ঢাকা,শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪

চকরিয়া সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে নতুন শহীদ মিনার উদ্বোধন

gএম.জিয়াবুল হক, চকরিয়া :::

চকরিয়া সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে নতুন শহীদ মিনার উদ্বোধন ও বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের ৮৬তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আলহাজ জাফর আলম অনুষ্টানে সমবেত নতুন প্রজন্মের হাজারো শিক্ষার্থীদেরকে স্বাধীন বাংলার স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সহধর্মীনি বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের আত্মতাগের গল্প শুনালেন।

সোমবার (৮জুলাই) সকালে বিদ্যালয় মাঠে অনুষ্টিত আলোচনা সভায় জাফর আলম উপস্থিত কোমলমতি শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বলেন, বাংলা আমার মায়ের ভাষা, আমরা আজ বাংলাতে কথা বলছি, বাংলাতে লেখাপড়া করছি, কিন্তু আজ থেকে ৪৬বছর আগে আমরা বাংলায় কথা বলতে পারতাম না। তখন কথা বলতে হতো হিন্দিতে। সেইদিন পাকিস্তানীদের দমিয়ে রাখা শৃঙ্খল ভেঙে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশকে একটি স্বাধীন দেশের পতাকা এনে দেয়। যার প্রেক্ষিতে স্বাধীনতার পর বাংলাদেশের ১৬ কোটি মানুষ এখন বাংলায় কথা বলতে পারে। বাংলায় লেখাপড়া করতে পারে। তিনি বলেন, নতুন প্রজন্মের শিক্ষার্থীদেরকে বুঝতে হবে, শিখতে হবে, বাংলাদেশকে স্বাধীনতার পতাকা কে এনে দিয়েছে, বাংলায় কথা বলার, লেখাপড়া করার অধিকার কে দিয়েছে। আমাদেরকে বাংলায় কথা বলার, বাংলায় লেখাপড়ার অধিকার দিয়েছে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তার দল বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ। তাই নতুন প্রজন্মের শিক্ষার্থীদেকে আগামীর পথে এগিয়ে যেতে স্বাধীনতার স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অনুপ্রেরণা ও আত্মতাগে উজ্জীবিত হতে হবে। সকল ধরণের মতবেত ভুলে মেধানির্ভর দক্ষ জাতি গঠনে শিক্ষার্থীরা ইতিহাস থেকে এ শিক্ষা গ্রহন করবে।

অনুষ্টানে উপজেলা চেয়ারম্যান আলহাজ জাফর আলম শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের আত্মত্যাগ ও বঙ্গবন্ধুকে বাংলাদেশ বিনির্মানের পেছনে অনুপ্রেরণা দেয়ার উদাহারণ তুলে ধরে বলেন, ১৯৩০ সালের এই দিনে গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়া গ্রামে বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব জন্মগ্রহণ করেন। মাত্র তিন বছর বয়সে পিতা ও পাঁচ বছর বয়সে মাতাকে হারান। তাঁর ডাক নাম ছিল ‘রেনু’। পিতার নাম শেখ জহুরুল হক ও মাতার নাম হোসনে আরা বেগম। দাদা শেখ কাসেম চাচাত ভাই শেখ লুৎফর রহমানের পুত্র শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে বেগম ফজিলাতুন্নেছার বিবাহ দেন। তখন থেকে বেগম ফজিলাতুন্নেছাকে শাশুড়ি বঙ্গবন্ধুর মাতা সাহেরা খাতুন নিজের সন্তানদের সঙ্গে মাতৃস্নেহে লালন-পালন করেন।

উপজেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি জাফর আলম বলেন, বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের স্মৃতিশক্তি অত্যন্ত প্রখর ছিল। মনেপ্রাণে তিনি ছিলেন একজন আদর্শ বাঙালী নারী । অত্যন্ত বুদ্ধিমত্তা, শান্ত, অসীম ধৈর্য ও সাহস নিয়ে জীবনে যে কোন পরিস্থিতি দৃঢ়তার সঙ্গে মোকাবেলা করতেন। স্বামী জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রাজনৈতিক জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে সর্বান্তকরণে তিনি সহযোগিতা করেছেন। তিনি ছিলেন অত্যন্ত দানশীল। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের বিপদে-আপদে, কারাগারে আটক নেতাকর্মীদের খোঁজ-খবরাদি নেয়া ও পরিবার-পরিজনদের যে কোন সঙ্কটে পাশে দাঁড়াতেন তিনি। তাঁর অপত্য স্নেহ, মমতা, দরদ, আপ্যায়নের কথা আজও মুক্তিযুদ্ধের সংগঠকরা যে যে অবস্থানেই থাকুন না কেন, অকৃত্রিম শ্রদ্ধার সঙ্গে তা স্মরণ করেন। ইতিহাসে তাই বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব কেবল একজন রাষ্ট্রনায়কের সহধর্মিণীই নন, তিনি ছিলেন বাঙালীর মুক্তি সংগ্রামে অন্যতম এক স্মরণীয় অনুপ্রেরণাদাত্রী।

উপজেলা চেয়ারম্যান উপস্থিত শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে আরো বলেন, বাঙালী জাতির সুদীর্ঘ স্বাধিকার আন্দোলনের প্রতিটি পদক্ষেপে সক্রিয় সহযোগিতা করেছেন বঙ্গমাতা বেগম মুজিব। ছায়ার মতো অনুসরণ করেছেন স্বামী বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে, জীবনে অনেক ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করেছেন, অনেক কষ্ট, দুর্ভোগ তাঁকে পোহাতে হয়েছে। বঙ্গবন্ধু জীবনের সর্বশ্রেষ্ঠ সময় কারান্তরালে কাটিয়েছেন বছরের পর বছর। তিনি অনুপ্রেরণা, শক্তি, সাহস, মনোবল ও প্রেরণা যুগিয়েছেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। এই মহীয়সী নারী জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত বঙ্গবন্ধুর পাশে থেকে দেশ ও জাতির সেবা করে গেছেন। জনগণের জন্য সমগ্র জীবন তিনি অকাতরে দুঃখবরণ করেছেন এবং সর্বোচ্চ আত্মত্যাগ করেছেন। তিনি বলেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা করার সময় পরিবারের অপরাপর সদস্যদের সঙ্গে বেগম মুজিবকেও মানবতার শত্রু, ঘৃণ্য ঘাতকরা নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করেন। তাঁর অবদান বাংলাদেশের ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে।

চকরিয়া সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ফরিদ উদ্দিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্টানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাহেদুল ইসলাম। ওই সময় অনুষ্টানে বিদ্যালয়ের সকল শিক্ষক, শিক্ষিকা, শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও সুধীজন উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্টান শেষে প্রধান অতিথি ফিতা কেটে বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের নতুন শহীদ মিনারটির আনুষ্টানিক উদ্বোধন করেন। #

পাঠকের মতামত: