ঢাকা,শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪

চকরিয়ায় জলদাশ পরিবারের দাবি: মৎস্যজীবি নেতা ত্রাণ সহায়তা দেয়ার কথা বলে স্বাক্ষর নেয়ার অভিযোগ

chakaria-picture-11-11-2016এম.জিয়াবুল হক, চকরিয়া ::

চকরিয়ায় মৃতৃকালীন ভাতা প্রদানে টাকা আদায়ের অভিযোগ জেলা মৎস্য কর্মকর্তার কাছে দায়ের করা লিখিত অভিযোগটি ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছেন ভুক্তভোগী সংখ্যালঘু জেলে পরিবারের পাঁচ গৃহকর্ত্রী। শুক্রবার বিকেলে চকরিয়া প্রেসক্লাবে এসে সাংবাদিকদের কাছে এমন অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী পরিবারের গৃহকর্ত্রী ছাইরাখালী জলদাশ পাড়া গ্রামের মৃত সোনারাম জলদাশের স্ত্রী রসবালা জলদাশ, মৃত মিন্টু জলদাশের স্ত্রী গান্ধী জলদাশ, মৃত আরজুন জলদাশের স্ত্রী শেফালী বালা জলদাশ, মৃত লক্ষীপদ জলদাশের স্ত্রী ফুলবালা জলদাশ ও মৃত অলধর জলদাশের স্ত্রী নিত্যখুশি জলদাশ।

ভুক্তভোগী পাঁচ গৃহকর্ত্রী সাংবাদিকদের জানান, উপজেলার ফাসিয়াখালী ইউনিয়নের ছাইরাখালী জলদাশ পাড়া গ্রামের সংঘ্যালঘু জেলে পরিবারকে স্বামীর মৃতুকালীন ভাতা প্রদানে উপজেলা মৎস্য বিভাগের হিসাব রক্ষক শহিদ ও জেলে সম্প্রদায়ের নেতা হরিসেন জলদাশের বিরুদ্ধে প্রত্যেক পরিবার থেকে পাঁচ হাজার টাকা করে ২৫ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগে ইতোপুর্বে কক্সবাজার জেলা মৎস্য কর্মকর্তার কাছে দায়ের করা লিখিত অভিযোগ এবং অভিযোগের প্রেক্ষিতে প্রকাশিত সংবাদ মুটেও সঠিক নয়। কারন আমরা প্রত্যেক পরিবার মৎস্য বিভাগ থেকে দেয়া চেকের বিপরীতে ব্যাংক থেকে ৫০ হাজার টাকা উত্তোলন করেছি এবং সেখান থেকে কোন ধরণের টাকা কাউকে দিইনি। এমনকি কক্সবাজার জেলা মৎস্য কর্মকর্তার কাছে আমাদের নামে দায়ের করা অভিযোগ কিংবা সংবাদের ব্যাপারে আমাদের কোন ধরণের সম্পৃক্ততা নেই। এব্যাপারে আমরা কিছুই জানিনা।

উপজেলার ফাসিয়াখালী ইউনিয়নের ছাইরাখালী জলদাশ পাড়া গ্রামের মৃত অলধর জলদাশের স্ত্রী নিত্যখুশি জলদাশ জানান, কয়েকদিন আগে দুপুরে আমি বাড়িতে ঘুমিয়ে ছিলাম। ওইসময় ছাইরাখালী জলদাশ পাড়া গ্রামের বাসিন্দা প্রতিবেশি জয় মঙ্গল জলদাশের ছেলে চিত্রসেন জলদাশ ও মৃত শীরাম জলদাশের ছেলে নাতুরাম জলদাশ বাড়িতে এসে আমার বাবার মাধ্যমে আমাকে ঘুম থেকে জাগিয়ে তুলে। এসময় তাঁরা আমাকে একটি কাগজে স্বাক্ষর দিতে বলে। আমি তখন কাগজটি পড়ে দেখি সেখানে উপজেলা মৎস্য বিভাগের হিসাব রক্ষক শহিদ ও জেলে সম্প্রদায়ের নেতা হরিসেন জলদাশের বিরুদ্ধে নানা ধরণের অভিযোগ লেখা হয়েছে। এতে আমি আপত্তি জানিয়ে ওই কাগজে স্বাক্ষর দিয়নি। মৃত লক্ষীপদ জলদাশের স্ত্রী ফুলবালা জলদাশ জানান, আমি লেখাপড়া জানিনা। কিন্তু তাঁরা আমাকে একটি কাগজে স্বাক্ষর দিতে বললে বিষয়টি আমার কাছে সন্দেহজনক মনে হওয়ায় এতে স্বাক্ষর দিইনি। মৃত সোনারাম জলদাশের স্ত্রী রসবালা জলদাশ, মৃত মিন্টু জলদাশের স্ত্রী গান্ধী জলদাশ, মৃত আরজুন জলদাশের স্ত্রী শেফালী বালা জলদাশ জানান, আমরা মৎস্য বিভাগের হিসাব রক্ষক শহিদ ও জেলে সম্প্রদায়ের নেতা হরিসেন জলদাশের বিরুদ্ধে কোথাও কোন ধরণের অভিযোগ করিনি এবং এ ধরণের কোন কাগজে স্বাক্ষর দিইনি। তবে এলাকার কয়েকজন মৎস্যজীবি নেতা আমাদের কাছ থেকে স্বাক্ষর নিয়েছিলো ত্রাণ সহায়তা পাইয়ে দেয়ার কথা বলে। স্বাক্ষর নিলেও আমরা ত্রাণ পাইনি। পরে শুনেছি আমাদের কাছ থেকে নেয়া স্বাক্ষর সম্বলিত কাগজ ব্যবহার করে তাঁরা মৎস্য বিভাগের হিসাব রক্ষক শহিদ ও জেলে সম্প্রদায়ের নেতা হরিসেন জলদাশের বিরুদ্ধে কাল্পনিক অভিযোগ দায়ের করেছে। এ ঘটনায় আমরা অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনগত প্রতিকার দাবি করছি প্রশাসনের কাছে।

ছাইরাখালী গ্রামের জেলে সম্প্রদায়ের নেতা হরিসেন জলদাশ জানান, আমি কোন ধরণের অনিয়মের সাথে জড়িত নই। তার প্রমাণ ভুক্তভোগী পাঁচ পরিবারের গৃহকর্ত্রীরা তাদের বক্তব্যে তুলে ধরেছেন। সেখানে কাউকে কোন ধরণের টাকা তাঁরা দেয়নি বক্তব্যে তা প্রমাণিত হয়েছে। আমি বা উপজেলা মৎস্য বিভাগের হিসাব রক্ষক শহিদ এ ঘটনায় কোনমতেই জড়িত নই। হরিসেন জানান, সাজানো অভিযোগ দায়ের করে মুলত আমাকে ফাঁসানোর চেষ্টা করা হয়েছে একটি কারনে। তা হচ্ছে ছাইরাখালী জলদাশ পাড়া গ্রামে ইসিএফসি নামে পুরুষদের একটি সমিতি আছে। আমি উক্ত সমিতির সাবেক ক্যাশিয়ার। বর্তমান কমিটির নেতা মদন জলদাশ, চিত্রসেন জলদাশ ও নাতুরাম জলদাশ ১৪বছর ধরে সমিতি পরিচালনা করে আসলেও তাঁরা কোন ধরণের হিসাব দিচ্ছেনা। এ অবস্থার প্রেক্ষিতে আমি গত ৭ নভেম্বর তিনজনকে অভিযুক্ত করে চকরিয়া উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তার কাছে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করি। মুলত এ ঘটনার জের ধরে প্রতিশোধ নেয়ার জন্যই এ তিনজন মিলে চক্রান্তের মাধ্যমে সাজানো অভিযোগ দায়ের করে পত্রিকায় ভিত্তিহীন সংবাদ গুলো প্রচারের ব্যবস্থা নিয়েছে।

অভিযোগ অস্বীকার করে চকরিয়া উপজেলা মৎস্য বিভাগের হিসাব রক্ষক শহিদ বলেন, স্বামীর মৃতৃকালীন ভাতা বাবত ৫০ হাজার টাকার একটি করে চেক আনুষ্টানিকভাবে উপজেলা পরিষদের সম্মেলন কক্ষে জেলে পরিবারের পাঁচ গৃহকর্ত্রীর হাতে তুলে দেন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। ওইদিনই তাঁরা ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলন করে বুঝে নিয়েছেন। এখানে তাদের কাছ থেকে টাকা আদায় করার যেই অভিযোগটি আমার নামে উপস্থাপন করা হয়েছে তা একেবারে ভিত্তিহীন ও বানোয়াট। তিনি বলেন, ছাইরাখালী গ্রামে জলদাশ পরিবারের পুরুষদের একটি সমিতির হিসাব নিকাশের বিরোধকে কেন্দ্র করে প্রতিপক্ষের লোকজন হরিসেন নামের জলদাশ নেতাকে ঘায়েল করতে গিয়ে আমাকেও জড়িয়ে দিয়েছে। তদন্ত করলে আসল থলের বিড়াল বেড়িয়ে আসবে।

পাঠকের মতামত: