ঢাকা,শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪

সনদ নির্ভর শহর সমাজসেবা আইটিসি ও কম্পিউটার প্রশিক্ষণ কেন্দ্র

somas saba computr news- (1)কক্সবাজার শহর সমাজসেবা উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় আইটিসি এন্ড কম্পিউটার সেন্টারে সনদ নির্ভর প্রশিক্ষণ চলে আসছে এক যুগেরও বেশি সময় ধরে। প্রশিক্ষণের নামে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে বিপুল টাকা আদায় করা হলেও সে পরিমাণ গুণগত প্রশিক্ষণ হয় না বলে জানান শিক্ষার্থীরা। তারা নিজেরাই বলছে সরকারি সনদের জন্য প্রশিক্ষণে অংশ নিচ্ছি। আর পরীক্ষার নামে যেন রিহার্সেল দেওয়া হয়। কারণ যারাই পরীক্ষায় অংশ নেয় তারাই পাস বলে ধরে নেওয়া হয়। আর থিউরী ক্লাসের নামে দেওয়া হয় বেশির ভাগ পাস মার্ক। মোট কথা উদ্যোত সব নিয়মে আর হ-য-ব-র-ল অবস্থায় চলে সরকারি এই কম্পিউটার প্রশিক্ষণ কেন্দ্রটি। সচেতন মহলের দাবি সনদ নির্ভর প্রশিক্ষণ না করে কার্যকর প্রশিক্ষন এবং হাতে কলমে প্রশিক্ষণ দিলে শিক্ষার্থীদের উপকারে আসতো। তবে সম্প্রতি প্রতিষ্ঠানে কিছু পরিবর্তন এসেছে বলেও দাবি করেন অনেকে।
কক্সবাজার শহরের একটি এনজিওর পরিচালক সাইফুল ইসলাম বলেন, আমাদের প্রতিষ্ঠানের জন্য কম্পিউটার বিভাগের একজনকে নিয়োগ দিয়েছিলাম শহর সমাজসেবার সার্টিফিকেট দেখে। কিন্তু বাস্তব কর্মক্ষেত্রে গিয়ে দেখি  সাধরাণ অনেক বিষয় সম্পর্কেও তার ধারণা কম। তখন সভাবতই আমার মনে সমাজসেবা প্রদত্ত সনদ নিয়ে প্রশ্ন এসেছে। তারা কিভাবে সনদ দেয়। এ সময় পাশে থাকা রামুর এক ল্যাব মালিক বলেন, আমার কাছেও কিছুদিন আগে ২ জন লোক দরকার হলে আমি পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিলে আমার এলাকার ২জন ছাত্র আসে তাদের হাতে শহর সমাজসেবার সনদ দেখে আমি খুব খুশি মনে হাতো কলমে কাজ দেখতে গিয়ে খুবই হতাশ হয়েছি। কম্পোজ তো দূরের কথা সাধারণ ওয়ার্ড ফাইলের কাজও তারা করতে পারছে না। একইভাবে আমিও সনদের ব্যাপারে চিন্তা করেছি। আমার মনে হয় এটি সরকারি প্রতিষ্ঠান। এর মূল্য আছে। এভাবে সনদ না দিয়ে আরো বিচার বিবেচনা করা দরকার অথবা যে যতটুকু জানে তাকে সে ধরণের সনদ দেওয়া দরকার।
এদিকে শহর সমাজসেবা আইটিসি কম্পিউটার সেন্টারে গিয়ে আলাপকালে শিক্ষার্থী রাজিব জানান, তার এক বন্ধু পরামর্শে এখানে ভর্তি হয়েছে। এখানে ভালই প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে তবে। বেশির ভাগ শিক্ষার্থীর মূল প্রত্যাশা সনদ। কারণ এখানকার সনদের একটি আলাদা মূল্যায়ন আছে।
এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এখানে বিভিন্ন মেয়াদে প্রশিক্ষণ দেয়া হয় দৈনিক ৬টি। তাহলে একটি প্রশিক্ষনের মেয়াদ ঘণ্টা দেড়েকের বেশি না। তাহলে এত কম সময়ের মধ্যে শিখবে কি? এক প্রশ্নের জবাবে কমিটির সদস্য বলেন, এখানে টাকার খেলাও চলে। একজন ছাত্রের কাছে এক কোর্সের জন্য ২ হাজার টাকা নিলে দৈনিক ৬টি কোর্সে ৪০ জন করে ২৪০ জনের কাছে কত টাকা আসে সেটা হিসাব থাকা দরকার। আর এসব টাকা কোথায় কার কাছে সে হিসাবও কারো কাছে আছে বলে আমার মনে হয় না।
তিনি বলেন, এখানে আগে কিছু কর্মকর্তাদের নিয়ন্ত্রণে চলতো এখন কিছুটা পরিবর্তন এসেছে। আগে পরীক্ষার নামে একজন লোক বাড়িতে নিয়ে গিয়ে খাতা মূল্যায়ন করতো এবং সেখানে অনেক প্রশিক্ষণার্থীর কাছে বিশেষ সুযোগ-সুবিধা নিয়েছে বলে জানা গেছে। আর থিওরিক্যাল নাম্বারের নামে সবাইকে গণহারে নাম্বার দিয়ে দেওয়া হয়। আমরা যদিও বলি কম্পিউটার শিক্ষার প্রতি বিশেষ আকর্ষণ সৃষ্টি করতে হবে। সেজন্য কিছুটা ছাড় দিতে হবে কিন্তু বুঝতে হবে এটা সরকারি সনদ সেটা আমি বহুবার বুঝাতে চেষ্টা করেছি কেউ বুঝেনি। বিশেষ করে এক প্রকৌশলীর দখলে সবকিছু তাই আমাদের করার কিছু থাকে না।
এ ব্যাপারে কম্পিউটার প্রশিক্ষক পিন্টু দত্ত বলেন, এখানে যারা প্রশিক্ষণ নিতে আসাদের আমরা হাতে কলমে প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকি। তবে পরীক্ষায় থিওরিক্যাল ক্লাসে কিছু নাম্বার দিয়ে আসছে সেটা আগেও দেওয়া হতো। তবে এখন আগের তুলনায় অনেক কিছুই পরিবর্তন হয়েছে। আশা করি সামনে আরো হবে। আর একটি প্রশিক্ষণে সবাই একই রকম হবে সেটা আশা করা ঠিক না।
সমাজসেবা আইটিসি ও কম্পিউটার প্রশিক্ষণ একাডেমির সদস্য শামিমা আকতার বলেন, আমি মনে করি এই প্রশিক্ষণ সেন্টারটি জেলার নামকরা একটি প্রতিষ্ঠান। তবে গদবাধা সবাইকে সনদ দেওয়ার ব্যাপারে কিছু পরিবর্তন আনা দরকার। পরীক্ষা পদ্ধতিতেও কিছুটা পরিবর্তন আনা দরকার।
এ ব্যাপারে শহর সমাজসেবা আইটিসি কম্পিউটার সেন্টারের সভাপতি এম. সিরাজুল ইসলাম বলেন, আগে পরীক্ষার সময় দায়িত্ব পালন করতো সেখানকার সংশ্লিষ্টরা। এখন সেটা নেই। সবকিছু বাইরের পরীক্ষা পরিদর্শক খাতা মূল্যায়নের দায়িত্ব পালন করবেন। আর প্রশিক্ষনের সবকিছুতে পরিবর্তন আনা হবে।

পাঠকের মতামত: