ঢাকা,শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪

ইয়াবা চোর শনাক্ত হয়নি এক বছরেও

picঅনলাইন ডেস্ক :::

ইয়াবার স্বর্গরাজ্য বলে পরিচিত কক্সবাজারের টেকনাফে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের (ডিএনসি) কার্যালয় থেকে এক লাখ ৮১ হাজার ৯১৩ পিস ইয়াবা বড়ি ‘চুরি’ হওয়ার ঘটনা নিয়ে রহস্য তৈরি হয়েছে। এক বছরের বেশি সময় আগের এই ঘটনা কৌশলে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা চলছে। তবে ঘটনার পর অধিদপ্তরের করা তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অফিসের আলমারিতে রাখা ইয়াবা গায়েব হওয়ার পেছনে ‘ভেতরের লোকজন’ জড়িত থাকতে পারে। প্রতিবেদনে ডিএনসি কর্মকর্তাদের সাত সোর্সকে সন্দেহভাজন হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। ওই ঘটনায় দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগ আনা হয়েছে সংশ্লিষ্ট চার কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। ওই চার কর্মকর্তার মধ্যে একজন ছিলেন তদন্ত কমিটির সদস্যসচিব। যদিও তদন্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে কারো বিরুদ্ধেই কোনো ব্যবস্থা নেয়নি অধিদপ্তর। ইয়াবা চোরও শনাক্ত করেনি কর্তৃপক্ষ।

সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি ডিএনসির টেকনাফ অফিসের আলমারি থেকে এক লাখ ৮১ হাজার ৯১৩ পিস ইয়াবা বড়ি এবং আড়াই কেজি গাঁজা গায়েব হয়। ওই ঘটনায় সে বছরের ৩ মার্চ ডিএনসি সদর দপ্তর থেকে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয় ডিএনসির গোয়েন্দা শাখার অতিরিক্ত পরিচালক নজরুল ইসলাম সিকদারকে প্রধান করে। কক্সবাজার ডিএনসির এডি সুবোধ কুমার বিশ্বাসকে কমিটির সদস্যসচিব এবং চট্টগ্রামের ভারপ্রাপ্ত অতিরিক্ত পরিচালক ফজলুর রহমানকে সদস্য করা হয়। তদন্ত শেষে গত ১০ মার্চ কমিটি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করে। প্রতিবেদনে কক্সবাজার ডিএনসির তত্কালীন এডি সুবোধ কুমার, খন্দকার হুমায়ুন কবির, টেকনাফের পরিদর্শক তপন কান্তি শর্মা ও ইব্রাহিম খানের বিরুদ্ধে দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগ করা হয়।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে এডি সুবোধ কুমার বিশ্বাস বলেন, ‘বিভাগীয় তদন্তে তেমন কিছু পাওয়া যায়নি। টেকনাফ থানায় একটি মামলা হয়েছে। আমি বদলি হয়ে চলে আসি। পরের খবর জানি না। ’ দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, ‘প্রতিবেদনে এমন কিছু আছে কি না, আমার জানা নেই। ’  মামলার তদন্তের ব্যাপারে জানতে চাইলে টেকনাফ থানার ওসি মাইনুদ্দিন খান বলেন, ‘আমি সম্প্রতি এ থানায় এসেছি। এ ব্যাপারে খোঁজখবর নিয়ে জানাতে হবে। ’

ডিএনসির পরিচালক (অপারেশনস ও গোয়েন্দা) সৈয়দ তৌফিক উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘এমন একটি ঘটনা ঘটেছে, যা খুবই দুঃখজনক। টেকনাফের মতো জায়গার অফিস থেকে এতগুলো ইয়াবা চুরি হয়ে গেল, আর আমরা কিছু বের করতে পারলাম না! একটি তদন্ত প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে বলে জানি। তবে কারো বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কোনো আদেশ পাইনি। ’

জানা যায়, ইয়াবা গায়েব হওয়ার এক দিন পর ডিএনসির টেকনাফ অফিসের দায়িত্বশীল কর্মকর্তা, পরিদর্শক তপন কান্তি শর্মা থানায় একটি মামলা করেছিলেন। এজাহারে বলা হয়, পরিদর্শক তপন কান্তি শর্মা গত বছরের ২৬ ফেব্রুয়ারি কার্যালয়ে তালা দিয়ে একটি মামলার সাক্ষ্য দিতে রাঙামাটি যান। একই দিনে কার্যালয়ের আরো দুই কর্মকর্তা সরকারি কাজে চট্টগ্রামে যান। পরদিন ২৭ ফেব্রুয়ারি রাতে অধিদপ্তরের কার্যালয়ে চুরি হয়। ২৮ ফেব্রুয়ারি সকালে দরজার তালা ভাঙা দেখে উপজেলা পরিষদের কর্মকর্তারা বিষয়টি তপন কান্তি শর্মাকে জানান। পরে তিনি জানান ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের।

ডিএনসির সূত্রে জানা যায়, খোয়া যাওয়া ইয়াবা ছিল ১৭টি মামলা ও জিডির আলামত। এক বছরের বেশি সময় ধরে অভিযান চালিয়ে সেগুলো জব্দ করেছিল ডিএনসি। টেকনাফ শহরের প্রাণকেন্দ্রে উপজেলা পরিষদ চত্বরের ভেতরে ডিএনসির অফিস। সেখান থেকে প্রায় দুই লাখ ইয়াবা চুরির ঘটনাটি রহস্যজনক বলে মনে করা হচ্ছে। কারণ টেকনাফের মিয়ানমার সীমান্ত দিয়েই দেশে ইয়াবা ছড়িয়ে পড়ছে। ওই এলাকায় রয়েছে শত শত ইয়াবা কারবারি। বছরে সেখানে গড়ে ৫০ লাখ ইয়াবা ট্যাবলেট জব্দ হচ্ছে।

পাঠকের মতামত: