ঢাকা,শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪

শাসক দলের ত্রাণ তৎপরতা যেন ‘রথ দেখা কলা বেচা’

আপদ-বিপদ-মসিবত কাউকে বলে কয়ে আসে না

Chakaria Pc 02-06-2017 (1) :::: এম.আর মাহমুদ ::::

আপদ-বিপদ-মসিবত কাউকে বলে কয়ে আসে না। আপদ-বিপদ-মসিবতের আগমন ঘটে অনাকাঙ্খিতভাবে। এমন একটি ঘটনা ঘটেছিল ১৯৯১ সালের ২৯ এপ্রিল রাতে। দেশের উপকূলবাসীর জন্য ওই রাত এখনও স্মরণীয়। পুরো উপকূলীয় এলাকায় স্বজন হারানো অসংখ্য মানুষ ওই দিবসের কথা ভুলতে পারে নাই। সেইদিনের স্মরণে অনেকে শরবে নিরবে অশ্র“পাত ঘটায়। ২৯ এপ্রিল রাতে সংঘটিত ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের ২৬টি বছর অতিবাহিত হওয়ার পর নতুন প্রজন্ম ওই রাতের তান্ডবের কথা ভুলতে শুরু করেছে। কারণ তারা ওই তান্ডব স্বচক্ষে দেখেনি। তবে যারা বেঁচে আছে, তাদের চোখের সামনে সেই রাতের দৃশ্য যেন এখনও ভেসে উঠে। শরৎ চন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ভাষায় পুরো উপকূল যে সাড়ে ৩২ বাজায় পরিণত হয়েছিল। সমুদ্রের সাইক্লোনের সেই দৃশ্য বর্ণনা করতে গিয়ে তিনি বলেছিলেন, ‘ভগবান যে দুটি চোখ দিয়েছে তা আজই সার্থক।’ জলোচ্ছ্বাসের তান্ডবে উপকূল জুড়ে মা হারা শিশু, পুত্র হারা পিতা, স্বামী হারা স্ত্রী শোকে মাতম করতে দেখা দিয়েছিল। কারো মৃত দেহ খুঁজে পাওয়া গেলেও অসংখ্য নর-নারীর লাশ খুঁজে পাওয়া যায়নি। আবার নাম পরিচয় না পাওয়া অসংখ্য মানুষের মরদেহ গণকবরে দাফন করা হয়েছিল। সে ক্ষেত্রে জাতপরিচয় খোঁজার সময়ও ছিল না। কারণ শরৎ চন্দ্র চট্টোপাধ্যায় বলেছিল, ‘মরার আবার জাত কিসের?’। মাত্র ২৬ বছর যেতে না যেতে এসব গণকবরের অস্তিত্বই বিলীন হয়ে গেছে। ১৯৯১ সালের ঘূর্ণিঝড়ের পর বড় ধরণের বিপর্যয় এ অঞ্চলে আর হয়নি বলা চলে। গত ২৯ মে দুপুর থেকে ৭ নম্বর বিপদ সংকেত প্রচার করা হচ্ছিল টেলিmr mahভিশনের পর্দায়। সন্ধ্যার পর পরই ওই সংকেত ১০ নম্বরে গিয়ে দাঁড়ায়। জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের নির্দেশে ইউনিয়ন পরিষদ মাইকিং করে দূর্গত এলাকার লোকজনকে সরে যাওয়ার জন্য বলতে থাকে। মাইকিং শোনে ভয়ার্ত লোকজন সাইক্লোন শেল্টার, স্কুল-কলেজ, মাদ্রাসায় আশ্রয় নেয়। সকাল থেকে শুরু হয় মোরা’র তান্ডব। ভাগ্য ভাল, মোরা’র তান্ডবের সময় সমুদ্রে ছিল ভাটা। ফলে উপকূলীয় এলাকায় জলোচ্ছ্বাস হয়নি। এছাড়া মোরা’র আঘাত দিনের বেলায় হওয়ায় প্রাণহানির ঘটনা তেমন একটা ঘটেনি। পুরো জেলায় ৮ জন মানুষ গাছ চাপা পড়ে প্রাণ হারিয়েছে। ১৯৯১ সালের ২৯ এপ্রিলের ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের তান্ডব রাতের আঁধারে ছিল বলে অসংখ্য মানুষ প্রাণহানি ঘটেছিল। এলাকাবাসীর শত কোটি টাকার সম্পদ নষ্ট হলেও সে সময়ের ত্রাণ তৎপরতা ছিল দেখার মতো। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় আর্ত মানবতার সেবায় ছিল ব্যাপক তৎপর। লাখ লাখ মানুষের প্রাণের বিনিময়ে উপকূল জুড়ে যেসব সাইক্লোন শেল্টার নির্মাণ হয়েছিল তা এখনও উপকূলবাসীর জন্য একমাত্র আশ্রয়স্থল। তবে ২৬ বছর পর মোরা আবার স্মরণ করিয়ে দিয়েছে বিপর্যয় যে কোন মূহুর্তে আসতে পারে। প্রসঙ্গক্রমে বলতে হয় ‘আপদ-বিপদ-মসিবত কাউকে বলে কয়ে আসে না।’ কিন্তু ইদানিং তথ্য প্রযুক্তির যুগে ঘূর্ণিঝড় জলোচ্ছ্বাসের সংকেত মানুষ আগে বাগে পাচ্ছে। এক সময় তাও পাওয়া যেত না। যোগাযোগ ব্যবস্থা অনুন্নত ছিল বলে দূর্যোগকালীন সময় মানুষের প্রাণহানির ঘটনা ঘটত বেশি। মোরা’র আঘাতে কক্সবাজার জেলার ৮টি উপজেলায় ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতির ঘটনা ঘটেছে। বিশেষ করে, গাছ চাপা পড়ে হাজার হাজার বাড়ি-ঘর ভেঙ্গে গেছে। অথচ ক্ষতি অনুপাতে ক্ষতিগ্রস্থ লোকজন কাঙ্খিত ত্রাণ সহায়তা পায়নি। গত ক’দিন ধরে বর্তমান সরকারের কয়েকজন মন্ত্রী দলীয় ব্যানারে ত্রাণ তৎপরতা শুরু করেছেন। বিশেষ করে সেতু মন্ত্রী ও আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ওবাইদুল কাদের সাহেব বলেছেন, গৃহহীনদের তালিকা প্রণয়ন শেষে তাদের পুনর্বাসন করা হবে। কোন বিপন্ন মানুষ অভূক্ত থাকবে না। ক্ষতিগ্রস্থ লোকজন পর্যাপ্ত ত্রাণ সামগ্রী না পেলেও যথার্থ মন্তব্য করতে ভুল করছে না। তাদের ভাষায়, সামনে জাতীয় নির্বাচন, নির্বাচন উপলক্ষে দলের দায়িত্বশীল নেতারা বিভিন্ন উপজেলায় গিয়ে ক্ষতিগ্রস্থ কিছু লোকজনের মাঝে ত্রাণ তৎপরতা চালাচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্থ লোকজন আওয়ামীলীগের ত্রাণ তৎপরতাকে ‘রথ দেখা কলা বেচার মতই’ মনে করছে।

পাঠকের মতামত: