ঢাকা,শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪

কক্সবাজার জেলা শিল্পকলা একাডেমীর ইতিহাস

coxsbazar-silpokola-academyঅধ্যাপক রায়হান উদ্দিন :

কক্সবাজার জেলা শিল্পকলার যাত্রা শুরু হয় ২.১২. ১৯৮৬ খ্রি:। এই কমিটি ১৪/০৯. ১৯৮৭ খ্রি: পর্যন্ত ছিল। তখন দশ জনের একটি এডহক কার্যনিবাহি কমিটি গঠন করা হয়। সাধারন সম্পাদক ছিলেন মেজিস্ট্রেট শ্যামশুন্দর সিকদার।সভাপতি ছিলেন জেলা প্রশাসক মোসাররফ হোসেন, অবশ্য এর আগে “শিল্পী পুল” বলে একটি সংগঠন ছিলো । পরে একে জেলা শিল্পকলা একাডেমীতে রুপান্তর করা হয়। তৎকালীন পাকিস্থান আমলেও আর্ট কাউন্সিল বলে একটি প্রতিষ্ঠান ছিল। এটি মহকুমা প্রশাসক এর মাধ্যমে পরিচালিত হতো। তখন ককসবাজারে সংস্কৃতিক কর্মকান্ডে রম রমা অবস্থা বিরাজমান ছিল। অবশ্য তখন আর্ট কাউন্সিলের কর্মকান্ড অনুষ্টান ভিত্তিক ছিল। কোন বিশেষ অতিথি আসলে তাকেই গান শোনানো হতো। এতে ককসবাজারের সাংস্কৃতিক প্রতিভাবানদের আনা হতো। ককসবাজার জেলা শিল্পকলার পরবর্তী কমিটিতে জেলা প্রশাসক এম এ কামাল ৯.৪.৯৮ থেকে ১৪.৯.৯৭ পর্যন্ত সভাপতি পদে বহাল ছিলেন।এই কমিটিতে এডিসি মোহাম্মদ বাকের কে আহবায়ক করে ৮ জন সদস্য নিয়ে একটি কমিটি গঠন করা হয়। এই কমিটিতে এডভোকেট আবুল কালাম আজাদ,সাংবাদিক বদিউল আলম, অধ্যাপক সৌমেশ্বর চক্রবর্তী ছিলেন। এর পর ৮.৯.৯৫ থেকে ২৩.৮.৯৬ পর্যন্ত সাংবাদিক জনাব বদিউল আলম কে আহবায়ক করা হয়।তার পর ২৪.৮.৯৬ খ্রি; জেলা প্রশাসক আলী ইমাম মজুমদার কে সভাপতি করে পাঁচ জনের একটি কমিটি গঠন করা হয়। তৎকালীন জেলা প্রশাসক জনাব এম এ কামাল কে সভাপতি, জনাব অধ্যাপক সিরাজুল মোস্তফা কে সাধারন সম্পাদক এবং অধ্যাপক সৌমেশ্বর চক্রবর্তীকে সহ সভাপতি সহ সর্বমোট ১৫ জনের একটি সিলেকসন কমিটি গঠন করা হয়। জেলা প্রশাসক জনাব এম এ কামাল উদ্যোগ নিয়ে তখন অফিসার ক্লাব এর কাট তক্তা এসব নিয়ে বর্তমান ১৬ ইসিবি কার কাছে বালিকা মাদ্রাসার পেছনে বর্তমান শিল্পকলা ভবন নির্মিত হয় , যা এখনো আছে। জগদিশ চন্দ্র মজুমদার সহকারী মেজিস্ট্রেট ছিলেন সাধারন সদস্য হিসেবে। উনি গাইতেও পারতেন। এসময় শিল্পকলার একাডেমীক সেকসন এর যাত্রাও শুরু হয়। সাধারন সঙ্গীতে আমি, উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতে মরহুম নুরুল মোক্তাদীর, আবদুশ শুক্কুর সাধারন সঙ্গীত, মনিকা বড়ুয়া এবং দীপ্তি মহাজন নৃত্য শিক্ষক হিসেবে মনোনিত হয়েছিলেন।বাংলাদেশ শিল্পকলা ঢাকা থেকে ওস্তাদ ওমর ফারুক এসেছিলেন আমাদের কন্ঠসংগীতের পরীক্ষা নিতে। ছাত্র ছাত্রীর সংখ্যা কম ছিলনা। দুই দিন ক্লাস হতো । ককসবাজারে এর আগে আরো সংগীত শিক্ষার প্রতিষ্টান ছিলো, তার মধ্যে সঙ্গীতায়তন ছিল অন্যতম।যা এখনো লালদিঘীর পশ্চিম পাড়ে অবস্থিত।এই কমিটির মেয়াদ ১৯৯৪ খ্রি: পর্যন্ত ছিল। এসময়ের মধ্যে পদাধিকার বলে সভাপতি হিসেসে জেলা প্রশাসক এম. সি বর্মন, ১৯৯০-৯১,জেলা প্রশাসক জনাব দাউস উজ জামান ১৯৯১- ৯২,জেলা প্রশাসক জনাব এনামুল কবির ৯২-৯৫,জেলা প্রশাসক জনাব মোহাব্বাত উল্লাহ ১৯৯৫-৯৬,জেলা প্রশাসক জনাব আলী ইমাম মজুমদার ১৯৯৬-৯৮,জেলা প্রশাসক জনাব নুর হোসেন ১৯৯৮-৯৯, এর পর জেলা প্রশাসক পুলিন বিহারী¡ সভাপতির দায়িত্ব নেন।

শিল্পকলা একাডেমীর দুই তিন যুগ পার হয়ে গেলেও দুর্যোগ কাটেনি। কাটেনি কেন তা সহজেই সবাই বুঝতে পারেন। কারন এখানে কমিটি রাজনীতি টা এখন তুঙ্গে। কমিটিতে কিভাবে নিজের নাম আসবে এ চিন্তায় অনেকে বিভোর।এজন্য এখন নুতন নুতন ইলেকশান ইঞ্জিনিয়ারিং এর অবতারনা ঘটছে। আসলে প্রথম যখন এডহককমিটি গঠন করা হয়। তারা শিল্পকলার মান নিয়ে তৎপর ছিলেন। নানা অনুষ্টানে গান নাচ নির্বাচনে জেলা প্রশাসন এর মেজিট্রেট থেকে শুরু করে কমিটির লোকজন বেশ খোজ খবর নিতেন যাতে অনুষ্টানের মানটা ভালো হয়।জেলা প্রশাসক এম এ কামাল এর মধ্যে অন্যতম ছিলেন।তিনি একজন রেডিও টেলিভিশনের গীতিকারও ছিলেন। তার সময় জেলা শিল্পকলা একাডেমী বাংলাদেশ টেলিভিশনে “নিবেদন” নামে একটি সফল অনুষ্ঠান পরিবেশন করে।এতে জেলা প্রশাসক এম এ ্কামালের লেখা একটি গান “ ওগো সাগর বলোনা তোমার বুকে কতো জল” এই গানটি আমি নিজেই গেয়েছিলাম। এর পর বাংলাদেশ বেতার চট্টগ্রামে একটি বেতার অনুষ্টান জেলা শিল্পকলা একাডেমী ককসবাজর পরিবেশন করে। মোট কথা তখন একটা সংস্কৃতি চর্চার একটা জোয়ার ছিল। যাতে ছিল সবার একাগ্রতা।তখন শিল্পকলা একাডেমী অনেক গুরুত্বপুর্ণ অনুষ্ঠান যেমন বাংলাদেশ মায়ানমার ট্রেড চুক্তির সময মায়ানমার থেকে আগত মেহমানদের অনুষ্ঠান, নেপালের পাল্র্ামেন্ট সদস্যদের সম্মানে অনুষ্টান,ভারতের বি এস এফ সদস্যদের সম্মানে অনুষ্ঠান ইত্যাদী আরো অনেক গুরুত্ব পুর্ণ অনুষ্ঠান শুধু মাত্র শিল্পকলাই করেছে।

বর্তমানে তিন যুগ পার হলেও ককসবাজার জেলা শিল্পকলা একাডেমীর সংস্কৃতি চর্চার রুপ অনেক পাল্টেছে। কোন কোন বিষয়ে ঢাকা শিল্পকলা সরাসরি তদারকি করে থাকেন। আর বিভিন্ন সরকারী বেসরকারী কর্মকান্ড নিয়ে তো হর হামেসা অনুষ্টান চলে। নুতন প্রজন্মের শিল্পী তৈরী হয়েছে অনেক। জেলা শিল্পকলা একাডেমী নাট্য আন্দোলনেও অনেক দুর এগিয়েছে। বেশ কয়েকটি সফল পরিবেশনা ঢাকা এবং বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় দর্শকদের মন কেড়েছে।

১৯৯২ সালের দিকে জেলা শিল্পকলার জন্য নুতন ভবনের নির্মান করার আয়োজন হয়।ভবনের ভিত্তি প্রস্থর স্থাপন করেন তখনকার বি এন পি নেত্রী খালেদা জিয়া। তখন জেলা প্রশাসক ছিলেন এনামুল কবির। এডিসি ছিলেন মোহাম্মদ বাকের। কি একটা অদ্ভুত পরিকল্পনা নিয়ে এই ভবন তৈরী হয়েছে, না দেখলে বোঝা যাবেনা। অডিটরিয়াম ছোট হোক কিংবা বড় হোক একটা প্লানিং থাকতে হবে। এতে কোন প্লানিং আছে বলে আমার মনে হয়না। তৈরী হওয়ার পর থেকে এ্ই ভবন হস্তান্তর হয়নি। এমনকি এই ভবনে সংস্কৃতিক কর্মকান্ড চালানোর মত অবস্থা এখনও তৈরী হয়নি। এর পরেও বি এন পি আমলে উন্নয়নের জোয়ারে ভাসিয়ে এখানে অনুষ্টানের আয়োজন করা হয়। এমন কি এখনও মাঝে মধ্যে এখানে বিভিন্ন প্রতিযোগিতা সহ নানা সাংস্কৃতিক কর্ম কান্ড দিব্যি চালানো হয়।কিন্তু আমার প্রশ্ন উন্নয়ন ব্যাপারিরা ভবন তৈরীর আগে এই সব কি চিন্তা মাথায় আনেননি।এই ভবন এর পরিকল্পনা করার ব্যাপারে শিল্পকলার এডহক কমিটির কোন সদস্যের কাছে বলা হয়নি। এখন জেলা প্রশাসনের বিভিন্ন কর্মকর্তা বদলী হন আরেকজন আসেন। তারা এ ব্যাপারে খোজ খবর নিতে নিতে বদলি হয়ে অন্যত্র চলে যান। ভবনের ব্যাপারে কথা উঠলে তারা বলে থাকেন আপনারা যাননি বলে কোস্ট গার্ড ওটা দখল করে নিয়েছে। এর উত্তরে আমি বলি দখল নেবো কি করে ?ওই ভবন তো হস্তান্তর পর্যন্ত হয়নি। সম্পুর্ন নির্মান কাজ ও বুঝিয়ে দেয়া হয়নি। নির্মান শৈলিতে ভুলের জন্য কন্ট্রাটারের আর্নেস্ট মানি জব্দ করা হয়েছে। এই কথা কয়জন প্রশাসক জানেন। এই ভবনের ভিতরে একটি ত্রুটিপুর্ণ অসমতল মঞ্চ রয়েচে। যাতে কেউ নাচ কিংবা কোন অনুষ্টান সহজভাবে করতে পারবে না। একটু আওয়াজ করলেই ভিষন শব্দ দুষন হয়ে থাকে। তবুও এতে শিশু একাডেমী সহ বিভিন্ন সংগঠনের অনুষ্টান হয়ে থাকে।উল্লেখ্য আমাদের জননেত্রী শেখ হাসিনা বিমান বাহিনীর ভবন উদ্ভোধন করতে আসলে হ্যাচারী রোডে সেই কোস্টগার্ড দখলকৃত শিল্পকলা ভবনের সামনে শিল্পকলার পক্ষথেকে একটি বেনার নিয়ে আমরা কজন ছাত্র ছাত্রী নিয়ে দাড়াই। এই অবস্থা দেখে কোস্ট গার্ডের দ’ুজন দারোয়ান তাদের কাপড়চোপড় নিয়ে শিল্পকলা ভবন ছেড়ে পালায়। এর পর আমরা ঐ ভবনে তালা লাগিয়ে দিই। তখন কিন্তুু এই ডায়াবেটিক হাসপাতাল রোডটি খুব একটা নিরাপদ ছিলনা। প্রতিদিন ছিনতাই ,রাহাজানী খুন খারাবী একটা না একটা লেগেই থাকতো। এখন বিমান ঘাটি হওয়ার পর তা অনেক কমে গেছে।যাহোক এসব ভয় থাকার পরও তখনকার বি এন পির নির্ব্বাচিত এডহক কমিটির লোকেরা ঐ শিল্পকলা ভবনে আমাদের যেতে বললে আমরা গিয়েছিলাম। কিন্তু গার্ডিয়ানরা ছেলে মেয়েদের ওখানে নিয়ে যেতে চাননি। এর পর কিছুদিন যেতে না যেতে বিমান বাহিনীর লোক এসে ফ্রি ডিসপেনসারী ক্যাম্প এর নাম দিয়ে আমাদের পিউনের কাছে নতুন শিল্পকলা ভবনের চাবি দাবি করে বসে। পিউন চাবি দিতে না চাইলে তারা জেলা প্রশাসক এবং ম্যাজিট্রেট থেকে চাবি চেয়ে নিয়ে শিল্পকলা ভবনে ডিসপেনসারি খোলেন। আমি আগেই বলেছি এই ভবনটি আমাদের হাতে হস্তান্তর করা হয়নি। এরি মধ্যে চারদলীয় জোটের নির্বাচিত কমিটির লোকেরা ঐ ভবন নিয়ে বেশ মাতামাতি শুরু করে দিয়েছেন।

শিল্পকলার জন্য তখন কোন টাকার বরাদ্ধ আসলে চারদলীয় লোকের নির্বাচিত সদস্যরা উঠেপড়ে লেগেযেতেন টাকার জন্য । আমি একটি উদাহরন দিতে পারি। জেলা প্রশাসক হাবিবুল্লাহ এর সময় শিল্পকলার বিভিন্ন অনুষ্ঠান পরিচালনার জন্য একটি কী বোর্ড কেনার টাকার অনুদান বাংলাদেশ শিল্পকলা থেকে আসে । তখন চারদলীয় জোটের সদস্যরা তো অনেক ক্ষমতাবান ছিলেন। তারা কোন ভ্রক্ষেপ না করে এমন একটি কীবোর্ড নিয়ে আসেন যা টেবিল পিয়ানো হিসেবে সীকৃত। কিন্তু কোন অনুষ্টানে বাজানোর জন্য উপযোগী নয় ,অথাৎ কোন প্রফেশনাল কী বোর্ড নয়।প্রকৃত মিউজিসিয়ানদের প্রবল বিরোধীতা উপপেক্ষা করে এই যন্ত্র কেনা হয়। উল্লেখ্য তখন চারদলীয় জোটের সদস্যরা অথাৎ জামাত বিএনপির থেকে নির্বাচিত সদস্যরা কোন শিল্পী সংস্কৃতি সেবীদের কথায় তেমন মনযোগ দিতেন না। আগেই বলেছি তারা উন্নয়নের জোয়ারে সব কিছু নিজের খেয়াল খুশী মতো করতেন। তাই এই কী বোর্ড কেনার পর এটিকে জায়েজ করার জন্য তারা নানা ছল চাতুরির আশ্রয় নেন। সেই চারদলীয় আহবায়ক কমিটির একজন ছিলেন তৎকালীন দৈনিক বাকখালীর সম্পাদক আতাহার । তার মাধ্যমে কেনা কী বোর্ডটি একনো মৃতবৎ জেলা শিল্পলায় পড়ে রয়েছে । অথচ একটু খেয়াল করলেই আরো কম দামে একটি প্রফেশনাল অর্গান কেনা যেতো।কিন্তু তিনি তা করেননি। আমাদের কোন প্রতিবাদ কে্উ কানে নেননি।আমি শুধু চারদলীয় জোটের সময়ের কথা বলছিনা আরো আগে শিল্পকলায় যে সব যন্ত্রপাতি কেনা হয়েছে। তা কোন মিউজিক্যাল পারফর্মেন্সের জন্য উপযোগী নয়। কমিটির লোকেরা খেয়াল খুশী মতো যা পারেন তা করেছেন।

আমি একটা কথা না বলে পারছিনা। বর্তমানে প্রশাসনের যেকোন অনুষ্ঠান মান সম্মত হচ্ছে কিনা তা দেখার বিষয় নয় ।সবাই এতো ব্যস্ত যে এসব দেখার সময় নেই। আমরা দেখেছি মহকুমা প্রশাসকের সময় জেলা পরিষদে কোন কোন অনুষ্ঠানের মহড়ায় মহকুমা প্রশাসক নিজেই অনেক্ষন অনুষ্ঠানের মহড়া দেখা শোনা করতেন। আর জেলা প্রশাসনের যুগেও দেখেছি জেলা প্রশাসক এম সি বর্মন , জনাব এম এম কামাল , জনাব সাইফুদ্দিনকে সব বিষয়ে দেখা শোনা করতে।বর্তমানে কোন অনুষ্ঠান করতে বলা হলে দেখা যায় যেন তেন প্রকারে একটা অনুষ্টান করে চালিয়ে দেওয়া। বিষয় হচ্ছে করতে বলা হয়েছে করতে হবে। যেমন আরো স্পস্ট করে বলি পাবলিক ল্ইাব্রেরী মাঠে বই মেলা সহ বিভিন্ন মেলার অনুষ্টান হয় । তা কত টুকু মানসম্মত তা দেখার বিষয় নয়, করতে বলা হয়েছে তাই করা। বই মেলার অনেক গুলো স্টল খালি পড়ে থাকে। তবে হাঁ জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে সফল বই মেলা হয়েছিল একবার । সম্ভবত তখন জেলা প্রশাসনের হয়ে সাংবাদিক বদিউল আলম সাহেবরা এর দেখা শোনা করেছিলেন। এই মেলায় বিপুল বই এর ছড়াছড়ি , বেচাকেনা , প্রত্যেকের হাতে বই এই সব দেখার মতো ছিল।এখন অনেক প্রকাশক ঢাকা চট্টগ্রাম থেকে আসলেও তাদের মুখে হাসি দেখা যায়নি।

জেলা প্রশাসক সাইফুদ্দিন, নিজে এসে শিল্পকলার খোজ খবর নিতেন। জেলা প্রশাসক এম সি বর্মন ছাত্র ছাত্রীদের বসার জন্য কার্পেট , ফ্যান ইত্যাদীর ব্যবস্থা করেছিলেন । তখন সব জেলা প্রশাসক অসম্ভব ব্যস্ততার মধ্যে ছিলেন। যেমন ১৯৯১ তুফান, রোহিঙ্গা সমস্যা ইত্যাদী বর্তমানের যেকোন সমস্যার চেয়ে কোন অংশে কম নয়। কিন্তু এর মধ্যেও প্রশাসকরা শিল্পকলার খোজ খবর নিতেন। শিল্পকলার প্রতিষ্ঠালাভের পর জেলা প্রশাসক জনাব এম এ কামাল বিভিন্ন ফান্ডের ব্যবস্তা করেছিলেন। যেমন বন বিভাগের নিলাম ডাকার সময় জেলা শিল্পকলার ফান্ডের ব্যবস্থা করেছিলেন। যেমন শিল্পকলাকে প্রত্যেক নিলাম ডাককারী লোকেরা সাহায্যের হাত বাড়িয়ে ছিলেন । চকরিয়ার ধনাট্য ব্যক্তি এম এ গনী জেলা প্রশাসক এম এম কামালের অনুরোধে শিল্পকলার জন্য অনেকগুলো ফার্নিচার তৈরী করে দিয়েছিলেন, যা এখনো শিল্পকলায় শোভা পাচ্ছে ।জেলা প্রশাসক এম এ কামাল শিল্পকলার দানকৃত ফান্ডের টাকা দিয়ে অনেকগুলো বাদ্য যন্ত্র কেনার বেবস্থা করেছিলেন। তা এখনও আছে । জাতীয় টেলিভিষনে ÒনিবেদনÓ অনুষ্ঠানে অংশ গ্রহনের সুযোগ করে দিয়েছিলেন। শিল্পকলার প্রশিক্ষকরা নাম মাত্রে সম্মানীতে কাজ করেন জেনে জেলা প্রশাসক সাইফুদ্দিন তাদের যাতায়াতের জন্য কিছু গাড়িভাড়ার ব্যবস্থা করেছিলেন। হীল টপ রেস্ট হাউসে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জীয়ার অনুষ্টানে ককসবাজারের সাংসদ শাহজাহান চৌধুরীর অনুরোধে শিল্পকলা এবং রাখাইন ওয়েলফেয়ারকে এক লক্ষ টাকার অনুদানের ঘোষনা দিয়েছিলেন।

১৯৯১ সালের প্রলয়ংকরী ঘুর্নীঝড়ে শিল্পকলা ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সম্পুর্ন চাল উড়িয়ে নিয়ে যায়। যন্ত্রপাতি ভিজে নস্ট হয়ে যায়। ঐ পুরানো কাটের ভবন মেরামত করে ক্লাসের ব্যাবস্তা করা হয়। সমুদ্রের জোয়ারের লোনাপানি শিল্পকলা ভবনে এসে পড়েছিল।

শিল্পকলার আরেকটি ভবন যা এখন ১৬ ই সিবি র কাছে অবস্থিত।বর্তমানে বেশ নড়বড়ে অবস্থায় আছে।আগে প্রশ্স্থ রাস্থা ছিল, এখন বিমান/সামরিক বাহিনীর ঘাটি হওয়ায় শিল্পকলার প্রবেশ পথে ইয়া বড় একটা গড়গড়া বসিয়ে দিয়ে একাডেমির ঢুকার রাস্তা চেপে দিয়েছে। তাছাড়া বালিকা মাদ্রাসার সমস্থ ময়লা ফেলা হয় এই রাস্তায়। সামরিক বাহিনী প্রশিক্ষন কেন্দ্রের গা ঘেঁষে পায়খানা প্রস্ত্রাবখানা তৈরী করে দিয়েছে। ড্রেনের গন্ধে ক্লাস করতে হয়।

ব্যাপারটি জেলঅ প্রশাসক গিয়াস উদ্দিন সাহেব দেখবেন বলে কথাও দিয়েছিলেন। কিন্তু কোন কাজ হয়নি। শিল্পকলার সবচেয়ে পুরাতন ভবন এটি। অনেক গুলো প্রশিক্ষন কর্মকান্ড বাংলাদেশ শিল্পকলার কর্তৃক অনুষ্টিত হয়েছে এখানে।জেলা প্রশাসক আলী ইমাম মজুমদারের সময় অনেক ঢাকা কেন্দ্রিক অনুষ্টান অর্থাৎ বাংলাদেশ শিল্পকলা সরাসরি প্রশিক্ষন কার্যক্রম এর উদ্যোগ নিয়েছেন। প্রত্যেকটাতে শিল্পকলার ছাত্র ছাত্রীরা সফল অংশগ্রহনের মাধ্যমে প্রশংসা কুড়িয়েছে। কক্সবাজার শিল্পকলা নিয়ে ঢাকা শিল্পকলা থেকে আগত প্রশিক্ষকদের মধ্যে কিছু মনোভাব প্রশিক্ষনে বসার পর দুর হয়েছে। উনারা মনে করেছিলেন এখানে প্রশিক্ষনের মান একটু নীচু মানের হবে। কিন্তু আমাদের অংশগ্রহনকারী শিল্পীরা সে ভুল ভেঙ্গে দিয়েছে।অনুষ্টানে উচ্চাংগ এবং বিভিন্ন বিষয়ভিত্তিক গান সবাই কে মুগ্ধ করেছে।

বর্তমানে শিল্পকলা একাডেমীর নামে কোন জমি জমা নেই।শোনা যাচ্ছে প্রায় সব এলাকা বিমান ঘাটির জন্য প্রয়োজন হবে। এদিকে প্রশাসন বিকল্প কোন জায়গা দিতে পারছেন না। অথচ একমাস দুমাসের মধ্যে অফিসার্স ক্লাব, বি এসট্ িআই, পাসপোর্ট অফিস ইত্যাদী তৈরী হয়ে গেলো।কিন্তু তিন যুগ ধরে জায়গা খুজার পরও শিল্পকলার কোন জায়গা হলো না।আমাদের জেনে রাখা ভালো গনতান্ত্রিক সাংস্কৃতির জন্য সরকার এখন বেশ তাগাদা দিচ্ছেন। কারন সংস্কৃতি ছাড়া শিক্ষা অচল সেকথা এতদিনে সরকারের বোধোদয় হয়েছে।তাই প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সংস্কৃতি চর্চার ব্যাবস্তার জন্য নির্দ্দেশ দেওয়া আছে।

এখানে একটা কথা বলে রাখি হ্যাচারি রোডে যে শিল্পকলা রয়েছে তার নামে কোন রেকর্ড নাই। একথা আমি জানতে পেরেছি বছর দুয়েক আগে এডিসি হুমায়ুন কবির সাহেব আমার কাছে জানতে চেয়েছেন শিল্পকলার নামে কোন জায়গা জমি আছে কিনা।তখন কোন কালচারাল অফিসার ছিলোনা। কিছু দিন পর এসি ল্যান্ড এর রিপোর্টে দেখা গেলো শিল্প কলার নামে কোন জমি নাই ।তার মানে হ্যাচারি রোডে বর্তমান পরিকল্পনাবিহীন ভবনটি কোন শিল্পকলার নিজস্ব জায়গায় নয়। নুতুন কালচারাল অফিসার আসার পর নির্বাচনের মাধ্যমে নুতুন কমিটি গঠিত হয়। এখন সেই কমিটির মেয়াদ শেষ। এডহক কমিটি গঠিত হয়েছে। সামনে নির্বাচনের ব্যাবস্থা নেওয়া হচ্ছে।বছর খানিক আগে এক একর শিল্পকলাকে বরাদ্দ দেওয়া হলেও তা এখন শোনা যাচ্ছে বিমান ঘাটির প্রয়োজন হবে। বিকল্প জায়গা খুজতে খুজতে আবার অনেকে শশান ঘাটের পার্শ্বে জমির কথা বলে যাচ্ছেন।আসলে কমিটি এবং জেলা প্রশাসক একটু খেয়াল করলেই শিল্পকলার জায়গার ব্যবস্থা হয়ে যেতে পারে। যেমন ধরুন বর্তমানে বালিকা মাদ্রাসার পার্শ্বে যেখানে শিল্পকলার প্রশিক্ষন কর্মকান্ড চলে, সেই জায়গায়ও প্রশাসন চাইলে একটি অডিটরিয়াম এর জায়গা দিতে পারে। সামরিক বাহিনীর লোক জন কিভাবে রয়েছেন সেটা প্রশাসন ভালো জানেন। জায়গা কম হলে খালি জায়গা বর্তমান শিল্পকলার পার্শ্বে থেকে নেওয়া যেতে পারে। ব্যাপারটি প্রশাসন একটু উদ্যোগী হলেই করা যেতে পারে।রাস্তার ব্যাপারে বালিকা মাদ্রাসার মধ্যখানে কিছু খালি জায়গা রয়েছে। প্রয়োজনে ইসি বির পার্শ্বে রোড না নিয়ে মাদ্রাসার মধ্যখানে জায়গা রাস্তা হিসেবে নেওয়া যেতেপারে। ককসবাজারে যখন এতো জায়গার অভাব আমাদের নিজের জায়গায় শিল্পকলা ভবন করলে অসুবিধা কি? প্রশ্ন থাকতে পারে বাংলাদেশ শিল্পকলার অডিটরিয়মের জন্য নুন্যতম কতটুকু জায়গার প্রয়োজন এবং তা আছে কিনা দেখতে হবে।

বিএনপি আমলে এর মধ্যে মাঝে মধ্যে মন্ত্রি মিনিষ্টার আসতে থাকেন। তাদের রাতে ভালো ঘুম হওয়ার জন্যও শিল্পকলার শিল্পীদের অনুষ্টান করতে হতো। যেমন একটি উদাহরন দিই। চার দলীয় আমলে কোন এক নামকরা মন্ত্রী  আসবেন। তখন জেলা প্রশাসক ছিলেন হাবিবুর রহমান। এডিসি ছিলেন নিজামী। উনি জাহাজে করে প্রমোদ ভ্রমনে যাবেন। নাজিরার টেক থেকে হিমছরি পর্যন্ত ওখানে গান বাজনা হবে এবং ওনারা শুনবেন আনন্দ করবেন। সেই ব্যাবস্থায় জেলা প্রশাসন একেবারে তটস্থ। এই জাহাজে ৭০হাজার লিটার পানি ভরতে হবে।কারন শীপটি ছিল ষ্টিম চালিত। সেই পুরানো ধাচের জাহাজ। খবর দেওয়া হলো ফায়ার বিগ্রেডকে। কয়েকজন মেজিট্রেট নিরলস কাজ কারে যাচ্ছেন। নাজিরার টেকে ফায়ার ব্রিগ্রেট যাওয়ার রাস্তা করা হলো। ৭০ হাজার লিটার পানি ভরা হলো। তখন সাগরে জোযার ছিলোনা বলে শিল্পীদের হাটুজলে নেমে মালকোচা মেরে জলদস্যুদের মতো দড়ি বেয়ে জাহাজে উঠতে হলো । উঠার সময় যন্ত্রী শিল্পীর কীবোর্ড পানিতে পড়ে গেলো। সর্বনাশ! এভাবে রাতভর গান চললো। মন্ত্রি মিনিস্টার ঘুমিয়ে পড়লেন। ভোরে যখাস্থানে জাহাজ ভিড়লো ,শিল্পী কলাকুশলীরা জাহাজথেকে জলদস্যূর মতো দড়ি বেয়ে আবার নামলেন। কারন তখন নদীতে ভাটা ছিলো।

আমি যতটুকু জানি বড় বড় প্রতিষ্ঠান, অফিস, লাইট হাউসের গা ঘেসে জমি বরাদ্ধনিয়ে কাজ শুরু করেছে। শিল্পকলার অনেক পরে চিন্তাভাবনা করে তারা জায়গা জমি পায়। অথচ শিল্পচর্চার জন্য কি কোথাও একটু জায়গা প্রশাসন খুজে পায়না। আরো স্পস্ট করে বলা যায় পাসপোর্ট অফিস, বিএস টি আই অফিস, অফিসার্স ক্লাব, ইত্যাদীর চিন্তা ভাবনা অনেক পরে হয়েছে। সে সব স্থাপনার কাজ শুরু হয়ে গেছে। কিন্তু শিল্পকলার জায়গার কোন হদিস নাই ।শিল্পকলার মহা পরিচালক বেশ কয়েকবার বলে গেছেন। জায়গার ব্যাপারে । উনি বলেছেন জায়গা দিলে ভবন নির্মানের কাজ শুরু হয়ে যাবে। কিন্তু প্রশাসন এ ব্যাপারে কোন পদক্ষেপ নেয়নি। বরঞ্চ বাংলাদেশ শিল্পকলার নির্দ্দেশে অনেকগুলো কার্যক্রম এখানে যথারীতি চলছে ককসবাজারে। আমার প্রশ্ন সরকারের বিভিন্ন স্থাপনা যেমন বি এস টি আই, পাসপোর্ট অফিস, অফিসার্স ক্লাব ইত্যাদীর মতো শিল্পকলার গুরুত্ব কি আপনারা কম মনে করেন? আমরা ভালো করে জেনেছি এই সব সুকুমল শিল্পচর্চা না করলে আপনার আমার ছেলে মেয়েরা জঙ্গী তৎপরতার দিকে ছুটে যাবে।

আপনারা জেনে আশ্চর্য হবেন। বর্তমান শিল্পকলার রেকর্ড দেখার জন্য একসময় প্রশাসনের নির্দেশ দেওয়ার পর অনেকদিন পর জানা গেলো শিল্পকলার জন্য কোন জমি বরাদ্ধ নেই। তাহলে ডায়াবেটিক হাসপাতালের পাশে কিভাবে নির্মান শৈলী বিহীন শিল্পকলা ভবন তৈরী হলো? বছর দুয়েক আগে এক একর জায়গা বোধহয় বরাদ্ধ দেওয়ার কথা হয়েছিল। কিন্তু বিমান বন্দরের মহাপরিকল্পনায় তাও ভেস্তে গেছে । এখন কেউ শ্বশান এর পার্শ্বে , কুতুবদিয়া চরে, খুরুষ্কুলে এসব বলে বেড়াচ্ছেন। কিছুদিন আগে শিল্পকলার মহা পরিচালক মহোদয় এসেছিলেন। তিনি এসে বললেন আপনারা আমাকে জায়গা দেন , আমি আপনাদের ভবন দেবো। প্রশাসন অদ্যবদি তা পারেননি। কারন প্রশাসনকে এ নিয়ে তেমন ভাবতে দেখা যায়না। পাবলিক ল্ইাব্রেরীর সম্মুখে সাংসদ কমল ভাই একটি মুক্ত মঞ্চ করে দিয়েছেন। এর জন্য তাঁকে অসংখ্য ধন্যবাদ। উনি একাই এই কাজ্িট করে দিয়েছেন। এরকম আরো উদ্যোগ নিয়ে পাবলিক লাইব্রেরীর এই অনড় অবস্থার উন্নতি একমাত্র তিনিই করতে পারবেন বলে আমার বিশ্বাস। ওদিকে কবিতা মঞ্চের কথা অনেকেই বলে থাকেন । তা এখন আর চলে না। কারন ওদিকেও অবস্থা খারাপ।বর্তমানে অনেকে কোন হলঘর কিংবা অডিটরিয়াম না পেয়ে ব্যক্তিগত উদ্যোগে কারো বাড়ীর ছাদে ,শহীদ মিনারে ইত্যাদি জায়গায় কর্মকান্ড গুলো চালিয়ে যাচ্ছেন। যুগের পর যুগ শিল্প সংস্কৃতি থেকে ককসবাজারের আপামর জনসাধারনকে বঞ্চিত করে যে কাজটি পাবলিক লাইব্রেরি নির্মানের নামে হয়েছে তার জন্য দায়ী কে? কেনই বা আমরা বঞ্চিত হবো? তা বলার কি কেউ নেই ককসবাজারে। একটু কিছু বললেই আইনী জঠিলতার কথা উঠে আসে। কেন আমাদের প্রশাসক মহোদয় , ককসবাজারের সুশীল সমাজ সহ মিলে এর কোন সমাধান কি নেই?

বাংলাদেশের কয়েকটি পাবলিক লাইব্রেরীর মধ্যে ককসবাজার পাবলিক লাইব্রেরী অন্যতম হলেও আজ তার সমস্ত মুল্যবান বই পত্র  সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে মুখ থুবড়ে পড়ে আছে। তত্বাবধায়ক সরকারের একটি উদ্যোগে পাবলিক লাইব্রেরী বছরের পর বছর প্রশাসনিক জঠিলতায় কাজ বন্ধ হয়ে গেছে।শিল্পকলা জায়গার অভাবে নিজগৃহে পরবাসের মতো থেকে কাজ করে যাচ্ছে।

প্রিয় পাঠক এখানে সম্রাট বাহাদুর শাহ জাফরের কালামের একটি পংক্তি না বললেই নয় যেমন(কিতনি বদনসীব তু এ জাফর আপনে দাফনেকে লিয়ে দু গজ জমিন না মিলি আপনি কু এ ইয়ারমে“ হে জাফর তুমি কত বদনসীব , নিজের দাফনের জন্য ভারতবর্ষে তোমার দু’গজ জমিন মিললোনা।” ঠিক তেমনি দু:খ করে বলতে হয় শিল্পকলা তুমি কত বদনসীব নিজের সংস্কৃতি লালনের জন্য তোমার একটু জায়গা ককসবাজারে হলোনা!”

পাঠকের মতামত: