ঢাকা,সোমবার, ৬ মে ২০২৪

চকরিয়ায় সড়ক বিভাগের শতকোটি টাকার জমি দখল করছেন আ.লীগ নেতারা

নিজস্ব প্রতিবেদক, চকরিয়া ::
কক্সবাজারের চকরিয়ার মহাসড়ক লাগোয়া সড়ক ও জনপথ বিভাগের মালিকানাধীন শতকোটি টাকার ভূসম্পত্তি জবরদখলের মহোৎসব চলছে। এলাকাভিত্তিক ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের কয়েকজন প্রভাবশালী নেতা ও তাদের সহযোগিতায় দখলবাজ সিন্ডিকেট চক্র এ অপকর্মে জড়িত।

ইতোমধ্যে চকরিয়ার মহাসড়ক ও পেকুয়ার আঞ্চলিক মহাসড়কের পাশে সড়ক ও জনপথ বিভাগের অধিগ্রহণ করা জমি অবৈধভাবে দখল করে নিয়েছেন। এমনকি চকরিয়ার বরইতলী (একতা বাজার) এলাকায় এখনো অব্যাহত রয়েছে জবরদখলের প্রক্রিয়া। ওই এলাকায় জেলা পরিষদের যাত্রী ছাউনির পাশে উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রস্তাবিত কমিটির সহসভাপতি নজরুল ইসলাম ওরফে কালা নজরুলের নেতৃত্বে ইতোমধ্যে সড়ক বিভাগের জমিতে তৈরি করা হচ্ছে অবৈধ মার্কেট ও দোকানপাট। অবশ্য জবরদখলের বিষয়টি অকপটে স্বীকারও করেছেন নজরুল। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, সরকারি জায়গা সবাই দখল করছে। আমি অল্প জায়গা নিলাম, এতে দোষের কী? সরকারি জায়গা, সরকার যখনই চাইবে ফেরত দিয়ে দেব। সেজন্যই কাঠের অবকাঠামো দিয়ে দোকানঘর নির্মাণ করেছি, যাতে সহজে ভেঙে ফেলা যায়।

একতা বাজারে দেখা গেছে, আওয়ামী লীগ নেতা নজরুলের দেখাদেখি বরইতলী গরু বাজার এলাকায় আদালতের উচ্ছেদ করা সড়ক বিভাগের জায়গায় আবারও অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ করেছেন মোহাম্মদ জায়েদ নামের আরেক প্রভাবশালী। তার পাশের সড়ক বিভাগের জায়গা কুরবানি ঈদের রাতে দখলে নিয়েছেন নুরুল আমিন নামের অপর দখলবাজ। সেখানে তিনিও অবৈধ দোকানঘর নির্মাণ করে রীতিমতো ব্যবসা শুরু করেছেন।

সরেজমিন দেখা গেছে, কক্সবাজার সড়ক ও জনপথ বিভাগ থেকে ইতোমধ্যে দখলবাজ উচ্ছেদ-নোটিশ দেওয়া হলেও জড়িতরা তোয়াক্কা না করে এসব জায়গা দখলে মেতে উঠেছে। পর্যাপ্ত জনবল সংকট ও নিজস্ব পুলিশ বাহিনী না থাকার কারণে কোটি কোটি টাকার ভূসম্পত্তি রক্ষায় অনেকটা অসহায় হয়ে পড়েছেন সড়ক বিভাগের লোকজন।

ভূসম্পত্তি বেদখলে চলে যাওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে চকরিয়া সড়ক উপবিভাগের উপসহকারী প্রকৌশলী দিদারুল ইসলাম বলেন, চকরিয়া ও পেকুয়ায় সওজের তত্ত্বাবধানে ১১টি সড়ক রয়েছে। তবে আমরা সড়কের জন্য অধিগ্রহণ করা ও বেদখল হওয়া মোট জমির পরিমাণ এখনো নির্ণয় করতে পারিনি। তিনি আরও জানান, ২০২১ সালের ২২ ডিসেম্বর আদালতের নির্দেশে একতা বাজার এলাকার বেদখল হওয়া বিপুল পরিমাণ জমি প্রভাবশালীদের খপ্পর থেকে উদ্ধার করা হয়। পরে দখলবাজরা আবারও সেখানে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ করছে। একইভাবে সড়কের স্টেশন এলাকায় জমি দখল করা ৫০ দখলবাজকে নোটিশ দেওয়া হয়েছে। এর পরও তারা নোটিশের আদেশ না মানায় মৌখিক ও লিখিতভাবে দখল নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।

চকরিয়া উপবিভাগীয় প্রকৌশলী রাহাত আলম বলেন, এখানে সড়ক বিভাগের জায়গা দখলে জড়িতরা প্রভাবশালী। আবার অনেকে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মী। তারা সড়কের জমি দখলে নামলে আমাদের কিছুই করার থাকে না। এ অবস্থায় আমরা নোটিশ প্রদান ও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জবরদখলের তথ্য জানিয়ে থাকি। এছাড়া বাংলাদেশ রেলওয়ে পুলিশের মতো আমাদের কোনো বাহিনী নেই।

সম্প্রতি চকরিয়া পৌর শহরে দখল হওয়া একটি জমির ফটক ও বেড়া গুঁড়িয়ে দিয়ে উদ্ধার চেষ্টা চালানো হয়। দখলবাজরা এতই শক্তিশালী, প্রকাশ্যে উপস্থিত হয়ে আমাদের উচ্ছেদ অভিযানে বাধা ও হুমকি দেয়। উচ্ছেদের কয়েক ঘণ্টা পরই ফের তারা ওই জায়গা দখল করে নিয়েছে।

কক্সবাজার সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ শাহে আরেফীন বলেন, নানা জটিলতায় চকরিয়া ও পেকুয়ায় অধিগ্রহণ ও বেদখল জমির সঠিক পরিমাণ এখন বলা যাচ্ছে না। তবে কোনো না কোনো দপ্তরের ভুলে সড়কের বিপুল জমি ব্যক্তির নামে বিএস রেকর্ড হয়েছে তা উদঘাটন করে সংশোধনের জন্য ইতোমধ্যে ৫৩টি মামলা করা হয়েছে। আদালতের মাধ্যমে রেকর্ড সংশোধন মামলার রায়ের আলোকে বেদখল হওয়া জমি অচিরেই উদ্ধার করা হবে। পাশাপাশি হালনাগাদ জবরদখলে একতা বাজার এলাকার অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

পাঠকের মতামত: