ঢাকা,শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪

ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসকারীদের সরাতে হার্ডলাইনে প্রশাসন

pahhজসিম মাহমুদ :

কক্সবাজারে পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাসকারিদের নিরাপদ স্থানে অপসারণের লক্ষ্যে গতকাল সোমবার থেকে কাজ শুরু করেছে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে সহকারি কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেটবৃন্দের নেতৃত্বে গঠিত ওয়ার্ডভিত্তিক টিমগুলো। এ উপলক্ষ্যে ৩ জুলাই সকালে অনুষ্ঠিত হয়েছে পাহাড়ি ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা থেকে বসবাসকারিদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেয়া সংক্রান্ত সার্বিক বিষয়ে করণীয় বিষয়ক সভা। কক্সবাজার জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত সভায় সভাপতিত্ব করেন জেলা প্রশাসক মো: আলী হোসেন।
এসময় জেলা প্রশাসক মোঃ আলী হোসেন বলেন, ভারী বর্ষনে পাহাড় ধ্বসের কারণে জানমালের ক্ষতির সম্ভাবনা খুব বেশী থাকে। তাই কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের সহকারি কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেটবৃন্দের নেতৃত্বে গঠিত ওয়ার্ডভিত্তিক টিমের সম্মানিত সদস্যরা পৌরসভা ও ইউনিয়নের সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডগুলোর পাহাড়গুলো পরিদর্শন করছেন। সেই সাথে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাবৃন্দের নেতৃত্বে সংশ্লিস্ট সকল উপজেলার পাহাড়গুলো পরিদর্শন করছেন। ইতিমধ্যে পাহাড়ে অতিঝুঁকিপূর্ণ বসবাসকারিদের সরিয়ে নেয়ার কার্যক্রম সম্পন্ন করা হয়েছে। সম্প্রতি কয়েকদিন বর্ষণ বন্ধ থাকায় পুনরায় কিছু বসবাসকারি ফিরে আসে পাহাড়ে তাদের পূর্বের বাসস্থানে। তাই আবার ভারী বর্ষণ শুরু হওয়ায় পাহাড়ি ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা থেকে বসবাসকারিদের সরে যেতে মাইকিং ও মোবাইল কোর্ট পরিচালনার মাধ্যমে তাদের নিরাপদস্থানে সরিয়ে আনার নির্দেশ প্রদান করেন জেলা প্রশাসক মোঃ আলী হোসেন।
কক্সবাজার সদর সহকারী কমিশনার (ভূমি) পঙ্কজ বড়–য়া জানান, এরই অংশ হিসেবে গতকাল সোমবার দুপুরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাবৃন্দের নেতৃত্বে সংশ্লিস্ট সকল উপজেলার পাহাড়ে এবং জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট পিএম ইমরুল কায়েস, তাহমিলুর রহমান সহ তিনটি পৃথক মোবাইল কোর্ট পরিচালনার মাধ্যমে পৌরসভার সাহিত্যিকাপল্লী, পাহাড়তলী, ঘোনাপাড়া, মোহাজের পাড়াসহ বিভিন্ন পাহাড়ি এলাকার অর্ধশত ঝুকিপূর্ন অবস্থানরত ঘর ভেঙ্গে দেয়া হয় এবং পাহাড়ের পাদদেশে ঝুকিপূর্ন বসবাসকারিদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে আনা হয়। তিনঘন্টাব্যাপী এই পৃথক অভিযানে ফায়ার সার্ভিস,অনসার ব্যাটিালিয়ন, বিদ্যুৎ বিভাগ, পরিবেশ অধিদপ্তর, বনবিভাগ, পৌরসভাসহ আইন-শৃংখলাবাহিনীর সদস্যসহ সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন।
একইভাবে টেকনাফে ২৫টি পাহাড় ঝুঁকিপূর্ণ-নিরাপদ আশ্রয়ে সরে যেতে মাইকিং চলছে। টেকনাফে গত শুক্রবার ভোররাত থেকে ভারী বৃষ্টিপাত শুরু হয়েছে। এতে করে পাহাড় ধসের আশঙ্কা তৈরি হয়। তাই ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড় থেকে লোকজনকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরে যেতে মাইকিং করছে টেকনাফ উপজেলা প্রশাসন ও বনবিভাগ।
টেকনাফ উপজেলা প্রশাসন ও বনবিভাগ সূত্রে জানা গেছে, গত রোববার বিকেল থেকে গতকাল সোমবার বিকেল পর্যন্ত উপজেলা প্রশাসন ও বনবিভাগের পক্ষ থেকে টেকনাফ সদর, পৌরসভা, হ্নীলা, হোয়াইক্যং ও বাহারছড়া ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় মাইকিং করা হয়। পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণ পাদদেশে অবৈধভাবে বসবাসকারীদেরকে সরে যেতে বলা হয়। অন্যতায় আইনের আওতায় এনে শাস্তি দেয়া হবে।
টেকনাফ উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা মো. জাহিদ হোসেন ছিদ্দিক বলেন, ‘এখন বর্ষাকাল তার উপর টানা ভারী বৃষ্টিপাতে ফলে পাহাড় ধসের আশঙ্কা রয়েছে। তাই আমরা পুরো উপজেলার বিভিন্ন পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাসকারী লোকজনকে সরে মাইকিং করে নির্দেশ দেওয়া হচেছ। তাঁরা না সরলে আমরা নিজেরা গিয়ে তাদেরকে উচ্ছেদ করবো।’
তিনি আরও বলেন, যারা নিরাপদ আশ্রয়ে চলে আসবে তাঁরা স্ব স্ব এলাকার আশ্রয় কেন্দ্র ও বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্টানে আশ্রয় নেওয়ার জন্য বলা হচ্ছে। গত দুইদিন ধরে এলাকায় এলাকায় মাইকিং করা হলেও কোন লোকজন সরে আসছে না। তারা কোন ধরনের মাইকিং কানে নিচ্ছে না।
বনবিভাগ সূত্রে জানায়, টেকনাফ উপজেলায় জেলা দক্ষিন বনবিভাগের আওতাধীন ৩৯ হাজার হেক্টর বনভূমিতে অবৈধভাবে প্রায় ৫০ হাজার মানুষ বসবাস করে আসলেও তার মধ্যে পাহাড়ের ঝুকিপূর্ণ পাদদেশে বসবাস করছে ২৫ হাজারের মতো মানুষ। এলাকাগুলো হলো-পৌরসভার ফকিরামোরা, নাইট্যংপাড়া, ধুমপেরাংঘোনা, বৈদ্যরঘোনা, নাজিরঘোনা, সদরের গিলাতলি, শিয়াইল্যারঘোনা, উরুমেরছড়া, কেরুনতলি, বরুইতলি, হ্নীলার রোজারঘোনা, জাদিমুরা, উলুচামারী, লেচুয়াপ্রাং, হোয়াইক্যংয়ের সাতঘরিয়াপাড়া, কম্বনিয়াপাড়া, মরিচ্ছ্যাঘোনা, আমতলি, লাতুরিখোলা, হরিখোলা, দৈঘ্যাকাটা, বাহারছড়ার নোয়াখালী, হাজমপাড়া, বাইন্ন্যাপাড়া ও আছারবনিয়া এলাকার ২৫টি পাহাড়কে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নীত করা হয়েছে। পাহাড়ের পাদদেশে স্থানীয় লোকজনের পাশাপাশি মিয়ানমার থেকে অবৈধভাবে অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গারা পলিথিন ও বাঁশের ঝুপঁড়ি ঘর, মাটিঘর, সেমিপাকা ঘর তৈরি করে পরিবার-পরিজন নিয়ে বসবাস করে আসছে।
গতকাল সোমবার দুপুর ১টা থেকে বিকাল তিনটা পর্যন্ত টেকনাফের বিভিন্ন পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে বসবাসরত লোকজনকে সরে যেতে টেকনাফ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) তুষার আহমদের নেত্বতে বাহারছড়া ইউনিয়নে একটি দল ও বনবিভাগের উদ্যোগে টেকনাফ সদরের বিট কর্মকর্তা সাজ্জাদ হোসেন, মোচনীর বিট কর্মকর্তা আবদুল মালেক, হ্নীলার বিট কর্মকর্তা ছৈয়দুল হক ও মধ্যম হ্নীলার বিট কর্মকর্তা আবদুল মতিনের নেত্বতে চারটি দল কাজ করছে। তাঁরা সকলেই বাড়ি বাড়ি গিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ স্থান থেকে সরে যেতে নির্দেশ দেন।
টেকনাফ বনবিভাগের রেঞ্জ কর্মকর্তা তাপস কুমার দেব বলেন, পুরো উপজেলায় পাহাড়ের মধ্যে ২৫টি পাহাড়ে পাদদেশে প্রায় চারশতাধিক পরিবার অধিকতর ঝুঁকিপূর্ণ ভাবে বসবাস করলেও টানা বৃষ্টিপাতে কেহ নিরাপদ নেই। তাই সকলকে নিরাপদ আশ্রয় চলে যেতে মাইকিং করা হচ্ছে।

 

পাঠকের মতামত: