী রয়েছে। এসব বড়মাপের পাচারকারীরাই পুরো বাংলাদেশে ইয়াবা পাচারের নিয়ন্ত্রক। পুরো সিন্ডিকেট তাদের নিয়ন্ত্রণে রেখে অনেকটা তাদের মাধ্যমেই টেকনাফে তৈরি হয়েছে অন্যান্য ইয়াবা ব্যবসায়ীরা। তবে নিজেদের আধিপত্যের জন্য শেষ মুহূর্তে টেকনাফের অন্তত অর্ধশত ইয়াবা পাচারকারী সিন্ডিকেট তৈরি হয়েছে। তাদের মধ্যে এখনো শীর্ষে ওই ১৫ ইয়াবা ব্যবসায়ি।

সিআইডির অর্গনাইজ ক্রাইমের বিশেষ পুলিশ মোল্লা নজরুল ইসলাম জানান, টেকনাফের শীর্ষ ১৫ ইয়াবা পাচারকারীর মধ্যে একজন হচ্ছে নূরুল হক ভুট্টো। তাকে ৮ সহযোগীসহ গ্রেফতারের পর ইয়াবা ব্যবসায়ীদের অজানা দিক উন্মোচন হয়েছে। এর মধ্যে বিদেশ টাকা আদান-প্রদানের ভয়ংকর অপরাধের সাথেও জড়িত শীর্ষ ইয়াবা ব্যবসায়ীরা। ভুট্টোর কাছ থেকে উদ্ধার হওয়া একটি তালিকা ওই তথ্যই অনেকটা নিশ্চিত করছে।

তিনি জানান, ভুট্টোর কাছ থেকে যে তালিকা উদ্ধার করা হয়েছে তাতে তার নেতৃত্বাধীন ইয়াবা পাচার সিন্ডিকেটের সারাদেশের একটি ম্যাপ রয়েছে। এতে দেখা গেছে টেকনাফ থেকে বাংলাদেশ সর্বশেষ স্থানের লোকজন তার সিন্ডিকেটে রয়েছে। একই ভাবে মানি লন্ডারিংয়ের বিষয়টি ধরা পড়েছে।

যাচাই করে দেখা গেছে, ইয়াবা ব্যবসায়ীদের বিভিন্ন ব্যাংকে নামে-বেনামে একাধিক একাউন্ট রয়েছে। বিকাশ, রকেটসহ বিভিন্ন মোবাইল ব্যাংকিংয়েরও নামে-বেনামে বেশ কয়েকটি একাউন্ট রয়েছে। পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, এসব একাউন্টের মাধ্যমে বিপুল টাকা বিদেশ পাচার হয়েছে। ভুট্টোও টাকা পাচারের কথা স্বীকার করেছে। একইভাবে দেশের অভ্যন্তরেও টাকার লেনদেন হয়েছে ওইসব একাউন্টের মাধ্যমে। ভুট্টোর মতো অন্যান্য শীর্ষ তালিকায় স্থান পাওয়া ইয়াবা ব্যবসায়ীরাও বিদেশে টাকা পাচার করেছে। এই বিষয়ে খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সিআইডির অর্গনাইজ ক্রাইমের এই পুলিশ কর্মকর্তা।

এদিকে, ইয়াবা ব্যবসায়ীদের বিদেশে টাকা পাচারের বিষয়টি দীর্ঘদিন ধরে স্থানীয় পর্যায়েও সর্বাধিক প্রচারিত এবং আলোচিত। বিদেশে টাকা পাচারের ইয়াবা মাফিয়া টেকনাফের হাজী সাইফুল করিমসহ আরো অনেকে রয়েছে বলে অনেক আগেই থেকে জনশ্রুতি ছিল। এই তালিকায় আরো রয়েছে টেকনাফ উপজেলা চেয়ারম্যান জাফর আহামদের পরিবার, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মৌলভী রফিক উদ্দিন, তার ভাই বাহারছাড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মৌলভী আজিজ উদ্দীন, এমপি আবদুর রহমান বদির ভাই পৌর কাউন্সিলর মুজিবুর রহমানসহ অন্তত ১৫ জন। এদের মধ্যে অনেকের বিভিন্ন ব্যাংকে নামে-বেনামে একাধিক একাউন্ট রয়েছে। বিকাশ, রকেটসহ বিভিন্ন মোবাইল ব্যাংকিংয়েরও নামে-বেনামে বেশ কয়েকটি একাউন্ট রয়েছে। এছাড়াও মৌলভী রফিক উদ্দিন ও তার ভাই রফিক উদ্দিন অর্থ পাচারের জন্য বাহারছড়া শামলাপুর বাজারে আল আরাফা নামক একটি এজেন্ট ব্যাংকও স্থাপন করেছে। ব্যাংকটি তারা দুই ভাই মিলে নিয়ন্ত্রণ করে আসছে।

গোয়েন্দা ও স্থানীয় তথ্য মতে, ইয়াবা ব্যবসার শুরু থেকেই মানি লন্ডারিং করছে হাজী সাইফুল করিম। তিনি অধিকাংশ টাকা মালয়েশিয়ায় পাচার করেছেন। এছাড়াও দুবাইতেও তিনি টাকা পাচার করেছেন। মালয়েশিয়ায় তিনি গড়ে তুলেছেন নানা ধরণের ব্যবসা। এমনকি গড়ে তুলেছেন সেকেন্ড হোমও। দুবাইতেও তিনি গড়ে তুলেছেন র্স্বণের দোকানসহ আরো কিছু ব্যবসা। এই কারণে হাজী সাইফুল করিম প্রায়ই সময় মালয়েশিয়া ও দুবাইতে থাকেন। একইভাবে মালয়েয়িশায় টাকা পাচার করছেন উপজেলা চেয়ারম্যান জাফর আহমদের পরিবার। দু’বছর আগে হঠাৎ উধাও হয়ে যান জাফর আহাদের পুত্র মোস্তাক আহামদ। তিনিও তালিকার র্শীষ ব্যবসায়ী ছিলেন। মোস্তাকের নিরুদ্দেশকে গুম হিসেবে নেয়া হলেও তা সত্য নয়। জনশ্রুতিতে রয়েছে, মোস্তাক কৌশলে মালয়েশিয়ায় পাড়ি জমিয়েছেন। তিনি সেখানে অবস্থান করে পাচার করা টাকা দিয়ে তিনি সেখানে বড় করছেন। এমপির বদির ভাই মুজিবুর রহমানেরও দুবাইতে স্বর্ণের দোকান রয়েছে। ইয়াবা ব্যবসার টাকা পাচার করে দুবাইতে তার সিন্ডিকেট একাধিক স্বর্ণের দোকান গড়ে তুলেছেন। এছাড়াও নূরুল হক ভুট্টো, মৌলভী আজিজ উদ্দীন, মৌলভী রফিক উদ্দিন বিদেশে টাকা পাচার করেছে এবং জঙ্গী কানেশনে অর্থ বিনিয়োগ করার অভিযোগ রয়েছে। সব মিলে এই ১৫ জন শীর্ষ ইয়াবা ব্যবসায়ী বিদেশে টাকা পাচার করছেন। এছাড়া মৌলভী আজিজ উদ্দিন ও মৌলভী রফিক উদ্দিন ইয়াবা ব্যবসা ছাড়াও মানবপাচারসহ জঙ্গী তৎপরতা ও বিভিন্ন ব্যবসায় টাকা বিনিয়োগ করে কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। এদের অস্বাভাবিক সম্পদ বৃদ্ধির অন্যতম কারণ ইয়াবা ব্যবসা বলে জানিয়েছেন অনেকে। মৌলভী রফিকের ইয়াবার চালান বহন করতে গিয়ে তার নিকটতম অনেক আত্মীয় বর্তমানে কারাগারে রয়েছে।

সিআইডির অর্গনাইজ ক্রাইমের এসএসপি মোল্লা নজরুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা বিশেষ অভিযানে নেমেছি। তালিকাভুক্ত ইয়াবা ব্যবসায়ীদের ছাড় হবে না। একই সাথে তাদের বাড়ি-গাড়ি, জমিসহ যাবতীয় সম্পদেরও খোঁজ নেয়া হবে এবং আইনের আওতায় এনে গ্রেফতারও করা হবে।

পাঠকের মতামত: