ঢাকা,শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪

মিয়ানমার সিমান্তবর্তী সাগর এখন জেলেদের জন্য আতঙ্কের

fishingনিজস্ব প্রতিবেদক, কক্সবাজার :::

নাফ নদী আর মিয়ানমার সিমান্তবর্তী সাগর এখন জেলেদের জন্য আতঙ্কের নাম হয়ে দাড়িয়েছে। মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) সদস্যরা বার বার জেলেদের অপহরণ করে নিয়ে যাওয়ায় এখন মাছ ধরতে যাওয়া জেলেদের মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করছে।
মিয়ানমারের বিজিবির ভয়ে এখন নাফ নদী ও বঙ্গোপসাগরের মিয়ানমার সিমান্তবর্তী এলাকায় বাংলাদেশি জেলেদের মাছ ধরা বলতে গেলে বন্ধ রয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার টেকনাফের কয়েকটি নৌঘাটে ঘুরে দেখা যায় অধিকাংশ জেলেরা নদী ও সাগরে মাছ শিকার করতে যাচ্ছেনা। ফলে এসব জেলেদের পরিবারে নেমে এসেছে দূর্দিন জীবন-যাপন করতে হচ্ছে মানবেতর।
টেকনাফের জেলে আবদুল শুক্কুরের জানান,  মিয়ানমার সিমান্তবর্তী নদী ও সাগরে নেমে মিয়ানমার বিজিপির সদস্যরা জেলেদের লক্ষ্য করে গুলি বর্ষন করছে। গুলিবর্ষনের ভয়ে জেলেরা এখন মাছ শিকার করা বন্ধ করে দিয়েছে।
তিনি আরে বলেন, গত কয়েকদিন আগে নদী ও সাগরে মাছ ধরার সময়  বাংলাদেশি বেশ কয়েকজন জেলেকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে অপহরণ করে নিয়ে গেছে মিয়ানমারের বিজিপি। তাদের এখনো কোন খোজঁ খবর নেই। স্বজনদের ফিরে পেতে আহাজারি করছে অপহৃত জেলেদের পরিবার পরিজন।
ভয়ে ও আতঙ্কে মাছ শিকার বন্ধ থাকায় জেলেদের অলস সময় কাটছে। মাছ ধরা বন্ধ থাকায় জেলেদের আয় উপার্জনও কমে গেছে।
বিজিবি ও স্থানীয় জেলেদের ভাষ্য মতে, কয়েকদিন আগে নদী ও সাগরে মাছ শিকারে যাওয়া বার জেলেকে অস্ত্রের মুখে অপহরন করে মিয়ানমার (বিজিপি) পুলিশ। গত ১১ নভেম্বর রাতে মাছ শিকারে সময় অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে নাফ নদীতে তিন জেলেকে অপহরণ করে মিয়ানমার বিজিপি। তারা হলেন-আবদুর রহমান, মো. ইউনুস ও মো. খালেক। তারা সবাই টেকনাফ পৌরসভার বাসিন্দা বলে জানা গেছে। ৯ নভেম্বর সেন্ট মার্টিন উপকূলে সাগরে মাছ শিকারের সময় একটি নৌকাসহ আরো ছয় জেলে বিজিপির হাতে অপহরণ হন। এরা হলেন- আবদুল হামিদ, ফজল আহমদ, মোহাম্মদ হাশিম, মোহাম্মদ সাদ্দাম, মোহাম্মদ হোসাইন ও রশিদ উল্লাহ। এরা সবাই সেন্টমার্টিন ও শাহপরীর দ্বীপের বাসিন্দা বলে জানা গেছে। এর আগে ৩ নভেম্বর সন্ধ্যায় নাফ নদী থেকে টেকনাফের তিন জেলেসহ একটি নৌকা ধরে নিয়ে যায় মিয়ানমার পুলিশ। তারা হলেন- মো. হামিদ হোসেন, মো. ইসমাঈল, নূর হোসেন। অপহরণ আতঙ্কে হোয়াইক্যং, হ্নীলা, পৌরসভার জালিয়াপাড়া, শাহপরীর দ্বীপ, সেন্ট মার্টিনের জেলেরা এখন নদী ও সাগরে মাছ শিকারে যাচ্ছেনা।
হ্নীলার জাদিমুড়ার জেলে আবদুর রহিম জানান, নদীতে মিয়ানমারের বিজিপির অপহরণ ও গুলি বর্ষনে আতঙ্কে মাছ শিকারে যাচ্ছি না। ধরে নিয়ে যাওয়া বাংলাদেশি জেলেদের মিয়ানমারে কারাগারে পাঠানো হয়েছে বলে শুনেছি এবং নদীতে বিজিপির টহলও রয়েছে।
টেকনাফ বোট মালিক সমিতির সভাপতি আবদুল জলিল জানান, জেলে অপহরণের ঘটনায় জেলেদের মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করছে। তাঁরা মাছ ধরতে নদী ও সাগরে নামছেন না। অপহরণ হওয়া জেলেদের ফেরত আনা না গেলে জেলেদের এ আতঙ্ক দূর হবে না।
সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুর আহমেদ জানান, দ্বীপ থেকে থেকে সাগরে মাছ ধরতে যাচ্ছেনা জেলেরা । কেননা এর আগে সাগরে মাছ ধরার সময় অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে ছয় জেলেকে অপরহণ করে মিয়ানমার পুলিশ। এদের কোন খোজঁ খবর পায়নি তাদের পরিবার । এ আতঙ্কে জেলেরা সাগরে মাছ শিকারে যাচ্ছেনা।
এ প্রসঙ্গে টেকনাফ ২ বিজিবির অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আবুজার আল জাহিদ বলেন, জেলেদের অপহরণের বিষয়টি নিশ্চিত করেছে মিয়ানমার কতৃপক্ষ। এ ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে জেলেদের ফেরত চেয়ে বিজিপিকে অবহিত করা হয়েছে এবং তাদের ফিরিয়ে আনার চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।

পাঠকের মতামত: