ঢাকা,শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪

ঘুষের আখড়া পল্লী বিদ্যুৎ

bpsনিউজ ডেস্ক::
পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের (আরইবি) আওতাধীন সমিতিগুলোর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ অনেক পুরনো। শুধু তারা নন, দুর্নীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত স্থানীয় ঠিকাদাররাও। গ্রামের মানুষ টাকা ছাড়া বিদ্যুৎ সংযোগ পায় না। যে কোনো কাজেই ঘুষ লাগে। এমন অভিযোগ নিত্যদিনের। সর্বশেষ জাতীয় সংসদে স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য মো. রুস্তম আলী ফরাজী পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির দুর্নীতির কথা তুলে ধরে বক্তব্য দিয়েছেন। তিনি বলেছেন ‘বিদ্যুতের একটি খুঁটি নিতে হলে লাখ লাখ টাকা ঘুষ দিতে হয় পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জিএমদের। ঘুষ ছাড়া কোনো কাজ করেন না তারা। এর যথেষ্ট প্রমাণ রয়েছে। চাইলে দিতে পারি।’

চারদিকে এতসব অভিযোগের মধ্যেই সম্প্রতি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলোর মালিকদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল মঈন উদ্দিন।

সূত্র জানায়, ঠিকাদারদের সঙ্গে বৈঠককালে জেনারেল মঈন বলেন, মাসে ৩ থেকে ৫ লাখ গ্রাহককে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হচ্ছে। নতুন নতুন এলাকায় বিদ্যুতায়ন হচ্ছে। কিন্তু এত কিছুর মধ্যেও খুঁত রয়ে গেছে। এই খুঁতের কারণে মন্ত্রণালয়সহ সর্বত্র পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ হচ্ছে। দুর্নীতির এই খুঁত থেকে সবাইকে বেরিয়ে আসতে হবে।

চারদিকে দুর্নীতিবাজদের কর্মকা-ে ক্ষুব্ধ আরইবি চেয়ারম্যান বলেন, দুর্নীতির কারণে পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। এখন ঘুরে দাঁড়াতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে খেটে খাওয়া মানুষের স্বার্থে সবাইকে কাজ করতে হবে।

বৈঠক সূত্রে জানা যায়, সমিতিগুলোর কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং স্থানীয় ঠিকাদারদের দুর্নীতি নিয়ে কথা হয়। আরইবি দুর্নীতি প্রতিরোধে নানা কর্মসূচি গ্রহণ করলেও কোনো কাজ হচ্ছে না। ঠিকাদার ও তাদের লোকজন নতুন বিদ্যুৎ সংযোগ প্রত্যাশিত মানুষের কাছ থেকে টাকা আদায় করছে এমন অভিযোগ নিয়ে কথা হয়। তখন চেয়ারম্যান বলেন, দুর্নীতি নির্মূলে ৫০ লাখ লিফলেট বিতরণ করা হয়েছে, মাইকিং করা হচ্ছে, স্কুল কলেজ মসজিদ মাদ্রাসাসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সচেতন করা হচ্ছে। কিন্তু তারপরও কাজ হচ্ছে না। ফলে যেসব ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে এখন থেকে অভিযোগ উঠবে তাদের লাইসেন্স বাতিল করা হবে।

এ সময় বৈঠকে ঠিকাদাররা লাইসেন্স বাতিল না করার অনুরোধ জানিয়ে বলেন, যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়া যাবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তাদের লাইসেন্স বাতিল করা হবে। ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের মালিকরা প্রতিশ্রুতি দেন তাদের লোকজনকে আর অবৈধ লেনদেন করতে দেবেন না। লোকজনদের প্রতি নিবিড় নজরদারি করবেন। তারা বলেন, অনেক ক্ষেত্রে বিদ্যুতায়ন কার্যক্রম সম্প্রসারণ করতে স্থানীয় লোকজনকে সম্পৃক্ত করতে হয়। ওইসব লোকজনই বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়ার নামে গ্রামের মানুষের কাছ থেকে টাকা আদায় করে থাকেন।

উল্লেখ্য, দেশে মোট ২ কোটি ৪০ লাখ গ্রাহকের মধ্যে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড একাই এক কোটি ৮০ লাখ গ্রাহককে বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়েছেন। ২০২১ সালের মধ্যে সরকার ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়ার যে কার্যক্রম হাতে নিয়েছে তার সিংহভাগই পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডকে দেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে আরইবি বিদ্যুতায়নের কাজ করছে। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে এপ্রিল পর্যন্ত নতুন বিদ্যুতায়ন কার্যক্রমের অংশ হিসেবে ৩৫ হাজার কিলোমিটার বিদ্যুৎ লাইনের বিপরীতে ২৯ হাজার কিলোমিটার লাইন নির্মাণ করেছে। একই অর্থবছরে এডিপিতে বরাদ্দকৃত ৫ হাজার ৫০০ কোটি টাকার বিপরীতে ৭৭ শতাংশ অর্থ খরচ করেছে আরইবি।

পাঠকের মতামত: