ঢাকা,মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪

রামুতে সংরক্ষিত বনাঞ্চলে ইট ভাটা নির্মাণের হিড়িক

সোয়েব সাঈদ :EIT BATA
কক্সবাজারের রামু উপজেলা কৃষি স্বণির্ভর জনপদ কাউয়ারখোপ ইউনিয়নের উখিয়ারঘোনা এলাকায় সংরক্ষিত বনাঞ্চল ও রাবার বাগানের পাশে দুই ফসলি জমিতে একের পর এক ইট ভাটা স্থাপন অব্যাহত রয়েছে। এসব ইট ভাটায় মাটি সরবরাহ করতে গিয়ে ফসলি জমি ব্যাপকহারে কমে যাচ্ছে। দূষিত হচ্ছে পরিবেশ। এনিয়ে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করছেন পরিবেশবিদরাও।
কাউয়ারখোপ ইউনিয়নের মৃত মোতাহের মিয়ার ছেলে মোহাম্মদ আনোয়ার জানিয়েছেন, রামু উপজেলার ১১টি ইউনিয়নের মধ্যে খাদ্য শস্য উৎপাদনকারি এলাকা হচ্ছে কাউয়ারখোপ ই্উনিয়নের উখিয়ারঘোনা গ্রাম। কয়েকবছরে এ গ্রামে স্থাপিত হয়েছে ৫টি ইট ভাটা। নতুন করে আরো কয়েকটি ইট ভাটা স্থাপনের প্রক্রিয়া শুরু হওয়ায় ওই এলাকার জনসাধারণের মাঝে চরম ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে। এখানে যে ৫টি ইট ভাটায় বর্তমানে ইট উৎপাদন হচ্ছে তার সবকটির সরকারি অনুমোদনও নেই।
এ ইউনিয়নে নতুন করে আর কোন ইটভাটার অনুমোদন না দেয়ার জন্য তিনি সম্প্রতি পরিবেশ ও বন মন্ত্রনালয় সহ বিভিন্ন প্রশাসনিক দপ্তর ও জনপ্রতিনিধিদের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে, কাউয়ারখোপ ইউনিয়নের অধিকাংশ মানুষের পেশা কৃষি। এলাকাটির তিনদিকে বন বিভাগের সংরক্ষিত বনাঞ্চল ও সরকারি রাবার বাগান রয়েছে। এখানে কৃষি জমির পরিমানও কম। এরপরও বিগত কয়েক বছরে এখানে ৫টি ইট ভাটা স্থাপন করা হয়েছে। সম্প্রতি এলাকায় আরো কয়েকটি ইট ভাটা স্থাপনের জোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন কতিপয় স্বার্থান্বেষি মহল। এসব ইট ভাটারা মধ্যে রয়েছে রিফাত জাহান এর এর এবিএম ব্রিকস, রফিকুল আলম ইসলামের আরআইসি ব্রিক এবং নুরুল আজিম ও ওসমান গনির টু স্টার ব্রিক।
অভিযোগে আরো উল্লেখ করা হয়েছে, কাউয়ারখোপ ইউনিয়নের দুটি উচ্চ বিদ্যালয়, চারটি প্রাথমিক বিদ্যালয়, দুটি বৌদ্ধ বিহার, একটি মঠ (জাদি) ও চারটি মাদরাসা সহ আরো বেশ কিছু শিক্ষা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এখানে প্রতিদিন অনেক দেশি-বিদেশী পর্যটকও আসেন। সাম্প্রতিক সময়ে চালু হওয়া ইট ভাটায় প্রতিদিন অসংখ্য মিনিট্রাক মাটি ও ইট বহনের কারনে এলাকার সড়কগুলো জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে। ইটের সুরকি ও ধুলাবালির কারনে ছাত্র-ছাত্রী আর পথচারিরা চলের অবর্ণনীয় দূর্ভোগের শিকার হচ্ছে।
সেই সাথে এসব ইটভাটায় মাটি সরবরাহ করতে গিয়ে এলাকার বিপুল দুই ফসলী জমি এখন জলাধারে রূপ নিচ্ছে। কৃষি জমি হ্রাস, সংরক্ষিত ও সামাজিক বনায়ন ধ্বংসের কারনে এখানকার পরিবেশ ক্রমেই ভারসাম্য হারাচ্ছে।
বাংলাদেশ বনশিল্প উন্নয়ন কর্পোরেশনের আওতাধিন রামু রাবার বাগান এর উপ-ব্যবস্থাপক মো. ওয়াহিদুল ইসলাম জানিয়েছেন, রামুর কাউয়ারখোপ ইউনিয়নের গনিয়াকাটা এলাকায় পরিবেশ ও বন মন্ত্রনালয়ের নিয়ন্ত্রনাধিন রামু রাবার বাগান সংলগ্ন এলাকায় জনৈক ব্যক্তি/প্রতিষ্ঠান দুটি ইটের ভাটা নির্মাণের চেষ্টা চালাচ্ছে। এ স্থানে ইট ভাটা নির্মাণ হলে রাবার বাগানের কষ আহরণে মারাত্মক ক্ষতিসহ প্রতিনিয়ত রাবার গাছ দূষ্কৃতিকারি কর্তৃক চুরি করে ইটের ভাটায় ব্যবহারের সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়া পরিবেশের সার্বিক ক্ষতিসহ বাগানে প্রতিনিয়ত কর্মরত ৪০০ মানুষের কর্মসংস্থান বন্ধ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
তিনি আরো জানান, রামু রাবার বাগান ১৯৬০ সাল হতে সরকারের রাজস্ব আয়ের ভুমিকায় নিয়োজিত। এটি বাংলাদেশের প্রথম সরকারি বাগান। এজন্য প্রতিষ্ঠানটির বৃহত্তর সার্থে তিনি এ এলাকায় ইট ভাটার অনুমোদন না দেয়ার জন্য সম্প্রতি কক্সবাজার জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
সম্প্রতি ওই এলাকায় ইট ভাটা স্থাপনে অবস্থানগত ছাড়পত্র চেয়ে কক্সবাজার পরিবেশ অধিদপ্তরের কাছে আবেদন জানান, রামুর কাউয়ারখোপ ইউনিয়নের ওসমান ও নুরুল আজিম। পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারি পরিচালক সরদার শরীফুল ইসলাম এ স্থানে ইট ভাটা স্থাপনের বিষয়ে মতামত চেয়ে লিখিত অনুরোধ জানান।
রামু উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান রিয়াজ উল আলম জানিয়েছেন, এরই প্রেক্ষিতে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সরেজমিন ওই এলাকা পরিদর্শনে যান। কৃষি কর্মকর্তার দেয়া প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রস্তাবিত জমি দুই ফসলী এবং আবেদনপত্রে উল্লেখিত ৩টি দাগের পার্শ্ব¦বর্তী বনাঞ্চল রয়েছে।
চেয়ারম্যান রিয়াজ উল আলম আরো জানান, বিগত দুই বছরে কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে ওই এলাকায় ইট ভাটা স্থাপনের অনুমতি তিনি দেননি। একের পর এক ইট ভাটা নির্মাণের কারনে বর্তমানে ওই এলাকায় পরিবেশে ভারসাম্য হারাচ্ছে বলে তাকে এলাকাবাসী অভিযোগ করেছেন। এরপরও কিভাবে ইট ভাটা নির্মাণ হচ্ছে তা খতিয়ে দেখা হবে।
কাউয়ারখোপ ইউনিয়নে সরেজমিন গিয়ে ও একাধিক ব্যক্তির সাথে কথা বলে জানা গেছে, বর্তমানে এলাকাটির চেহারা আগের মতো নেই। নেই কৃষকের হাসি আর ফসলের ঘ্রাণ। চারিদিকে এখন ইট ভাটার কালো ধোঁয়া আর মাটি কাটার মহোৎসব। এসব কারনে মানুষের দূর্ভোগ চরম আকার ধারন করেছে। তাই সবার দাবি যেন আর ইট ভাটা স্থাপনের অনুমতি দেয়া না হয়। এজন্য প্রশাসন, পরিবেশ অধিদপ্তর ও সংশ্লিষ্ট জনপ্রনিধিদের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন  পরিবেশবাদি সহ সর্বস্তুরের মানুষ।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, কাউয়ারখোপের উখিয়ারঘোনা গনিয়াকাটা এলাকায় একটি ইট ভাটা নির্মাণের প্রাথমিক কাজ শুরু হয়েছে। ইট ভাটা নির্মাণের কোন প্রকার অনুমোদন না নিয়েই ইতিমধ্যে বনাঞ্চল ও রাবার বাগানের পার্শ্ববর্তী দুই ফসলী জমিতে স্কেকেভেটর দিয়ে মাটি কেটে স্তুপ করার পাশাপাশি ইট ভাটার জন্য অফিস নির্মাণও করা হচ্ছে।
রামু উপজেলা নির্বাহি কর্মকর্তা মো. শাজাহান আলি জানিয়েছেন, এসব বিষয়ে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

পাঠকের মতামত: