ঢাকা,শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪

জেলা পরিষদ নির্বাচনের মনোনয়নপত্র বিক্রি শুরু কাল, নির্বাচকমন্ডলীতে থাকছেন না জেলার ১৮ জনপ্রতিনিধি

elecশহীদুল্লাহ্ কায়সার ॥

তফসিল ঘোষণার মধ্য দিয়ে জেলা পরিষদ নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়া শুরু হয় গত ২০ নভেম্বর। ২৩ নভেম্বর বুধবার থেকে শুরু হবে মনোনয়ন বিক্রি। ১ ডিসেম্বর জেলার ৪টি পৌরসভা, ৮টি উপজেলা এবং ৭১টি ইউনিয়নের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা জেলা পরিষদের ১ জন চেয়ারম্যানসহ ১৫জন সদস্য ও ৫ জন সংরক্ষিত নারী সদস্য নির্বাচিত করবেন। ইতোমধ্যে নির্বাচনের ভোটার তালিকাও চূড়ান্ত করেছে নির্বাচন কমিশন।

এবারের নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার সময় প্রার্থীদের সিডি জমা দেয়া বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এ জন্য চেয়ারম্যান পদের প্রার্থীদের প্রত্যেককে ৫৫ হাজার টাকায় কিনতে হবে প্রতিটি সিডি। পাশাপাশি ওয়ার্ড ভেদে প্রত্যেক সদস্য প্রার্থীকে ৩ থেকে ১২ হাজার টাকায় জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে সিডি সংগ্রহ করতে হবে।

এবার জেলার ৭১ টি ইউনিয়নের ৯৮৫ জন নির্বাচিত প্রতিনিধি নির্বাচকম-লীর তালিকায় অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে। পুরো জেলাকে ভাগ করা হয়েছে ১৫টি ওয়ার্ডে। ১ ডিসেম্বর প্রত্যেক ওয়ার্ডে স্থাপন করা হবে একটি করে নির্বাচনী কেন্দ্র। সেখানেই নির্বাচকম-লীর সদস্যরা তাঁদের পছন্দের প্রার্থীদের নির্বাচিত করতে ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। স্থানীয় সরকার (জেলাপরিষদ) আইন-২০০০ এ উপজেলা পরিষদের নির্বাচিত ভাইস চেয়ারম্যান এবং সংরক্ষিত নারী আসনের ভাইস চেয়ারম্যানদের ভোটাধিকার প্রয়োগ নিয়ে জটিলতা দেখা দিয়েছিল। বিষয়টির সুরাহা করা হয়েছে। চলতি বছরের ১৭ নভেম্বর নির্বাচন কমিশন থেকে জারি করা এক প্রজ্ঞাপনে তাঁদের নির্বাচকম-লীর তালিকায় অন্তর্ভূক্ত করতে নির্দেশ দেয়া হয়।

জেলাব্যাপী ১ হাজার ৩ জন নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি রয়েছে। কিন্তু চলতি বছরের জেলা পরিষদ নির্বাচনে ১৮ জনপ্রতিনিধির ভোটাধিকার প্রয়োগ নিয়ে দেখা দিয়েছে সংশয়। কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি অ্যাডভোকেট সিরাজুল মোস্তফা এবং মহেশখালী-কুতুবদিয়া আসনের সংসদ সদস্য আশেক উল্লাহ্ রফিকের নিজ এলাকা বড় মহেশখালী ইউনিয়নের কোন প্রতিনিধির নাম নির্বাচকম-লীর তালিকায় অন্তর্ভূক্ত হয়নি। বড় মহেশখালী ইউপি নির্বাচন স্থগিত থাকায় ইউনিয়টির জন্য এমন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে নির্বাচন কমিশন।

বরখাস্ত আদেশ বহাল থাকায় কক্সবাজার পৌরসভার মেয়র সরওয়ার কামাল এবং উখিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান সরওয়ার জাহান চৌধুরীকে রাখা হয়েছে ভোটার তালিকার বাইরে। ৩১ অক্টোবর যাঁরা নির্বাচিত হয়েছেন তাঁদেরকেও নির্বাচকম-লীর তালিকায় অন্তর্ভূক্ত করা হয়নি। এই তালিকায় মহেশখালী উপজেলার শাপলাপুর ইউনিয়নের ১ জন , কুতুবজোম ইউনিয়নের ১জন এবং কুতুবদিয়া উপজেলার ১ জনপ্রতিনিধি রয়েছেন। শপথ না নেয়ার কারণে গেজেটে নাম অন্তর্ভূক্ত না হওয়ার তাঁদেরকে ভোটার তালিকার বাইরে রাখা হয়েছে।

তবে, এ বিষয়টি সুরাহার এখনো সময় আছে উল্লেখ করে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. মোজাম্মেল হোসেন বলেছেন, “শপথ না নেয়ার কারণে গেজেটে যাঁরা অন্তভূক্ত হয়নি তাঁদের জন্য এখনো সুযোগ রয়েছে। এক্ষেত্রে প্রথমে তাঁদের জেলা নির্বাচন কমিশনার বরাবর আবেদন করতে হবে। এরপর এখান থেকে সেই আবেদনপত্র নির্বাচন কমিশনে পাঠানো হবে। সেখান থেকে অনুমোদন পাওয়া গেলেই নির্বাচকম-লীর তালিকায় তাঁদের নাম অন্তর্ভূক্ত হবে।”

এবারের নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থীরা পাঁচ লাখ টাকার অধিক ব্যয় করতে পারবেন না। ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ ৫০ হাজার এবং সাড়ে চার লাখ টাকার মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখতে হবে নির্বাচনী ব্যয়। অন্যদিকে, সদস্য প্রার্থীদের জন্য ব্যয় সীমাবদ্ধ করা হয়েছে সর্বোচ্চ এক লাখ টাকার মধ্যে। এক্ষেত্রে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ ১০ হাজার এবং নির্বাচনী ব্যয় হতে হবে সর্বোচ্চ ৯০ হাজার টাকা।

উল্লেখ্য চলতি বছরের ১০ আগস্ট স্থানীয় সরকার বিভাগের পক্ষ থেকে এক পত্রের মাধ্যমে কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মোঃ আলী হোসেনকে কে সীমা নির্ধারণ কর্মকর্তা হিসেবে জেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে সীমানা নির্ধারণ করার নির্দেশ প্রদান করা হয়। এরপরই জেলা প্রশাসক তাঁর প্রদত্ত ক্ষমতাবলে পুরো জেলাকে ১৫টি ওয়ার্ডে ভাগ করেন। পাশাপাশি পাঁচটি সংরক্ষিত ওয়ার্ডে জেলাকে বিভক্ত করেন। এরপর কিছুটা সংশোধন করে বিন্যাস করা হয় নি¤েœাক্ত ওয়ার্ড তালিকা।

সাধারণ ওয়ার্ড নং -১ ঃ পুরো কুতুবদিয়া উপজেলার ছয়টি ইউনিয়নকে এই ওয়ার্ডের অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে।

ওয়ার্ড নং -২ ঃ মহেশখালী উপজেলার মাতারবাড়ী, ধলঘাটা, কালারমারছড়া, হোয়ানক ও শাপলাপুর এই পাঁচটি ইউনিয়নকে ওয়ার্ডটির অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে

ওয়ার্ড নং – ৩ ঃ মহেশখালী পৌরসভাসহ উপজেলার ৩ টি ইউনিয়নকে এই ওয়ার্ডের অন্তর্ভূক্ত করা হলেও বড় মহেশখালী ইউনিয়নের কোন জনপ্রতিনিধি ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবেন না। শুধুমাত্র ছোট মহেশখালী এবং কুতুবজোম ইউনিয়নের জনপ্রতিনিধিরা তাঁদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবেন।

ওয়ার্ড নং- ৪ ঃ পেকুয়া উপজেলার ৬ টি ইউনিয়নকে এই ওয়ার্ডের অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে। ইউনিয়নগুলোর মধ্যে রয়েছে মগনামা, উজানটিয়া, পেকুয়া সদর, রাজাখালী, টৈটং, এবং বারবাকিয়া।

ওয়ার্ড নং- ৫ ঃ পেকুয়া উপজেলার শিলখালী ইউনিয়নসহ চকরিয়া উপজেলার হারবাং, বরইতলী, কৈয়ারবিল, ভেউলা মানিকচর এই চারটি ইউনিয়ন ওয়ার্ডটির অন্তর্ভূক্ত।

ওয়ার্ড নং- ৬ ঃ চকরিয়া উপজেলার ৬ টি ইউনিয়নকে ওয়ার্ডটির অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে। ইউনিয়নগুলো হচ্ছে, কোনাখালী, ঢেমুশিয়া, বদরখালী, পশ্চিম বড় ভেওলা, পূর্ব বড় ভেওলা এবং শাহারবিল ইউনিয়ন।

ওয়ার্ড নং- ৭ ঃ চকরিয়া পৌরসভাসহ উপজেলাটির ৪ টি ইউনিয়ন এই ওয়ার্ডের অন্তর্ভূক্ত। ইউনিয়নগুলো হচ্ছে, চিরিংগা, লক্ষ্যারচর, কাকারা এবং সুরাজপুর-মানিকপুর।

ওয়ার্ড নং-৮ ঃ চকরিয়া উপজেলার ৪টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত হয়েছে এই ওয়ার্ড। বমুবিলছড়ি, ফাঁসিয়াখালী, ডুলাহাজারা এবং খুটাখালী ইউনিয়ন হচ্ছে এই চারটি ইউনিয়ন।

ওয়ার্ড নং-৯ ঃ কক্সবাজার সদর উপজেলার ৫টি ইউনিয়ন এই ওয়ার্ডের অন্তর্ভূক্ত। ইউনিয়নগুলো হচেছ, ইসলামপুর, পোকখালী, ইসলামাবাদ, ঈদগাঁও, এবং জালালাবাদ।

ওয়ার্ড নং – ১০ ঃ কক্সবাজার পৌরসভাসহ সদর উপজেলার খুরুশ্কুল, ঝিলংজা, পিএমখালী এবং চৌফলদ-ী এই ৪টি ইউনিয়ন ওয়ার্ডটির অন্তর্ভূক্ত।

ওয়ার্ড নং- ১১ ঃ কক্সবাজার সদর উপজেলার ভারুয়াখালী ইউনিয়নসহ রামু উপজেলার ৩ টি ইউনিয়ন নিয়ে এই ওয়ার্ড গঠন করা হয়েছে। রামুর ইউনিয়নগুলো হচ্ছে, রশিদ নগর, জোয়ারিয়ানালা এবং ফতেখাঁরকুল।

ওয়ার্ড নং-১২ ঃ রামু উপজেলার ঈদগড়, গর্জনিয়া, কচ্ছপিয়া এবং কাউয়ারখোপ এই চারটি ইউনিয়ন নিয়ে ওয়ার্ডটি গঠন করা হয়েছে।

ওয়ার্ড নং -১৩ ঃ রামু উপজেলাধীন ৪ টি ইউনিয়ন নিয়ে ওয়ার্ডটি গঠন করা হয়েছে। ইউনিয়নগুলো হচ্ছে, চাকমারকুল, রাজারকুল, দক্ষিণ মিঠাছড়ি এবং খুনিয়া পালং।

ওয়ার্ড নং- ১৪ ঃ টেকনাফ উপজেলার হোয়াইক্যং ইউনিয়নসহ পুরো উখিয়া উপজেলার ৫ টি ইউনিয়ন নিয়ে এই ওয়ার্ড গঠন করা হয়েছে।

ওয়ার্ড নং ১৫ ঃ টেকনাফ পৌরসভাসহ উপজেলাটির ৫ টি ইউনিয়ন নিয়ে এই ওয়ার্ড গঠন করা হয়েছে। ইউনিয়নগুলো হলো, হ্নীলা, টেকনাফ সদর, সাবরাং, বাহারছড়া, এবং সেন্টমার্টিন।

অন্যদিকে সংরক্ষিত নারী সদস্যওয়ার্ডের সীমানা হিসেবে উল্লিখিত ওয়ার্ডগুলোর সংখ্যার ক্রমানুসারে প্রতি তিনটি ওয়ার্ডকে একটি ওয়ার্ডে ভাগ করে সীমানা নির্ধারণ করা হয়েছে।

পাঠকের মতামত: