ঢাকা,শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪

এত ইয়াবা কীভাবে আসে, কোথায় যায়?

yaba,নিউজ ডেস্ক::

ইয়াবায় সয়লাব সারা দেশ। দেশে গত পাঁচ বছরে মাদকদ্রব্য ইয়াবা পাচার ও ব্যবহার বেড়েছে ৮১ গুণ। একই সময়ে দেশে ইয়াবা আটকের পরিমাণ বেড়েছে ৫০ গুণ। মাদক সেবনকারী তরুণদের একটি বড় অংশের কাছে এখন সবচেয়ে বেশি চাহিদা ইয়াবার। মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রগুলোর জরিপেও তা-ই উঠে এসেছে। আসক্তির দ্বিতীয় স্থানে অবস্থান করছে হেরোইন। তবে প্রথম স্থানে অবস্থানকারী মরণ নেশা ইয়াবার সাথে তার যোজন ব্যবধান। মাদকাসক্তদের ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ ইয়াবায় আসক্ত। তৃতীয় স্থানে আছে গাঁজা, চতুর্থ স্থানে ফেনসিডিল। বছর কয়েক ধরে ইয়াবা যেভাবে মহামারী রূপ নিয়েছে তাতে বিশেষজ্ঞদের মতে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাঁড়াশী অভিযানের পাশাপাশি ইয়াবার কুফল সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে হবে। এটা প্রতিরোধ করা না গেলে তরুণ প্রজন্ম শেষ হয়ে যাবে। আজ যারা ইয়াবাসেবী, তাদের একটি নির্দিষ্ট অংশকে মুফতে ইয়াবা সেবনের টোপ দিয়ে ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে এ মরণঘাতী নেশা। তারাই পরবর্তীতে বিক্রেতা হিসেবে কাজ করছে সিন্ডিকেটের হয়ে। চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মো. সামসুল আরেফিন মাদকের বিরুদ্ধে পারিবারিক পর্যায়ে সচেতনতার বৃদ্ধির উপর গুরুত্ব দেন। তিনি বলেন, চাহিদা না থাকলে সরবরাহ কমে যাবে। তাই আমাদের উচিত শুরুতে নিজের সন্তানদের মাদকের বিরুদ্ধে সচেতন করে তোলা। সচেতন করে তুলতে পারলে মাদকের ভয়াবহতা থেকে আমরা আমাদের পরবর্তী প্রজন্মকে রক্ষা করতে পারব।

পাগলা ওষুধ ইয়াবা এখন ক্রেজ : মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের প্রস্তুত করা এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, আশির দশকে দেশে হেরোইন ভয়াবহভাবে ছড়িয়েছিল। ওই দশকের শেষ দিকে আসে ফেনসিডিল। নব্বই দশকের শেষে মাদক হিসেবে ইয়াবা প্রথম ধরা পড়লেও তখন এটিকে তেমন গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করা হয়নি। অথচ এখন দেখা যাচ্ছে- চট্টগ্রামসহ সারা দেশে মাদকসেবীদের মধ্যে অর্ধেকেরও বেশি ইয়াবা আসক্ত।

থাই ভাষায় ইয়াবা মানে ক্রেজি মেডিসিন বা পাগলা ওষুধ। ইয়াবা এক ধরনের মাদক যা হেরোইনের চেয়ে ভয়াবহ এবং হেরোইনের বিকল্প হিসেবে ব্যবহূত হয়। ইয়াবার মূল উপাদান মেথ্যাম ফিটামিন ও সঙ্গে থাকে উত্তেজক পদার্থ ক্যাফিন। ২৫ থেকে ৩৫ মিলিগ্রাম মেথ্যাম ফিটামিনের সঙ্গে ৪৫ থেকে ৬৫ মিলিগ্রাম ক্যাফিন মিশিয়ে তৈরি এ ট্যাবলেটের রং সাধারণত সবুজ বা লালচে কমলা হয়ে থাকে। ইয়াবা ট্যাবলেটের স্বাদ যে কাউকে আকৃষ্ট করতে পারে। সেবনের পর ধরা পড়ার আশঙ্কাও থাকে না।বর্তমানে মানের দিক থেকে বিভিন্ন ধরনের ইয়াবা পাওয়া যাচ্ছে। এর ফলে ইয়াবা আসক্তের মধ্যে দিনমজুর থেকে ধনাঢ্য পরিবারের সন্তান পর্যন্ত নানা শ্রেণির মানুষের খোঁজ মিলছে। ইয়াবা ব্র্যান্ডের এসওয়াই, এনওয়াই ও ডব্লিউওয়াই নামের আরও তিনটি ট্যাবলেট বাজারে পাওয়া যায়। তবে এখন চার রকমের ইয়াবা বিক্রি হচ্ছে। এরমধ্যে গাঢ় লাল রঙের ‘চম্পা’ প্রতি পিস খুচরা ২০০ থেকে ২৩০ টাকায় বিক্রি হয়। টেকনাফে এটি কেনা হয় ১২০ থেকে ১৫০ টাকায়। হালকা গোলাপী রঙের ‘আর সেভেন’ ইয়াবার দাম সবচেয়ে বেশি। এটি কমপক্ষে ৫০০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে। হালকা গোলাপী রঙের আরেক ধরনের ইয়াবার নাম ‘জেপি’। এর খুচরা মূল্য ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা। ‘ডগ’ নামের মাটি রঙের ইয়াবা বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ২৫০ টাকায় প্রতিটি। এছাড়াও বিভিন্ন উপাদান মিশিয়ে দেশেই তৈরি হচ্ছে আরেক ধরনের ভেজাল ইয়াবা। এগুলো ১৫০ থেকে ১৭০ টাকায় পাওয়া যায়।

ইয়াবার বাজার এখন বাংলাদেশ : মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কয়েকজন কর্মকর্তার মতে, মিয়ানমার থেকে ইয়াবার চালান বেশি আসছে, ধরাও পড়ছে। কিন্তু ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। সীমান্ত দিয়ে প্রতি মাসে দেশে আসছে ১৫০ কোটি টাকার ইয়াবা। বাংলাদেশে ইয়াবার বাজার ১২ থেকে ১৫ হাজার কোটি টাকার। চীন ও থাইল্যান্ড একসময় ইয়াবার বড় বাজার ছিল। কিন্তু ২০০০ থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত ওই দেশ দুটি ইয়াবার বিরুদ্ধে ব্যাপক অভিযান শুরু করে। অনেক ইয়াবা ব্যবসায়ীকে হত্যাও করা হয়। সেখানে এখন ইয়াবার বাজার পড়ে গেছে। এখন বাংলাদেশই এর বড় বাজার।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ও সংশ্লিষ্ট অন্যান্য সূত্রে জানা যায়, ২০১০ সালে বছরজুড়ে দেশে ইয়াবা কেনাবেচা হতো চার কোটির মতো। মাত্র পাঁচ বছরের ব্যবধানে ২০১৪ সালে তা ২৮ কোটি ছাড়িয়ে গেছে। অর্থাৎ এ সময়ে ব্যবহার বেড়েছে ৭০১ শতাংশের বেশি। অন্যদিকে ২০০৯ সালে ইয়াবা আটকের পরিমাণ ছিল ১ লাখ ২৯ হাজারটি। আর ২০১৪ সালে ইয়াবা আটকের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৬৫ লাখ ১২ হাজারটি। পাঁচ বছর আগের চেয়ে যা প্রায় ৪ হাজার ৯২৪ শতাংশ বেশি। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর থেকে পাওয়া তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, প্রতিবছর যে পরিমাণ ইয়াবা আটক হচ্ছে, তার চেয়ে ৪২ গুণেরও বেশি ক্রেতাদের কাছে পৌঁছে যাচ্ছে। ২০১৪ সালে অধিদপ্তর ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে আটক ইয়াবার পরিমাণ ৬৫ লাখের কিছু বেশি। অথচ এ সময়ে কমপক্ষে ২৬ কোটি ইয়াবা দেশে কেনাবেচা হয়েছে। অনুসন্ধানে দেখা যায়, এক সময় বিভিন্ন রেল স্টেশন ও বস্তিকে ঘিরে হেরোইন, গাঁজা, ফেন্সিডিলের রমরমা হাট বসেছিল। এখন ইয়াবার সুবাদে মাদক বস্তির পাশাপাশি অভিজাত পাড়ার স্কুল-কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, সাইবার ক্যাফে, ফাস্ট ফুড শপ, সেলুন, কফি হাউজসহ সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছে। ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল-কলেজ থেকে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ঘিরে গড়ে উঠছে ইয়াবা আগ্রাসন। হাত বাড়ালেই মিলছে ইয়াবা।

ফেন্সিডিলের বাজার এখন ইয়াবার দখলে : ভারত থেকে ফেনসিডিল আসা কমেছে। বিকল্প হিসেবে ফেনসিডিলসেবীরা ইয়াবায় আসক্ত হচ্ছে। জানা গেছে, ভারত থেকে ফেনসিডিল আর আগের মতো আসছে না। ভারত সরকার সে দেশে ফেনসিডিলকে নিষিদ্ধ করেছে। গেজেট প্রকাশের মাধ্যমে ফেনসিডিল উৎপাদন, ব্যবহার, বিক্রি ও সরবরাহ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এতে করে বৈধ কোম্পানিগুলো ফেনসিডিল তৈরি বন্ধ করে দিয়েছে। তবে বেশ কিছু কোম্পানি অবৈধ পন্থায় ফেনসিডিল তৈরি ও বিক্রি অব্যাহত রেখেছে। সেইসব কোম্পানির ফেনসিডিল সীমান্ত পথ দিয়ে বাংলাদেশে আসছে। তবে আগের তুলনায় অনেক কম। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের একজন কর্মকর্তা জানান, এখনও ফেনসিডিল আসছে তবে আগের মতো নয়। এখন যারা তৈরি করছে তারা নেশার জন্যই তৈরি করছে। ওই কর্মকর্তা জানান, কিছুটা দুষ্প্রাপ্য হওয়ায় ফেনসিডিলের দাম আগের তুলনায় বেড়ে গেছে। এজন্য ফেনসিডিলসেবীরা ইয়াবার দিকে ঝুঁকেছে। দিন দিন বাড়ছে এর ব্যবহার ও ব্যবসার প্রসার। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে ২০১০ থেকে ২০১৫ সাল এ ৫ বছরে দেশে ইয়াবার ব্যবহার বেড়েছে ৮১ গুণ। ইয়াবা উদ্ধারের পরিসংখ্যানে এর সত্যতা মেলে। পরিসংখ্যান বলছে, ২০১০ সালের তুলনায় ২০১৫ সালে ৮১ গুণ বেশি ইয়াবা ধরা পড়েছে। আটকের সংখ্যা থেকে হিসেব কষে এই তথ্য বের করেছে মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর। পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ২০১০ সালে ইয়াবা উদ্ধার হয়েছে ৮ লাখ ১২ হাজার ৭১৬টি, ২০১১ সালে ১৩ লাখ ৬০ হাজার ১৮৬, ২০১২ সালে ১৯ লাখ ৫১ হাজার ৩৯২, ২০১৩ সালে ২৮ লাখ ২১ হাজার ৫২৮, ২০১৪ সালে ৬৫ লাখ, ১২ হাজার ৮৬৯ এবং ২০১৫ সালে ২ কোটি ২ লাখ ৬৯ হাজার ৪৫টি। তবে উদ্ধারের এই পরিসংখ্যানের সাথে বাস্তবতার অনেক ফারাক। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারাই মনে করেন, এর চেয়ে বহুগুণ বেশি ইয়াবা বেচাকেনা ও ব্যবহার করা হচ্ছে।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর মেট্রো উপ অঞ্চলের পরিচালক আলী আসলাম আজাদীকে বলেন, আমাদের কড়াকড়ির কারণে অন্যান্য মাদক দ্রব্যের সহজ লভ্যতা কমেছে। তাই মাদক সেবীরা ইয়াবাকে বেছে নিচ্ছে। কারণ আকারে অত্যন্ত ছোট হওয়ায়, খুব সহজেই এটি বহন করা যায়। তবে ইয়াবার চালান আসছে এটা যেমন সত্য, তেমনি র‌্যাব-পুলিশ-নারকোটিক্স ডিপার্টমেন্টের অভিযান চলছে এটাও সত্য। নানা সীমাবদ্ধতার মাঝেও আমাদের অভিযানে সফলতা আসছে। মাদকাসক্তদের ৬০ শতাংশ ইয়াবাসেবী : মাদাকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্র আর্কের সিইও পারভেজ আহমেদ ইয়াবা আসক্তি প্রসঙ্গে জানান, মাদকাসক্তদের মধ্যে ৬০ থেকে ৭০ % ইয়াবা সেবীকে আমরা রোগী হিসেবে পাই। উদ্বেগের বিষয় হলো এর মধ্যে টীনএজার বেশি। ক্লাস নাইন টেন এর ছেলে মেয়ে ইয়াবায় আসক্ত হয়ে পড়ছে। কৌতুহল তো রয়েছে, পাশাপাশি, ফ্রিতে মাদক সেবনের সুযোগ দানের বিনিময়ে ইয়াবা বিক্রির টোপ এদের মধ্যে আসক্তিটা বাড়িয়ে দিচ্ছে। অবশ্যই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানের পাশাপাশি সচেতনতা বাড়াতে হবে। স্কুল কলেজে মাদক বিরোধী অনুষ্ঠান করতে হবে। সবচেয়ে ভালো হয় স্কুল কলেজে সপ্তাহে একদিন যদি এই বিষয়ে বাধ্যতামূলক ক্লাসের ব্যবস্থা করা যায়।

যে পথে আসছে ইয়াবা : আমাদের টেকনাফ প্রতিনিধি জাবেদ ইকবাল চৌধুরী জানান, তিন শতাধিক বড় ইয়াবা ব্যবসায়ীর মাধ্যমে মিয়ানমার থেকে চালান আসছে বাংলাদেশে। ছোট ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে তা ছড়িয়ে যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন স্থানে। শুধু টেকনাফেই রয়েছে দুই শতাধিক ডিলার। মিয়ানমার সীমান্তবর্তী নাফনদী ও টেকনাফের পশ্চিম বঙ্গোপসাগরে দু’ শতাধিক বিভিন্ন পয়েন্ট হতে এসব ডিলাররা পাচার কার্যক্রম চালিয়ে থাকে। এই ইয়াবা ব্যবসায়ী ও ডিলারদের বেশির ভাগই আবার ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের নাম ব্যবহার করে চলেছে। এই ব্যবসায়ীদের সমন্বয়ে গড়ে উঠেছে ইয়াবা সিন্ডিকেট।

গত জুলাই ও আগস্ট মাসে বিজিবি টেকনাফে ১০৭ টি অভিযান পরিচালনা করেছে। ইয়াবা উদ্ধার করা হয়। এ সংক্রান্ত মামলায় ৬৪ জনকে আটক করে থানায় সোপর্দ করে বর্ডার গাড ব্যাটালিয়ন (বিজিবি)। ২ বিজিবি অধিনায়ক লেঃ কর্নেল মোঃ আবু জার আল জাহিদ বলেন সীমান্তের বিভিন্ন এলাকায় বিজিবির কড়াকড়ির কারণে ইয়াবাসহ অন্যান্য মাদকদ্রব্য ও চোরাইপণ্য পাচার আগের তুলনায় অনেকটা কমে এসেছে। সীমান্ত ও চেকপোস্টে বিজিবির টহল জোরদার করা হয়েছে। মিয়ানমারের সঙ্গে আমাদের ৫৪ কিলোমিটার সীমান্তের পুরোটার উপরই আমরা নজরদারি বাড়িয়েছি। তাছাড়া টেকনাফ সীমান্তের বিভিন্ন স্থানে বিজিবির একাধিক টিম সতর্ক অবস্থায় রাখা হয়েছে বলে জানান বিজিবির এই কর্মকর্তা। তিনি বর্তমানে সাগর পথকে ইয়াবা পাচারকারীরা ব্যবহার করছে বলেও জানান।

অপরদিকে কোস্টগার্ড নাফনদী ও বঙ্গোপসাগরে গত আগস্ট ও সেপ্টেম্বর মাসে ৭ টি অভিযান চালিয়ে ৯ লাখ ৯১ হাজার ৫’শ ইয়াবা জব্দ করেছে। তবে পাচারকারী কাউকে আটক করতে সমর্থ হয়নি কোস্ট গার্ড। কোস্ট গার্ড টেকনাফ স্টেশন কমান্ডার লে. নাফিউর রহমান বলেন, ইয়াবা পাচার রোধ করতে হলে সমন্বিত অভিযান পরিচালনা করতে হবে। পাশাপাশি বড় বড় গডফাদারদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনতে হবে। তা নাহলে পুরোপুরি ইয়াবা পাচার বন্ধ করা কঠিন হবে।

আমাদের কক্সবাজার প্রতিনিধি আহমেদ গিয়াস জানান, মিয়ানমারের ৩৭টি কারখানায় তৈরি ১৩ ধরনের ৩০ লাখ ইয়াবা প্রতিদিন সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে। এছাড়াও থাইল্যান্ডে উৎপাদিত ২ ধরনের ইয়াবা মিয়ানমার হয়ে বাংলাদেশে আসে। প্রতিদিন এদেশে আসা ৩০ লাখ ইয়াবার আনুমানিক বাজার মূল্য ৯০ কোটি টাকা। সে হিসেবে প্রতি মাসে প্রায় ৩০০ কোটি টাকার ইয়াবা প্রবেশ করে বাংলাদেশে। এই ইয়াবা ছড়িয়ে পড়ে দেশের আনাচে-কানাচে। আর এ বিশাল বাজার ও মাদক রুট নিয়ন্ত্রণের জন্য এরই মধ্যে পাচারকারীদের মধ্যে শক্তি সঞ্চারের প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে। তাদের হাতে হাতে রয়েছে অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র। ফলে মৃত্যুর ভয়ে কেউ প্রতিবাদের সাহস পাচ্ছেন না। প্রশাসনকে ধরিয়ে দিয়েছে এমন সন্দেহভাজনদেরও প্রাণ দিতে হয়েছে ইয়াবা ব্যবসায়ীদের হাতে। এবিষয়ে আশংকা প্রকাশ করে কক্সবাজার প্রশাসনের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা আজাদীকে বলেন- প্রশাসনের প্রায় সব বিভাগই এখন ইয়াবা ব্যবসায়ীদের নিয়ন্ত্রণে চলে গেছে। আবার অনেকেই অনেকটা বাধ্য হয়ে জড়িয়ে পড়েছেন এই সর্বনাশা ব্যবসার সঙ্গে। জানা যায়, বর্তমানে কক্সবাজার জেলা কারাগারে প্রায় আড়াই হাজার বন্দী রয়েছে, এরমধ্যে প্রায় ৩০ ভাগ টেকনাফ ও উখিয়ার বাসিন্দা। যাদের বেশিরভাগই ধরা পড়ে ইয়াবা নিয়ে।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইউনাইটেড ওয়া স্টে-ইট আর্মির অধীনে বর্তমানে ১৩ টি, কাসিন ডিপ্ন্যাস আর্মির অধিনে ১০টি, পানসে ক্যা-ম্যা ইয়ন মলিয়ান গ্রুপের অধীনে ২টি, স্পেসাল পুলিশ এক্স হলি ট্রেক গ্রুপের অধীনে ১টি, ম্যানটাং মিলেটিয়ার অধীনে ৩টি, ইয়ানজু গ্রুপের অধীনে ১টি, এসএনপিএল‘র অধীনে ৬টি, এমএনডিএএ‘র অধীনে ১টি ইয়াবা তৈরির কারখানা পরিচালিত হচ্ছে। মিয়ানমারের এ ৮ সংগঠনের নিয়ন্ত্রণে পরিচালিত ৩৭টি ইয়াবা কারখানায় ১৩ প্রকার ইয়াবা তৈরি হচ্ছে। এর মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় ইয়াবা হল এস ওয়াই, জিপি, এনওয়াই, ডব্লিউ ওয়াই, গোল্ডেন, আর ২ ইত্যাদি।

নাফ নদী ইয়াবার মূল রুট : বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের ৪৪টি পয়েন্ট দিয়ে বিভিন্ন কৌশলে ইয়াবা পাচার করা হয়। স্থলপথে ছোট চালান এবং নদীপথে বা সাগরপথে পাচার হচ্ছে বড় চালান। টেকনাফ ও শাহপরীর দ্বীপের মধ্যবর্তী প্রায় ১৪ কিলোমিটার নাফ নদীর চ্যানেল ছাড়াও সেন্টমার্টিন উপকূল ইয়াবা পাচারের প্রধান রুট হিসেবে ব্যবহার করা হয়। ইয়াবা চোরাচালানে ব্যবহার করা হয় ছোট নৌকা, মাছ ধরা ট্রলার, মালবাহী ছোট জাহাজ। সাগরপথে একেকটি চালানে থাকে ১০ লাখ থেকে ২০ লাখ ইয়াবা। আর নতুন ট্রানজিট পয়েন্ট হয়ে উঠেছে চট্টগ্রাম উপকূল। চট্টগ্রামের পতেঙ্গা, আনোয়ারা, কর্ণফুলীসহ নানা এলাকাকে ব্যবহার করা হচ্ছে ইয়াবা পাচারের ট্রানজিট পয়েন্ট হিসাবে। চট্টগ্রাম থেকে নানা উপায়ে যাচ্ছে দেশের বিভিন্নস্থানে।

চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ সুপার নূরে আলম মিনা জানান, টেকনাফের নাফ নদীতে মাছ ধরার আড়ালে ইয়াবা আনা হচ্ছে। এই নদী নিয়ন্ত্রণ করা গেলে ৯৫ শতাংশ ইয়াবা আসা বন্ধ হবে। তিনি বলেন, টেকনাফের নাফ নদীতে জেলেদের বেশে ইয়াবা পাচার করা হচ্ছে। দূর থেকে দেখলে মনে হয় তারা নদীতে মাছ ধরছে। আসলে মাছ ধরার আড়ালে ইয়াবা পরিবহন করা হয়। পরে টেকনাফ থেকে ইয়াবাগুলো কক্সবাজার হয়ে বিভিন্ন নৌকা ও ট্রলার ও পরিবহন যোগে চট্টগ্রাম নগরীতে আসে। এরপর সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ে। এটাকে ‘নতুন কৌশল’ অভিহিত করে জেলা পুলিশের এই শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, নাফ নদী ছাড়াও চট্টগ্রামের আনোয়ারা, কর্ণফুলী, সীতাকুণ্ড ও মিরসরাই উপকূলে এভাবে ইয়াবা পাচার করা হচ্ছে। অন্যদিকে টেকনাফের নাফ নদী ও বাকখালি খাল হয়ে নাইক্ষ্যংছড়ির স্থলপথেও ইয়াবা ঢুকছে।

মিয়ানমারের ৪০ ইয়াবা ব্যবসায়ী : মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, মিয়ানমারের ৪০ নাগরিকের হাত ধরে দেশে ইয়াবা প্রবেশ করছে নৌ ও সড়কপথে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর চট্টগ্রাম বিভাগ ওই ৪০ ব্যক্তির একটি তালিকা তৈরি করেছে। তারা হল : মিয়ানমারের মংডু থানার গোনাপাড়ার রশীদ, সংসমার যোবায়ের আহমেদ, গোনাপাড়ার মোহাম্মদ বাবুলের ছেলে হারুন, সুদাপাড়া এলাকার আলী মোহাব, ফয়েজিপাড়ার মো. সৈয়দ, নাপিতের ডেইলর নুরু, গোনাপাড়ার জোহার, সাবেক নাসাকা সেক্টর-১-এর আবদুল গফুর, খায়নখালীর রশীদ, ফয়েজিপাড়ার সৈয়দ করিম, একই এলাকার জয়নাল ওরফে জইন্যা, জুলাপাড়ার আসাদুল্লাহ, একই এলাকার হেফজুর রহমান, আরেফ আলী, নাসাকা সেক্টর-৭ এলাকার ইব্রাহিম, মংডু থানার শফি, হেতেলাপাড়ার সাদেক, নয়াপাড়ার হামিদ হোসেন, ওই এলাকার সৈয়দুল আমিন, ইউসুফ, গজুবিল এলাকার কালা সোনা, আলম, মগপাড়ার অং সং, আমতলা থানার আবদুল করিম, মৌলভী ছিদ্দিক আহমেদ, মহিবুল্লাহ, করিম, আবু আহম্মেদ, পোয়াখালীর কামাল, শফি, সাইদুল, শাহ আলম, বুজি জহির ও ছোট বুজুগীর বিল এলাকার আবদুল মোতালেব। কক্সবাজার ও টেকনাফের বিভিন্ন দায়িত্বশীল মানুষের সাথে কথা বলে জানা গেছে, টেকনাফ-উখিয়া আসনের সরকারি দলের বিতর্কিত সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদি এ অঞ্চলের অন্যতম ইয়াবা গডফাদার হিসেবে সাধারণ মানুষের কাছে পরিচিত। অনেকে তাকে আড়ালে আবডালে ‘ইয়াবা বদি’ হিসেবেই ডাকে। তবে সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদি তার বিরুদ্ধে আনা উক্ত অভিযোগ অস্বীকার করে আসছেন। আরেক গডফাদার হলেন সাইফুল করিম। টেকনাফের বাসিন্দারা জানান, সাংসদ আবদুর রহমান বদির বাবা এজহার মিয়া স্বাধীনতার আগে মিয়ানমারের আরাকান থেকে টেকনাফে এসে বসতি স্থাপন করেন। মিয়ানমারের এই রোহিঙ্গা মুসলিম পরিবারটিই পরবর্তীতে বাংলাদেশের ইয়াবা সিন্ডিকেটের প্রধান হিসেবে আবির্ভূত হয়।

পাইকারী ইয়াবা ব্যবসায়িদের তালিকা : স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় র‌্যাব, পুলিশ, মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফর, কোস্টগার্ড, বিজিবি ও সামরিক-বেসামরিক গোয়েন্দা সংস্থার সমন্বয়ে ২০১২ সালে তৈরি করা হয়েছিল ৫৬০ জনের ইয়াবা গডফাদারের এক তালিকা। তবে সাম্প্রতিক তালিকায় ওঠে এসেছে ৭৬৪ জন ইয়াবা ব্যবসায়ীর নাম। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের রাজনৈতিক অধিশাখা-৬ এর এক স্মারকপত্রের সূত্রে মাদকদ্রব্য অধিদফতরের পরিচালক (অপারেশন ও গোয়েন্দা) যুগ্ম সচিব প্রণব কুমার নিয়োগী স্বাক্ষরিত একটি প্রতিবেদনে ৭৬৪ জন ইয়াবা ব্যবসায়ীর নাম উঠে আসে। এতে সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদি, তার ভাই-বোন, নিকট আত্মীয়, কাউন্সিলরসহ অনেকের নাম রয়েছে। এছাড়া এই তালিকায় ৭ জন পুলিশ কর্মকর্তার নামও উঠে আসে। ওই তালিকায় স্থান পেয়েছে মহেশখালী উপজেলার ৬ জন, বান্দরবান জেলার ২৯ জন।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকা অনুযায়ী, আবদুর রহমান বদির আপন ভাই মো. আব্দুল শুক্কুর ও মৌলভী মুজিবুর রহমান, দুই সৎ ভাই আবদুল আমিন ও ফয়সাল রহমান ইয়াবা ব্যবসা করেন। আর এই পাঁচ ভাইকে দিয়ে এক অপ্রতিরোধ ইয়াবা সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছেন আবদুর রহমান বদি। পাঁচ ভাই ছাড়াও পারিবারিক ইয়াবা ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন এমপি বদির বেয়াই আখতার কামাল, শাহেদ কামাল, মামা হায়দার আলী, মামাতো ভাই কামরুল ইসলাম রাসেল। এ ছাড়া পারিবারিক এই মাদক ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত করেছেন বোনের ছেলে নীপুকে। তবে আবদুর রহমান বদি এসব অভিযোগ বরাবরের মতোই অস্বীকার করে আসছেন।

ইয়াবা ব্যবসা কেন অপ্রতিরোধ্য জানতে চাইলে উখিয়া-টেকনাফের সাবেক সংসদ সদস্য ও টেকনাফ উপজেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী বলেন জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের আশ্রয়ে-প্রশ্রয়ে সীমান্ত জনপদটি ইয়াবার স্বর্গ রাজ্য হয়ে উঠেছে। একারণেও দেশও ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে বলে মন্তব্য করেন তিনি। তিনি বলেন- এনবিআর ও দুদক যদি সক্রিয় হয় এবং ইয়াবা ব্যবসায়ীদের সম্পদ বাজেয়াপ্ত করে তাহলে কেউ এই ধরনের অবৈধ ব্যবসার সাহস পাবে না। কিন্তু ওই দুটি সংস্থার নিষ্ক্রিয়তার কারণে ইয়াবা ব্যবসা বন্ধ হচ্ছে না। সরকারি একাধিক গোয়েন্দা প্রতিবেদনে দেখা গেছে, এক বিভাগ অপর এক বিভাগকে এ ব্যবসায় সহায়তা করছে। আর এই সহায়তায় মিলছে কোটি কোটি টাকার বিলাসী জীবন ও স্থাবর সম্পদ।

নগরীতে ইয়াবা ব্যবসায়িদের তালিকা : চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের তালিকায় রয়েছে ১২২ ইয়াবা ব্যবসায়ী। তারা নানা কৌশলে টেকনাফ এবং কক্সবাজার থেকে ইয়াবার চালান নিয়ে আসছে। চট্টগ্রাম ছাড়াও দেশের বিভিন্ন স্থানে ইয়াবা পাচারে তারা জড়িত। গত কয়েক মাসের ব্যবধানে র‌্যাবের বন্দুকযুদ্ধে চট্টগ্রামে নিহত হয়েছে দুই শীর্ষ ইয়াবা ব্যবসায়ী। এরা হল- আনোয়ারা উপজেলার বাসিন্দা আবু জাফর ও হালিশহরের বাসিন্দা জাহিদুল ইসলাম ওরফে আলো। নগরীর ১২২ জন ইয়াবা ব্যবসায়ীর মধ্যে কোতোয়ালি থানায় রয়েছে- ইদু ওরফে হাতকাটা ইদু, মনির, কামাল হোসেন, রহিমা, আলো, সুফিয়া, জাহাঙ্গীর, লাইলি, জসিম, গোপাল, সুভাষ দাশ, পলাশ, কৃষ্ণ, সাগর, রঞ্জিত, পারভেজ, স্বপন, রমজান, জাহাঙ্গীর, ওয়াসিম ও খোকন। বাকলিয়া থানায় রয়েছে- সেলিম, সোবহান, বাবুল হোসেন, শানু, সাজ্জাদ হোসেন, জসিম উদ্দীন, মতিন, মন্তা, আবদুল হালিম, শাহজাহান ও শফি। চকবাজার থানায় শাহ আলম, বাবুল, তৈয়ব ও আজিজুল হক ওরফে নাহিদ। সদরঘাট থানায় মনোয়ারা, মাহাম্মদু, মনির, ফরিদ, বস ফরিদ ও মিন্টু ওরফে বরিশাইল্যা মিন্টু। পাঁচলাইশ থানায় ইদুলী, লাদেন, মুফিয়া, জুয়েল, সোহাগী, হাসিনার মা, রুমা ও সেলিমের বৌ।

সোর্স মানির পরিবর্তে ইয়াবা : অভিযোগ রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ইয়াবার চালান ধরিয়ে দিতে সোর্স মানির পরিবর্তে আটককৃত ইয়াবার একটি অংশ দিয়ে দেয়। সেগুলো সোর্স মারফত চলে যায় বিক্রেতাদের কাছে। আবার অসাধু কিছু পুলিশ কর্মকর্তা, নিজেদের সুবিধামতো রুট বানিয়ে ইয়াবার চালান আটক করে, যা একটি নির্দিষ্ট সময় পর ইয়াবা সিন্ডিকেটের কাছেই আর্থিক বিনিময়ের মাধ্যমে চলে যায়। কিছুদিন আগে র‌্যাবের সাথে বন্দুক যুদ্ধে নিহত ইয়াবা সম্রাট আলোর সাথে এমন কিছু অসাধু পুলিশ কর্মকর্তার জড়িত থাকার তথ্য প্রমাণ উঠে এসেছিল আলোর স্বীকারোক্তিতে, যা জানাজানি হলে চমকে উঠে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অনেকেই।

ইয়াবা সেবী যখন বিক্রেতা : নগরীর একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র মোহর (ছদ্মনাম)। বছর দুয়েক আগে এক সহপাঠীর মাধ্যমে ইয়াবা সেবনে ঝুঁকে পড়ে। দৈনিক তিনটি করে ইয়াবা ট্যাবলেট লাগতো তার। কিন্তু বাসা থেকে অতো টাকা দেয়া হতো না। এক পর্যায়ে যার থেকে ইয়াবা কিনতো, সেই তাকে বুদ্ধিটা বাতলে দেয়। নিজেই দু’চারটি করে বিক্রি করতে থাকে বন্ধুদের কাছে। প্রথমদিকে নিজে খরচ করে সেবন করিয়েছে। পরে তারাই মোহরের থেকে ইয়াবা ট্যাবলেট কিনতো। এভাবেই যাচ্ছিল। কিন্তু মাস ছয়েক আগে পরিবার বিষয়টি টের পেলে ভারতে নিয়ে চিকিৎসা করায় মোহরের। এখন সে সুস্থতার পথে। মোহর শুধু নয়, চট্টগ্রামসহ সারা দেশে ইয়াবার জাল বিস্তারে মাদক সিন্ডিকেটগুলো মোহরের মতো ইয়াবা সেবনকারীদের ব্যবহার করছে। সেবন করতে করতে একটা পর্যায়ে এর খরচ মিটাতে নিজেই এ ব্যবসায় জড়িয়ে পড়ছে। মুঠোফোনে চাহিদা মাফিক ইয়াবা সাপ্লাই দিচ্ছে খুচরা বিক্রেতারা।

মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, চট্টগ্রামসহ দেশের অভিজাত এলাকাগুলোতে স্টাডি সার্কেলের মতো গড়ে উঠেছে ইয়াবা সার্কেল। বয়স তাদের তের থেকে ঊনিশ বছর। কেউ পড়ে ইংলিশ মিডিয়ামের ক্লাস এইটে, কেউ আবার এইচএসসি প্রথম বর্ষে। তাদের ভাষায় ইয়াবা সেবন এবং পরে অসামাজিক কাজে জড়িয়ে পড়াটা ‘জাস্ট এনজয়’। পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তাগণ এটিকে সামাজিক অপরাধ বলে চিহ্নিত করেছেন। সুত্র আজাদী

 

পাঠকের মতামত: