ঢাকা,শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪

পেকুয়ায় জায়গা এস.আলম গ্রুপের দখলে নিতে তিন গ্রুপের অস্ত্রের মহড়া

astrer-mohdaপেকুয়া প্রতিনিধি :::

কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলার মগনামা ইউনিয়নের দক্ষিন মগনামা এলাকায় এস.আলম গ্রুপের প্রায় তিনশত একর জমির আধিপাত্য নিতে গত মঙ্গলবার (২৫ অক্টোবর) বিকেলে স্থানীয় দু’পক্ষের মধ্যে ধাওয়া ও পাল্টা ধাওয়া হয়েছে। প্রায় সাতশত কানি লবন চাষের জমি দখলকে কেন্দ্র করে উপজেলার মগনামা ইউনিয়নের দক্ষিন মগনামা এলাকায় উত্তেজনা চরম আকার ধারন করে। জমি দখলে নিতে গত দু’দিন ধরে দু’পক্ষের মধ্যে মুখোমুখি অবস্থান দেখা দিয়েছে। কুতুবদিয়া চ্যানেল সংশ্লিষ্ট দক্ষিন মগনামা এলাকায় চট্টগ্রামের এস.আলম গ্রুপের মালিকানাধীন সম্পত্তির নিয়ন্ত্রনভার প্রতিষ্টা করতে বিএনপি ও ক্ষমতাসীনদল আওয়ামীলীগের একাংশের মধ্যে ঐক্যমত তৈরি হয়েছে। ধাওয়া ও পাল্টা ধাওয়াকে কেন্দ্র করে মগনামা ইউনিয়নে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতির দিকে ধাবিত হচ্ছে। জমি দখলে নিতে উভয়পক্ষ ভাড়াটে সন্ত্রাসী জড়ো করে। খবর পেয়ে পেকুয়া থানা পুলিশ দফায় দফায় ওই স্থান পরিদর্শন করেছেন। উত্তেজনা প্রশমিত করতে প্রশাসন, ক্ষমতাসীনদলের ইউনিয়নের নেতৃবৃন্দ ও ইউপি চেয়ারম্যানের সমন্বয়ে সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা দু’পক্ষকে নিয়ে দক্ষিন মগনামা কাজিবাজারে বৈঠক করে। তবে বৈঠকে কোন ধরনের ফলপ্রসু নিশ্চিত করা যায়নি। এদিকে এস.আলম গ্রুপের স্বত্তাধিকারী শিল্পপতি সাইফুল ইসলাম চৌধুরী মাসুদের মালিকানাধীন এসব সম্পত্তি আধিপাত্য নিতে মগনামা ইউনিয়নে তিনটি পক্ষ তৈরি হয়েছে। একটি পক্ষের নেতৃত্ব দিচ্ছেন বিএনপির নেতারা। অপর একটি গ্রুপের নেতৃত্বে রয়েছেন ক্ষমতাসীন দলের একটি অংশ। এ অংশের নেতৃত্ব দিচ্ছেন ইউনিয়ন আ’লীগের সাধারন সম্পাদক রশিদ আহমদ। অপরদিকে বিএনপির দু’টি অংশে তৈরি হয়েছে জমি দখলকে ঘিরে। একটি অংশের নেতৃত্ব দিচ্ছেন উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও সদর ইউপির চেয়ারম্যান এম.বাহাদুর শাহ, মগনামা ইউনিয়ন বিএনপির সি.সহ সভাপতি রিদুয়ানুল হক। অপর অংশের নেতৃত্বে রয়েছেন মগনামা ইউনিয়ন বিএনপির সাধারন সম্পাদক কালারপাড়া এলাকার বাসিন্দা হারুনুর রশিদ মানিক, মগনামা ইউপির চেয়ারম্যান শরাফুত উল্লাহ ওয়াসিম, বিএনপির অপর নেতা আশফাকুল হক লিটন। ক্ষমতাসীনদলের সাধারন সম্পাদক রশিদ আহমদের নেতৃত্বে এঅংশটি পেকুয়া সদরের চেয়ারম্যান ও উপজেলা বিএনপির সভাপতি এম.বাহাদুর শাহ ও রিদুয়ানুল হক নেতৃত্বাধীন অংশের সাথে ঐক্যমতে পৌঁছেছেন। তারা এস.আলমের জমিতে লবন উৎপাদনের জন্য মাঠ তৈরির কাজ চালাতে চাষা নিয়োগ করেন। ওইদিন বিকেলে ২০/৩০জনের চাষীরা মাঠ প্রস্তুতির কাজ করছিলেন। এসময় বিএনপি নেতা হারুনুর রশিদ, আশফাকুল হক লিটন, সাজিব সহ লোকজন বাধা দেয়। এসময় দু’পক্ষের মধ্যে ধাওয়া ও পাল্টা ধাওয়া হয়েছে। স্থানীয় সুত্রে জানাগেছে, কাকপাড়া অংশে এস.আলম গ্রুপের প্রায় তিনশত কানি জমি জবর দখল নিয়েছেন মগনামার ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান ও জাতীয় পার্টি নেতা মো.ইউনুছ চৌধুরী। গত তিন বছর ধরে এস.আলমের বিপুল সম্পত্তি তার নিয়ন্ত্রনে রয়েছে। প্রতিবছর লবন মৌসুমে জমি দখলকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা দেখা দিয়ে আসছে। বর্তমানে ওই জায়গা নিয়েও সংঘর্ষের আশংকা দেখা দিয়েছে। মগনামা ইউপির সদস্যরা জানায়, এস.আলম গ্রুপের পক্ষ থেকে তাদের সম্পত্তি দেখভাল ও লাগিয়াত করার জন্য স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান শরাফুতুল্লাহ ওয়াসিমকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। বিপুল সম্পত্তি পরিচর্যার জন্য এস.আলম গ্রুপ ওই জায়গায় একটি অফিস তৈরির উদ্যেগ নিয়েছেন। নির্মাণ কাজেরও দায়িত্ব পেয়েছেন ইউপি চেয়ারম্যান শরাফত উল্লাহ ওয়াসিম। গেল ঘুর্ণিঝড় রোয়ানুর সময় বিধ্বস্থ হয় বেড়িবাঁধ। বাঁধ সংস্কার করে সমুদ্রের করাল গ্রাস থেকে এস.আলম গ্রুপের বিপুল জমি রক্ষা পায়। এস.আলম গ্রুপ কাজ বাস্তবায়নের জন্য চেয়ারম্যান ওয়াসিমকে অনুরোধ করেন। এসুবাধে তার ব্যক্তিগত টাকা থেকে এ কাজ এগিয়ে নেন। কথা ছিল জমির আয়ের উৎস থেকে ব্যয় ভার বহন করা হবে। এদিকে চলতি লবন মৌসুম শুরুর দ্বার প্রান্তে মগনামা ইউনিয়নে জমি দখলে নিতে ত্রি-পক্ষীয় সংঘাত দেখা দিয়েছে। এব্যাপারে মগনামা ইউপির চেয়ারম্যান শরাফত উল্লাহ ওয়াসিম জানিয়েছেন, মালিক পক্ষ জমি দেখভাল করতে আমাকে দায়িত্ব দিয়েছেন। কিন্তু বিএনপি নেতা রিদুয়ানুল হক ও আ’লীগ নেতা রশিদ আহমদ গায়ের জোরে জমি দখলের উৎসবে মেতেছে। রিদুয়ানুল হক ইতিমধ্যে অস্ত্রশস্ত্র মজুদ করেছে। তারা ভাড়াটে লোকজন নিয়ে স্বশস্ত্র মহড়া দিচ্ছে। এলাকায় তৈরি হয়েছে ভীতি। এব্যাপারে পেকুয়া থানার ওসি জিয়া মো.মোস্তাফিজ ভুঁইয়া বলেন, পরিস্থিতি অবনতির আশংকায় পুলিশ ওই স্থান পরিদর্শন করেছেন। সন্দেভাজন একজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিয়ে আসা হয়। পরে ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতির জিম্মায় তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়। এস.আলম গ্রুপ জমির দায়িত্ব দিয়েছেন ওয়াসিম চেয়ারম্যানকে। সাবেক যারা দায়িত্বে ছিলেন তারা ওইদিন মাঠে চাষা নামায়। চেয়ারম্যান বাধা দিলে দু’পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দিয়েছিল। বর্তমানে পরিস্থিতি সহনশীল পর্যায়ে আছে।

পাঠকের মতামত: