ঢাকা,সোমবার, ৬ মে ২০২৪

চকরিয়া থানার এসআই আনোয়ারের বিরুদ্ধে ইয়াবা দিয়ে মাইক্রোবাস মালিক ও চালককে ফাঁসানোর অভিযোগ, সাংবাদিকদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ

chakaria-pic-anwar-hossen-13-10-16এম মনছুর আলম, চকরিয়া :::
মাত্র ১৫ হাজার টাকার বিনিময়ে ইয়াবা উদ্ধারের নাটক রচনা করেছেন কক্সবাজারের চকরিয়া থানার এসআই আনোয়ার হোসেন। ইয়াবা কারবারির সঙ্গে আঁতাত করে এক মাইক্রোবাসের চালক ও মালিককে হয়রানির উদ্দেশ্যে ঈদগাঁওস্থ কক্সবাজার জেলা হাইয়েজ-কার মালিক সমিতির (রেজি. নং-চট্ট-২১৭১) কতিপয় নেতার যোগসাজসে এসআই আনোয়ার হোসেন এ ঘটনার জন্ম দেন বলে গুরুতর অভিযোগ পাওয়া গেছে।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুর দেড়টার দিকে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের চকরিয়ার খুটাখালী ইউনিয়ন পরিষদের সামনে ব্যারিকেড দিয়ে যাত্রীবাহী একটি মাইক্রোবাস (হাইয়েজ) থামিয়ে যাত্রীদের নামিয়ে দিয়ে তল্লাশীর নামে নির্দিষ্ট সিটের নিচ থেকে মাত্র ৮০ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট উদ্ধার করেন এসআই আনোয়ার হোসেনসহ সঙ্গীয় পুলিশ। এর পর মাইক্রোবাসের সব যাত্রীদের নামিয়ে দিয়ে শুধুমাত্র  চালককে আটক করে থানায় নিয়ে আসে পুলিশ।
অভিযানে যাওয়ার সময় এসআই আনোয়ার হোসেনের সঙ্গে থাকা একজন প্রত্যক্ষদর্শী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘মাইক্রোবাস থেকে ইয়াবা উদ্ধারের ঘটনাটি পুরোপুরি সাজানো নাটক। যখন পুলিশ ওই গাড়ি ব্যারিকেড দিয়ে থামায় তার কিছুক্ষণ আগেই একটি মোটর সাইকেলযোগে ঈদগাঁও থেকে দুইজন ব্যক্তি এসে এসআই আনোয়ার হোসেনকে জানায়, চট্টমেট্টো-চ-১১-৩১৪৯ নম্বর মাইক্রোবাসের তৃতীয় সিটে একটি পুটলায় কিছু ইয়াবা রাখা আছে। এর পর পরই গাড়িটি খুটাখালী ইউনিয়ন পরিষদের সামনে আসলে ব্যারিকেড দিয়ে থামিয়ে দিয়ে গাড়ি থেকে যাত্রীদের নামিয়ে দিয়ে নির্দিষ্ট সীটের নিচ থেকে একটি পুটলা উদ্ধার করে। এ সময় গাড়ি ও চালককে এসব ইয়াবাসহ থানায় নিয়ে যায়।’
আটককৃত মাইক্রোবাসের চালকের নাম আবু তাহের (৩১)। তিনি চকরিয়া উপজেলার খুটাখালী ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের গর্জনতলী গ্রামের মাহবুব উল আলমের পুত্র।
জানা গেছে, সদর উপজেলার ঈদগাঁওস্থ কক্সবাজার জেলা হাইয়েজ-কার মালিক সমিতির (রেজি. নং-চট্ট-২১৭১) নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছেনা গত ৬ মাস ধরে। এনিয়ে মালিকপক্ষের মধ্যে বিরোধ চলছিল। এরইমধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য আটককৃত নম্বরের মাইক্রোবাসটির মালিক মোজাফ্ফর আহমদসহ আরো কয়েকজন গাড়ির মালিক মিলে যথাসময়ে নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্পন্ন করার জন্য অন্যান্য মালিককে সংগঠিত করে আসছিল। কিন্তু বর্তমানে দায়িত্বে থাকা এডহক কমিটির সংশ্লিষ্টরা বিষয়টি ভালভাবে না নিয়ে মাইক্রোবাস মালিক মোজাফ্ফরকে হয়রানির উদ্দেশ্যে নানা ষড়যন্ত্র করতে থাকে। এরই অংশ হিসেবে ইয়াবা কারবারিদের সঙ্গে আঁতাত করে যাত্রীবেশে দুই ব্যক্তি মাইক্রোবাসে উঠে তৃতীয় সিটের নিচে ইয়াবার পুটলাটি ঢুকিয়ে দেয়।
কক্সবাজার জেলা হাইয়েজ-কার শ্রমিক ইউনিয়নের বর্তমান সভাপতি সেলিম আকবর এ খবর পেয়ে থানায় শ্রমিক নেতাদের নিয়ে উপস্থিত হন আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায়। পরে বিষয়টি তারা থানার ওসিকে বিষয়টি অবহিত করেন।
এ সময় সেলিম আকবর বলেন, ‘ঈদগাঁওর দুই ব্যক্তি যাত্রীবেশে উঠে মাত্র ৮০ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট পলিথিনে মুড়িয়ে ওই মাইক্রোবাসের তৃতীয় সিটের নিচে ঢুকিয়ে দেয়। এর পর তারা ওই গাড়ি থেকে নেমে গিয়ে পুলিশের গাড়িতে উঠে পড়ে চকরিয়ার দিকে চলে আসে। এ সময় থানার এসআই আনোয়ার হোসেনের সঙ্গে তাদের ব্যবহৃত মুঠোফোনে এই তথ্য আদান-প্রদান হয়। বিষয়টি ঊর্ধতন কর্মকর্তারা তদন্ত করলে কথোপকথনসহ আসল রহস্য বেরিয়ে পড়বে।’
সেলিম আকবর আরো বলেন, ‘ঈদগাঁও থেকে যে দুই ব্যক্তি মোটর সাইকেলযোগে এসে এসআই আনোয়ার হোসেনকে খবর দেয় পরে তাদেরকে ওই পুলিশ কর্মকর্তার গাড়িতে দেখা যায়। এমনকি ওই দুইজনকেও চকরিয়া থানা সেন্টার এলাকায়ও ঘোরাফেরা করে এবং একাধিকবার এসআই আনোয়ার হোসেনের সঙ্গে কথা বলেন। এতে সন্দেহ আরো দানা বাঁধা আমাদের।’
সংগঠনের সাবেক সভাপতি সেলিম বাবুল বলেন, ‘আমাদের পক্ষ থেকে থানার ওসিকে বার বার বলা হয়েছে ইয়াবা উদ্ধারের ঘটনাটি পুরোপুরিই সাজানো। মূলত সংগঠনের নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য আটককৃত মাইক্রোবাসের মালিক মোজাফ্ফর আহমদ অন্য মালিকদের সংঘটিত করার কারণে তাকে হয়রানি করার উদ্দেশ্যে এই ঘটনা সাজানো হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে যদি পুলিশ অতিমাত্রায় বাড়াবাড়ি করে তাহলে কঠোর আন্দোলনে নামবো আমরা।’
এ বিষয়ে জানার জন্য কর্মরত বেশ কয়েকজন সাংবাদিক যোগাযোগ করা হয় অভিযুক্ত থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আনোয়ার হোসেনের সঙ্গে। এ সময় তিনি সাংবাদিকদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন। হুমকি দিয়ে বলেন, ‘এ নিয়ে বাড়াবাড়ি করলে সাংবাদিকদেরকেও দেখে নেবেন।’
চকরিয়া থানার ওসি মো. জহিরুল ইসলাম খান বলেন, ‘আমি ইতিমধ্যে যানবাহন মালিক ও শ্রমিক সংগঠনের সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বিস্তারিত আলাপ করেছি। অভিযানে যাওয়া এসআই আনোয়ার হোসেনকেও এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ করছি। যদি ঘটনা সাজানো হয়ে থাকে তাহলে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

পাঠকের মতামত: