ঢাকা,শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪

চকরিয়ার দুর্ধর্ষ ডাকাত শুক্কুরকে জিজ্ঞাসাবাদে তিনদিনের রিমা- মঞ্জুর

স্টাফ রিপোর্টার, চকরিয়া :
চকরিয়ায় অতি সম্প্রতি একের পর এক ডাকাতির ঘটনায় জড়িত থাকার দায়ে এবং আরেকটি বসতবাড়িতে ডাকাতির প্রস্তুতির নেওয়ার সময় অস্ত্র ও গুলিসহ গ্রেপ্তারকৃত দুর্ধর্ষ ডাকাত আবদু শুক্কুরকে পুলিশ হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তিনদিনের রিমা- মঞ্জুর করেছেন আদালত। গতকাল মঙ্গলবার রিমা- শুনানীর সময় ডাকাত শুক্কুরকেও আদালতে হাজির করা হয়।
এদিকে ডাকাত শুক্কুরের নেতৃত্বে সংঘটিত ডাকাতির সময় লুন্ঠিত স্বর্ণালঙ্কার পৌরশহর চিরিঙ্গার হক সুপার মার্কেটের রূপালী ব্যাংকের সিড়ির নিচের রনজিতা জুয়েলার্সের মালিক ও কক্সবাজার সদর উপজেলার ঈদগাঁওয়ের বাসিন্দা নেপাল দে কাছে মজুদ রয়েছে এমন খবর গোপন সংবাদের ভিত্তিতে পেয়ে সোমবার সন্ধ্যায় অভিযান চালায় পুলিশ। অভিযানকালে ওই দোকানের প্রতিদিন লেনদেনের খাতাপত্রগুলো খতিয়ে দেখে। এ সময় ডাকাত শুক্কুরের সঙ্গে নেপাল দে’র দীর্ঘদিন ধরে লেনদেনের তথ্যও পায়।
রনজিতা জুয়েলার্সে অভিযানের বিষয়ে জানতে চাইলে চকরিয়া থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. আলমগীর জানান, পুলিশের কাছে তথ্য ছিল ডাকাত শুক্কুরের সঙ্গে রনজিতা জুয়েলার্সের মালিক নেপালের দীর্ঘদিনের লেনদেনের সম্পর্ক রয়েছে। তাই এই তথ্যের সত্যতা যাচাইয়ের জন্য তার দোকানে অভিযান চালানো হয়েছে। এ সময় ডাকাত শুক্কুরের সঙ্গে নেপালের আর্থিক লেনদেন রয়েছে মর্মে প্রতীয়মান হয়।
পুলিশ জানায়, ২০১৪ সালের ২৮ আগষ্ট চট্টগ্রাম মহানগরীর চকবাজার থানার কাপাসগোলা এলাকার আহমদ খলিল খানের দোতলা বাড়িতে দুর্ধর্ষ ডাকাতি সংঘটিত হয়। লুট করা হয় ৬৬ ভরি স্বর্ণালঙ্কার, ৮টি মোবাইল, ৫৫ হাজার টাকা, ১টি ল্যাপটপ ও দুটি মডেম। এ ঘটনায় থানায় মামলা হয় এবং পরে তা ডিবি পুলিশ তদন্ত করে। তদন্তকালে ওই ডাকাতিতে চকরিয়া পৌরসভার হালকাকারা গ্রামের আবু তাহেরের ছেলে হুমায়ন কবির ও ডাকাত আবদু শুক্কুর জড়িত রয়েছে বলে প্রমাণ পায় ডিবি পুলিশ। এর পর চট্টগ্রাম থেকে ডিবি পুলিশের একটি টিম সরাসরি চকরিয়ার হালকাকারায় এসে গ্রেপ্তার করে হুমায়নের বাবা আবু তাহেরকে। এ সময় স্বীকারোক্তি অনুযায়ী আবু তাহেরের বসতবাড়ির একটি কক্ষের ভেতরের মাটি খুঁড়ে উদ্ধার করে ডাকাতি হওয়া ৬১ ভরি স্বর্ণালঙ্কার। এর পর আবু তাহেরের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী এবং তার দেখিয়ে দেওয়া পৌরশহরের হক সুপার মার্কেটের রনজিতা জুয়েলার্সে অভিযান চালিয়ে বাকী ৫ ভরি স্বর্ণালঙ্কার জব্দ করে।
পুলিশ আরো জানায়, চকরিয়ায় ঈদের আগে ও পরবর্তী কয়েকদিন পর্যন্ত পৌরসভার বিভিন্ন ওয়ার্ডে ছাড়াও উপজেলার বিভিন্ন স্থানে একাধিক দুর্ধর্ষ ডাকাতি সংঘটিত হয়। খোদ ঈদের দিন সকালে ঈদের নামাজ চলাকালীন সময়ে সরকারী হাসপাতালের পশ্চিমে সৌদি প্রবাসী মাহমুদুল হকের বসতবাড়িতে হানা দিয়ে পরিবার সদস্যদের অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে প্রায় ২৫ ভরি স্বর্ণালঙ্কার, নগদ দুই লাখ টাকা এবং মোবাইল ও ল্যাপটপসহ দামি মালামাল লুট করে। এ সময় পরিবার সদস্যদের বিভিন্ন কক্ষে আটকে রাখে ডাকাতদল। ডাকাতি শেষে চলে যাওয়ার সময় প্রবাসীর ছেলে আবদুল্লাহ সাঈদ বাড়িতে ঢুকার আগে সিড়িতে অস্ত্র ঠেকিয়ে প্রাণে হত্যার ভয় দেখিয়ে পালিয়ে যায় ডাকাতেরা। এ সময় তারা পর পর দুই রাউন্ড ফাঁকা গুলিও ছুড়ে। এছাড়াও থানা সেন্টার, চিরিঙ্গা হিন্দুপাড়াসহ বিভিন্নস্থানে বসতবাড়িতে দুর্ধর্ষ ডাকাতি সংঘটিত হয়। এসব ডাকাতিতে পৌরসভার হালকাকারার আবদু শুক্কুর নেতৃত্ব দেয় বলে পুলিশ জানতে পারে।
অভিযোগ উঠেছে, বিভিন্নস্থানে ডাকাতি হওয়া স্বর্ণালঙ্কার হজম করা হয় রনজিতা জুয়েলার্সে। অপেক্ষাকৃত কমমূল্যে ডাকাতির এসব স্বর্ণ কিনে নিয়ে পরে তা গলিয়ে ফেলা হয়। এভাবে বছরের পর বছর বিভিন্ন বাসাবাড়ি থেকে ডাকাতি ও চুরি হওয়া স্বর্ণালঙ্কার হজম করার নিরাপদ স্থান হিসেবে রনজিতা জুয়েলার্সকে বেঁছে নেয় ডাকাতেরা। কিন্তু বরাবরের মতোই রহস্যজনক কারণে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয় না পুলিশ।
অবশ্য পুলিশের এক কর্মকর্তার দাবি, রনজিতা জুয়েলার্সের মালিক নেপালের সঙ্গে চকরিয়ার কতিপয় সংবাদকর্মী ও প্রভাবশালীদের সঙ্গে উঠবস রয়েছে। এমনকি তারাও নিয়মিত আর্থিক সুবিধাও পেয়ে থাকেন নেপালের কাছ থেকে। এ কারণে তার দোকান থেকে ডাকাতির স্বর্ণালঙ্কার উদ্ধার হলেও বার বার পার পেয়ে যায়।
এ বিষয়ে চকরিয়া থানার ওসি মো. জহিরুল ইসলাম খান বলেন, ‘পুলিশের কাছে তথ্য থাকায় পৌরশহর চিরিঙ্গার হক সুপার মার্কেটের রনজিতা জুয়েলার্সে অভিযান চালায়। এ সময় প্রতিদিনের লেনদেনের খাতাপত্র ঘেঁটে পুলিশ তথ্য পায় অস্ত্র ও গুলিসহ গ্রেপ্তারকৃত দুর্ধর্ষ ডাকাত আবদু শুক্কুরের সঙ্গে জুয়েলার্সের মালিকের আর্থিক লেনদেনের। যেহেতু ইতিপূর্বে ওই জুয়েলার্স থেকে ডাকাতির স্বর্ণালঙ্কার উদ্ধার করা হয়েছে, সেহেতু সম্প্রতি ডাকাতির সময় লুন্ঠিত স্বর্ণালঙ্কার ওই দোকানে হজম করা হয়েছে কি-না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’
ওসি আরো বলেন, ‘দুর্ধর্ষ ডাকাত আবদু শুক্কুরকে পুলিশ হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতে পাঁচদিনের রিমা- আবেদন করা হলে আদালত তিনদিনের রিমা- মঞ্জুর করে। রিমা-ে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের সময় এসব ডাকাতি এবং ডাকাতির পর মালামাল কোথায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে তা বের করা হবে। এ ঘটনায় যত বড় রাঘববোয়ালই জড়িত থাকুক না কেন সকলকে আইনের আওতায় আনা হবে।’

পাঠকের মতামত: