ঢাকা,শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪

পাসপোর্ট তদন্ত ও পুলিশ ছাড়পত্রে বিদেশগামীরা হয়রানির শিকার, টাকা দিলে দেশী ও না দিলে বিদেশী

mr mahএম.আর মাহমুদ ::::

পাসপোর্ট প্রকল্প ও পুলিশের ছাড়পত্র সংগ্রহ করতে গিয়ে বিদেশগামী লোকজন পদে পদে হয়রানির শিকার হচ্ছে। পুলিশের দাবী মোতাবেক ‘নগদ নারায়ণ’ দিতে ব্যর্থ হলে স্বদেশী হয়েও বিদেশী (মিয়ানমারের) নাগরিক হিসেবে পাসপোর্ট পাওয়ার অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। প্রতিদিন বিদেশগামী লোকজন হয়রানির শিকার হয়েও প্রতিকার পাচ্ছে না। ভূক্তভোগী জনগণ জানে না কোথায় গিয়ে প্রতিকার পাবে। পাসপোর্ট প্রার্থীরা সরকারি ফি ব্যাংকে জমা করে আবেদনপত্র, পাসপোর্ট অফিসে জমা করে। পরে পাসপোর্ট অফিস থেকে ওইসব আবেদনকারীর বিরুদ্ধে কোন মামলা, দেশী নাগরিক কিনা যাচাই করার জন্য আবেদনপত্রটি পাসপোর্ট অফিস জেলা পুলিশের বিশেষ শাখা (ডিএসবি) তে পাঠিয়ে দেয়। পরে ডিএসবি অফিস থেকে থানা পর্যায়ে কর্মরত ডিএসবির সহকারী পরিদর্শক ও উপসহকারী পরিদর্শকদের কাছে পাঠিয়ে দেয়। এরপর দায়িত্বপ্রাপ্ত সহকারী পরিদর্শক ও উপসহকারী পরিদর্শকেরা সংশ্লিষ্ট আবেদনকারীকে ফোন করে জন্ম নিবন্ধন, এনআইডি, জাতীয় সনদপত্র ও ভূমির দলিল বা খতিয়ান নিয়ে তাদের সাথে যোগাযোগ করতে বলেন। আবেদনকারী তাদের কাছে যাওয়ার পরে এসব কাগজপত্র পর্যালোচনা করে দাবী করে বসে মোটা অংকের নগদ নারায়ণ। যার পরিমাণ ক্ষেত্র বিশেষে ৩ থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত। কেউ অপারগতা প্রকাশ করলে তার প্রতিবেদন যথাযথভাবে দেয়া হয় না। অনেক সময় স্বদেশী নাগরিককে বিদেশী হিসেবে উল্লেখ করে পাসপোর্ট অফিসে আবেদন ফেরৎ পাঠায়। ফলে হতভাগা ব্যক্তির কপালে জুটে না পাসপোর্ট। আবার ডিএসবি পুলিশের কথামত হাদিয়া আদায় করলে মামলাভূক্ত আসামী হলেও পাসপোর্ট পাওয়ার ক্ষেত্রে জটিলতা সৃষ্টি হয় না। ভাগ্যচক্রে কাঠখড় পুড়িয়ে পাসপোর্ট সংগ্রহ করে পুনরায় থানা পুলিশের ছাড়পত্রের জন্য ব্যাংকে নির্ধারিত অংকের টাকা জমা দিয়েও মোটা অংকের টাকা ছাড়া পুলিশের চূড়ান্ত ছাড়পত্র পাওয়া যায় না। এসব অভিযোগ জেলার প্রতিটা থানায় বিদেশগামী লোকজনদের মুখে মুখে। পুলিশের বক্তব্য হচ্ছে, লাখ লাখ টাকা ব্যয় করে বিদেশে যাবে, সেখান থেকে অঢেল টাকা কামায় করবে। সুতরাং, পুলিশকে কিছু দিলে সমস্যা কোথায়? মূলতঃ যেসব ব্যক্তি বিদেশগামী তারা বেশিরভাগই বেকার শ্রেণির। জীবিকার সন্ধানে বিদেশে পাড়ি দিতে গিয়ে মা-বাবা, দাদা-দাদীর সহায়-সম্পদ বিক্রি করছে। এরপর বিদেশে গিয়ে হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করছে। যা জাতীয় অর্থনীতির জন্য অতি গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু পুলিশের দাবী মিঠাতে ব্যর্থ হয়ে অনেকে পাসপোর্ট সংগ্রহ করতে ব্যর্থ হচ্ছে। ফলে তাদের পক্ষে বিদেশ যাওয়ার স্বপ্ন পূরণ হচ্ছে না। বিষয়টি অত্যন্ত অমানবিক। সারাদেশে দূর্নীতি রোধকল্পে দূর্নীতি দমন কমিশন (দূদক) প্রতিনিয়ত কাজ করে যাচ্ছে। ছাত্র-ছাত্রীদের নিয়ে মানববন্ধন দূদকের গণশুনানী অনুষ্ঠিত হচ্ছে। তারপরও দূর্নীতি কমছে না। ইদানিং দূর্নীতি দমন কমিশনের তৎপরতা বেড়েছে। দূদকের জালে চুনু পুঁটি থেকে রাঘব বোয়ালেরাও ধরা পড়ছে। তারপরও দূর্নীতির রাহুগ্রাস থেকে সাধারণ মানুষ নিস্তার পাচ্ছে না। ‘আসিতেছে শুভদিন, দিনে দিনে বাড়িতেছে দেনা, শুধিতে হইবে ঋণ’ এদেশের আমজনতা শুভদিনের আশায় আশায় দিন কাটাচ্ছে। জানি না কবে কখন শুভদিনের সোনার হরিণটি আমাদের হাতে ধরা দেয়। দুঃখজনক হলেও সত্য বিশেষ করে কক্সবাজার জেলার চকরিয়ার, পেকুয়া, কুতুবদিয়া, মহেশখালী, কক্সবাজার সদর, রামু, উখিয়া ও টেকনাফ উপজেলার সর্বত্রে এ অবস্থা বিদ্যমান। এসব উপজেলার পাসপোর্ট প্রার্থীরা নানা ভাবেই হয়রানির শিকার হচ্ছে। বিষয়টি দূর্নীতি দমন কমিশনের আওতায় এনে তদন্ত করলে অনেক রহস্য বেরিয়ে আসবে বলে ভূক্তভোগীদের অভিমত।

পাঠকের মতামত: