ঢাকা,শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪

রামুতে কেটে দেয়া হলো বিদ্যালয়ের অর্ধ শতাধিক মূল্যবান প্রজাতির গাছ

eeeসোয়েব সাঈদ, রামু ::

মাঠে গরু প্রবেশে নিষেধ করায় রাতের আঁধারে কেটে ফেলা হলো বিদ্যালয়ের অর্ধ শতাধিক মূল্যবান প্রজাতির গাছ। ঘটনাটি ঘটেছে রামুর রাজারকুল মনসুর আলী সিকদার আইডিয়্যাল স্কুলে।

মনসুর আলী সিকদার আইডিয়্যাল স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক মাওলানা মোহছেন শরীফ জানিয়েছেন, সৌন্দর্য বর্ধন আর ছায়া নিবিড় পরিবেশের জন্য এক বছর পূর্বে বিদ্যালয়ের সম্মুখে রোপন করা হয়েছে কাঠ বাদাম, দেবদারু, কৃষ্ণচূড়া, রেইনট্রি, ক্রিসমাস, ঝাউ, বেল, বট সহ মূল্যবান ও বিরল প্রজাতির প্রায় অর্ধশতাধিক বৃক্ষ। রোপনের পর থেকে এসব বৃক্ষ রক্ষার জন্য সিমেন্টের তৈরী চাকা, বাঁশ, জাল ও কাঁটা তারের বেড়া দেয়া হয়। ক্রমেই এসব বৃক্ষ বড় হয়ে বিদ্যালয় আঙ্গিনায় শোভা বাড়াচ্ছিলো।

কিন্তু সোমবার (৫ ডিসেম্বর) দিবাগত রাতে স্থানীয় কিছু ব্যক্তি আক্রোশের বশবর্তী হয়ে বিদ্যালয়ের সামনে রোপন করা এসকল বৃক্ষ কেটে দেয়। মঙ্গলবার (৬ ডিসেম্বর) বিদ্যালয়ে গিয়ে এ দৃশ্য দেখে হতবাক হয়ে পড়েন বিদ্যালয়ের শিক্ষক, পরিচালনা কমিটি, ছাত্র-ছাত্রীসহ এলাকার গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গ।

খবর পেয়ে বিদ্যালয়ে ছুটে যান রাজারকুল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মুফিজুর রহমান। তিনি জানান, যারা এ ঘটনা ঘটিয়ে তারা পশুর চেয়েও নিকৃষ্ট। তাদের আইনের আওতায় আনার জন্য তিনি নিজে প্রচেষ্টা চালাবেন।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবদুল হাশেম জানিয়েছেন, এ ঘটনায় তিনি জড়িত ৭জনকে অভিযুক্ত করে গতকাল রামু থানায় লিখিত এজাহার দিয়েছেন। এতে অভিযুক্তরা হলেন, বশির আহমদ, জাফর আলম, আবদুর রহিম, মোক্তার আহমদ, কাদির হোছাইন, জালাল আহমদ ও গুরা মিয়া। তিনি আরো জানান, অভিযুক্তরা বিদ্যালয়ে মাঠে গরু ছেড়ে দিলে বিদ্যালয়ের গাছপালার ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়। সম্প্রতি তিনি তাদের ডেকে বিদ্যালয় মাঠে যাতে গরু না রাখেন বা না আসে সে জন্য সতর্ক করেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে তারা সংঘবদ্ধ হয়ে রাতের আঁধারে বিদ্যালয়ের সম্মুখে রোপন করা এসব বৃক্ষ কেটে দেয়।

গতকাল দুপুরে রামু থানা পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে। পুলিশ জানিয়েছে এ ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

  ##################

রামুর জোয়ারিয়ানালায় বসত বাড়ি পুড়ে ছাই

সোয়েব সাঈদ, রামু :::

রামু উপজেলার জোয়ারিয়ানালা ইউনিয়নের ঘোনারপাড়া এলাকায় একটি বসত বাড়ি অগ্নিকান্ডে ভস্মিভূত হয়েছে। এতে প্রায় ১২ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। মঙ্গলবার (৬ ডিসেম্বর) রাত সোয়া দশটায় মৃত আবদুস ছোবহান মিয়াজীর ছেলে আমিন মাস্টারের বাড়িতে এ অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, আগুনের সূত্রপাত হলে তা মূহুর্তে পুরো বাড়িতে ছড়িয়ে পড়ে। দমকল কর্মীরা না আসায় পুরো বাড়িটি পুড়ে যায়।

জোয়ারিয়ানালা ইউনিয়ন যুবলীগ নেতা জহির আহমদ জানিয়েছেন, যথাসময়ে ফায়ার সার্ভিস এর কর্মীরা এলে আগুন নিয়ন্ত্রন সম্ভব হতো। তিনি অবিলম্বে রামুতে নির্মানাধিন ফায়ার সার্ভিস এর কাজ সম্পন্ন করার দাবি জানান।

 ##################

রামু হানাদারমুক্ত দিবস আজ

সোয়েব সাঈদ, রামু :::

আজ ৭ ডিসেম্বর রামুবাসীর গৌরবের দিন। এইদিনে অর্থাৎ ১৯৭১ সালের ৭ডিসেম্বর, মঙ্গলবার শত্রুমুক্ত হয় রামু। তাই ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে লেখা আছে এ দিনের কথা। হানাদার বাহিনী ও পাকিস্তানের নিয়ন্ত্রনাধিন রামু থানা প্রশাসন মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয়েছিল, মুক্তিযুদ্ধের এ দিনেই।

মুক্তিযুদ্ধকালীন এ অঞ্চলের কমান্ডার ছিলেন, সিএইচএম আবদুস সোবহান। মুক্তিযুদ্ধের সময়ে ৭ ডিসেম্বর রামু থানা অপারেশন সম্পর্কে তিনি জানান, ডিসেম্বরের এ সময়ে সারাদেশে মুক্তিযোদ্ধারা বিজয়ের জন্য মরণকামড় দেন। রামুর কুখ্যাত রাজাকার শান্তি বাহিনীর সেক্রেটারি ও প্রধান রাজাকার কমান্ডার আবদুল হক ওরফে হক সাব ও তার রাজাকার-আলবদর বাহিনীর নেতৃত্বে রামুজুড়ে চলছিলো নারকীয় হত্যাযজ্ঞ, নারী ধর্ষণ, বসত ঘর ও দোকানপাটে অগ্নিসংযোগ সহ বর্বর অত্যাচার-নিপীড়ন। এমন দূঃসময়ে সিদ্ধান্ত হয় রামু থানাকে রাজাকার আলবদর মুক্ত করা আর পাকিস্তানি পুলিশের নিয়ন্ত্রণ কেড়ে নেয়ার।

৬ ডিসেম্বর মুক্তিযোদ্ধাদের দলটি ঈদগড়ের নতুন মুরংপাড়া ক্যাম্প থেকে গর্জনিয়া হয়ে সন্ধ্যায় কাউয়ারখোপ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এসে অবস্থান নেয়। রাতে বাঁকখালী নদীর ওপারে থানা ভবনের অবস্থান ও চারপাশের পরিস্থিতি সম্পর্কে খোঁজ খবর নেয়া হয়। ৭ ডিসেম্বর মঙ্গলবার সকাল সাড়ে আটটার দিকে মুক্তিযোদ্ধারা রামু থানা অপারেশনের জন্য বেরিয়ে পড়েন। থানার চারপাশে বসতি থাকায় এলাকার জনসাধারণের প্রাণনাশের কথা চিন্তা করে একটু দূরেই অবস্থান নেয় মুক্তিযোদ্ধারা। ওখান থেকেই থানায় অবস্থানরত পাকিস্তানি পুলিশদের আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেয়া হয়। পাকিস্তানি পুলিশ মুক্তিযোদ্ধাদের অবস্থান ও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না থাকায় আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয়। এ সময় মিত্র বাহিনীর একটি বিমান আকাশে উড়ছিল। পাকিস্তানি পুলিশ বাহিনী মাটিতে অস্ত্র রেখে দু’হাত উঁচু করে দাঁড়ায়। মুক্তিযোদ্ধারা রামু থানায় অবস্থানরত ১৪-১৫ জন পাকিস্তানি পুলিশের কাছ থেকে ৯ থ্রি-নট থ্রি রাইফেলস্ ও গোলা বারুদ কেড়ে নেন। রক্তপাতহীন যুদ্ধে শত্রু মুক্ত হয় রামু থানা।

পাকিস্তানি পুলিশের নিয়ন্ত্রণ কেড়ে নিয়ে রামু থানা চত্বরে স্বাধীন বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন অপারেশন কমন্ডার ক্যাপটেন আবদুস সোবহান। এ সময় রামু খিজারী আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণীর ছাত্র মুক্তিযোদ্ধা আবু আহমদ একটি রিকশায় মাইক বেঁধে জয় বাংলা, জয় বাংলা জয়ধ্বনি দিতে দিতে রামু মুক্ত হওয়ার ঘোষণা দিয়ে চৌমুহনী স্টেশন হয়ে মেরংলোয়া গ্রাম পর্যন্ত পৌঁছান। পরে তিনি রামু চৌমুহনী চত্বরে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করেন। চৌমুহনী স্টেশনের পূর্বপার্শ্বস্থ কুমিল¬া টেইলার্সের পরেশ সিংহ (প্রয়াত) ওই স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকাটি তৈরি করে দেন।

কমান্ডার ক্যাপটেন আবদুস সোবহানের নেতৃত্বে রামু থানা অপারেশনে অংশ নেন, হাবিলদার আবদুল জলিল, ফয়েজ আহম্মদ, সিপাহী নুরুল ইসলাম গাজী, সিপাহী আবদুল খালেক, সিপাহী এম এ ওয়াহাব রাজা, সিপাহী মোহাম্মদ হোছাইন, নায়েক সুলতান আহম্মদ, নায়েক আবদুল ছালাম, সিপাহী রেজাউল করিম, সিপাহী মঞ্জুর আলম চৌধুরীসহ পনের জন ইবিআর, ইপিআর সদস্য এবং মুক্তিযোদ্ধা মোজাফ্ফর আহম্মদ, মুক্তিযোদ্ধা রমেশ বড়–য়া, মুক্তিযোদ্ধা নুরুল ইসলাম বাঙালি, মুক্তিযোদ্ধা আবু আহমদ, মুক্তিযোদ্ধা সিরাজুল ইসলাম রাজা, মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ সোলেমান, মুক্তিযোদ্ধা শামসুল আলম, মুক্তিযোদ্ধা নুরুল আমিন, মুক্তিযোদ্ধা মঞ্জুর আলম, মুক্তিযোদ্ধা হাসেম চাষী, মুক্তিযোদ্ধা নুরুল হক, মুক্তিযোদ্ধা মমতাজ আহম্মদ, মুক্তিযোদ্ধা আবুল কালাম আজাদ, মুক্তিযোদ্ধা এম এ কাশেম, মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ হোছন, মুক্তিযোদ্ধা ছুরুত আলম, মুক্তিযোদ্ধা ছৈয়দ আহম্মদ, মুক্তিযোদ্ধা ছগির আহম্মদ, মুক্তিযোদ্ধা গোলাম মওলা বাবুল, মুক্তিযোদ্ধা দুলাল, মুক্তিযোদ্ধা ফিরোজ আহম্মদ, মুক্তিযোদ্ধা দুদুমিয়াসহ শতাদিক ছাত্র, কৃষক, বিভিন্ন পেশাজীবী মুক্তি পাগল মানুষ।

রামুর মুক্তিযোদ্ধাদের অভিমত মহান স্বাধীনতাযুদ্ধসহ স্বাধিকার ও গণতান্ত্রিক আন্দোলনের বীর সৈনিকদের বীরত্বগাঁথা অধ্যায় এবং আঞ্চলিক ইতিহাস বিকৃত হয়ে যাচ্ছে। অপ্রকাশিত এ অধ্যায় বা ঐতিহাসিক দিনলিপির ইতিকথা তুলে ধরা হচ্ছে না নতুন প্রজন্মের কাছে। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস, মুক্তিযোদ্ধার কথা, ঐতিহ্য ও চেতনাকে আজ বাঙ্গালী জাতি হারাতে বসেছি, ভুলতে বসেছি।

##################

 রামুতে ঐতিহ্যবাহি নৌকা বাইচের ফাইনাল খেলা কাল

সোয়েব সাঈদ, রামু

রামুতে অনুষ্ঠিতব্য ঐতিহ্য নৌকা বাইচ এর সমাপনী দিনের খেলা কাল বৃহষ্পতিবার (৮ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হবে। বেলা ২টায় রামুর অফিসের চর এলাকায় বাঁকখালীতে অনুষ্ঠিতব্য সমাপনী খেলায় প্রধান অতিথি থাকবেন পানি সম্পদ মন্ত্রী ব্যারিষ্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ। সমাপনী খেলা সফলভাবে আয়োজনে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে আয়োজক ফতেখাঁরকুল ইউনিয়ন পরিষদ। এতে প্রধান বক্তা থাকবেন রামু কক্সবাজার আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ্ব সাইমুম সরওয়ার কমল।

রামু কেন্দ্রিয় নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতা উদযাপন পরিষদের সভাপতি ও ফতেখাঁরকুল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ফরিদুল আলমের সভাপতিত্বে সমাপনী খেলা ও পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি থাকবেন, পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী মো: নজরুল ইসলাম হিরু (বীর প্রতীক) এমপি, রামু উপজেলা চেয়ারম্যান রিয়াজ উল আলম, রামু উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ শাজাহান আলি, রামু উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) মোঃ নিকারুজ্জামান, রামু থানার ওসি প্রভাষ চন্দ্র ধরসহ রাজনৈতিক, ক্রীড়া, সাংস্কৃতিক ও সামাজিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।

 

পাঠকের মতামত: